পল এলুয়ার-এর কবিতা
ভাষান্তর: মলয় রায়চৌধুরী
পল এলুয়ার (১৮৯৫-১৯৫২)
অনুপস্হিতি
শহরগুলোর ওপর দিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলি
সমতলভূমির ওপর দিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলি
তোমার কানে আমার মুখ
দেয়ালের দুই দিক পরস্পরকে দ্যাখে
আমার কন্ঠস্বর তোমাকে স্বীকার করে।
আমি তোমার সঙ্গে অনন্তকালের কথা বলি।
হে শহরেরা শহরের স্মৃতিরা
আমাদের আকাঙ্ক্ষায় মোড়া শহরেরা
প্রথমদিকের শহর আর পরের দিকের
শক্তিমান শহর অন্তরঙ্গ শহর
তাদের প্রস্তুতকারকদের মুছে ফেলা হয়েছে
তাদের চিন্তাবিদদের তাদের মায়াপুরুষদের
পান্না রাজত্ব করতো চারভূমিতে
বাঁচে বেঁচে থাকে চিরকাল বাঁচে
আমাদের পৃথিবীতে আকাশের গমক্ষেত
আমার কন্ঠস্বরকে সুস্হ রাখে আমি স্বপ্ন দেখি আর কাঁদি
আমি শিখার মাঝে হাসি আর স্বপ্ন দেখি
রোদের জমায়েতের মাঝে
আর আমার দেহ ও তোমার দেহের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে
পরিষ্কার আয়নার পরত।
.
সহজ
সহজ আর সুন্দর
তোমার চোখের পাতার তলায়
আনন্দের মিলনে
নাচে আর অন্যেরা
আমি জ্বরের কথা বললুম
আগুনের সবচেয়ে ভালো কারণ
যে তুমি হয়তো ফ্যাকাশে আর উজ্বল
হাজার ফলদায়ী অঙ্গভঙ্গি
হাজার বিধ্বস্ত আলিঙ্গন
তাদের মুছে ফেলার জন্য বারবার সরে যায়
তুমি অন্ধকার হয়ে যাও তুমি পোশাক খুলে ফ্যালো
একটা মুখোশ তুমি
নিয়ন্ত্রণ করো
আমি অবিকল তোমার মতন দেখতে
আর তুমি যেন কিছুই নয় বরং সুন্দরী নগ্নিকা
ছায়ায় নগ্ন আর ঝিকমিকে নগ্ন
বিদ্যুতের ঝলকে শিহরিত আকাশের মতন
তুমি তোমার কাছে মেলে ধরো
সবায়ের কাছে মেলে ধরার জন্য
.
ক্ষমতা ও প্রেম সম্পর্কে কথাবার্তা
আমার যন্ত্রণার মাঝে মৃত্যু ও নিজের মাঝে
আমার বিষাদের মাঝে আর বেঁচে থাকার যুক্তির মাঝে
রয়েছে অবিচার আর এই মানুষদের শয়তানি
আমি মেনে নিতে পারি না যে আমার ক্রোধ আছে
সেখানে রয়েছে স্পেনের রক্তরঙা যোদ্ধারা
সেখানে রয়েছে গ্রিসের আকাশরঙা যোদ্ধারা
রুটি রক্ত আকাশ আর আশার অধিকার
যে নিরীহরা শয়তানিকে ঘৃণা করে
আলো সব সময়ে মৃত্যুর কাছাকাছি
জীবন সব সময়ে মাটি হবার জন্য তৈরি
কিন্তু বসন্তকাল আবার জন্মায় যা শেষ হয় না
অন্ধকার থেকে একটা কুঁড়ি ওঠে আর উষ্ণতা স্হিরতা পায়
আর উষ্ণতা পাবে একলষেঁড়ের অধিকার
তাদের ক্ষয়িষ্ণু সংবেদন প্রতিরোধ করবে না
আমি শুনতে পাই শীতলতা সম্পর্কে আগুন ঠাট্টা করছে
আমি শুনতে পাই একটা লোক যা জানে না সেই বিষয়ে কথা বলছে
তুমি যে ছিলে আমার মাংসের সুবেদী বিবেক
তুমি যাকে আমি চিরকাল ভালোবাসি আমায় গড়ে তুলেছো
তুমি শোষণ আর আঘাত মেনে নেবে না
তুমি পার্থিব আনন্দের স্বপ্নে গান গাইবে
তুমি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখবে আর আমি তোমাকে চিরকাল ধরে রাখব
.
প্রিয়তমা
যুবতীটি আমার চোখের পাতায় দাঁড়িয়ে আছে
আর ওর চুল জড়িয়ে আছে আমার চুলে,
ওর আঙ্গিক আমার হাতের মতন
ওর গায়ের রং আমার চোখের মতন
আমার ছায়া ওকে গিলে ফ্যালে
আকাশে ছোড়া পাথরের মতন।
ওর চোখ সবসময়ে খোলা
আর আমাকে ঘুমোতে দেয় না।
প্রকাশয় দিনের বেলায় ওর স্বপ্নেরা
সূর্যকে বাষ্পে পরিণত করে
আমাকে হাসায়, কাঁদায় আর হাসায়,
কিছু বলার না থাকলেও কথা বলে।
.
ম্যাক্স অ্যার্ন
এক কোণে তৎপর ব্যভিচার
ছোট্ট পোশাকের কুমারীত্ব ঘুরিয়ে দ্যাখে
এক কোণে আকাশকে ছেড়ে দ্যায়
ঝড়ের শিরদাঁড়ায় শাদা বল ছেড়ে দ্যায়।
এক কোণে চোখেদের ঔজ্বল্য
বিষাদের মাছের জন্য কেউ অপেক্ষা করে।
এক কোণে গ্রীষ্মের সবুজের তৈরি মোটরগাড়ি
চিরকালের জন্য গৌরবে গতিহীন।
যৌবনের আলোকচ্ছটায়
বড়ো দেরিতে বাতি জ্বালানো হয়েছে
প্রথম যুবতী স্তন দেখায় যা লাল পোকাদের মেরে ফ্যালে।
.
অনুবর্তিতা
বাতাসে আনন্দময় দিনের দীপ্তিশীলতার জন্য
সহজে রঙের স্বাদ নেবার খাতিরে বেঁচে থাকা
ভালোবাসা উপভোগের খাতিরে হাসাহাসি
চরম মুহূর্তে চোখ মেলে ধরা
যুবতীটি সব কিছুতেই রাজি
.
আচ্ছন্নতা
বহু বছরের জ্ঞানের পর
যখন পৃথিবী ছুঁচের মতন স্বচ্ছ ছিল
তা কি অন্য কিছুর জন্য শীতল হয়ে উঠছিল?
ফেরত-দেয়া অনুগ্রহ অপচয়িত ঈশ্বর্য নিয়ে কাড়াকাড়ির পর
লাল ঠোঁটের চেয়েও লাল ঠোঁট
আর শাদা পায়ের চেয়েও শাদা পায়ের পাতা
তাহলে আমরা কি ভাবি যে কোথায় আমরা আছি?
.
আমাদের কাছেই
উদ্ধার পাবার জন্য দৌড়োন দৌড়োতে থাকুন
খুঁজুন আর যা পান জড়ো করুন
উদ্ধারপ্রাপ্তি আর সোনাদানা
এতো দ্রুত দৌড়োন যাতে সুতো ছিঁড়ে যায়
এক বিশাল পাখি যে শব্দে ডাকে তাই দিয়ে
একটা পতাকা সদাসর্বদা নাগালের বাইরে উড়তে থাকে
.
খোলা দরোজা
জীবন সত্যিই দয়ালু
আমার কাছে এসো, আমি যদি তোমার কাছে যাই তা হবে খেলা,
ফুলের তোড়ার দেবদূতরা ফুলেদের রং বদলাবার উপহার দেয়।
.
তাৎক্ষণিক জীবন
তোমার কি হয়েছে কেন এই শাদা চুল আর গোলাপি
কেন এরকম কপাল এই চোখ দু-আধখানা হৃদয়বিদারক
মৌলিক তেজষ্ক্রিয়ের বিয়ের বিশাল ভুলবোঝাবুঝি
বদ্ধমূল শত্রুতা নিয়ে নিঃসঙ্গতা আমাকে তাড়া করে।
.
মনোরম আর জীবনের মতন
দিনের শেষে এক মুখাবয়ব
দিনের শুকনো পাতার মাঝে এক দোলনা
নগ্ন বৃষ্টির ফুলের তোড়া
সূর্যের প্রতিটি রশ্মি লুকোনো
জলের গভীরতায় প্রতিটি ঝর্ণার ভেতর ঝর্ণা
আয়নার প্রতিটি আয়না ভাঙা
স্তব্ধতার তুলাদণ্ডে একটি মুখ
অন্য পাথরগুলোর মাঝে একটা পাথর
পাতাগুলোর জন্য দিনের শেষ আলো
ভুলে যাওয়া মুখগুলোর মতন একটি মুখ
.
ভালোবাসাদের ঋতু
পথগুলোর রাস্তায়
ব্যাহত ঘুমের তিনচতুর্থাংশ ছায়ায়
আমি তোমার কাছে আসি দুই-হয়ে অজস্র হয়ে
যেমন তোমার মতন যেমন ত্রিকোণাকারের যুগ।
তোমার মাথা আমার মতনই ক্ষুদে
কাছের সমুদ্র বসন্তঋতুর সঙ্গে রাজত্ব করে
তোমার অপলকা কাঠামোর ওপরের গ্রীষ্মে
আর এখানে লোকে তাড়াবেঁধে বেজিদের পোড়ায়।
ভবঘুরে স্বচ্ছতায়
তোমার বৈভবী মুখশ্রীর
এই ভাসমান জীবগুলো বিস্ময়কর
আমি ওদের সারল্য ওদের অনভিজ্ঞতাকে ঈর্ষা করি
জলের বিছানায় তোমার অনভিজ্ঞতা
নত না হয়েও ভালোবাসার পথ খুঁজে পায়
পথগুলোর রাস্তায়
আর রক্ষাকবচ ছাড়াই যা ফাঁস করে দ্যায়
নারীদের ভিড়ে তোমার হাসি
আর কেউই তোমার চোখের জল চায় না।
.
আমার দেহের ইন্দ্রিয়গুলোকে আমার চোখ যতোটা দেখতে পারে
যাবতীয় গাছপালা তাদের সমস্ত শাখা তাদের সব কয়টা পাতা
পাথরের গোড়ায় ঘাস আর সারিবদ্ধ বাড়িগুলো
বহু দূরে সমুদ্র যাকে তোমার চোখ স্নান করায়
দিনের পর দিন এইসব চিত্রকল্প
খুঁত আর সততা এতো ত্রুটিপূর্ণ
হঠাৎই তাদের পাশ দিয়ে যাওয়া লোকেদের স্বচ্ছতা
আর তোমার মার্জিত একগুয়েঁমির শ্বাস-প্রসূত নারীদের চলে যাওয়া
কুমারী ঠোঁটে তোমার সিসা হৃদয়ের আচ্ছন্নতা
খুঁত আর সততা এতো ত্রুটিপূর্ণ
তোমার চোখ দিয়ে জেতা দৃষ্টির মতন অনুমতি
দেহের ক্লান্তির কামনার বিভ্রম
শব্দ ঢঙ ধারণার নকল
খুঁত আর সততা এতো ত্রুটিপূর্ণ
ভালোবাসা হল মানুষ অসম্পূর্ণ
.
সবেমাত্র বিকৃত
বিদায় ত্রিসতেসে
হ্যালো ত্রিসতেসে
বিদায় দুঃখ
হ্যালো দুঃখ
ছাদের পঙ্ক্তিতে তোমরা লিখিত
যে চোখ আমি ভালোবাসি তাতে তোমরা লিখিত
তুমি দারিদ্র্য নও মোটেই
কেননা সবচেয়ে গরিব ঠোঁটেরা তোমাকে বর্জন করেছে
আহ্ মৃদু হাসি হেসে
হ্যালো ত্রিসতেসে
দয়ালু দেহের প্রেম
ভালোবাসার ক্ষমতা
যা থেকে দয়ার জন্ম হয়
দেহহীন রাক্ষসের মতন
লটকানো মাথা
দুঃখ সুন্দর মুখশ্রী।
.
এক নতুন রাতে
যে নারীদের সঙ্গে বসবাস করেছি
যে নারীর সঙ্গে বসবাস করি
যে নারীর সঙ্গে বসবাস করব
সব সময় একই
তোমার একটা লাল আলখাল্লা দরকার
লাল দস্তানা একটা লাল মুখোশ
আর ঊরু পর্যন্ত কালো মোজা
কারণগুলো প্রমাণগুলো
তোমাকে নগ্ন দেখা
নগ্নতা বিশুদ্ধ ও সুচারু
আমার হৃদয়ের দুই স্তন
.
ফলপ্রসূ দুই চোখ
ফলপ্রসূ দুই চোখ
আর কেউ আমাকে বেশি জানতে পারবে না
তুমি যা জানো তার চেয়ে বেশি
তোমার চোখ যার ভেতরে আমরা ঘুমোই
ওরা দুজন
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem