আর, আগ্রহ ব্যক্ত করলেন, এক কবি, ' সৌন্দর্য বিষয়ে কিছু বলো আমাদের।'
কোথায় তুমি সৌন্দর্য অন্বেষণ করবে, আর কোথায়ই বা খুঁজে পাবে তাকে, যদি না সে নিজেই হয়ে ওঠে তোমার জীবন চলার পথ আর পথপ্রদর্শক?
আর কীভাবেই বা বলবে তার কথা, যদি না সে তোমার কণ্ঠ-নিঃসৃত স্বরগুলিকে বুনিয়ে কথায় রূপান্তর করে?
সংক্ষুব্ধ আর আহত যারা, তারা বললো, ' সৌন্দর্য হচ্ছে মমতা আর সদাচরণ।
সেই এক তরুণী-মায়ের মত, যে কিনা তার মাতৃত্বের মহিমায় ঈষৎ সলজ্জতায় হেঁটে যায়, আমাদের মাঝখান দিয়ে।'
আর, ভাবাবেগ-চালিত মানুষেরা বললো, ' শুধু তাই নয়, সৌন্দর্য হলো ক্ষমতা প্রাবল্যের আর
আতঙ্কের একটা ব্যাপার।
প্রচণ্ড ঝড়ের মত, যেটা দিয়ে সে আমাদের নিম্নে পৃথিবী আর উর্ধে আকাশকে তুমুল ঝাঁকুনিতে কাঁপায়।'
ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত যারা, তারা, বললো, ' সৌন্দর্য আসলে একটা ফিসফিস আওয়াজ। যে কথা বলে ওঠে আমাদের সত্তার গভীরে।
ছায়ার ভয়ে কেঁপে ওঠা অস্পষ্ট আলোর মত তার কন্ঠস্বর জেগে ওঠে, আমাদের নৈঃশব্দ্য জুড়ে।'
কিন্তু অবিশ্রান্ত মানুষেরা বললো, ' পাহাড়গুলোর ভেতর আমরা তার আর্তচিৎকার শুনেছি,
আর তার কান্নার শব্দে গবাদী পশুদের গোঙানীর মত আওয়াজ ভেসে আসছিলো, আর পাখিদের ডানা জাপটানোর ধ্বনি এবং আর্তনাদ সিংহদের।'
রাত্রিকালে, নগররক্ষীরা, বললো, ' প্রত্যূষ হবার সাথে সাথেই সৌন্দর্য জেগে উঠবে পূর্ব-দিগন্তে।'
এবং দ্বিপ্রহরে, মেহনতি শ্রমিক আর পদব্রজে হেঁটে-চলা মানুষেরা বললো, ' সূর্যাস্তের জানালা-পথে আমরা তাকে দেখেছি, হেলান দিয়ে আছে দূর-পৃথিবীতে।'
শীতের তুষারাবৃত সড়ক বললো, ' সে, বসন্ত আসার সাথেই পাহাড়গুলোর ওপর থেকে লাফিয়ে নামবে।'
গ্রীষ্মের গনগনে আঁচের ভেতর থেকে, শস্য-কর্তকের দল বললো, ' তাকে দেখেছি আমরা, নৃত্যরত, হেমন্তের পাতায় পাতায়; আর তার কেশব্যাপী আমরা দেখেছি এক ধরণের তুষার-প্রবাহ।'
এই যে, এতো অভিমত, তোমরা সবাই সৌন্দর্যের কথাই বলেছো।
তথাপি, সত্যি বলতে কী, তোমরা সৌনর্যের কথা নয়, বরং বলেছো তোমাদের অভাববোধ আর অতৃপ্তিসমূহের কথাই,
আর সৌন্দর্য কোনও অভাববোধ নয়, সে হলো পরমানন্দ।
এটা কোনও তৃষ্ণার্ত মুখ নয়, নয় কোনও শূন্য হাত সামনে বাড়িয়ে ধরা,
বরং এটা হলো অগ্নিশিখার মতো জ্বলে ওঠা এক হৃদয় আর এক পুলকিত আত্মা।
এটা কোনও প্রতিমূর্তি নয় যে দেখতে পাবে তোমরা; কোনও সুর বা সংগীত নয় যে, শুনতে পাবে।
বরং এটা হলো এমন এক রূপমূর্তি, চোখ বন্ধ করে দেখতে হয় যাকে; এমন এক গান, কান বন্ধ করেই কেবল শুনতে পাওয়া যায় যাকে।
আঁচড়ে দেয়া বাকলে ফুটে ওঠা কোনও বৃক্ষরস নয় এটা, নখরধারীর পিঠে সংযুক্ত ডানাও নয়।
বরং এ হলো এমন এক বাগান, যেখানে অনন্তকালের জন্য ফুটে আছে ফুলগুলি; আর, একদল দেবদূত যারা আছে অনন্ত উড়ালে।
শোনো, আমার জন্মভূমির মানুষ, সৌন্দর্য হলো জীবন; যখন সে অবগুণ্ঠন উন্মোচিত ক'রে, দেখায় পবিত্র মুখমণ্ডলটি তার ।
কিন্তু তোমরা হচ্ছো জীবন, তোমরাই সেই অবগুণ্ঠন।
সৌন্দর্য হলো সেই অনন্ত, নিষ্পলক চোখে, যে, নিজেই নিজেকে দেখছে দর্পনে।
অথচ তোমরাই সেই অনন্ত আর তোমরাই সেই দর্পন
* Bengalized by Rahman Henry
** Original:
Beauty Xxv- Poem by Khalil Gibran
শোনো, আমার জন্মভূমির মানুষ, সৌন্দর্য হলো জীবন; যখন সে অবগুণ্ঠন উন্মোচিত ক'রে, দেখায় পবিত্র মুখমণ্ডলটি তার । কিন্তু তোমরা হচ্ছো জীবন, তোমরাই সেই অবগুণ্ঠন। সৌন্দর্য হলো সেই অনন্ত, নিষ্পলক চোখে, যে, নিজেই নিজেকে দেখছে দর্পনে। অথচ তোমরাই সেই অনন্ত আর তোমরাই সেই দর্পন