আমরা বাঙালি*
কোন সে প্রাচীন কালে -
পুত গঙ্গা মোহনার কোলে
আনন্দ-ঘন শস্য-শ্যামল ছায়ে
ধীরে ধীরে গরিয়া উঠিল এক মিশ্র সমাজ
বেদ-পুষ্ট, কালজয়ী ভারতের কোলে
নামধরি বাঙালি সমাজ
মানুষের যাত্রাপথে সগৌরবে বিরাজিছে আজ
উনবিংশ শতাব্দীর পুরোভাগে সেই যাত্রাপথে
হলো কত মহামানবের আবির্ভাব
যাঁহাদের মিলিত প্রভাব
জোগাইলো বাঙালি প্রাণে এক নবীন উচ্ছাস
যার ঢেউ উচ্ছলিয়ে প্রাচীন সমাজ
পৃথিবীর কুলে কুলে আছারিছে আজ
গড়িয়া চলিছে সদা মানুসের নব ইতিহাস I
কাব্য ও বিজ্ঞানে পুষ্ট সেই প্রাণধারা
নতুন যুগের সাথে বাঁধি গাঁঠছড়া
ধায় আজি সগৌরবে সুমুখের পানে
জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার কল্যানে
সতত প্রাধান্য দিয়ে মানুষের মনুস্বত্ত বিকাশে
আসিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ এমনি সুভক্ষণে
প্রচারিতে ধরাবক্ষে এক বিশেষ বিজ্ঞানে
যার নাম আত্মজ্ঞান
সুক্ষাতীত সুক্ষ মনে এজ্ঞানের হয় যে স্ফুরণ
জড়বিজ্ঞানের তাই নেই হেথা স্থান
সদা জড়সীমার বাহিরে হয় ইহার অভ্যুথান
এই আত্মজ্ঞান লাভ করি বহেন জীবন যে জ়ন
সর্বব্যাপী আত্মারে সর্বজীবে করি দর্শন
তিনি জানান সবারে তাঁর সশ্রধ প্রনতি
মর্মে মর্মে সদা অনুভবি
জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলেই তাঁহার আপন
বিভিন্ন ধর্মের পথ একে একে ধরি
একাগ্র সাধন যোগে ভিন্যপথে আত্মজ্ঞান লভি
শ্রীরামকৃষ্ণ দেখালেন, শেষসত্য একই
এক সত্যলাভ হয় ভিন্য ভিন্য ধর্মের মাধ্যমে
প্রয়োজন লাগে শুধু সত্যের নিষ্ঠায
রামকৃষ্ণ মুখসৃত সে বিজ্ঞানবাণী
ওই শতাব্দীর শেষভাগে
তুলিল আশার ধ্বনি ধরনির আশাহত বুকে
প্রাণপ্রিয় শিষ্য তাঁর স্বামী বিবেকানন্দ মাধ্যমে,
শিকাগোর প্রথম সর্বধর্মসম্মেলনে
জ্বালাইয়ে নতুন আলোক
ক্রমে যাহা ছরাইলো অগনিত মনে,
অজ্ঞানের অবসান হেতু
দেশ ছাড়ি বিদেশেরও পর্দাসিন কোনে কোনে!
বীর সন্যাসী বিবেকানন্দ
এলেন ধরাধামে শ্রী রামকৃষ্ণের ব্যাকুল আহবানে
অতীন্দ্রিয় রাজ্য হতে
১৮৬৩ সালের পুরোভাগে এক শুভক্ষণে
আধুনিক শিক্ষায় মার্জিত
তত্কালীন শহুরে বাঙালির এক স্বচ্ছল সংসারে
সেই শ্রুতিধর কৌতুহলী বালক
প্রখর প্রতিভাবশে, একমনা ও স্বাধীন-চেতনা গুনে
বর্ধিয়া কালে কালে হইলেন ক্রমে
শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে ও সংগীতে পরিপূর্ণ এক যুবক
রহি সদা অনুরত উচ্চতর ভাবের সন্ধানে
সেযুগের কলকাতার কোলে পাস্চাত্য-প্রভাবে
আমাদের যুবকের সত্যনিষ্ঠ মন
ইশ্বরের অস্তিত্ত্ব নিয়ে তুলেছিল গভীর আলোড়ন
সেই সুত্রে আসিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গমে
কোনো এক অজানা দৈবক্রমে
ঘটাইয়া অবশেষে
দুটি বিরাট ব্যক্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রথম মিলন
যখন উভয়ের কথোপকথনে
ঘটেছিল ক্ষনমধ্যে একের প্রতি অপরের দৃড আকর্ষণ
যার ফলে স্বল্পকাল-ব্যবধানে
শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রানাধিক হলেন সেদিনের যুবক নরেন
ক্রমে গড়িলেন তাঁরে
শিক্ষা-দীক্ষা-তিতিক্ষার শেষে দেখি যারে
কালজয়ী মহাযোগী বিবেকানন্দ বেশে
উনবিংশ শতাব্দির শেষভাগে চিকাগো শহরে
আজও যিনি কর্মরত সুক্ষদেহে সমগ্র বিশ্বের কল্যানে
সেই শুভ যুগসন্ধিক্ষনে
শ্রী রামকৃষ্ণ আনিলেন সহধর্মিনী করে
দিব্য দর্শনে মনস্হির করি
গ্রাম সংলগ্ন জয়রামবাটির এক শিশু বালিকারে
কালে যাঁর আবির্ভাব হলো
সঙ্ঘ-জননী মা সারদা - জগত জননী রূপে
যে সঙ্ঘ শিব জ্ঞানে জিবে পূজা করি
প্রচারিছে ঠাকুরের বাণী
ধরনীর কোনে কোনে
মা সারদার আশির্বাদে বহি
সংযুক্ত করিছে সবে মা-ঠাকুর-স্বামীজির বিশ্বভরা প্রাণে
সে বিরাট প্রাণশক্তি খানি
বিগত শতাব্দী ব্যাপী রাখিত়েছে টানি
কতো মুক্তমনা বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানী মনে
অতি-সঙ্গোপনে
ক্রমে যাহা মিশিতেছে আধ্যাত্ম বিজ্ঞানে I
দেখি আজি তাই -
ঠাকুর-মা-স্বামীজির সেই ব্যাকুল আহ্বান
ধরায় ধ্বনিয়া তোলে মিলনের গান -
আর, স্বামীজির প্রচারিত বেদান্তের বাণী
বিবেকানন্দ বেদান্ত নামে উঠিতেছে ধ্বনি I
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
* কবিতাটি রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুদের নামে সবিনয়ে উত্সর্গ করিলাম
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem