'ষটচক্র' বইয়ের কবিতা Poem by Malay Roy Choudhury

'ষটচক্র' বইয়ের কবিতা

‘ষটচক্র' বইয়ের কবিতা
মলয় রায়চৌধুরী

কবিতা আমার
কবিতা আমার সৃষ্টি শুরুর পাঞ্চজন্য শাঁখ
কবিতা আমার ঘুরন্ত-জ্যোতি চক্র-সুদর্শন
কবিতা আমারশত্রু-মারার নন্দক তলোয়ার
কবিতা আমার সীমা ঘোচানোর মূষল কৌমদকী
কবিতা আমার একা লড়বার শারঙ্গ ধনুর্বাণ
কবিতা আমার অব্যাকরণিক নিজস্ব নাগপাশ
কবিতা আমার প্রতিষ্ঠাভাঙা বজ্র চন্দ্রহাস
কবিতা আমার শব্দভেদের মাদনসন্মোহন
কবিতা আমার রুখে দাঁড়ানোর তীব্র জুলফিকার
.

আবার আসবো ফিরে
আবার আসবো ফিরে জানি, কিন্তু কোন বাংলায়?
দুই বাংলাতেই আসবো ফিরে আমি, বুঝলেন জীবনানন্দ
কাক বা কোকিল হয়ে নয়, ঘাস বা কমলালেবু হয়ে নয়
মানুষের হাল-আমল রূপে ফেরবার কোনো আশা নেই
কেননা এখন মানুষের সংজ্ঞা বেশ পালটে গিয়েছে
চাকুরির দৌলতে পশ্চিমবাংলার গ্রাম গঞ্জ শহরতলি
ঘুরে ঘুরে, চাষি তাঁতি জেলে মাঝি ছুতোর কামার
শবর সাঁওতাল মাহাতের দাওয়ায় বসে যেসব দুর্দশার কথা
শুনেছি পঞ্চাশ বছর ধরে, কাটাকাটি, খুনোখুনি
খামার বসতবাড়ি সুখের সংসার পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া
বিরোধ করেছে যারা তাদের গ্রামছাড়া করা
মাটির তলায় সপরিবার জ্যান্ত পুঁতে দেয়া
বুঝলেন জীবনানন্দ, সবই ঘটেছে দেশভাগের বহু পরে
বহু পরে বহু পরে বহু পরে দশ-বিশ বছর তো হবেই
ফেলানি ঝুলেছে কাঁটাতারে, ইলিশ এসেছে লুকিয়ে-চুরিয়ে
এপার ওপার দুই দেশ থেকে কচি কিশোরীদের মুখচাপা দিয়ে
তুলে এনে বিক্রি হয়েছে প্রতিদিন কুমারীত্ব কেনার বাজারে
পরে তারা গোপন জাহাজে পাচার হয়েছে আরবের আরাম হারেমে
তাই আর মানুষের রূপে ফিরতে চাই না আমি
তবু ফিরতে চাই, বুঝলেন জীবনানন্দ, ফিরবোই আমি
বাঙালির মুখের ভাষা হয়ে বেঁচে থাকব চিরকাল এপার-ওপারে

.


বারীন ঘোষালের মৃত্যু
সেই লোকটাকে দেখলুম সফেদ কাপড়ে মোড়া, স্ট্রেচারে শোয়ানো
যখন যুবক ছিল তখন পরিচয় হয়েছিল, কুরুক্ষেত্রের কর্ণ-
দুর্যোধন দুঃশাসন দুর্মুখ দুমুখোরা পালিয়েছে নিজের ধান্দায়
একাকীত্ব কাটাবার জন্য কবিতাপাঠের আসরেতে বসে
মদের বোতলের আনমনা ভাব নিয়ে দু-ঠ্যাঙ ছড়িয়ে
কন্ঠস্বরে কতোগুলো রঙ, সেসব রঙের প্রতিধ্বনি
কবিতার শব্দ থেকে উড়ে-আসা টেক্সচার
প্রতিটি মানুষের হাঁটায় ছন্দের পার্থক্য থাকে
পালটায় মনের ভেতরে তার রসায়ন ফ্যাক্ট্রির নাটবোল্টগুলো
পাঠও একরকমের জরিমানা যা শিক্ষককে চুকিয়ে দিতে হয়
সময়ের ঘড়ি হয়নাকো, কাঁটা হয়নাকো, বকেদের উড়ালেতে দ্যাখো
বিকেল ভরপুর, বাক্যেরা কখনও নিজের কন্ঠে কাঁদতো
কখনও অন্যের, হারেমের মুরগিদের গর্ব, সেলুনে গোঁফের ছবি
স্ট্যালিনের হিটলারের রাজকাপুরের, মৌমাছির চাকের মতন
লেটারবক্স দাঁড়িয়ে রয়েছে পাড়ায়, অথচ প্রতিটি চিঠি
হয়ে গেছে ভারচুয়াল, শিক্ষিত পোকাদের ঝিঁঝিট-মিছিল
বোবার দুঃখ যা ভিড়ের ঘাম থেকে চুয়ে
সবায়ের রক্ত কিন্তু একই রকমের চটচটে নয়
অন্যান্য কবিদের কল্পনার মহামারীতে নষ্ট করে
বারীন, তুমি বলেছিলে ঠিকই, প্রতিটি আকার গলে পড়ে
ছায়ার মতন কায়াহীন, হাসির সিল্কের ভেতরে গুটিপোকা
অন্ধকার দিয়ে কুচিয়ে ছড়ানো শীতকাল
জানালারা বৃষ্টিতে কেঁদে নিচ্ছিল, অনেকের মাতৃভাষা শুধু টাকা
কিন্তু সমস্ত ধারনাই তো পক্ষপাতদুষ্ট হতে বাধ্য, নয় কি তা?
কেননা অতীত কলকাতার ছারপোকা আর মাকড়সাগুলো
ইস্ট ইণ্ডিয়ার জাহাজেতে চেপে আসেনি কি? তোমার
র‌্যানসিড চেলাদার রগচটা লাল-হলুদ মুখোশ পরে কিংবা খুলে
চর্বির রঙচঙে বালাপোষে মোড়া
ফিল্মস্টার বা উলঙ্গ পাগল ছাড়া ক'জনই বা ট্র্যাফিক থামাতে পারে
তোমার মতন? মনে হতো, তোমার ফোটোগুলো দেখে
বুনো দুঃখ আর বোবা ব্যথা মিশে আছে আধা তৈরি বাস্তবের ক্বাথে
হত্যার অস্ত্রের মালিকানা খুনিও অস্বীকার করে
ডাগর-চোখ সুন্দরীকে এক ঝলক দেখেই বুঝে গিয়েছিলে তুমি
তরুণীটি জন্ম থেকে অন্ধ, কাজল পরে আছে কিন্তু দেখতে পায় না
কলকাতার বহু বাড়ি থেকে উনিশ শতক যায়নি এখনও ছেড়ে
যে-ফোড়ায় যন্ত্রণা বেশি সেদিকেইখেয়াল বারবার যায়
ছোটোগুলো অবহেলা ভোগ করে ওৎ পেতে থাকে
বইপাড়ায় মুখে-মুখে পেতল-পেরেক দিয়ে গেঁথা হাসি
কেউ কেউ ধুনুরি-পেটানো পেঁজা তুলোর কবরে বেঁচে আছে
আন্যের মতাদর্শের ঘুরঘুরে প্রতিধ্বনি নিয়ে
অপেক্ষায় আছে, কখন বসন্তকাল ডগা থেকে ফুসলিয়ে
মুকুল বের করে এনে দেবে, যদিও কোনো-কোনো যোনির
প্রসববেদনার অভিজ্ঞতা কখনও হয় না
অভিনন্দনে ঈর্ষার দ্যুতি কেন থাকে বুঝে গিয়েছিলে
ব্যাপারটা কতো আশ্চর্যের, ঠোঁটের ওপরে জিভ দুবার বুলিয়ে
মুখের ভেতরে কথা গড়ে নিতে সকলেই পারে
মঞ্চে দুতিনবার কেশে দুঃখ আবৃত্তি করে চলে যায় তারা
যতোরকমের বাস্তবতা হতে পারে সবগুলো ভেঙে-ভেঙে
পরখ করতে তুমি কেননা সব শব্দ বাক্য অন্যলোকেরা
ব্যবহার করে-করে করে-করে করে-করে, মুখের ও হাতের ময়লা
মাখিয়ে দিয়েছে, জানতে যে রামকৃষ্ণকে ছোটো করে চুল
ছাঁটতেই হতো, চৈতন্যকে মাথা আর দাড়ি প্রায়ই কামাতে হতো
অথচ তোমার শবযাত্রায় তুমিই ছিলে না
এটা নিয়ে ভাবছি সেদিন থেকে যেদিন স্ট্রেচারে শুয়েছিলে
শাদা চাদরের থেকে দুই পা বেরিয়েছিল


.

ডোমনি
ডোমনি, তুইই দয়াল, খয়েরি চাউমিন তাপের খোলসে
জিভ দিয়ে পড়ে থাকি, টাকরা মন্দাক্রান্তা ছন্দে কাঁপে
ডোমনি, তুইই দয়াল, চরণ বিভক্ত তোর মধ্যযতি দিয়ে
ঠোঁট চেপে পড়ে থাকি, বানভাসি ঢেউ খেলায় নদী ঢুকে আসে
ডোমনি, তুইই দয়াল, টানপ্রধান অনুষ্টুপ তোর তরল পয়ারে
মুখ দিয়ে পড়ে থাকি শ্বাসযতি শ্বাসাঘাতে ছন্দখেয়ে টলি
ডোমনি, তুইই দয়াল, বুকের স্তবকে রসের স্পর্ধা এনে দিস
নাক দিয়ে পড়ে থাকিহরিণেরা কস্তুরি নাচে চৌপদীলঘু
ডোমনি, তুইই দয়াল, স্বর্ণলতা কোঁকড়া চুলের আয়েসে
কান দিয়ে পড়ে থাকি, বাণের বাকসম্ভোগী ডাক শুনি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আদি আলুথালু ক্রৌঞ্চী তোটক তৃণক
গাল রেখে পড়ে থাকি, ত্রিগুণবারি বাকসম্ভোগে ঝরে কামচণ্ডালী
ডোমনি, তুইই দয়াল, চাপল্যছাক্কস দ্রুতছন্দের আদিস্বরে
গোঁফ দিয়ে সুড়সুড়ি দিই তোর কালিকাগহ্বরে, ধামালি দিগক্ষরা ওরে
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমি খালিপিলি আকখা বিরামচিহ্ণে থামি
মাথা গুঁজে পড়ে থাকি, অভেদ খুলে যায়, বেরোয় সিঙ্গলমল্ট মধু
ডোমনি, তুইই দয়াল, স্হিতিস্হাপক লঘুদ্রূতি স্বরধ্বনি ওঠে
হাত রেখে পড়ে থাকি, গোলাপরঙ ধরে, তোর মোহন আবসাঁথ উঁকি দেয়
ডোমনি, তুইই দয়াল, অঙ্গটায় সুখ নেই, অঙ্গের চৈতন্যে পুরো সুখ
বুক রেখে পড়ে থাকি, রঙমহলে ঢুকি, রিপুকে দমন করে নদীর রক্তমুখ
ডোমনি, তুইই দয়াল, মন বলতে যা বোঝায় তা ওই দেহযজ্ঞখেলা
উরু তুলে পড়ে থাকি, দেহমাতাল হই, মানবিক দেহযজ্ঞে ফারাক করিনে
ডোমনি, তুইই দয়াল, শরীরে রসের ভিয়েন, কামেই কাম নিবারণ
সারাদিন স্বভাবঘোরে ঠেকায় সুরবাঁধা, গাধার পরজন্ম হয়, আমার তো নেই
ডোমনি, তুইই দয়াল, দেহরস উর্ধগামী করাই সাধনা, অন্ত্যমিলে কোনো মিল নেই
স্হানের অর্চক আমি, ডুবতে চেষ্টা করি, মাংস ছেড়ে প্রেমের স্বদেশ নেই কোনো
ডোমনি, তুইই দয়াল, ফাটলের গান না বেরোলে বহু কষ্টে রাতদিন কাটে
যতো ঝড় সব খামোশ তোর ও-তল্লাটে, চাতক প্রায় অহর্নিশি, চরণদাস আমি
ডোমনি, তুইই দয়াল, লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে দিয়েছিলি সেই ষাটের দশকে
তেকোনা মানবঘর আজব কারখানা, বন্ধুরা শত্রু হল শাঁখ-গেঁড়ি-শামুকের চেলা
ডোমনি, তুইই দয়াল, মলয়দাস ভণে, শুনো গাণ্ডুগণ, কয়লাঅঙ্গ কালোলাল
চাপান-ওতোর চলে, বিরল তিমিরজালে, মশকগৃহিণী বসে শত্রুদের নিতম্বপরে
ডোমনি, তুইই দয়াল, কৌশলে সাড়া দিস, বীজরস শুষে নিস, যেন চোরাবালি
অনল-হিল্লোল-ধারা, মাথাথুয়ে বর্ত্মফাঁকে, বিচিত্র আলোকোদয়ে চাটি রসমধু
ডোমনি, তুইই দয়াল, অলক্ষ্মী অলকায় যাক, অলক্ষ্মী অমরায় যায় যাক
মাংসের ছটায় মজে, কালো পদ্মফুলে সেজে, চটচটে মাত্রাবৃত্তে অন্ধকার হবি
ডোমনি, তুইই দয়াল, ঢুলু-ঢুলু দুই চোখে, ছটফটাস বেওকুফ মাস্তানের ঢঙে
হাঁফাস আর বলে উঠিস, করুক্ষেত্র কোথাকার, ভেতরে ফেলিস না কেন
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমি তো বাউলক্ষ্যাপা, ওরে এটাই আসল শিক্ষে
মলয়হাংরি বলেছেন জোয়ার ভাটায় চলে ফেরে সাগর কিন্তু শুকায় না রে
ডোমনি, তুইই দয়াল, কী করিতে কিবা করি, বীর্যে বোঝাই তরি
ছিলুম কোথা এলুম হেথা যাবো কোথায় কার সনে প্রেমের উর্ধলোকে
ডোমনি,তুইই দয়াল, মনের মানুষ বলে কিছু নেই, সবই দেহের মানুষী
আদিশক্তি পরম যুবতী আমার দেহ চালাস তুইমানুষ আড়তরসিক
ডোমনি, তুইই দয়াল, সাধনসঙ্গিনী, বিরল তিমিরজালে ফাঁসালি আমাকে
বাবা বলে কেন ডাকিস, আমার আলজিভ নেই, গানের কন্ঠস্বর নেই
ডোমনি, তুইই দয়াল, তুই কালচেদেহ, ডাগর দু'চোখ, চেরিফল বুক
মা বলে ডাকতে পারি না তোকে, মনে হয় ইনসেসচুয়াস এই বাউলসম্পর্ক
ডোমনি, তুইই দয়াল, আলোজ্বলা এ-সম্পর্ক, ক্ষ্যাপাহাংরি সহ্য করে বেমালুম
মাবুদ মজুদ তুই এই শরীরে থাকিস, তোকেই ভজনা করি আমার কবিতায়
ডোমনি, তুইই দয়াল, মলয়দাস বলে মিছে গণ্ডোগোল ভবে এসে শুনতে পাই
এই যে বীজ বা বীর্য, এর কী আলাদা কিছু আছে? চাঁদ সবায়ের এক, চাঁদের আলোও
ডোমনি, তুইই দয়াল, মানুষের বীজে হয় না ঘোড়া, ঘোড়ার বীজে হয়না প্রজাপতি
হিন্দু শিয়া-সুন্নি মুসলমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ জৈন শিখ আহমেদিয়া ইহুদি অনাস্তিক
ডোমনি, তুইই দয়াল, খাজাবাবা খাজাবাবা মারহাবা মারহাবা, মস্ত কলন্দর ওরে
ইশকের গাঁজা ফুঁকলে হয় রুহ তরতাজা যেন নৌকা চরস টেনে চলেছে মাতাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, সুকুমার চৌধুরীকে বল দেখি আশেক হলে মাশুক মিলবে ওর
পড়ে থাকুক জিভ ঠোঁট মুখ গাল বুক ঠ্যাঙ হাত দিয়ে মন্দাক্রান্তা আমিষাশি বীর্যকবিতায়...
.

বুড়ি
এই বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতি রাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেকে মজে খায়
দিদিমার মতো বলেছে, মরবে
যখন, চুড়ি-নাকছাবি খুলে নিয়ে
তারপরে আলতা-সিঁদুর দিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হলো সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হলো শাঁখাও পরেনি
দামি দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে, এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্হ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে, কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর, কারুক্কে নয়
একথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি ।
.

অবন্তিকার শতনাম
আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়...ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে...বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী...বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে...ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ...ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই...ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই...যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়...প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়...পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না...যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম...অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো...পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই...কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য...তাহলে ভগাঙ্কুরের...ও বলল সেটা আবার কি জিনিস...ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো...পান্তুয়া চলবে...ধ্যুৎ...রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়...ছানার পায়েস...নারকেল নাড়ু...রসমালাই...নকশি পিঠা...রাজভোগ...লবঙ্গলতিকা...হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়...আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা...ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে...হ্যাঁ...এগোই...পাছার কি দুটো নাম হবে...ডিসাইড কর...ডিসাইড কর...তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না...না না ফের ফের...লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী...পারফেক্ট হয়েছে...তাহলে পাছার একটাই নাম দিই...নরম নরম কোনো নাম...পাসওয়র্ড...ঠিক...এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড...ধ্যাৎ...পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস......গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন...ছিঃ...তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি...গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে...ওক্কে...তারপর...ঘুমোবো কখন...বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া...ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া...রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না...ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে...শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে...না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়...ছাড় ছাড়...এগো...মানে নামতে থাক...তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো...তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ...বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ...এবার ওপরে আয়, , , মুখে...ঠোঁট...ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি...আচ্ছা...ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি...ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো...খাস...থুতনিতে সেকেন্ড চিন...পিৎজা কোক খাওয়া থামা...থুতনির নাম দিই গোলাপজাম...কেন কেন কেন...পরে বলব...এখন দুচোখের নামদিই...শতনাম হলো না তো...চোখ বোজ চোখ বোজ...তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার...তাহলে আয়...আজ তুই ওপরে না নিচে?
.

বাংলার ত্রস্ত্য নীলিমা
সোনালি ডানার চিল নাই আর, কাঁদেও না, এখন কেবল
সারাদিন ডিজেল আকাশ জুড়ে শকুনেরা পাক খায়
আপনার দেখা সেই সব বধুরাও নেই; তারা সব ধর্ষিত হয়ে
ধানসিড়ি নদীতীরে লাশ হয়ে আছে । উবে গেছে ব্রাহ্মধর্ম-
গাঁয়ে ও শহরে যখন তখন দাঙ্গা লেগে যায়, লাশ পড়ে থাকে ।
আমিও আপনার মতো মিশতে পারি না হায় সবায়ের সাথে
মনে হয়ে বিশ্বাস করার মতো কিছু নেই, কেউ নেই
বাংলার ত্রস্ত্য নীলিমা ছেড়েআত্মনির্বাসন আজ ভালো মনে হয়
.

অবন্তিকা আমরা ইতর
অবন্তিকা, এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার আর তোর বাড়ির সামনের ম্যানহোল আমি বা তুই পরিষ্কার করি না
দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, বল তুই
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
ম্যানহোলে নেমে লোকটা মিথেনগ্যাসে মরে গেলে আমি বা তুই তাকে তুলি না
দলিতেরা তোলে, আরও কতোকাল তুলবে, বল তুই
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা তোর বাড়ির গুয়ের ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে গেলে আমি বা তুই খালাশ করি না
দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা তোর বাড়ির সামনে লাশ পড়ে থাকলে আমি বা তুই ভ্যান রিকশায় নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমি বা তুই ভ্যান রিকশায় লাশকে পায়ে দড়ি বেঁধে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমি বা তুই লাশকাটা ঘর থেকে লাশকে মর্গে নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
শ্মশানে বা গোরস্তানে নিয়ে গিয়ে বেওয়ারিশ লাশের গতি আমি বা তুই করি না
দলিতেরা করে, আরও কতোকাল করবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা তোর পাড়ার ময়লা ট্রাকে করে আমি বা তুই ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলি না
দলিতেরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
কবিতাপাঠের শেষে শালপাতা প্লাস্টিকের কাপ কাগজের প্লেট আমি বা তুই ঝেঁটিয়ে তুলি না
দলিতেরা ঝাড়ু লাগায়, আরও কতোকাল ঝ্যাঁটাবে, তুইই বল
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
গোরু-শুয়োর মরে গেলে তাদের চামড়া ছাড়াবার জন্য আমার বা তোর ডাক পড়বে না
দলিতদের ডাক পড়বে, সেই ডাকে দলিতদের সাড়া দেয়া উচিত নয়
আমার তোর পশুদের লাশ বছরের পর বছর বেওয়ারিশ পড়ে থাকলে আমাদের ইতরত্ব ঘুচবে
.
মৃত্যুর পাঠক

পাঁচদিন পাঁচরাত ঝুলেছিল অদ্রীশ বিশ্বাস, আমার বিদগ্ধ পাঠক,
বুঝতে কি পেরেছিল পচে যাচ্ছে ক্রমে, সময়ের সাথে,
বনিবনা করতে পারেনি মানুষের সাথে, পারেনিকো কেন?
জীবনানন্দ তো যাহোক কিছুটা পথচর নিশাচর হয়ে
মানিয়ে ছিলেন তো নিয়ে, অক্ষরের সাথে, ইতিহাস বই থেকে খুঁটে
কে ছিল আত্তিলা, দারুচিনি গাছের জঙ্গল কোন মস্তিষ্কের কোণে-
অদ্রীশ পারলো না, বলেছিল, ওকে রায়গঞ্জের পথে সাইকেল থেকে
একদল মাস্তান টেনে বেদম মেরেছিল, ওকে চারতলা থেকে হিঁচড়ে
টেনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিল পাগলাগারদে;
বলেছিল পশ্চিমবাংলায় দুইটি ঘটনা আর ঘটবে না কোনোদিন
নেতাজির ফিরে আসা এবং সিপিআইম-এর গদিতে ফিরে আসা-
এ সেই অদ্রীশ, সোনাগাছি গিয়ে বিনয় মজুমদারের স্ত্রী ও ছেলের
ফিল্ম তুলে এনেছিল, কতোকিছু সংগ্রহ করেছিল একাধিক বই লিখবে বলে-
গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার সময়ে পৃথিবীকে ফালতু জায়গা ভেবে
গন্তব্য শেষ করে নিলো । পাঁচদিন পাঁচরাত ধরে ঝুলে পচতে থাকাকে
মৃত্যু বলা যায়? তারপর মর্গে গিয়ে আরও সাতদিন সাতরাত
চুপচাপ শুয়ে অদ্রীশ যা চেয়েছিল তা কি পেয়েছিল, পচে গিয়ে?
আসলে প্রথম থেকে অদ্রীশ চেয়েছিল মৃত্যুর পাঠক হতে
ওর আগে আর কেউ মৃত্যুকে বিনির্মাণ করার চেষ্টা করেনিকো-
অদ্রীশ বিশ্বাস করলো, কিন্তু জানিয়ে গেল না, বিনির্মাণের চিরকুট
লেখবার প্রয়োজন মনে করলো না, অনির্ণেয় রেখে গেল উত্তরখানা ।
.
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোর্বো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তর্মুজ আঙরাখার ভেতর চলে যেতে দাও
চুর্মার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছি না, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি জানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্হতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবষহ ঈশ্বরের পোঁদে চুমো খেতুম
কিন্তু কিছুই ভলো লাগছে না আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মূত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উৎসব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোল্কাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে আমি কী কোর্বো বুঝতে পার্ছি না
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্হতা
যোনোকেশরে কাঁচের টুকরোর মতন ঘামের সুস্হতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পার্ছি না কী জন্যে আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণচৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমায়
জন্মমুহূর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ূটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাপতাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারই শুক্র থেকে জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা আন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম?
শুভা না থাকলে আমিও কি পেশাদার ভদ্রলোক হতুম মৃত ভায়ের মতন?
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতীচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও আমায়
পুনরায় সবুজ তোশকের ওপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছি না
তুল্কালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্যে আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
আমাকে তোমার লাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে?
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁর পেচ্ছাপে বয়ে যাইনি?
কেন আমি রজোস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায়?
অথচ আমার নীচে চিত আধবোজা অবস্হায়
আরামগ্রহণকারিণী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হি২স্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এসমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামায় শুকিয়ে-যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌনপর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখি আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার আপ্রতিষ্ঠিত খেয়োখেয়ি
.

লালসেলাম হায়

মুখের গহ্বরে এক জান্তব গোঙানিডাক চলাফেরা করে
জেলহাজতের ভিড়ে ত্রিকালজ্ঞ ভিড় দেখে চমকে উঠি
এরা কারা হাতকড়া পরে ঠাঠা হাসে সারাদিন
বাইরে যারা রয়ে গেল ঝুঁকিয়ে দাঁতাল-মাথা
তারাই বা কারা
জল্লাদের ছেড়ে দেয়া প্রশ্বাস বুক ভরে টানে

চাই না এসব ধন্ধ
মশারি খাটিয়ে বিছানায় সাপ নারীর বদলে

নৌকোর গলুই থেকে ছুরি হাতে জ্যোৎস্নায়
বুকের ওপরে বসবে লুঙিপরা রোমশ সারেঙ
নাসারন্ধ্র থেকে বন্দুকের ধোঁয়া
"বল শালা শকুন্তলার আঙটি কোন মাছে আছে"

জানি তবু বলতে পারি না
মুখের ভেতর আঙটি জিভের তলায় আমি লুকিয়ে রেখেছি।
.
আমি একটি পশু
আমাকে বুঝছেন না আপনি
তা কেন আমার দোষ হবে
হয়তো তা আপনার গুণ!

মানুষের মতন বাঁচতে হলে
কতোটা দুঃখের প্রকোপ
সহ্য করে যেতে হবে জানো?

হয়তো জানেন না আপনি
সুস্বপ্নের চেয়ে দুঃস্বপ্নকে
গোপনে ভালোবেসেছেন!

এও তো জানেন আপনার
জীবনের কোনও গল্প নেই
সব গল্পে আরেকজন আছে!

চিতায় মাকে তুলে দিয়ে
তাঁর যে নিপল পুড়ে গেল
সে কথা কি মনে এসেছিল?

চিতায় শবের পোড়বার
শব্দ থেকে স্বরলিপিহীন
গানগুলো ধোঁয়া হয়ে যায়!

যে যুবক যুবতীর মুখে
মেরেছে অ্যাসিড ছুঁড়ে, জানে
সে-ই শেষবার তার মুখশ্রী দেখেছে!

ম্যাক্স ব্রডকে কাফকা বলে ছিলেন
ছাপিও না সব লেখা নষ্ট করে ফেলো
ওনার কবর কেন প্রাগেতে রয়েছে?

প্রেমের প্রতিশব্দ আরব ভাষায় নেই
তাই ওনাদের চারজন বউ আর
বাঁদি নিয়ে সমস্যা হয়না কখনও!

মৃত্যুকে চেনেন? লোকটা আসলে
ভাগ্য নিয়ে ব্যবসা করে খায়
এ-বানিজ্যে মনোপলি কেবল ওনার!

আমার প্রেমিকা বলেছিল
স্ট্যালিন হিটলারের মতো
একনায়কের সঙ্গে শুয়ে সুখ!

অত্যন্ত সুন্দরী হলে তার সাথে
সঙ্গমে ভরবে না মন কোনোদিন
বহু অঙ্গ অবহেলা পাবে!

রাজনীতিকেরা আর ধর্মগুরুরা
অর্শের মতন বসতে দেবে না শান্তিতে
তবু বলবে অনুগত হয়ে বসে থাকো!
.

ইলোপকন্যা
তোর বেডরুমে তোকে পেলুম না, কি ঝঞ্ঝাট, মানে হয়
অবন্তিকা, কোন নদী নিয়ে গেছে, বরফের ডিঙি ভাসালুম
দ্যাখ, কেলেঘাই চূর্ণী গুমনি জলঢাকা ময়ূরাক্ষী কংসাবতীর
স্রোতে, তোর ঘাম নেইকো কোথাও, ভাল্লাগে না, জেলেরাও
পায়নি তোর ফেলে দেয়া অন্ধছোঁয়া, পূর্ণিমাও অন্ধকারে,
কি করে চলবে বল, পেঁয়াজের কান্না নেই, ধ্যাৎতেরি
চুড়ির বাজনাহীন, চুমুগুলো কোন সপ্নে রেখে গিয়েছিস
খুঁজে পাচ্ছিনাকো, কাউকে তো বলে যাবি, মুখের প্রতিবিম্ব
আয়নাসুদ্দু ফেলে দিয়েছিলি, ওঃ কি মুশকিল, পাশে-শোয়া শ্বাস
অন্তত রেখে যেতে পারতিস, আলমারি ফাঁকা কেন, বালিশে
খোঁপার তেল নাভির তিল কাকেই বা দিলি, চেনাই গেল না
তোর মনের কথাও, টুথব্রাশে কন্ঠস্বর নেই, চটিতে নাচও
দেখতে পেলুম না, এমন কষ্ট দিস কেন অবন্তিকা, চুলের
নুটিতে থাকত ডাকনাম, ফুলঝাড়ু চালিয়েও সাড়া পাচ্ছি না,
অফিস যাবার রাস্তা এসে তোর জন্যে মাকড়সার জালে
হাতের রেখা সাজিয়ে চলে গেল তোরই মুখের ইলিশস্বাদ
নিয়ে। আরে, ওই তো, যে-ছোকরার সঙ্গে পালিয়েছিলি তুই
তারই জুতোর ছাপের স্বরলিপি মার্বেল মেঝেয় আঁকা…
.
মলয়দাস বাউলের দেহতত্ব
ডোমনি, তুইই দয়াল, যখন বিদেশে যাস কেন রে আনিস কিনে সেক্সটয়?
ভাইব্রেটর, ডিলডো, বেন-ওয়া-বল, গুহ্যের মুক্তমালা?
ডোমনি, তুইই দয়াল, জানি কেন বিডিএসএম কবিতার বই এনেছিস,
জি-বিন্দু হিটাচির ম্যাজিকের ছড়ি? নিপল টিপে কাঁপাবার ক্লিপ?
ডোমনি, তুইই দয়াল, হাত=পায়ে দড়ি চোখে ঠুলি আমাকে চেয়ারে
উলঙ্গ বেঁধে রেখে দিয়েছিস, নিজের ফাঁস খুলে তলাতল রক্তের স্বাদটুকু দিলি
ডোমনি, তুইই দয়াল, শুদ্ধ প্রেমে মজল যারা কাম-রতিকে রাখলে কোথায়
চাবুক মারিস তুই, চুলের মুঠি ধরে ক্ষিরোদধারাকে চুষে বের করে নিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, চাতক স্বভাব নাহলে অমৃতের দুধ তুই দিবিনাকো
আমার খিদে নেই, মুখের ভেতরে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ খেয়ে মজে গেছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, যতো ইচ্ছে আনন্দ কর, দেহ নিয়ে খেল
আমি একটুও নড়ব না, আহ উহ করব না, যতো চাই ধাতুবীজ নিস
.

হাততালি

উৎসর্গ: মীরা বেনুগোপালন
তারপর পলিতকেশ কাশফুলে
পইপই বারণের পুশতুভাষী দুর্যোধন বেরিয়ে পড়েছে
দগদগে রোদে
চন্দনরক্তের পাথরপোশাক রক্ষীদের সরিয়ে
অন্ধকারকে খুঁচিয়ে বের করে এনেছেন সকালের বিকল্প
কাঁচা নরকের উদাত্ত অনুভব
হাহ
রোগা পৃথিবীর শিয়রে রাতজাগা নেশুড়ে
হরতালের দরুন ক্রুশকাঠ থেকে নামতে পারেননি হাততালি
চোখে জলসুদ্ধ হেসেছে শিশুরা
.
একথোকা অন্ধকারে জোর-করে দেখানো স্বপ্নে
যাত্রীডুবির খবরে ডুকরে উঠেছেন লালশালু-নৌকোর হাততালি
না-খেতে পাওয়া হলুদ শীতে
গরম আলকাৎরায় ফোটা ফরসা রজনীগন্ধা
যখন নরুন-খোদাই বাতাসে
নিকেল-চকচকে বিচিবীজ
কাঁধে চাঁদ নিয়ে ভররাত শাসিয়েছে শ্যাওলাধরা করোটি
ঘাসফুলে না-ফোঁপানো ফড়িংপুরুষ
বারবাডোজ পেশির ব্রোঞ্জপুরুষরা
জ্বরগরম কপাল ছুঁইয়েছে তাঁর পশুপশম নাভিতে
.
চিরুনিধার বৃষ্টিতে
ভুরু-কোঁচকানো ঢেউয়ে শুয়ে
জলকে চাপড়েছে ডিজেলচাদর ছায়া
সমস্ত ডানা সরিয়ে ফেলা হয়েছে আকাশ থেকে
হরিবোল দিতে-দিতে দল-বেঁধে সাংবাদিকদের সদ্যছাপা সকাল
চাবির ঘোলাটে ফুটোয় যাবজ্জীবন কয়েদির চোখ
বাইরে
হেমন্তের ঢেঁকিতে গোলাপ-গোড়ালি
লালুং রমণি
ঘামসুগন্ধে বিহ্বল প্রতিধ্বনি ফেরত চেঁচাতে ভুলে যায়
.
তারপর
অপারেশান বুলশিট
মুখে ঘা
শহিদ চবুতরায় অর্থনমিত লিঙ্গে যুবাবিপ্লবীর শীৎকার
পেঁয়াজবাটায় ভেজা আমিষ হৃদয়
চোখে-কালি হাসনুহানা
জলে ভিজে পদ্মফুলের নিউমোনিয়া
হুঁকোটানা বুড়ো রেলগাড়িতে মেঘের চেষ্টাকৃত গর্জন
আর সোনার মাকড়সার জালে ঢাকা বিদ্যুৎ
হোঁতকা মরদকে সবুজ পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়েছে ব্যাঙযুবতী
.
ব্যাবিলনের শাদা নরকহুরি
উত্তরমুখো নকশিমেঘের ওষুধবড়ি গিলিয়েছে
রেড়িপ্রদীপে ঝুঁকে ঘুরঘুরে শুঁটিপোকা
এলোচুলে ঢাকা উল্কামুখ রাজকন্যার মুকুট থেকে গানের টুকরো
পায়ে রক্তমাখা রাজহাঁস
যখন-তখন চেয়েছে বাড়ি-ফেরত সৈন্যের বসন্তকাল
সাজিয়েছে খেলাচ্ছলে-মারা চরমযুবার মা-বাপের সবুজকাঁথা ধানক্ষেত
তুঁতেরঙা কুয়াশা এগিয়েছে সিংহচামড়া শিকারির গোপন ঘাসপথে
বিবাহযোগ্য ঘুড়সোয়ার হাততালি
হেই হো
.
কিছুটা অপরিচিত থাকার কষ্টে
যে-বাগান সুপুরিগাছকে কড়ে আঙুলে দাঁড় করিয়ে আজীবন
দুরপাল্লার ঝড়ে
ল্যাম্পপোস্টের নিচে
বৃষ্টি মুড়ি দিয়ে
সেই ভাঙচুর চেহারাই তাঁর আঙ্গিক
যে-আদল খুঁজেছে শরীর এলিয়ে-দেয়া ঢেউ
কথকনাচে বাঁধা ব্রহ্মান্ড
মন্দিরের চোরাকুঠুরিতে মুখবাঁধা
হাততালি
.
আগুন যখন ধোঁয়া থেকে আলাদা হচ্ছে
যেটুকু সময়ে
আলজিভ
দুই হৃৎস্পন্দনের মাঝে তেতো হয়ে ওঠে
জলপথে এসে আক্রমণ করেছে জ্বরবিদ্রোহী
গাছে-গাছে ঝড়কালীন পলাশের লাল-সখ্যতা
ঠিক যেন চিড়িয়াখানার ভবিষ্যৎহীন
শেষ হাওয়ায়
পটকা ফাটিয়েছে রাংতাপাড় মেঘ
যেন এক্ষুনি এসে পড়ল বলে হাততালি
.
রাতভর ছড়নো হাততালি সকালে এককোণে ঝেঁটিয়েছে ঝাড়ুদার
আঘাতহীন ভালোবাসায়
থলেতে পুরেছে অসুস্হ গঙ্গানদীকে
এক বা তিনরঙা পতপতে রামধনু
কবরে পাওয়া গেছে ভাত খাবার কাঁসি
অত্যাচারিতের কাতরানিতে পড়েছে হাড়ের খিলান
কেউ সুখী নয়
কেমন আছো জানতে চাইলে বলেছে
ভালো
পাকের পর পাক কাঁটাতার কোমর থেকে খুলে দিয়েছে
.
নষ্টের শপথ আওড়ানো শেষে
শহরগ্রামে রোঁদে বেরিয়েছে মড়াসংগ্রহকারী
কষ্ট হলে কাঁদতে পারার আশীর্বাদ চেয়েছে নগরবাসী
ওদিকে হাততালিবাদক
ভগ্নস্বাস্হ্য আকাশে
পাখিদের গান শুধরে দিতে চেয়েছে
তারা-দপদপে অন্ধকারে
বালিশ-জড়ানো বর্ষায়
পালামৌ জেহানাবাদ রোহতাসে কাদাপেছল মাগুরের আঁশটে হাঁপানি
শামুক-থুতনি বুড়ির চোখের পাতায় ধূসর সোরাগন্ধক
.
আধপচা হুগলি নদীর ডাগরচোখ পারশের গান শুনতে
কেউটে যুবতীর শরীর থেকে খসে পড়েছিল শীতের মিহিন আদল
আচমকা সজারু
বিয়ের লাল বেনারসিতে শিমুল
এদিকপানে মুখ করে দাাঁড়িয়েছে ছোকরা সূর্যমুখী
গরম তেলে লাল দুহাত উড়িয়ে স্বস্হ্যবতী কাঁকড়া
ভাতের হাঁড়িতে নেচেছে সফেদ-মসলিন নরম অপ্সরা
তখন অন্ধকারে কেঁদে নিয়ে আলোয় হেসেছে হাততালি
হাসপাতালের বিছানায় লোহার শেকলে বাঁধা শুনেছে
টেবিল ঘড়িতে সারারাত গ্রেপ্তারের ঠকঠক ঠকঠক ঠকঠক

Wednesday, February 12, 2020
Topic(s) of this poem: avant-garde poetics
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success