আমি-কলোনির প্রোমোটার - একটি পোস্টমডার্ন কবিতা
উৎসর্গ: অনুপম মুখোপাধ্যায়
এক
আমি নাকি
নরুনপেড়ে ধুতির ফাঁকে খঞ্জনা বুলবুলি
টোকো পিঁপড়ের নাচের কাদা গোড়ালিময় চোপোররাত মেখে
ভিকিরিকে বলেছিলুম, "স্যার মিলর্ড বাটিটা একটু এদিকপানে দেবেন
চলুন কিছু কান্না কাঁদি বেগনে রঙের জিভের ভাষা ভুলে
.
আমি নাকি
মুলায়েমঘোষ-লালুঘোষের বার্বিপুতুল বুকে
খোসা-ছাড়ানো হাসির খোঁজে আইসক্রিমের টোপরখানি তুলে
বলেছিলুম, "প্রতিবিম্ব আয়না থেকে ফেরত নিতে পারিস"
.
আমি নাকি
মরুভূমি-মাখা ভুরু-কুঁচকে অতিপাতলা রাতে
জ্ঞানের বাইরে জ্ঞানের খোঁজে গোপিনীদের শ্যামসেকুলার জলে
আকাট-জ্ঞানী চোখ-পিটপিট মর্গের নীল লাশ
হাফদুপুরে কাঁটাচামচ জিভ নেড়েছি নুনমাখানো গানে
.
আমি নাকি
ঝিনুকনখা নায়িকাদের প্যানিকপোঁদা ভিড়ে
পেনিসবৃন্তে মেলে ধরেছি উদয়কালের উদ্দাম রোদ্দুর
.
দুই
আমি হলুমগে দাড়ি না-কামানো শবশকটের ডবললিঙ্গ চালক
একটা মোটে ঈশ্বর বলে মুষড়ে ছিল ফাঁস-নাবানো লাশ
অতীত যতো শুকোয় তেমন একাধ কিলো স্বচ্ছ অন্ধকারে
তথ্যের এক দারোয়ানকে ক্যাঁৎকা ঝেড়ে মরার আগে মাগটা
বললে কিনা পৃথিবীর তো আমার বিষয়ে ভাবার সময় নেই গো
.
আমি হলুমগে কানের কাছে স্মৃতির মশা কাছিমকাঁধ বুড়োর
"এ আজাদি ঝুঠা হ্যায়" চেঁচিয়ে মহাকরণের চর্বি সিংহাসনে
প্রেম যাদের খাপ খায় না ডিজেল-ভেজা চাঁদের গুঁড়ো-গুঁড়ো
আলোয় জায়গা পাওয়া যাবে না শুনতে শুনতে ভঙ্গ দিলুম রণে
.
আমি হলুমগে ধান-আছড়ানো রোদ্দুরের কুচো মাখানো চিল
মরা পায়রার গন্ধ-বিলোনো মাগির টাল-সামলানো ঝড়ে
দেরিতে ছাড়া ট্রেনগুলোর শেষ-নাড়ানো রুমাল-কুড়ুয়া
কাগজকাপের চায়ে-চুমুক-ভিড়ে হাফলুঙ্গি কাকুকে বলেছিলুম
প্রেমিকদের নাম মুছতেন লিঙ্গ দিয়ে মরার সময় সেটাই কাটা গেল?
.
তিন
আমি যে-কিনা টানেল ছমছমে ট্রেনে আড়িপাতা ইতিহাসে ডাবলু-টি
প্রতিজ্ঞা ফেরত নেবার জন্যে যখন লাইনে দাঁড়িয়ে নিয়তি জানতে অধীর
পেঁকো প্রগতির এক ব্যাটা মেঘলা-টাইপ নায়ক স্বর্ণযুগ বেচছিল
"এই নিন ঠোঁটজোড়া নিয়ে যান সমুদ্রের চিড়ধরা ডাক শুনুন"
.
আমি যে-কিনা ল্যাংড়াটাকে ধার দিয়েছি দৌড়ুনির অশ্বখুর
নতুন প্রশ্বাস যোগাড়ের ঋতু কাটিয়ে বাড়ি-ফেরতা মাছের ঝাঁকে
ভাসিয়ে দিলুম অনুরাগে আরক্ত ছোঁয়াকাতর ফ্যালাসখানা
অসসাধারণ অসসাধারণ গাইতে-গাইতে উড়তে লাগল নারীপাখির দল
.
আমি যে-কিনা টিমটিমে যুবতীর নোংরা বিছানায়
ভাইওরাস-খচিত আংটি বদল করে নিভে যাবার পর
অন্ধকারের কাঁপুনি টের পাচ্ছিলুম গলি-নিবাসিনীর উৎকর্ণ স্তনে
শুনলুম আগুনশিখার হাততালি
খাবিখোর ঢেউ বেচারা ভেবেছিল ভবিষ্যৎ মানেই নিরপেক্ষ
.
আমি যে-কিনা চোটহীন চামড়ার স্পাই-খেদানো মানুষ
এনামেল-উরু দাবড়ানো ঝড়ের অস্তগামী পাখির কাছে
দেয়ালদের যে কান থাকে সেই কানে ঝালরদার কেচ্ছা শুনছিলুম
বলল, "বলেন কী দাদু আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি শুই না আপনি শোন"
.
চার
আসলে আমি দেহরক্ষার দিন খুঁজতে হিপো-মাংসল জ্যামপ্যাক ভিড়ে
শোকার্তের প্রক্সি দিতে গিসলুম গিরগিট-ঘাড় বড়োবাবুর শবতুলুনির দিনে
ঠোঁটের কোণে তখনো ওঁর পারমিট-দাতার ঘুলঘুলি-পোঁচ হাসি
জীবনে যে জিভগুলো ব্যবহার করেনি তা নিয়ে উঠতে চলল চিতায়
.
আসলে আমি বৃষ্টিভেজা দোয়েলকে দেখার সময় পাই না বলে
সেকেণ্ডহ্যাণ্ড রজনীগন্ধার ঝাড় সস্তাদরে ক্যাওড়াতলায় কিনে
বুকের ওপর তাঁবুর খুঁটি পোঁতা যুবতীর ভজনরত ট্রানজিসটারে
বাজনা শুনতে শুনতে কান্নার গান গেয়ে মৃতের ক্ষতিপূরণ করছিলুম
ফোঁটার পর ফোঁটার পর্বত জমেছে রে অতীত বড্ডো ভারি হয়
.
আসলে আমি অম্লান ঠ্যাঙে পিঁপড়ে তার প্রেয়সীর লাশ ডিঙোচ্ছে দেখে
ভেবেছিলুম সৎকার ব্যবসার গাড়ি কিনে তদবির খাটিয়ে লাল হবো
ভালো হয়েছে মরে যে-কটা নকশাল আজ বেঁচেবর্তে আছে সবই তো বেইমান
আলোকে কামড়ে ধরার পর অচেনা পোকারা তোরঙ্গবন্ধ শীতে
আকাশের ভাড়াটে শকুনদের রোদ লিক করা ছাদে ডেকে যা পায় যথালাভ
.
আসলে আমি পেখম-গোটানো প্রেমিকের ময়ূরীর ঝাল-ঝাল মাংস
খেতে-খেতে শোকসভার জন্যে চর্বিঠাশা বিশেষণ খুঁজছিলুম
তক্ষুনি মনে পড়ে গেল গালেতে থাপ্পড়গুলো নিয়ে আপনি
কান্নার দাগধরা মাগিটাকে হেঁসেলঘরে ছেড়ে চললেন হোঁচট খাওয়া উষালোকে
.
পাঁচ
আমি মাইরি দুঃস্বপ্নের নকশাকাটা ঘুমের ঝিরঝিরে অন্ধকারে
নোঙরহাত মন্ত্রীদের আদর খাচ্ছিলুম টিনের ডিবেতে রাখা সমুদ্রে
দ্বিধা সামলাবার তো হ্যাঙ্গাম নেই দোষ যতো তা দুঃখের
.
আমি মাইরি শতাব্দী-পুরোনো গ্রামপথের রোগাপাতলা রোদে
দেখলুম টিভির কেবল-তারে বসে কাকেরা মার্কিনি চুমুর আওয়াজ শুনছে
আর শীতসারসের ট্রেকিং চলছে লোলচামড়া আকাশ জুড়ে ইদিক থেকে উদিক
.
আমি মাইরি একুশখান কারখানা বনধো কইরা দিসি তুমি করলা কয়ডা
মুক্ত থাকতে ভয় করে গো মুখের মধ্যে গলা-ইস্পাত গন্ধ
ঋতুরা সব ছায়া-নির্ভর একাধজন সত্যিসত্যি শত্রুও সত্যিসত্যি হয়
.
আমি মাইরি কোঁচকানো পাথুরে-চুল গ্রিক-নাক হিরোর কথা শুনে
বাঁ-পাশ ফিরে কপ্পুরের সঙ্গে সমপক্ক পাসতিয়েছিলুম
কে আর জানতো হাওয়াকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে শুকনো পাতার দল
.
আমি মাইরি নির্জলা নদীর গ্রীষ্মাবকাশে ব্যথা-মোচড়ানো ব্যথায়
বলেছিলুম এ-দেশ আমাদের না নানানানা নাআরে নাআরে নাআরে
আজ রুদ্রাক্ষের শেকলবাঁধা গলায় গাইছি গদি-জ্ঞানী গানৱ
.
আমি মাইরি এক ইঞ্চি অবিচুয়ারি ছাপাতে জানতুম না অ্যাত্তো টাকা লাগে
বিলোল-আঁখি মাস্তানের শোকের খেসারত দিতে
আইন না থাকলে আর ভঙ্গ কিসের রে
.
ছয়
আমি কিন্তু অনাছিস্টি জুড়ে-জুড়ে হাই প্রোফাইল বাসায়
রেখে এসচি সঠিক পাঠের পচা কিডনি ডোনার
.
আমি কিন্তু যেই বুঝিচি সৌন্দর্য মানেই ঝগড়া এবং লাফড়া
"হিসি করো হে কুকুর এলাকা চিহ্ণিত করে যাও"
.
সাত
আমি বুঝলেন চিতায় পা নাচাতে-নাচাতে
যেই না ওকে ডেকেছি খাপখোলা আগুন থেকে
বিবাহপতনের লিভ-ইন দোজবউ গাময় দাগড়া-দাগড়া ঝুল মেখে
থিকথিকে আতঙ্কে বললে, "ভয় কী, একুশ শতক তো এসে গেল গো
এবার সবকুছ চলতা হ্যায়"
.
আমি বুঝলেন পোস্টারবাজ পুংকেরানির
ঝোলাটাঙানো হাতলভাঙা চেয়ারে হলঘরে অপেক্ষায় দেখছিলুম
শবছেঁড়া শকুন-ভাতারের নাচ কুঁজোশীতল গ্রীবায় পুঁতিপেড়ে
খাপলা জাল জড়িয়ে টয়লেট ফেরত শাটার-খোলা ব্লাউজের বেনো আলোয়
পুষেছেন বালাপোশ-পিঠ কাছিম
.
আমি বুঝলেন ঘড়ির ধুলো ঝাড়া ভুরু নাচিয়ে
দেখি এক পারদ-শিরা বুড়ো বুকে চাঁদের আলো পিঠে সূর্যের তাপ
বইতে না পেরে পালতোলা কান ভাসালেন
.
আট
আমি যে-নাকি
পদ্মফুলে পোঙ পুঁচেছি কণকযুবা মেড়ো
পাছা-দুলুনি নৌকো বেয়ে পৌঁছে গেছি লোডশেডিঙের তীরে
লিঙ্গ ফেরত পাবার যুগে ছুঁচ-ফোটানো ঘুমের পবং দেশে
.
আমি যে-নাকি
হাতমিথুনের একলা-একা কান্নার বিলাপে
ভুসকোভুঁড়ি পিতৃতন্ত্রে টাটকা-টেকো কেরানি কমরেড
ধানের সবুজ জোয়ার-ভাঁটায় ডবলদৃষ্টি-ভাবুক হাঁড়ি মাথায়
.
নয়
আমি শালা আলোকপ্রাপ্ত বলেই তো
বন্ধ ডাকি সকাল-সন্ধে -মরি হায় হায় রে
আমি শালা নবজাগরিত বলেই
বাস পোড়াই আর ট্রাম পোড়াই - ঐ ঐ ঐ ঐ
আমি শালা নেশন চাই বলেই
মারি বোমা সবার গুহ্যে - ঐ ঐ ঐ ঐ
আমি শালা প্রতিভাবাজ বলেই
বানাই সত্য খবরকাগজে - ঐ ঐ ঐ ঐ
আমি শালা সংস্কৃতিমান বলেই
কাটি বন ও বসতে হাগি - ঐ ঐ ঐ ঐ
আমি শালা যুক্তিবাদী বলেই
প্যাঁদাই তত্ত্ব বাঁচিয়ে রাখতে - ঐ ঐ ঐ ঐ
আমি শালা আধুনিকতাবাদী বলেই
চাই একমত একপথ - ঐ ঐ ঐ ঐ
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem