প্রেম একটু হড়হড়েই ভালো। তার সাথে, প্রেম যদি একটু ভিজে ভিজে আঁঠা আঁঠা হয়; তাহলে তা আরও ভালো। ঠিক যেমন কাঁঠালের আঁঠা, লাগলে যেন আর ছাড়ে না। ছাড়বেই বা কেন? এতো করে ভাবা, স্বপ্ন দেখা, রাতদিন লুকোচুরি করে দেখা সাক্ষাৎ করা- তারপরও যদি প্রেম ছেড়ে যায়, তা কত যন্ত্রণার বলো তো?
প্রেম করতে হলে অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হয়। রাতের অন্ধকারে- বাঁশ ঝাড়, বিছুটি বন, খানাখন্দ পেরিয়ে তবে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে হয়। কখনো কখনো প্রেমিকার ভাইকে চকলেট কিনে দিতে হয়, প্রেমিকার ঠাম্মাকে ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে পান খাওয়াতে হয়, প্রেমিকার মাকে বালতি বালতি তেল মারতে হয়, ইত্যাদি।
ধরো, ফোন করে তুমি প্রেমিকার সাথে কথা বলতে চাইছো, অথচ ফোনটা ধরলো তোমার প্রেমিকার মা! তখনই তুমি মনে মনে ভাবছো- "ঊহঃ যতসব আপদ! " অথচ মুখে তুমি কি বললে?
"কাকিমা! কেমন আছেন কাকিমা? কাকু ভালো আছেন? আপনার গেঁটে বাতটা কেমন আছে? ভালো নেই? ভালো ডাক্তার দেখান কাকিমা! জানেন কাকিমা- শ্যাম বাজারে একটা ভালো বাতের ডাক্তার আছে! আপনি যদি চান তো এখনই ফোন নম্বরটা খুঁজে দিই। নইলে আপনি যদি চান তো- আমি নিজেই আপনাকে নিয়ে যেতে পারি। নইলে অবশ্য মালবিকাই আপনাকে নিয়ে যেতে পারে! আপনার মেয়েটাও তো এতো বড় হলো! মাকে একটু দেখতে পারবে না? কাকিমা, মালবিকাকে ফিরলে একটু বলবেন- আমি ফোন করেছিলাম? "
তোমার প্রেমিকার মা বড় খুশি! তো উনি তোমাকে বললেন- ও তো এখানেই আছে। ওকে এখনই ডেকে দিচ্ছি অমল। ধরো, তুমি লাইনটা ধরো। মনে মনে তুমি কি ভাবছো- "যাক গে, তাহলে আপদ উদ্ধার হলো! মালবিকা ফোনটা ধরতেই তুমি কি বললে- "আচ্ছা, ফোনটা তুমি ট্যাঁকে বেঁধে শুতে পারো না? " ইত্যাদি।
চটচটে প্রেম অবশ্য হড়হড়ে প্রেমের চেয়ে হাজারগুন ভালো। হড়হড়ে প্রেম ভালো, তবে তত ভালো নয়। হড়হড়ে প্রেমে সবকিছু কেমন যেন হড়কে হড়কে যায়। দেহ মন আত্মা- সবই হড়কে যায়। তুমি বুঝতেই পারো না, কখন তুমি মালবিকার উঁচু বুকের যাঁতাকলে, চেপ্টে চিঁড়ে ভাজা হয়ে গেছো!
সেদিক থেকে দেখতে গেলে, চটচটে প্রেম হড়হড়ে প্রেমের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। মালবিকাকে দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে। "ইশঃ তোমার ঠোঁটের উপর, কি যেন কি একটা পড়েছে! " বলেই, আলতো করে মালবিকার ঠোঁটটা তুমি ছুঁয়ে দিলে। "জানো, তোমার গলার হারটা কি সুন্দর! এটা কি পি সি চন্দ্র থেকে কেনা? " বলেই, মালবিকার নরম নরম বুকটা তুমি ছুঁয়ে দিলে। অথচ তুমি সোনার হারের কিছুই বোঝো না।
চটচটে প্রেম এজন্যই চটচটে, এখানে প্রেমিক দিনরাত প্রেমিকার দেহে সেঁটে থাকার চেষ্টা করে। পারলে সে, প্রেমিকা অঙ্গের শাড়ি কিংবা আঁচল হয়ে যায়। কোন কোন প্রেমিক এমনও হা পিত্যেশ করে- কেন সে এ জন্মে প্রেমিকার অন্তর্বাস হয়ে জন্মগ্রহণ করলো না! নিদেন পক্ষে কেন সে ব্রা বা ব্লাউজ হলো না!
তোমরা ভাববে- ছিঃ ছিঃ কি অসভ্য! কি অসভ্য! ব্যাপারটা সত্যিই কি অসভ্য? একজন মানুষ, তার মনুষ্য জীবন ত্যাগ করে, সামান্য একটা শাড়ি বা আঁচল হতে চেয়েছে! এটা কি তার গভীর আত্মত্যাগ নয়?
খামোকা তোমরা মানুষের মধ্যে অশ্লীলতা খুঁজে বেড়াও! প্রেমিক, তার প্রেমিকাকে ছুঁতে চাইবে না? প্রেমিক তার প্রেমিকাকে গভীর করে চুমু দিতে চাইবে না? প্রেমিক তার প্রেমিকার বাগানের, সুন্দর সুন্দর ফুল ফল চেঁখে দেখতে চাইবে না? প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের যদি গভীর আকর্ষণই না তৈরী হবে, তবে সে কেমন প্রেম?
আজ এখানেই থাক। চলতে থাকবে। তোমরা মন্তব্য অংশে তোমাদের প্রেমের অনুভূতি বর্ণনা করতে থাকো। এইভাবেই আমরা পৃথিবীতে প্রেমের বন্যা বইয়ে দিতে চাই।
© অরুণ মাজী
Painting: Xie Chuyu
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem