বিশৃঙ্খলার মহোল্লাস-একটি পোস্টমডার্ন কবিতা
উৎসর্গ:সোনালী মিত্র
১.
পায়রা-ওড়ানো ধ্বনিঘণ্টার এই বুড়োটে শহরে
আড়মোড়া-ভাঙা বাজারের কালো সরলমতি মাকড়সা
শাঁখের তলপেটের তুলতুলে স্পন্দনে জমিয়ে রাখা ওর সুতোবাসায়
চুপচাপ শুয়ে পা দোলাচ্ছিলেন জোড়াখাটের শেজতুলুনি বিপত্নীক
বেচারার বুক জুড়ে স্ট্যাচুর পদচারণার অনন্ত ধুপধাপ ভেসে আসছে
মারবেল-স্তন জাদুঘরের হাফ-আলো অতীতে
সে-স্বরলিপি ভুলতে বসেছে কিশোরী
শ্যাওলাচুল পাহাড়ের জলপুঁতির টুঙটাঙে
মুক্তিপণ চুকিয়ে থানা-লকাপ থেকে ফিরে প্রবেশ করেছে
একদম শুনসান বনেট-খোলা ঝিনিকে
বুড়োটে শহরের পৈতেন্যাড়া কনভেন্ট-বালক কেন যে খুঁজে ফিরছে
ছেকলহীন দরোজাঅলা মেট্রপলিটান সিংহাসন ।
২.
ফুলশয্যার ছেঁড়া কাঁথাখানিতে শুয়ে কাটমানি-প্রেমিকের
প্রিয় নদীটা শেষওব্দি অবিক্রিত থেকে গেছে
কিন্তু গাছের ছায়াটিও কিনে নিয়েছে পাইকার, শেষাশেষি নিজেরই
পায়ের ছাপ শুঁকে-শুঁকে চামউকুনেরা ক্যাম্প ফেলেছে হাতের রেখায়
পালতোলা পুকুরের কাতল-মনীষায় চামচিকে গুঞ্জরিত অন্ধকারে উড়েছে
করাত-ছোঁয়ায় শিউরে-ওঠা গাছের মগডালে-মগডালে
নাকিসুর সেই চিল দক্ষিণখোলা ফাঁসিমঞ্চে টের পেয়েছে
শিশির-চাটা ঘাসের ছড়িবিশ্বাসী অন্ধের জলফোসকার গঙ্গাবারি
হরিণলাফ হাওয়ায় মাইলপাথরের স্হায়িত্ব জমেছে পায়ের শিরায়
বালিতে জল সেঁদোবার ঋণরিন ঋণরিন ঋণরিন ।
৩.
দেয়ালমাকড়ের তকলিকাটা ঝুলে বাঁধা পড়েছে মথের চারপাট
ঢেউয়ে ভেসে-আসা করোটির হ্যাঁ-বলা হাসি ওই
জনাকয় গোড়ালিফাটা সুন্দরীর কাদা-প্যাচপেচে আলিঙ্গনে
শোনা গেসলো অন্ধের পা রাখার আওয়াজ
রূপা থেকে সিসায় পালটানো বীর্যের রাংঝালি-করা
মাথাখারাপ ঝড়ের বংশে একমাত্র উত্তরাধিকারী
এই অলসঢেউ নৌকোর ভুষো-দপদপে লন্ঠন ওই
বৈঠা বাইছে গিঁট-খোলা পেশির বুড়ো আর ওর দোপড়া মেয়ে ওইতো
ইলশেগুঁড়ো আলোর শ্মশানে কলাপাতায় ওলটানো কাছিম
ওইতো সংসার-ভাঙা সুদৃশ্যবাড়ি আর জেলঘরে স্যাঁতসেতে আরশোলা
আর রাত-কাকের চিলতে-চাঁদ আকাশ ।
৪.
পুকুরের সিঁড়িগুলো বৈশাখি রাতে উঠে আসছিল যখন
দেখলুম কলবেলহীন হয়ে যাচ্ছে দরোজাগুলো
নর্দমা-কলকাতার বর্ণময় ইতিহাস জমা হচ্ছে
গিলে-খাওয়া দৃষ্টির অকপট ছায়াত্যাগী গ্রীষ্মে সত্যি তাল-ঠোকা
আর মাল-কামানো জীবনে দাগ ধরিয়ে চলে গেছে যে
কুসুমিত হবার ব্যবসামগ্ন গোলাপ-খেতে সবচে বড়ো বাড়িতে
গ্রামটার ইশারা ধরা থাকে মুণ্ডিত মস্তক চাঁদের চোখেমুখে
চর্বিথুতনি মেঘের কামগতুরে ষাঁড় কার জন্যে কার মুখে হাসি
টের পেতে সোনার আংটি খুঁজছে নেভা চিতায়
আর শিখার ওপর আলগাধোঁয়া ছাড়তে চায়নি কালোর মতন
অবিকল শাদা তঞ্চনে আড়ষ্ট প্রতিমা
তা সত্বেও পালিত সেলামকারীর দাঁতফাঁক হাসি রশিবাঁধা বাঁদরের
ডিগবাজিতে পাশ ফিরেছে জিওল-মাছের নিঃশব্দ কাতরানি
বুকপকেটে কালোর মতন কালো ফণাউঁচু কেউটেকে দেখে
পরিত্রাণহীন প্রাপকের ঢল নামছে কুপথ্য-লালিত কথাবাত্রায় ।
৫.
সূর্যগ্রহণের দিনে এমন শাদা ধবধবে ছায়ায় এই শ্মশানের ইতিহাসে
এরকম শব আগে তো আসেনি দোলখেলার ছায়ায়
গলে গিয়েছিলল বরফের হৃৎপিণ্ড আর ওর পচা একাকীত্ব
দুর্গন্ধের পদচিহ্ণে জলে শুকোচ্ছিল কাঁসরঘণ্টার জ্যোতির্মণ্ডল
ঠিক একেবারে বাতাসে চিতাবাঘের ঝুলন্ত লাফ
স্প্যাসটিক ঝড়টা কিন্তু সাঁতারু নারীদের না-দেখে পারেনি
যাচ্ছে-আসছে আসছে-যাচ্ছে হৃদয়ের লিপিডছবি সুতোয় ঝুলছে
কাঁকড়াগুলো জলকে চেনে-চেনে মাছগুলো পালটে গিয়েছে
গলা ওব্দি কুয়াশায় ডোবা আমাদের
নাম না-পালটাতে পারার মজাদার অসুখ ।।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem