কিছু কথা — অনন্ত শ্রদ্ধা
৩
আমি যখন ছাত্র তখন জগন্নাথদার( স্বনামধন্য বাচিক শিল্পী জগন্নাথ বসু) কাছে কতকগুলো কবিতা খুব শুনতাম, যেমন বাণভাসী । কবিতাটি মনে হয় কবি অরুণ মুখোপাধ্যায়ের রচনা। কবিতটার মধ্যে পুরুলিয়ার দিকের আঞ্চলিক শব্দ ও টানছিল। আর বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি শামসুর রহমানের একটা কবিতা যার শুরুটা ছিল এইরকম— চাল পাচ্ছি, ডাল পাচ্ছি, বউকে নিয়ে শোওয়ার ঘর পাচ্ছি - - । খুব ভালো লাগত শুনতে। আর একটা কবিতা জগন্নাথদা প্রায় সব জায়গায় আবৃত্তি করতেন সেটা হল — কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্যের কবিতা, “শহিদ দিবসের গল্প”। জগন্নাথদার অমন রোমান্টিক গলায় এমন যুগযন্ত্রণার কবিতা এক অন্যরকম মাধূর্য বয়ে আনত। আমি তখন কল্যাণীতে থাকতাম। কিন্ত জগন্নাথদার সঙ্গে অনেক জায়গায় গিয়েছি । প্রায় সব জায়গায় এক অভিজ্ঞতা। সব জায়গার শ্রোতা এই কবিতাগুলো শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন। অনুরোধ আসত।
আমি যেদিন আমাদের বল্মীকে আসি, পরদিন সকালে দেখলাম আমার জানালার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক শান্ত সুন্দর ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী পাজামা পরা ভদ্রলোক। জানলাম — ইনি সেই বিখ্যাত কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য। আমি একটু চমকেই উঠলাম। ততদিনে তো আমি এই কবির অনেক কবিতা পড়ে ফেলেছি। কবিতা পড়ে আমার কল্পনায় এক কবির মুখ আমি এঁকে ফেলেছিলাম — অনেকটা ঋত্বিক ঘটক ধরনের অবয়ব মুখ চোখ। একটু রাগী হলেও হতে পারেন।
গান্ধীনগরে রাত্রি — র কবি এখন আমাদের কাছের মানুষ। দুএকদিনের মধ্যেই ওঁর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা হল, যখন আমরা দুজন একসঙ্গে বের হতাম উল্টোডাঙ্গা ষ্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য, উনি নৈহাটিতে নেমে যেতেন, আমি যেতাম কল্যাণী ইউনিভার্সিটিতে। একদিন আমি ওঁর কবিতা শহিদ দিবসের গল্পের কথা বলেছিলাম। উনি একটু উদাস চোখে বলেছিলেন ওটা আমার অল্প বয়েসের লেখা। ট্রেনের কামরায় অনেক গল্প হতো। কোনওদিন কবিতা নিয়ে, কোনওদিন বা নেহাৎ দৈনন্দিন দিনযাপনের গল্প। আমাদের বল্মীকের প্রথম পুজোয় যখন অমলেন্দুদার মত বিখ্যাত লেখক মাটিতে বসে আলপনা আঁকছেন, এক সময় দেখি আমাদের মণিদা এসে সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে নিখুঁত তুলির টান পর্যবেক্ষণ করছেন। অমলেন্দুদা পরে মণিদার একটা কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন।
—————————————————
সঞ্জীব
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem