বাঙালি জাতিকে এক উন্মাদের চ্যালেঞ্জ (বাঙালিকে চিঠি) Poem by Arun Maji

বাঙালি জাতিকে এক উন্মাদের চ্যালেঞ্জ (বাঙালিকে চিঠি)

আমার প্রিয় বাঙালি ভাই-বোনেরা,

যে লেভেলের বুদ্ধি দিয়ে তুমি কোন সমস্যা তৈরী করো, সেই লেভেলের বুদ্ধি দিয়ে তুমি সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তাই যদি সম্ভব হতো, তাহলে তুমি- সমস্যাটা তৈরীই হতে দিতে না। তাই না?

বঙ্গ তথা ভারতবর্ষে অনেক সমস্যা। বাঙালী হিসেবে আমি- আগে বাংলা গড়বো, তারপর ভারত গড়বো। সেজন্য আমি- মোদীজি কি করছেন, তা না ভেবে, আমার প্রিয় মমতাদি কি করছেন, তা আমি বেশি ভাবি!

যা কিছু তুমি পরিবর্তন করতে চাও, আগে তা- তোমার নিজের ঘর দিয়ে শুরু করো। আমার লেখা তাই, বাংলা নিয়ে অনেক বেশি। তার মানে এই নয় যে- আমি ভারতকে, বাংলার থেকে কম ভালোবাসি।

যা বলছিলাম- সমস্যা হলো, আজকের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভয়ানক ভাবে ব্যর্থ। তার অনেক কারন। সব চেয়ে বড় কারন হলো- ভারতীয়রা গণতন্ত্রের মতো সুসভ্য ব্যবস্থার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে নি। গণতন্ত্র খুব সূক্ষ্ম, অভিজাত ব্যাপার। এরজন্য নাগরিককে- শিক্ষিত হতে হয়, সুসংহত হতে হয়, শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হয়। ভারতীয়রা যদি তাই হতো, তাহলে ভারতের এতো সমস্যা থাকতো না। তাহলে- একজন ধর্ষক 'বাবা'-র জন্য, শত শত মস্তিস্কযুক্ত মানব, মিছিল আর দাঙ্গা করে আত্মঘাতী হতো না।

হয় ভারতীয়রা তাদের চেতনাকে তাড়াতাড়ি উন্নত করুক, নয়- তারা গণতন্ত্র বর্জন করুক। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই- গণতন্ত্র থাকুক, আর ভারতীয়রা তাদের চেতনা তাড়াতাড়ি উন্নত করুক। কেন? আবার যদি আমাদেরকে মধ্যযুগীয়- 'এক নায়কতন্ত্র' বা 'রাজতন্ত্রে' ফিরে যেতে হয়, তাহলে বিবর্তিত মানুষ হিসেবে আমাদের গলায় দড়ি দেওয়া উচিৎ।

দুঃখের বিষয়- গণতন্ত্রের নামে, গান্ধী পরিবার প্রায় পঞ্চান্ন বছর ভারত শাসন করেছে। শেষ সাত বছর ধরে, বাংলা 'হিটলার' দ্বারা শাসিত হচ্ছে। যিনি আবার 'ব্যানার্জী' নামে এক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। সেজন্য 'যুবরাজের' 'অভিষেক' হয়। কিন্তু পার্থ চ্যাটার্জী, মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী বা শুভেন্দু অধিকারীর বেলা তা হয় না। যদিও- পার্থদা, মুকুলদা, সুব্রতদা, শুভেন্দু অধিকারী ইত্যাদি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে, দিদির ছায়াসঙ্গী। দিদির সেই অন্ধকার দিনে, যুবরাজের জন্ম পর্যন্ত হয় নি। এটা ঘটলো কেন? এর কারন- মমতা ব্যানার্জী হিটলার, আর জনগণ গোঁয়ার। জনগণ- গণতন্ত্রের উপযুক্ত নয় বলেই, তৃণমূল দল বা পশ্চিমবঙ্গ- গণতন্ত্র পায় নি। ব্যাপারটা জলের মতো সোজা নয় কি?

এমন নয় যে এখনকার বাঙালীর বুদ্ধি নেই। বুদ্ধি, প্রতিভা বেশ খাসাই আছে। কিন্তু সেই বুদ্ধি আর চেতনা- নপুংসকতা আর স্বার্থের আবর্জনায় ঢাকা পড়ে আছে। তোমরা জানো, কয়েকদিন আগেই আমি লিখেছিলাম- বুকে কলিজা না থাকলে, বুদ্ধি বা প্রতিভা সবই বৃথা। তোমরা প্রতিমুহূর্তে, আমাকে সত্য প্রমাণিত করছো। আমি চাই- তোমরা আমাকে মিথ্যে প্রমাণিত করো। খিস্তি করে নয়। তোমাদের উত্তরণের মধ্য দিয়ে। বাংলার উত্তরণের মধ্য দিয়ে।

ব্যক্তিগতভাবে, জীবনে আমার আর পাওয়ার কিছু নেই। জীবনে আমি, এতোই বেশী তৃপ্ত, সফল আর অচঞ্চল! আমি যা পাওয়ার যোগ্য, ঈশ্বর আমাকে তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছেন। আমি 'ন্যাংটো রাজা'। দিন আনি দিন খাই। কিন্তু রাজার মেজাজে খাই। সিংহের মতো গর্জন করতে করতে খাই। তাই তো ডাক্তারি করার পরও, এতো কবিতা লিখতে পারি। আর উন্মাদের মতো এতো চীৎকার করতে পারি। আমি যখন নক্ষত্রের আহ্বানের কবিতা লিখি- I really mean it! আমি এখন সিঙ্গাপুর থেকে হাভানা চুরুট কিনে, আমার প্রিয় বান্ধব- নক্ষত্রের আদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার প্রস্থানের আগে, আমি দেখে যেতে চাই- স্বামীজি নেতাজির বাংলা, 'জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন' নিয়েছে।

তোমাদের কাছে আমার চ্যালেঞ্জ- তোমরা কি পারো, এমন এক পথে হাঁটতে- যা ভারতবর্ষ বা এই পৃথিবী এখনো হাঁটে নি? কথিত আছে- অতীতে, 'বাঙালি আজ যা ভাবতো, আগামী কাল ভারত তা ভাবতো'। তাই যদি হয়- তাহলে সত্যিই কি পারবে তোমরা এক অভূতপূর্ব পথে হাঁটতে?

তোমরা ধর্ম, রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে- সবাই একত্রিত হও। সামনের নির্বাচনে- তোমরা সব রাজনৈতিক দল এক সাথে মিশে গিয়ে, কেবল যোগ্য মানুষ দ্বারা মন্ত্রীসভা গঠন করো। সেই সব যোগ্য মানুষদেরকে, জনগণ- সরাসরি নির্বাচন করবে। সেই সরকার হবে সত্যিকারের জনগণের সরকার। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার। সেখানে ধর্ম আর রাজনৈতিক দলের, নিকৃষ্ট কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি থাকবে না।

হে বাঙালি, তোমরা নিজেদেরকে অন্যের চেয়ে বড় ভাবো। তাহলে হিম্মৎ আছে- তা প্রমাণ করার? তা যদি থাকে- এখনই রাস্তায় নেমে এরকম একটা জনগণের সরকার গড়ে, তোমার হিম্মৎ প্রমাণ করো। তুমি যে কেবল বাতেলাবাজ, বিঁড়ি খেঁকো, 'মুখে মারিতং জগৎ' বাঙালি নও- তা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখাও।

৯ কোটি জনগণ চাইলে, আইনের মারপ্যাঁচ কোন বাধা নয়। এটা যদি তোমরা পারো- বিশ্বের ইতিহাস তোমাদেরকে কোটি কোটি বছর মনে রাখবে। এখনই তা করে দেখাও বাঙালি, এখনই তা করে দেখাও। এর জন্য, এখনই তোমরা একযোগে রাস্তায় নামো। নিজ নিজ স্বার্থ, এক কেজি চাল আর পশ্চাৎদেশ চাঁটার নেশায় বুঁদ থেকো না আর। রাজ্যের ভবিষ্যৎ যদি নরক হয়- তোমার সন্তান কি সুখে থাকবে তাতে?

তোমরা ভালো থেকো। আমার প্রণাম নিও।


ইতি।

অরুণ মাজী

বাঙালি জাতিকে এক উন্মাদের চ্যালেঞ্জ (বাঙালিকে চিঠি)
Sunday, September 3, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,humanity,letter,peace,unity
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success