খোলা চিঠি
মাধবী ব্যানার্জ্জী
এই আহ্লাদী খবর কিরে তোর?
কতদিন হয়ে গেল তোর কোনো খবর পাইনি।
আহ্লাদী বলে সম্বোধনে চমকে উঠলি না কি?
আমি কিন্তু জানি, এই নামটা শোনার জন্য তোর কান দু'টো খাড়া হয়ে থাকে আজও
কারণ যারা তোকে ভালবাসত তারাই তো এই নামে ডাকত তোকে।
তুই তোর বাবার বড় আহ্লাদী ছিলি
তবে তোর মা আর দাদাএই ডাক শুনে মুখ বেকিয়ে হাসত
কারণ তোর মা তো তোর দাদাকেই ভালবাসত
তোকে খুব অবহেলা করতো, অপয়া বলতো
কারণ তুই যখন দশ মাসের একটি শিশু
তখন তোর থেকে চোদ্দ বছরের দাদাটি মারা যায়
চিকিৎসার ভুল যত্নের অজ্ঞতা ভুলে গিয়ে
ছেলে হারানোর দায়-তোকেই নিতে হয়।
এই শতাব্দীতেও ছেলে, মেয়ের এরকম বিভাজন! অবাক লাগে!
আচ্ছা আহ্লাদী তোর অরুণার কথা মনে আছে?
রোগা প্যাঙ্গা মেয়েটির কি ব্যক্তিত্ব ছিল বল!
ওর বিয়েতে ওর মা ওকে
একটি সাড়ে ছ'আনার গোলাপ ফুল আঁকা আয়না দিয়েছিল
ওর শশুরবাড়ির লোকজন ব্যঙ্গ করে কটাক্ষ করে ছিল।
কিন্তু রোগাপ্যাঙ্গা কিশোরী মেয়েটির জবাব দিয়েছিল
এই আয়নায় আমার মুখটা আমি ভালই দেখতে পারি
আহ্লাদী তোর সাথে সাথে ছেলেবেলা অনেক কথাই মনে পরে যায়।
আচ্ছা তোর অরুণকে মনে আছে?
মনি শনু অরুণ আর আমি তো তাস ক্যারামের সাথী ছিলাম
একবার অরুণ আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা করেছিল।
কিন্তু ওকে পুরোহিত বলাতে প্রবল আপত্তি ছিল ওর।
ভাগ্যের পরিহাসে ওকে এখন পুরোহিতগিরি করেই সংসার চালাতে হয়
আর শনুকে তো আড়ালে আমরা কৃপণ বলতাম
কারণ বাড়িতে ও সর্বদা গামছা পড়েই থাকত
জিজ্ঞাসারউত্তরে বলত ‘জামা প্যান্ট সবসময় পড়লে
ইস্কুলে যাবার সময় নোংরা হয়ে যাবে
তখন কিশোর বয়সে বুঝিনি ওর যে মাত্র একটিই জামা প্যান্টের সেট ছিল
ছেলেটা অকালে মরেই গেল।
আর মনি মস্ত বড় ইঞ্জিনীয়র হয়ে ষ্ট্যাটাস বাড়িয়ে
মদের গ্লাসকে সাথী করে ধূকছে এখন।
জানিস আল্হাদী আমার না নীলি বীনাপানীসবার কথা মনে পড়ে
বরাবরের হিসাবী নিলী স্বামী সন্তান নাতি নাতনী নিয়ে ঘোরতর সংসারী
আর যার নাম বীনাপানী সেই বীনাপাণির সাথে তার ঘোর বিবাদ
বিয়ে করবে বলে পড়াশুনাই করল না
কিন্তু নিয়তির খেলা বিয়েটা ওর হলই না।
শুনেছি ওরবাবার মুদিখানার ব্যবসাটা ও চালায় এখন
আহ্লাদী তোর মধুর কথা মনে আছে
হুপাগলী একটা
ঘরের হোক কিংবা পাড়ার কারোর অসুখ হলে মেয়েটার কি চিন্তা
খাবে না ঘুমুবে না
বাড়ির লোকেরা বলুক চাই না বলুক ও ডাক্তার ডেকে আনবে
নিজের টিফিন খরচ থেকে ওষুধ কিনে দেবে।
ও বলে ওদের অসুখ করলে আমার খারাপ লাগে
পয়সাটা খারাপ লাগার থেকে বেশি দামি নয়।
পাড়ার লোকের হাতের নড়ী ছিল ও
কেউ গয়না বানাবে -চল মধু
কেউ ডাক্তার দেখাবে-চল মধু
কেউ বাজার করবে -চল মধু
সিনেমা দেখবে টিকিট কেটে দেবে মধু
ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগানের খেলা চল না মধু
কার এল আই সিটাকা জমা দেবে -মধু
দাদা দোলের দিনেএররং লাগিয়েছবলে
দাদাকে বকল কেন প্রতিবাদ করবে মধু
বাচ্চা ছেলেটির আন্ত্রিক নার্সি হোমে কে থাকবে
কেন মধু পিসি আছেতো
কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে আনন্দে ভেসেছে
দুঃখের ঘটনাতে কেঁদে ভাসিয়েছে
পন করে বসেছিল সতের বছরে বিয়ে করবে না
পাড়ায় মালখানার অফিস করতে দেওয়া যাবে না
তাই বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
কি দাপুটে মেয়েরে বাবা!
সেই মধু নাকি দুরন্ত ক্যান্সারকে জয় করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে
না ও পরাজয় মানেনি, পায়ের তলায় সরষে ওর
অভিযানে যায় কখোনো খারদুংলা পাস কখোনো মানসসরোবর
ও নাকি কবিতা লেখে এখন, সকলে বলে মেয়েবাদী কবিপ্রতিবাদী কবি
ও বলে এই সমাজের মেয়েরা যে বড় বঞ্চিত অবহেলিত
তাই তো মেয়েদের কথা বলতে চেষ্টা করে
ও বলে ওর জীবনের প্রতিটি ক্ষন প্রতিটি ঘটনা
ওর কবিতার ভাব ভাষা ছন্দ।
ওর জীবনটাই নাকি কবিতার বিষয় বস্তু
তবে এক মজার ঘটনা হলো
ওর সাথে যার বিয়ে হয়েছে সে এক শিল্পী কবি
আর কবিরা তো এক ধরনের পাগলাটে ধরনের হয়
দুই পাগলা পাগলি মিলে কি করে যে সংসার করে
ভগবানই জানে।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
God knows about family. When a child takes birth he may not know about great-grandmother or great grandfather. But God's greatest bliss and grace fall on all and they realize existence of great-grand-parents. An interesting poem is written in this open letter...10
thank you for your comments. this is precious to me