কবিতা যে পড়ে না
আমৃত্যু সে পশুত্বের দাসত্ব করবে।
এখন কথা হলো- কবিতা কি? কবিতা কি নিছক ছন্দবদ্ধ কথামালা? অনেক ছন্দবদ্ধ কথামালা আছে যা কবিতা নয়। আবার অনেক ছন্দহীন কথামালা আছে, যা উচ্চমানের কবিতা।
কবিতা পশুত্ব আর মনুষত্বকে চিনিয়ে দেয়। পশুও উদরপূর্তি করে, মানুষও উদরপূর্তি করে। পশুও জৈবিক লালসার তৃপ্তি ঘটায়, মানুষও জৈবিক লালসার তৃপ্তি ঘটায়। পশু আর মানুষের মধ্যে তফাৎ তাহলে কি?
পশু কি কবিতা পড়তে পারে? পারে না। পশু কি ছবি আঁকতে পারে? পারে না। পশু কি গান গাইতে পারে? পারে না। কবিতা গান ছবিআঁকার মতো সমস্তসুক্ষ চেতনাই মানুষকে পশুর থেকে পৃথক করে।
কবিতা গান ছবি আঁকা- সবই কবিতা। কবিতাকে- কেউ কাগজে লিখে, কেউ ক্যানভাসে আঁকে, কেউ সুরের জাদুতে গায়। তবুও প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেলো- কবিতা কি?
কবিতা কি মস্তিষ্কের বুদ্ধিজাত কিছু শব্দমালা? বুদ্ধিদীপ্ত অনেক ছন্দবদ্ধ কথা আছে, তারাও কিন্তু কবিতা নয়। তোমরা জানো- কয়েক বছর আগে আমি বলেছিলাম- যা কিছু হৃদয়জাত নয়, তা কবিতা নয়। যা কিছু হৃদয় জাত, এবং যা কিছু আরেক হৃদয়কে সহজে বিদ্ধ করতে পারে; তারাই হলো কবিতা।
একটা আর্তনাদরত শিশুর ফটো দেখে চোখে জল এলো তোমার! ফটোটা কি তাহলে কবিতা নয়? ফটোটা নিশ্চয়ই ভীষণ বড় রকমের কবিতা। সুন্দরী এক নারীর পেন্টিং দেখে তাকে চুম্বন করতে ইচ্ছে জাগলো মনে। পেন্টিংটা কি কবিতা নয়? অবশ্যই হ্যাঁ। এক রমণীকেকলসী কাঁখে হেলে দুলে হাঁটতে দেখে দোল লাগলো মনে। রমণীর হাঁটার ছন্দ কি কবিতা নয়? অবশ্যই হ্যাঁ।
দর্শক বা পাঠকের হৃদয়ে যা কিছু দুম দুম করে আঘাত করে, তাই হলো কবিতা।
তোমাদের অনেকে আমাকে প্রশ্ন করো- "অরুণদা, তোমার কবিতা বা লেখায়, নারীরা বড্ড বেশি বিচরণ করে। কেন? " উত্তর খুবই সহজ।
নারীর সব কিছুই তো কবিতা। নারীর কালো চুল জলপ্রপাতের প্রবাহ। নারীর উঁচু বুক দুই পাহাড় চড়ার হাতছানি। নারীর উন্মুক্ত নাভিতে খালি গায়ে ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ। নারীর নিতম্বে নদীর উদ্দাম নৃত্য। নারীর ওষ্ঠ পুরুষের মরণ চিতা। নারী ঝর্ণায় পুরুষের সলিল সমাধি।
ফুল নিয়ে যেমন সুন্দর কবিতা লেখা যায়, নারী নিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর কবিতা লেখা যায়। নারী হলো রক্ত মাংসের ফুল। তার সর্ব্বাঙ্গ যেন পাপড়ি। তার অমৃতভাণ্ডার যেন পুষ্পরেণু।
পুরুষকে নিয়েও ভালো কবিতা লেখা যায়। তবে তা অন্য ধরণের। সে কবিতায় লালিত্যের চেয়ে শক্তির আস্ফালন বেশি। সে কবিতাও হৃদয়ে আঘাত হানে। তবে তা নারী সর্বস্ব কবিতার মতো এতো মোলায়েম নয়।
নারী বা পুরুষের রূপ রস গন্ধ স্পর্শ এরাই কি কেবল হৃদয়কে আঘাত করে? চেতনা করে না? দর্শন করে না? করে। আলবৎ করে। হাজারবার করে। চিন্তন বা দর্শন যখন- মানুষের জীবন যৌবন জরা মৃত্যুকে হৃদয়ের একান্ত সংলাপ দিয়ে প্রকাশ করবে; তখন দর্শন বিজ্ঞান তারাও বড় রকমের কবিতা হয়ে উঠবে। মোদ্দা কথা হলো- জীবন আর মহাবিশ্বের সংলাপকে যদি আমরা হৃদয়ের স্পন্দন দিয়ে আঁকতে পারি, তবেই তা কবিতা হয়ে উঠবে।
পশুত্ব থেকে মনুষত্বে উন্নীত হতে হলে, মানুষকে কবিতার সাধনা করতে হবেই।
© অরুণ মাজী
Painting: Eugene De Blaas
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem