মালবিকা ও খাঁচার পাখি (Freedom= Happiness) Poem by Arun Maji

মালবিকা ও খাঁচার পাখি (Freedom= Happiness)

খাঁচায় বন্দী পাখিকে কখনো সুখী থাকতে দেখেছো? নাহঃ।

তোমার বলবে, তাহলে খাঁচার পাখি গান গায় কেন? গান গায় সে ঠিকই,কিন্তু সে গানের সুর কি তুমি অনুভব করেছো? সে সুরে অনেক বেদনা আছে, অবসাদ আছে।

বনের পাখির কিচিরমিচির শুনেছো? সেই কিচিরমিচির শুনে কি মনে হয়? তার মধ্যে অনেক উচ্ছ্বাস আছে। উন্মাদনা আছে। সেই উন্মাদনা বলে দেয়, তারা তাদের সেই মুহূর্তটা উপভোগ করছে।

তোমাদেরকে আমি, কবিতা আর প্রবন্ধে আগে অনেকবার বলেছি-
স্বাধীনতা = সুখ।
সুখী হওয়ার অত্যাবশকীয় উপাদান হলো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা দুধ হলে, সুখ হলো ক্ষীর। দুধ থাকলে, তবে না তুমি ক্ষীর বানাতে পারবে। যেখানে স্বাধীনতা নেই, সেখানে সুখ নেই। এর কোন ব্যতিক্রম হয় না।

তোমরা বলবে- ১৩০ কোটি ভারতীয়- সবাই তো ১৯৪৭ সালের পর থেকে স্বাধীন। তবুও আমাদের এতো অবসাদ কেন? নিদ্রাহীনতা কেন? আত্মহত্যা কেন? ইংরেজরা দেশ ছেড়ে চলে গেছে ঠিকই। তবুও কি তুমি স্বাধীন? নাহঃ তুমি স্বাধীন নও। কেন?

তুমি ভাবলে- সারা বছর তুমি অনেক খেটেছো! এবার মাসের শেষে তুমি, পরিবার নিয়ে দার্জিলিঙ বেড়াতে যাবে। এ কথা ভাবতেই, মুখে তোমার এক চিলতে হাসি খেলে গেলো। কিন্তু ত্রিশ সেকেন্ড পরেই, তোমার সেই স্বর্গীয় হাসি, কোথায় যেন উবে গেলো!

কেন? তোমার মনে পড়লো- তুমি নতুন যে গাড়ি কিনেছো- তার মাসিক কিস্তির টাকা শোধ করতে, সংসারে তোমার অনেক টানাটানি। গাড়ি কেনার পর থেকে, তোমার সাথে মালবিকার দিনরাত ঝগড়া। সংসারের এই টানাটানির কারনে, তোমরা দুজনেই ঘনঘন মেজাজ হারিয়ে ফেলো। তোমরা ঘনঘন লড়াইও করো। অথচ গাড়ি কেনার আগে, পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে- তোমরা কোনদিন লড়াই করো নি!

তুমি কি স্বাধীন? সংসারের টানাটানিতে তুমি ক্লান্ত, অবসন্ন। অফিসের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে তুমি ভেঙে পড়েছো। তাই তুমি নিরিবিলি জায়গাতে গিয়ে একটু হাল্কা হতে চাও। তোমার মন আর আত্মা- সেই ছুটি দারুন ভাবে চাইছে। কিন্তু তবুও তুমি যেতে পারো না। তুমি যা চাও, তা তুমি করতে পারো না। তাহলে তোমার স্বাধীনতা কোথায়?

আগে কি বলেছি? স্বাধীনতা = সুখ। তোমার যেহেতু স্বাধীনতা নেই, কাজেই তোমার সুখী হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। অথচ কেউই তোমাকে খাঁচা বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে নি। তবুও তুমি খাঁচার যন্ত্রণার চেয়ে, আরও বেশি যন্ত্রণা পাচ্ছো! কেন? কোন সে শৃঙ্খল, যা তোমাকে খাঁচা বা লোহার শিকলের চেয়ে, বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে?

তুমি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। পনেরো বছর ধরে তুমি সাইকেল আর বাইক চড়ে দারুন খুশি। কিন্তু ছমাস আগে, একদিন সন্ধ্যাবেলায়- তোমার মালবিকা কেঁদে অস্থির। কি হয়েছে? কি হয়েছে? অনেক জিজ্ঞাসার পর- জল ভরা চোখে, মালবিকা তোমায় জানালো-
"অনামিকার বর, অনামিকাকে একটা হুন্ডা সিটি কিনে দিয়েছে।"
তিন্নির বর, তিন্নিকে একটা স্করপিও কিনে দিয়েছে।
কামিনীর বর, কামিনীকে একটা টাটা সাফারি কিনে দিয়েছে। ইত্যাদি। "

মালবিকার কান্না আর থামতে চায় না। একদিন যায়, দুদিন যায়, তিনদিন যায়- মালবিকার কান্না আর থামে না। পৃথিবীতে এমন কোন নিষ্ঠুর পুরুষ মানুষ কি আছে, সুন্দরী বৌয়ের কান্নাতে যার হৃদয় ভেজে না? (বা সুবুদ্ধি লোপ পায় না?)

তুমি জানো- গাড়ি কেনা তোমার ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু মালবিকার আবদার। তোমার মালবিকার আবদার! তা তুমি ফেলবে কি করে? ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে, গাড়ি তোমাকে কিনতেই হলো। তারপর কি ঘটলো? তা আগেই তোমরা পড়েছো।

অমল আর মালবিকা এখানে কোন কোন শৃঙ্খলে বন্দী?
১. লোভ (গাড়ি থাকতে হবে)
২. পরশ্রীকাতরতা (অনামিকার গাড়ি আছে, তিন্নির আছে, তাই- মালবিকারও থাকতে হবে)
৩. ভ্যানিটি /মিথ্যে মান /লজ্জাবোধ/ অহঙ্কার) (হায় ভগবান! অনামিকা বা তিন্নি- এদের কেউই আমার (মালবিকার)মতো সুন্দরী নয়, তবুও এদের কত বর ভাগ্য! তবে আমার অমল কেন এতো কর্পদকশূন্য? গাড়ি নেই বললে তা শুনবো কেন? অমল চুরি করুক বা খেটে খেটে মরুক- এসব নিয়ে ভাবার কোন দরকার নেই। কিন্তু গাড়ি আমার চাই-ই চাই।)
৪. অন্ধ বিশ্বাসের দাসত্ব (গাড়ি থাকলেই বুঝি আমি সুখী হবো। গাড়ি থাকলেই বুঝি লোকে আমাকে বড় মানুষ ভাববে!)
ইত্যদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

এইরূপ সহস্র সহস্র শৃঙ্খলে আমরা নিজেদেরকে বেঁধে রেখেছি। শারীরিকভাবে আমরা মুক্ত। কিন্তু মানসিকভাবে আমার মুক্ত কি? মানসিক শৃঙ্খল, শারীরিক শৃঙ্খলের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র আর ভয়ঙ্কর। আমরা নিজে নিজে যদি এতো শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত, তবে আমরা সুখী হবো কি করে?

উড়তে শেখো হে মানুষ উড়তে শেখো।
তোমার ডানা যদি
লোভ হিংসে অভিমান আর অহঙ্কারের কাছে বন্ধক রাখা
তবে তুমি উড়বে কি করে?

উড়তে শেখো হে মানুষ উড়তে শেখো।

© অরুণ মাজী
Painting: Jean- François Portaels

মালবিকা ও খাঁচার পাখি (Freedom= Happiness)
Monday, November 27, 2017
Topic(s) of this poem: suffering,freedom,happiness,peace
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success