বারীন ঘোষালের মৃত্যু
সেই লোকটাকে দেখলুম সফেদ কাপড়ে মোড়া, স্ট্রেচারে শোয়ানো
যখন যুবক ছিল তখন পরিচয় হয়েছিল, কুরুক্ষেত্রের কর্ণ-
দুর্যোধন দুঃশাসন দুর্মুখ দুমুখোরা পালিয়েছে নিজের ধান্দায়
একাকীত্ব কাটাবার জন্য কবিতাপাঠের আসরেতে বসে
মদের বোতলের আনমনা ভাব নিয়ে দু-ঠ্যাঙ ছড়িয়ে
কন্ঠস্বরে কতোগুলো রঙ, সেসব রঙের প্রতিধ্বনি
কবিতার শব্দ থেকে উড়ে-আসা টেক্সচার
প্রতিটি মানুষের হাঁটায় ছন্দের পার্থক্য থাকে
পালটায় মনের ভেতরে তার রসায়ন ফ্যাক্ট্রির নাটবোল্টগুলো
পাঠও একরকমের জরিমানা যা শিক্ষককে চুকিয়ে দিতে হয়
সময়ের ঘড়ি হয়নাকো, কাঁটা হয়নাকো, বকেদের উড়ালেতে দ্যাখো
বিকেল ভরপুর, বাক্যেরা কখনও নিজের কন্ঠে কাঁদতো
কখনও অন্যের, হারেমের মুরগিদের গর্ব, সেলুনে গোঁফের ছবি
স্ট্যালিনের হিটলারের রাজকাপুরের, মৌমাছির চাকের মতন
লেটারবক্স দাঁড়িয়ে রয়েছে পাড়ায়, অথচ প্রতিটি চিঠি
হয়ে গেছে ভারচুয়াল, শিক্ষিত পোকাদের ঝিঁঝিট-মিছিল
বোবার দুঃখ যা ভিড়ের ঘাম থেকে চুয়ে
সবায়ের রক্ত কিন্তু একই রকমের চটচটে নয়
অন্যান্য কবিদের কল্পনার মহামারীতে নষ্ট করে
বারীন, তুমি বলেছিলে ঠিকই, প্রতিটি আকার গলে পড়ে
ছায়ার মতন কায়াহীন, হাসির সিল্কের ভেতরে গুটিপোকা
অন্ধকার দিয়ে কুচিয়ে ছড়ানো শীতকাল
জানালারা বৃষ্টিতে কেঁদে নিচ্ছিল, অনেকের মাতৃভাষা শুধু টাকা
কিন্তু সমস্ত ধারনাই তো পক্ষপাতদুষ্ট হতে বাধ্য, নয় কি তা?
কেননা অতীত কলকাতার ছারপোকা আর মাকড়সাগুলো
ইস্ট ইণ্ডিয়ার জাহাজেতে চেপে আসেনি কি? তোমার
র্যানসিড চেলাদার রগচটা লাল-হলুদ মুখোশ পরে কিংবা খুলে
চর্বির রঙচঙে বালাপোষে মোড়া
ফিল্মস্টার বা উলঙ্গ পাগল ছাড়া ক'জনই বা ট্র্যাফিক থামাতে পারে
তোমার মতন? মনে হতো, তোমার ফোটোগুলো দেখে
বুনো দুঃখ আর বোবা ব্যথা মিশে আছে আধা তৈরি বাস্তবের ক্বাথে
হত্যার অস্ত্রের মালিকানা খুনিও অস্বীকার করে
ডাগর-চোখ সুন্দরীকে এক ঝলক দেখেই বুঝে গিয়েছিলে তুমি
তরুণীটি জন্ম থেকে অন্ধ, কাজল পরে আছে কিন্তু দেখতে পায় না
কলকাতার বহু বাড়ি থেকে উনিশ শতক যায়নি এখনও ছেড়ে
যে-ফোড়ায় যন্ত্রণা বেশি সেদিকেইখেয়াল বারবার যায়
ছোটোগুলো অবহেলা ভোগ করে ওৎ পেতে থাকে
বইপাড়ায় মুখে-মুখে পেতল-পেরেক দিয়ে গেঁথা হাসি
কেউ কেউ ধুনুরি-পেটানো পেঁজা তুলোর কবরে বেঁচে আছে
আন্যের মতাদর্শের ঘুরঘুরে প্রতিধ্বনি নিয়ে
অপেক্ষায় আছে, কখন বসন্তকাল ডগা থেকে ফুসলিয়ে
মুকুল বের করে এনে দেবে, যদিও কোনো-কোনো যোনির
প্রসববেদনার অভিজ্ঞতা কখনও হয় না
অভিনন্দনে ঈর্ষার দ্যুতি কেন থাকে বুঝে গিয়েছিলে
ব্যাপারটা কতো আশ্চর্যের, ঠোঁটের ওপরে জিভ দুবার বুলিয়ে
মুখের ভেতরে কথা গড়ে নিতে সকলেই পারে
মঞ্চে দুতিনবার কেশে দুঃখ আবৃত্তি করে চলে যায় তারা
যতোরকমের বাস্তবতা হতে পারে সবগুলো ভেঙে-ভেঙে
পরখ করতে তুমি কেননা সব শব্দ বাক্য অন্যলোকেরা
ব্যবহার করে-করে করে-করে করে-করে, মুখের ও হাতের ময়লা
মাখিয়ে দিয়েছে, জানতে যে রামকৃষ্ণকে ছোটো করে চুল
ছাঁটতেই হতো, চৈতন্যকে মাথা আর দাড়ি প্রায়ই কামাতে হতো
অথচ তোমার শবযাত্রায় তুমিই ছিলে না
এটা নিয়ে ভাবছি সেদিন থেকে যেদিন স্ট্রেচারে শুয়েছিলে
শাদা চাদরের থেকে দুই পা বেরিয়েছিল
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem