কতবার তো ডেকেছিলে তুমি
যেতে পারি নি।
কাজে কাজে কত কাজ আমার!
ঘুম থেকে উঠা, দাঁত মাজা
থলি হাতে বাজারে যাওয়া
সকালে খাওয়ার খাওয়া, অফিসে যাওয়া
লম্বা লম্বা ফিতে বাঁধা ফাইল খুলে পড়া
রাগী বসকে খুশী করে রাখা-
কাজে কাজে কত কাজ আমার!
অথচ তোমাকে যে মনে পড়ে নি তা নয়
তোমাকে মনে করে, বুকটা যে ভরে নি তা নয় -
কিন্তু তা, ঐ পর্য্যন্ত!
কাজে কাজে কত কাজ আমার!
টেরও পায় নি। দেখতে দেখতে
চল্লিশটা বছর কেটে গেলো।
আজ কেমন এক শূন্যতা তাড়া করে।
বুকে চিনচিনে ব্যথা চেপে চেপে বসে।
মনে হয়- কর্ম্ম জীবনের সাফল্য
যেন- বাতাসে বাঁধা এক দূর্গ!
একটু হাওয়া দিলেই কেমন যেন নড়বড় করে।
ছুঁতে চায়। মনটা কাউকে যেন
একটু আলতো করে ছুঁয়ে দিতে চায়।
স্মৃতির সরণীতে হাঁটলে পরে,
পদে পদে কাঁটার আঁচড়ে, কেবল বেদনা বাড়ে।
অথচ স্মৃতির রাস্তাটা, যেখানে
তোমার 'হাসি' নদীর কাছে বাঁক নিয়েছে;
সেখানেই কেবল একটু প্রশান্তি
একটু ঠান্ডা হিমেল হাওয়া।
কেবল ভালোবাসার গৃহকোণেই যে
জীবনের শীতলতা;
তা আগে কখনো বুঝি নি।
মানুষ কত গোঁয়ার বলো?
জীবনের গন্তব্য যেখানে মৃত্যু
মানুষ সেখানে,
সম্পদ আর সাফল্যের বোঝা
গাধার মতো বয়ে বেড়ায়!
সে জানে না-
মৃত্যু-দেশে, লেখাপড়া কেউ জানে না
ডিগ্রীর কাগজে তাদের, ভাতের উনুন জ্বলে না।
মৃত্যু-দেশে স্থানাভাবের কারনে, প্রাসাদ সেখানে ধরে না।
অথচ সেই কাগজ আর সম্পদ ছুঁতে গিয়ে
তোমাকে ছুঁয়েও ছুঁতে পারি নি ।
বারবার, তোমার হাসি হাতছানি দিয়ে ডাকলেও
যেতে পারি নি।
মানুষ কবে আর জানবে-
জীবনের আনন্দ কেবল যাত্রাপথে?
প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে
ঠেসে ঠেসে, ঘেঁষে ঘেঁষে একটু হাঁটার মধ্যে?
জীবনের গন্তব্য তো মৃত্যু!
তার আগে প্রেয়সীর নরম বুক ছুঁয়ে দেওয়া
সে কি নিতান্ত কম পাওয়া?
জীবনের যাত্রাপথ কেবল সম্মুখে
ঘুরে, অতীতে ফিরে, যেতে কেউ পারে না।
নইলে এক ছুটে আবার পৌঁছে যেতাম
তোমার সেই 'হাসি' নদীর বাঁকে!
অস্তাচলে সূর্য, সামনে গোধূলির আভা
ফ্রক পরা তুমি, পা তোমার নদীর জল ছুঁয়ে
আয়ত নয়নে হাসি হেসে
আমার দিকে জল ছিটিয়ে,
তোমার প্রশ্ন- 'গোধূলি হয় কেন
অমল, গোধূলি হয় কেন? '
সেদিন তোমাকে উত্তর দিতে পারি নি।
আজ বলছি তোমাকে মালবিকা-
যারা- তাদের প্রেয়সীর, বুকের গনগনে উত্তাপ,
তাদের যৌবনের মধ্যাহ্নেও বুঝতে পারে নি;
তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই জীবনে গোধূলি হয়!
নইলে কবেই
মধ্যহ্নেই হয়তো এই জীবনটা খসে যেতো!
© অরুণ মাজী
Painting: Amit Bhar
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem