কবি সৌমেন চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ' ব্যক্তিগত সংহিতা ও পিতার শূন্যতা ' পড়ার পর আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি
অ্যাবস্ট্রাক্ট ফিজিওলজি ও সন্ন্যাসীর শূণ্য স্থানাঙ্ক বিন্দুগুলি
নিমাই জানা
গর্ভকেশর অথবা সহজ পুংকেশর ছাড়িয়ে এই সময়ের এক বিশিষ্ট কবি যিনি আলোক নয় আলোর মতো এক স্বপ্রভ বস্তুর দিকে ধাবমান, ক্রমশ তার শরীরের অঙ্গানু অথবা শুক্রাণুর ভেতর প্রতিদিন চিরহরিৎ বৃক্ষ স্থাপন করেন অলৌকিক হয়ে যাওয়ার আগে, তিনি রোপণ করেন এক একটি বিজাতীয় নক্ষত্র বিন্দু, নক্ষত্রের ঠোঁটে তিল পরাগী ফুল জুড়ে দেন । সবাই রজনীগন্ধা মুখে নিয়ে সন্ন্যাস হয়ে যাওয়ার গর্ভপাত চিহ্ন রেখে যায় নিজের মনস্তাত্ত্বিক খেয়াঘাটের কাছে, তিনি আর কেউ নয়
এই সময়ের বিশিষ্ট কবি সৌমেন চট্টোপাধ্যায় ।
একটা কবিতা ' ব্যক্তিগত সংহিতা ও পিতার শূন্যতা ' পড়ছিলাম । কবি আসলে একটা প্রগাঢ় অন্ধকারের মায়া জগত সৃষ্টিকারী কোন যজ্ঞের হোতা, অন্ধকারের ভেতর থেকে আরও প্রাচীনতর থেকে প্রাচীনতম কোন ধ্যান বিন্দুর কাছে এক অন্ধকূপের ভেতর বসে বসে তিনি রচনা করেছেন এমন ব্যক্তিগত সঙ্গীতকে । আমি সঙ্গীত বললাম । নিজের ভেতরে যা বিরহের সুর বাজিয়ে নিজেকে পুলকিত করে, বিরহ তখন বিরহ থাকেনা বিরহ এক অনন্ত সঙ্গীত হয়ে যায় । সন্ন্যাস করে দেয় আমাদের সব বৈষয়িক চিন্তাকে । আমরা ক্রমশ পারোলৌকিক অথবা অতিলৌকিক হয়ে যাই ।আমি বানপ্রস্থের কথা শিখে নিতে পারি বিষধর বিষাদকে ফেলে । সংহিতা খালি শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়, সংহিতা কখনো একটা প্রাচীন পাঠ্যপুস্তকের মর্মভেদী উচ্চারণ কথাও নয়, সংহিতা আসলে নিজের ভেতর থাকা আরেকটা মানুষ, যার গায় কেবল অসংখ্য কঙ্কাল, জীবাশ্ম মাখার পর সে কেবল শ্মশান থেকে উঠে আসবে সব দিক নিদর্শন ফেলে ।
কবি গভীর এক মন্থকূপের ভিতরে নিজেকে মন্থন করেছেন, কখনো তিনি বলেছেন পিতার মতো শূন্যতা আর কিছু নেই অথবা প্রাচীন বটের নিচে দশমিক চাঁদ মৃত্যু । সেখানে ঠিক বট গাছের মত নিজেকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরে আর এক দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যাওয়ার পর সব গর্ভ ছিন্ন করে আসা অসংখ্য মানুষের মুখ থেকে কবিতা শুনতে পারেন । একটা স্নেহঘর অথবা জলের মায়াঘর । এখানে অতৃপ্ত অথবা সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো শব্দ নেই । যেখানে নিজেকে ভেঙেচুরে জীবাশ্ম হয়ে যাওয়ার গল্প থাকে । শ্মশানের পাশে বসে থাকলেই এমন জীবাশ্ম গুলো উড়ে উড়ে বেড়ায় চতুর্দিকে গর্ভরেনুর মত । কবি কখনোই অস্বীকার করেননি পিতার উদর দেশে জমে থাকা আদিম মৃত্যুর রক্ত জল অথবা পিতার শূন্যতা ছেয়ে আছে রাতের পরীর মত । তাকে একটি কাল্পনিক ইহজগৎ বলে মনে হয় । আসলে শ্মশানের পাশে গেলে সব মানুষেরাই একে একে উঠে এসে জানিয়ে যায় তাদের কুশল কথা, সেসব দ্রাক্ষা ফলের মতো ঝুলে থাকে আমাদের মাথার চারপাশে । তখন নিজের করোটি ছিঁড়ে নিজেই ভক্ষণ করতে ইচ্ছা করে মায়া জলের মতো । তিনি মায়া পাথর অথবা পরশ বিবাগী থেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তিনি আরও এক নক্ষত্রলোকের কল্পনা করেছেন, সেই নক্ষত্রলোক জগতে ও কোন সুখ থাকে না, আসলে তিনি ঠিক রচনা করেছেন শরীরী অংশ ।
এই দুটি বস্তুগত প্রভেদের ভেতর একটি আরেকটার চেতন চিহ্ন বরাবর তিনি একটি বিভাজিকা এঁকে দিয়েছেন দ্রাঘিমা রেখার মতো । তিনি শরীরের এই চেতন বিন্দু নিয়ে হেঁটে গেছেন প্রতিটি মহাজনপদ । সন্ন্যাসীর ভিতরে বিদগ্ধ অস্তিত্ব এই কথাটি পড়ার পর ভাবছিলাম মানুষের ভেতরে যে অজস্র রিপু রয়েছে সেই রিপু থেকে ছুটে এসে প্রতিটি মানুষ সন্ন্যাসের আলখাল্লা পরে নেয় না কেন । ওই রাতের অন্ধকারের দিকে কেন হেঁটে যায় না সবাই ।নিজের পায়ের নিচে দাঁড়ানো ছায়াকে ভক্ষণ করলে এক সুস্বাদু অনুভূত হয় কবি নিজের ছায়াকে কখনো দেখেছেন গোখরো সাপের মতো সুস্বাদু অমৃত ফলের টকটকে সবুজ গন্ধ দিয়ে ।এখানে কবি রোপন করেছেন একটি গর্ভজাত ফসল । গর্ভজাত ভ্রুণেরা ক্রমাগত মাতৃরেখায় এসে কত স্পষ্ট একটা গণিত শিখিয়ে যায় আমাদের । এখানে কোন উপনদী নেই । এখানে কোন আলাদা করে ব দ্বীপের সৃষ্টি নেই ।
শুধু একটা গভীর অন্ধকারের ভেতর নৈসর্গিক চলন আছে, সে চলনের কারণ থাকে না অথচ একটা অতিক্রম দূরত্ব থাকে । কখনও রাতের অন্ধকারে সে পথ পেরিয়ে যায় নিজের মাত্রাতিরিক্ত আফিম নেশা নিয়ে । অন্ধকার বীজের ভেতর নিহিত ক্লান্তির দেহ । অন্ধকার রাত্রি অথবা অন্ধকারের বীজ, কবি আসলে কৃষ্ণগহ্বরের কথা বলেছেন । কৃষ্ণ গহ্বর আসলে একটি সৃষ্টির ক্ষেত্রফল । যেখানে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য লাইসোজোম, ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন আর জাইগোটের মিলন সমগ্র । নিউট্রন ভেঙে ভেঙে সেখানে একটি রাসায়নিক বিন্যাস করে ফেলেছে অন্ধকারের জাদু ময়তা । আমাদের সুষুপ্তি নাভি গন্ধ জেগে ওঠে রাতের অন্ধকারে, প্রতিটি বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে ওঠে নিজের জরায়ুজ ক্ষেত্রফলের ভেতর । এই কথাটি পড়ার পর আমি কিছুক্ষণ ভাবছিলাম মানুষ কতটা বানপ্রস্থ হয়ে গেলে নিজের ভেতরে থাকা সব কথা ভুলে যায় । আসলে সন্ন্যাস হয়ে গেলে কোন ক্ষরণ বিন্দু থাকে না । চৈতন্য আসার পর সবকিছু সরলরৈখিক বলে মনে হয়, কোন তরঙ্গের শীর্ষ থাকেনা, শীর্ষবিন্দু থাকে না, কোন সমাপতনের চিহ্ন থাকে না । কখনো নিজের মর্মভেদী অন্তরাত্মা অথবা প্যানক্রিয়াস অগ্নাশয় বিশুদ্ধ দারুচিনি পাতার গর্ভকেশর, মায়াজাল সবকিছু ছিন্ন করে তিনি রাতের অন্ধকারে হেঁটে বেড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভেতর । যে মানুষগুলোর মৃত্যু হয়েছে শত সহস্র মন্বন্তর যুগ আগে । যে মৃত্যু আগে ঘটে গেছে, তাদের তিনি শুধু অকপটে স্বীকার করেন । তিনি কাশ্যপ মুনির মতো পদ্মাসনে বসে নাভির কাছে জোড়হাত করে নাভী থেকে উৎসারিত আলোকবিন্দু নিয়ে তিনি সংযোগ করেন ওই পরমাত্মার সাথে ।
এখানে নদী জল কত টুকু ছুঁয়ে গেছে এই পারদের চিহ্ন দিয়ে । ভীষ্মের শায়িত শরীর অথবা অনন্তের আত্মা নিয়ে ক্রমশ নরম তৃণভোজী হয়ে মায়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন বটবৃক্ষ তলার দিকে । এখানে প্রতিটি পায়সান্ন ছায়ার নিচে ক্রমশ অমিতাভ হয়ে উঠছে কবির প্রতিটি জ্ঞানেন্দ্রিয়। তিনি এমন অসাধারণ মহাভারতের চরিত্রের সাথে সমাপতন ঘটিয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি পর্বের ভিতরে । আসলে কবিতার ভেতর যে একটি সাদা রঙের জীবাশ্মের আত্মকথন রয়েছে তা একেবারেই পরিস্ফুট । নিজের ভেতর সমকোণে দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছেন এমন মহাকাব্য । কবির এই অনন্তের যাত্রাকে প্রণাম জানাই । এমন অসাধারণ অসাধারণ কবিতা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম এগিয়ে চলুন কবি অনন্তের স্থানাঙ্ক বিন্দু নিয়ে ।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem