জল্লাদ ও মুখোশ বিষয়ক প্ররোচনাগুলি Poem by Abu Sayeed Obaidullah

জল্লাদ ও মুখোশ বিষয়ক প্ররোচনাগুলি



অন্ধকারের ঘাড়

ফল বাঁচাও
রাত্রি ঘুমিয়ে গেলে
ডেকে তোলো গাছ থেকে বীজগুলি
বীজনারী জলবীজ ঢেউয়ে ঢেউয়ে পানসি
ভেতরে তপোধ্বনি ছেলেমেয়েদের তাজা।
সিংহ পাহারাদার বসছে লাল খুলে
তার রোমশগুলি অন্ধকারের ঘাড়
তাই দেখে উড়ে যাবে প্রজাপতির উড়াল।
ফল ঠাঁই
দখল এই জলদালানের সিংহাসনগুলি
যারা আসছে তাদের গ্রামের নামে
এই বদ্ধ দরোজার খিলান।
খোলো আঙুল দাও
ওম জাগাও বরফে ঠাণ্ডা হাওয়ায়
নৈশ ভ্রমণ শেষে রাক্ষসমায়া উড়ে যায়
তাকে কবরে পাঠাও।
রেললাইন ধরে লালফুল জবারানি দোল
ঘুম ভাঙতে ভাঙতে এই কমলাঝুরি
চোখ থেকে আলোবীর চড়ুই ও শালিক।


কালদণ্ড

কালদণ্ড বসে আছি অকালে
পা টানবে পাতাল টানেলে
জিহ্বানালা লৌহতাবু গণ্ডারের হা হা।
কালো কুচকুচে পিঠ পাহাড় তার গলা দিয়ে
জাহাজ ঘুরে পাথর ছেনে ইলেক্ট্রিকের দড়ি।
চেনে কাচাদলা মাংসবাতি মুখগহ্বর
যম কুকুর যম ভালুক
ছিনিয়ে নেবে ময়ূরপালক উড়ালের ছলাৎ।
এই ছলাৎ এই নিম্ননাভি কয়লাজুরে বসতের গাড়ি
কার বাড়িতে বসে থাকে সে হরিণী সেজে
সেই মুখোশ
দুই পাশে দুই বল্লম নাম ধরে নাম কাটে
আস্ত একটা সেনাকল হানা দেয় বস্তী দখলে।
তার লাল কাঁটা তার সারা শরীর দাঁতে দাঁত
হানবে কাটবে ঠিকানা লাইসেন্স মাথাটা চাইবে
পকেট থেকে জমিয়ে থাকা সন্ধ্যার ছায়াগুলি
দেখাতেই রক্ত গড়বে দেয়াল।



আগুনে কুয়াশায়


রোদ দাও
তাপ পৌঁছাও পাথরছাউনি যেমন
গোপন করে বসে আছি চাঁদ ও তারায়
ঘূর্ণি ভূগোল জংলিজঙ্গল হায়না গুল্মগাড়ি
কার ফেলে যাওয়া কংকাল শিকড়ে!
কাটে বাকল কাটে পাতাশিরাগুলি
আমাকে অবুজ বুঝে লৌহকঙ্কর কাঁটার ঘাগড়া।
তাবু মেরে বসে আছি পাতা পরে
আগুনে কুয়াশায়
কোন দিকে যায় রাজা উজির সিপাহসালার।
হে মেঘ মেঘরাখাল গাছ করো আকাশে
তার নীলবৃষ্টি বৃষ্টি দিয়ে আমার টি সার্ট মাফলার।
জবজবে জলমসজিদ প্রথম সাঁতার
মেঘনা পারের ছেলে হাওয়াপালকের জ্যাকেট
খুইয়ে খুইয়ে মায়ের শাদা জোছনা চাই
গন্ধ শুনে বুকের কাছে নৌকাগুলি ছোটে
পাকাবৃষ্টি মেঘ নেই নেই কাঠবসতি।


স্তনপোকা

কোমরে থেকেছি ঝুলে স্তনপোকা যেহেতু
ধুন তুমি
মীড় টপ্পা বাঁশিরাগিনী শত সহস্র ছিলিম।
কোমর তো কবরস্থান নয় তাই জেনে
দেয়ালে অন্তরালে বুনেছি বাগান।
নেশা মন্থর
সিনায় সিনায় কত যোনিশামুক হাটে
ধুমযোনি তোমার। উঠো বসাও
পাই ইশারা দুসরা
নৌকা নিয়ে দোললাম দোললাম খেলা।
ঝিল্লি ঝালর নিয়ে কালো ফেলে অন্ধ
পথ দেখি পথ দেখি না
ঘোড়া চলে সহিসহীন পাহাড়ে বালিতে
যেমন পানি পড়ে না এমন টান টান চলন।
তবু প্রান্তর ছিঁড়ে সমুদ্র পাইপ করে আসে
বাহ! গরাৎ
আস্তে আস্তে কোমর ছেড়ে শূন্যে ঝুলে তারা।
যে ফসল ফলছে মাঠে মাঠে কুয়াশায়
তার লম্বা দীঘি তার ফল ভরে আশ্বিনে কার্তিকে।


অক্ষরের গন্ধে


অক্ষর দাও
বাক দাও বোবাকালা মা-স্বর
বিষ হোক নিম গুহা থেকে বিজরিপল্লব।
উঠে যে আসছে তাকে থামাও
আমি তো মায়ের ঘুটের আগুন নিতে চাই
সেই টানে কোকিল আর সাইকেল ধরে আসি।
ডাকাতের কপিলায় ফুঁ দাও
জ্বালাও কথামৃত
পোড়াও কামড়ানোর দাগ অতি রতিকামীদের।
যাকে হারিয়েছি তার দিকে নিশানা স্থির
বস্তু অজ্ঞাতবাস তার চামড়া থেকে বদল করো বাঘ।
দূরে ফসলের উঠাবসা পাখির ঢঙ্গে হাওয়াতরল
দেখ যে পালক সে তো শিকারী আসল
তাকে মেরে চলে এসেছি অক্ষরের গন্ধে।


ভাষা পিঞ্জরে

জল থাকো পানি যেই নামে ফুলো
ঢুকো কানে পেটের গর্তে
বাইপাশ করে হাড়ে হাড়ে
টনটনে মা যেমন টানে গর্ভে আড়ালে।
চিঠি তো নিয়ে এসেছি হাওয়া করে
জানি না কি লেখা যে লেখে তাকে দংশাই
বকুলে ফুলে রাতের টোটেমে গভীরে
ভালোআশা আরো থাক ভাষা পিঞ্জরে
পর্দার আড়ালে বর্ষা ফোটাও।
লুকোনো কুয়ো থেকে আয়না
ফিরে উঠো আবার কাঁচগুড়ো লক্ষী
পারাপার করে দেবে এই যমুনা খরা।
জলপ্রকৃতি লালন
পালনের গরুগুলি ক্ষেত খেয়ে হাটে
আর তাদের মালিকেরা জমজমে যায়।
আমরা এই খিলান খুলে ভেসে যাবো জলে
আমাকে কীভাবে ঠেকাবে এখন
নদী হয়ে আছি বিছানায়।


ছায়াঅশ্ব


নীল গলছে
শান্ত বসে আছি একটা আকাশ
বাকী খোলাটা না-রঙ পুরোই শাদা তেপান্তর
যে কাটে সেও সেলাই করে ফুল ও সাপে।
ফুল দূরে যায় ফুল কার ঘরের রানি দুলহানিয়া?
যত দূর তত কাছে
কার ছায়া স্কুলঘণ্টি পাড়ার দুশমন।
ছায়াঅশ্ব ছায়াডিম যেমন অশ্বারোহী
ঘুম দাও পায়ের কাছে সুতানটি বাজার
নেমে নেমে পয়সা বানাই। যেদিকে ব্যবসা বাজার
চরম নিরাকার গুলিস্তা আর
নিহত ভাই কবর লোমনেশা খবর।
পাখির নাম ধরে দেশ আসে কেউ
হাওয়া বাতাসে কঙ্কাল পাই তার
গাছে গাছে শিকারসভা ঝুলছে পরদেশ ছাই
নদী কোথায়-
জ্বলে পুড়ে যাওয়া জলকল।


আলোমাংস


সূর্য কাটো চাক চাক
ছড়িয়ে পড়া দিকচক্রবাল লাল আলোমাংস
বিনাশ হোক চেখে তোলো রশ্মিগুলি
খুলে রাখো মাঠে ইঁদুরের গর্তে।
নাহলে সময় সেনাকরে আনে জলময়না ব্রিজ।
শুধু রাইফেল শুধু ট্রা ট্রা বাংকার
পা পিছলিয়ে হাড়কংকালে ঘরবাড়ি।
যে মারে তারা ছায়াই সবখানে যায়
তাকে এবার মাথা ঝুলিয়ে ধরো
কাটো দাঁড়িয়ে থাকা অপরূপ জল্লাদ
মেশিনে দাও।
শুধু কোকিল কবুতরে সংসার হোক
তার ভেতরে তরল গন্ধ মা আর মেয়ের
বন্ধ শহীদের লাল রক্তজড়োয়া।


সাপগুলি

যে রাখে সেই লুকায়
সেই ধুলোর কাপড়ে মুখোশের মায়া
তাতেই মা রিক্ত মা শেষ ট্রেনের ফেলে আসা রূমাল।
যেমন বাঘ ও মেশিন পরস্পর ভাই
তার দিকে সংখ্যা বাড়ে ভয় আর প্রতীক্ষায়।
মাথা যায় মাথা গড়ে মাটি ও পুস্তক
যে লুটায় সেই খবর বানায় নৌকা থেকে জাহাজে
তার সাপগুলি ছোটে রক্ত ও সঙ্গীতে
চক চকে দা পুষ্পে ও পাথরে দরোজা খুলে
শত গোলাপের কোরবান।
সবুজ দাও
কফিন ছেড়ে ভেসে উঠে ক্যাফে শহরের গন্ধ
যে ঘুমায় তার হাত ধরে চলে যায় মাঝি
নৌকাগুলি বসে থাকে এতিম।




জল পালাও

জল পালাও
দ্বারে দ্বারে আরো পাইপ আরো ক্রেন
শিকারি বুনছে মাঠ থেকে পাটাতনে
তীর ধনুক লোহা পাথরে প্রান্তর।
ঠোঁটে করে নিয়ে যাবে ঘূর্ণি আর আষাঢ়ের নৌকা
জলহাড় ছড়িয়ে দেবে পাঁজি বৈশাখে।
এই হৃদস্পন্দন রক্তভাষা শ্যাওলাফুলে আসে
সেখানে তাবু খোলো ঘুমাও।
এই জলশুদ্ধি ফসফরাস সমুদ্রগুল্ম
মাছে মাছ ক্রম হাড় আদিম পাহাড়ি
গড়িয়ে আসে মাছমানুষ ডাঙা বরফের তিরপল।
হাড় বাঁচাও
যারা থাকবে ওদের জলমহলে গাছজিনের খেলা
বেরিয়ে আসবে হাড় থেকে লম্বা লম্বা গাছগুলি
গাছ দাও গাছপাখা গরমে ছায়া
পাখি যেমন ডিম থেকে প্রজাপতির জাতি।
ভ্রমণের রৌদ্রগুলি পাতা মেলে ধরেছি
আরো শহীদ হোক সময় আরো সেনাদের তিমির
উদীয়মান বাংকার থেকে জলসাপ হয়ে জলে যাক হাড়গুলি।

COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Abu Sayeed Obaidullah

Abu Sayeed Obaidullah

Dhaka, Bangladesh
Close
Error Success