মানুষ, হুতোম পেঁচা ও মৃত্যু (প্রথম খন্ড)(Life And Death Part 1) Poem by Arun Maji

মানুষ, হুতোম পেঁচা ও মৃত্যু (প্রথম খন্ড)(Life And Death Part 1)

বাথরুমের কমোডে বসে, মাঝে মাঝে আমি- উন্মাদের মতো, নিজের গালে ঠাস ঠাস করে চাঁটি মারতে থাকি। কেন জানো? আমার মতো ছারপোকা বাচ্চাদের আস্ফালন দেখে!

কি রকম আস্ফালন? মানুষ বাঁচতে গিয়ে রগড়ে রগড়ে মরে। আকাশ ছুঁতে গিয়ে, পচা নর্দমায় পা হড়কে মরে। কাউকে ভালোবাসতে গিয়ে আরও ঘৃণা বুকে ফিরে আসে। মানুষের এই যে বাঁচা বা আকাশ ছুঁতে চাওয়ার অদম্য প্রচেষ্টা, তা কিন্তু সহস্র বছরের পুরানো। তবুও মানুষ সেই একই ভাবে বাঁচার চেষ্টা করে। বা একই ভাবে আকাশ ছুঁতে চায়। মানুষের এতো আস্ফালন, অথচ মানুষের ভাগ্যে লবডঙ্কা। আহাঃ বেচারা মানুষের জন্য, বুক আমার ফেটে চৌচির হয়ে যায়!

আমি যখন খুব ছোট্ট ছিলাম- আমার সঙ্গী ছিলো চারপেয়ে এক কুকুর। নাম তার ভোলা। ভোলার সাথে আমার খুব "ভাব" ছিলো। তাবলে ভেবো না, আমি তারই জাতের কেউ ছিলাম (যদিও আমাকে যারা খুব ভালোবাসে, তারা তাই মনে করে) । আমার সঙ্গে তার ভাব থাকার কারন- সেও মাঠে ঘাটে নাঙ্গা হয়ে ঘুরতো। আর আমিও তার সাথে মাঠে ঘাটে নাঙ্গা হয়ে ঘুরতাম। আমার গর্ভধারিনী মা, ভোলা আর আমার মধ্যে এই "ভাব" দেখে- আমার আর ভোলার কোমরে একই সাইজের (এবং একই রঙের)ঘুঙুর বেঁধে দিয়েছিলো।

একদিন সন্ধ্যেবেলা ভোলাকে নিয়ে আমি গাছতলায় বসে আছি, হটাৎই ভোলা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লো! কি ব্যাপার? কি ব্যাপার? দেখি গাছের ডাল থেকে একটা হুতোম পেঁচা, ভোলাকে ভেংচি কাটছে। ভোলা যত বেশি চীৎকার করতে থাকে, পেঁচাটা-তত বেশি ভোলাকে ভেংচি কাটতে থাকে।

ভোলা তো রেগেখাপ্পা। সে কেবল গাছের ডালের দিকে চেয়ে লাফ মারতে থাকে। আর ফক্কর পেঁচাটা, ভোলার কান ঘেঁষে উড়ে গিয়ে আবার গাছের ডালে বসে। ভোলার এই দুর্বিষহ যন্ত্রণা দেখে, আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে সমস্যার সমাধান করতে হলো। আমি কি করলাম? আমি পেঁচাটাকে কাছে ডাকলাম। আর পেঁচা কি করলো? পেঁচাটা আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে, প্রস্থান করলো।

এখন প্রশ্ন- হুতোম পেঁচার গল্প এখানে এলো কেন? "ভোলা" নামের "মানুষ জাতি" কেবল চীৎকার করে আস্ফালন করতে থাকে। আর "ভাগ্য" নামের "হুতোম পেঁচা", মানুষগুলোকে বারবার ভেংচি কেটে কাঁচাকলা দেখাতে থাকে। ভাগ্যের কাছে মানুষ এতো কাঁচকলা দেখে, তবুও মানুষের চৈতন্য হয় না।

এই অবস্থায়, আমাদের "কমনসেন্সটা" কি হওয়া উচিত ছিলো? সহস্র বছরে পরেও, যে সমাধানের পথ আমাদেরকে আকাঙ্খিত ফল দিতে পারে নি, সেই সমাধানের পথ আমাদের পরিত্যাগ করা উচিত ছিলো। আমরা কি তা করেছি? নাহঃ তা করি নি। কেন করি নি? কারন- আমাদের মস্তিস্ক থাকলেও, আমরা এঁড়ে গরুর মতো কেবল তেড়ে যেতে শিখেছি। আমরা কিন্তু আমাদের মস্তিস্ককে ব্যবহার করতে শিখি না। আশ্চর্য্যের ব্যাপার কি জানো- বুদ্ধিতে, নারীও কিন্তু পুরুষের মতো সমান এঁড়ে গরু। আপন মস্তিষ্কে চিমটি কাটার আগেই, অন্যের আন্ডারপ্যান্টে চিমটি কাটতে যায়।

অরুণ মাজী নামের এই উন্মাদ, তোমাদেরকে কি বলে শোনো। মানুষ বাঁচতে চেয়ে এতদিন যখন রগড়ে রগড়ে মরেছে, এবার মানুষ তাহলে মরতে শিখুক। দেখা যাক- মানুষ এবার- হুঁকো টানতে টানতে, প্রতিবেশীর উঠোনে খিঁচুড়ি বানিয়ে, চড়ুইভাতি করতে পারে কি না!

তোমরা কি বলো? মানুষ কি মরতে চেয়ে, আরও সুখ আর আনন্দে বাঁচতে পারবে? উত্তরের জন্য দ্বিতীয় খন্ডের অপেক্ষা করো। শুভ রাত্রি। তোমাদেরকে হুতোম পেঁচার তরফ থেকে, একটা ফক্কর মার্কা ভেংচি!

© অরুণ মাজী

মানুষ, হুতোম পেঁচা ও মৃত্যু (প্রথম খন্ড)(Life And Death Part 1)
Sunday, January 28, 2018
Topic(s) of this poem: bangla,bangladesh,death,life,life and death
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success