রাশিয়ার কবি আনা আখমাতোভা-র কবিতা (১৮৮৯ - ১৯৬৬)
অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী
ক্লিওপেট্রা
(আমি বাতাস ও আগুন - শেকসপিয়ার)
অ্যান্টনির মরা ঠোঁটে আগেই ও খেয়েছিল চুমো
সিজারের পায়ে পড়ে হাঁটু গেঁযে নিয়েছিল কেঁদে
চাকরেরা বিশ্বাসঘাতক । মিইয়ে আসা গাঢ় অন্ধকারে
ওকে হেরে যেতে দেখে রোমের ইগলপাখি উল্লাসে বাজাচ্ছে ভেঁপুভেরি ।
ওর কমনীয় রূপে বাঁধা শেষতম লোকটি ঘরে ঢোকে
ঋজু ও রাজকীয় । নিজেরি রানির সামনে তোতলায়:
"দাসি-গোলামের মতো হাঁটাবে তোমাকে রাজপথে, কেননা বিজয়ী! "
শুনেও ও শুয়ে থাকে, হাঁসের মতন গ্রীবা, শান্ত গরিমায়!
ভোর হলে শেকলে বাঁধবে ওর ছেলেমেয়েদের । সামান্য প্রেম
পৃথিবীতে রয়ে গেছে ওর: এও লোকটির সাথে রসিকতা ।
তারপর ছেড়ে দেবে শেষ করুণার মতো বিষধর
শ্যামল বুকের মাঝে আলতো হাতে কালো জীবটাকে ।
মৃত্যুকে
জানি তুমি আসবেই । তাহলে এ প্রতীক্ষা কেন?
তোমার জন্য আমি পথ চেয়ে: ফুরিয়ে গিয়েছে সব কাজ।
আশার দীপ্র আলো কবে নিভে গেছে । দরোজা রেখেছি খুলে
তোমার নামের এক সরল বিস্ময় আসবে তেমন আশায় ।
অতএব যা-আদল নিতে চাও, নাও: ছুঁড়ে মারো
তোমার বিষাক্ত বোমা আমার বাসাকে লক্ষ্য করে,
কিংবা পেশাদার খুনি-গুণ্ডার লাঠির ঘায়ে মেরে ফ্যালো,
কিংবা কন্ঠে ঠেশে দাও তান্ত্রিক-জ্বরের বিষ-ধোঁয়া,
যদি তুমি তাই চাও, ঘুম পাড়াবার গল্প হয়ে
অসংখ্য নিরপরাধ যেভাবে তোমায় চেনে, এসো:
গুপ্ত পুলিশের নীল টুপিখানা দেখাও আমাকে । ভয়ে কাঠ
মুখে রক্ত উবে-যাওয়া কাজের লোকের হাত কাঁপে;
আমার পরোয়া নেই । এনিস নদীর স্রোত বয়ে যায়,
মাথার ওপরে জ্বলে উত্তরের তারা
আর প্রিয় চোখ জুড়ে পুরোনো নীলাভ আলো
শেষতম আতঙ্কের জন্য যশোহীন ।
আমার কেউ নয় ওরা যারা দেশ ছেড়ে চলে যায়
আমার কেউ নয় ওরা যারা দেশ ছেড়ে চলে যায়
শত্রু আর লুটেরার হাতে যায় দেশটাকে ছেড়ে ।
ওদের প্রথাগত প্রশংসায় আমি কান দিই না খকনও ।
ওরা সব গাইবে বলে আমার কোনো গান নেই ।
দেশত্যাগীদের জন্য আমি কষ্ট পাবো চিরকাল।
কয়েদির মতো কিংবা যেন আধমরা,
যে পথে তোমরা ঘোরো অন্ধকারে, ভবঘুরে দল,
তোমার বিদেশি অন্নে তেতোপাতা ভরা।
এখানে স্বদেশে রোজ অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলেছে
খেয়ে ফেলছে বাকি যৌবন, আমরা এগোই
আমাদের থ্যাঁতলানো দেহ কোনো পরোয়া করেনি
একটি আঘাতকেও দেয়নি থামিয়ে ।
জানি পরে কোনোদিন চেতনার আগমন হবে
প্রতিটি মুহূর্তের ব্যথাকে তা ন্যায্যতা দেবে।
আমরা সবাই এ-জগতের কান্নাহীন লোক ।
গর্বে বুক ভরে যায় আমাদের । আমরা সাধারণ ।
আমি স্বপ্ন দেখি
কালো আর স্হায়ী বিচ্ছেদ
তোমার সঙ্গে সমানভাবে ভাগাভাগি করে নিই
কেনই বা কাঁদা? আমাকে তোমার হাত ধরতে দাও,
কথা দাও তুমি আবার আসবে ।
তুমি আর আমি যেন উঁচু
পর্বতমালা আর পরস্পরের কাছাকাছি যেতে পারি না ।
কেবল বার্তা পাঠিও
মাঝরাতে কোনো সময়ে নক্ষত্রদের দিয়ে ।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem