দাম্পত্য প্রেমের সম্পর্ক (স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্ক) কি কি প্রকার হতে পারে?
ব্যাপারটার ব্যাপ্তি অনেক বড়। আমি যা-ই লিখি না কেন, ব্যাপারটার সম্পূর্ণতার কাছাকাছি কখনো পৌঁছতে পারবো না। আসুন, তবুও একটু মগজ খাটানো যাক-
১. স্যান্ডউইচ প্রেম
অনামিকা, অমলকে বড্ড বেশী ভালোবাসে। অমলের গোঁফ ক ইঞ্চি লম্বা হবে, বা অমলের জামার কলারে ক ইঞ্চি ময়লা জমলে সেটা পরার অযোগ্য হবে, বা অমলের ঠিক ক জন বন্ধু থাকা দরকার, এবং তাদের কি কি লিঙ্গ হওয়া উচিৎ- সে সবই অনামিকা ঠিক করবে! বেচারা অমল, অনামিকার প্রেমের যাঁতাকলে পিষ্ট এবং শ্বাসরুদ্ধ। বলাবাহুল্য- অমল একটুকরো অসহায় চিকেন; আর অনামিকা সর্ব শক্তিমান রুটির পিস্।
২. ঘুড়ি-লাটাই প্রেম
ঘুড়ি ভাবে- নিজের ইচ্ছেই সে আকাশে উড়ছে। সেই আনন্দে সে, অনবরত লেজ নাড়তে থাকে। আর লাটাই মহাশয় /মহাশয়া বড় চালাক। ঘুড়িকে খেলতে দেয়, কিন্তু দরকারে হলে- ঘুড়ির কান ধরে টেনে আনতেও পারে।
হাওয়া যদি অনুকূল হয়, আর ঘুড়ি যদি বিদ্রোহ করতে চায়; তো সে সুতো কেটে ফস্কেও যেতে পারে। অবশ্য হাওয়া যখন কমে আসে, ঘুড়ি তখন খানা-খন্দ বা নর্দমায় পতিত হয়। অবশ্য অন্য কোন হিতৈষী লাটাই যদি, ঘুড়িকে তার বুকে স্থান দেয়; তাহলে ঘুড়ির ভাগ্যে নতুন সূর্যোদয়ও থাকতে পারে।
৩. কাঁকড়া প্রেম
এরা হাঁড়ির মধ্যে সব সময় খড়খড় শব্দ করছে। একে অপরকে চিমটি কাটছে, একে অপরকে মাড়িয়ে হাঁটাচলা করছে। কেউ যদি কখনো, যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে হাঁড়ি থেকে মুক্তি পেতে চায়; তো অন্যজন তাকে চিমটি কেটে নীচে নামানোর চেষ্টা করে। বড় রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র এদের দাম্পত্য জীবন। কাঁকড়া বলে, এরা কেউই যন্ত্রণা থেকে কখনো মুক্তি পায় না। নরক হাঁড়িতেই এরা পচে পচে মরে।
৪. বৈরাগী প্রেম
এখানে একজন দেবী, আর অন্যজন নিবেদিত প্রাণ সাধক। সাধক, দেবীকে সব কিছু সঁপে দিয়ে দিয়ে, জীবনভর দেবী ভজনা করে। এই সংসারে হয়তো গনতন্ত্র নেই, কিন্তু শান্তি আছে। অবশ্য এই শান্তি সাধকের আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে কেনা। আজকাল বড় দুর্লভ এই ধরণের সাধক। (যদিও দেবীর কোন অপ্রতুলতা নেই) । ব্যাপারটা আবার উল্টো ভাবেও হতে পারে।
৫. বৃক্ষ আর ছায়া প্রেম
এখানে একজন বৃক্ষ আর অন্যজন তার ছায়া। অনেকটা বৈরাগী সম্পর্কের মতো। তবে বৃক্ষ, তার ছায়াকে সন্মান করে, ছায়ার প্রশংসা করে। বৈরাগী সম্পর্কের মতো, একজন অন্যজনকে ভৃত্য মনে করেন না।
৬. নদীর দুই কূলের প্রেম
এখানে দুই জন, নদীর দুই কূল। তারা, মাঝখানে জলরাশি-রূপ প্রেম দিয়ে সংযুক্ত। আবার জলরাশি-রূপ প্রেম দিয়ে তারা বিচ্ছিন্নও। এরা, একে অপরের গন্ধ নেয় প্রেমের (জলের) দ্রবণ দ্বারা। এরা এদের নিজেদের মতো করে স্বপ্ন দেখে, শ্বাস নেয়। আবার দরকার হলে- একে অপরকে মন দিয়ে শুনে, বা একে অপরের দুঃখে কেঁদে উঠে। এরা একত্র অথচ আলাদা। এরা দুজন, আবার একজনও বটে। এরা কেউ-ই, নিজের অস্তিত্ব খুইয়ে অন্যজন হয়ে যায় না।
পরিপক্কতার মাপকাঠিতে, এই সম্পর্ক খুব উঁচু মানের। কারন- এরা প্রত্যেকেই একে অপরকে ভালোবাসে, আবার পূজাও করে। এইরূপ সম্পর্কে, কেউ-ই উঁচু বা নীচু নয়। যেহেতু এরা দুজনেই- নিজেদের মতো করে স্বপ্ন দেখতে পারে, কাজেই মানুষ হিসেবে এরা দুজনেই বিকশিত হয়।
৭. শিশু প্রেম
এখানে দুজনেই শিশুর মতো আচরণ করে। ক্ষণে ক্ষণে ভালোবাসা, আর ক্ষণে ক্ষণে লড়াই। এই মুহূর্তে, একে অন্যের বাহুতে আবদ্ধ; তো অন্য মুহূর্তে এদের ঝাঁটা আর হাতুড়ি নিয়ে লড়াই। এদের সম্পর্কে, ভালোবাসা প্রবল, কিন্তু রক্ত ক্ষরণও বড় বিশাল।
৮. রঙ মেখে সঙ সাজা প্রেম
এখানে কেউ কাউকে ভালোবাসে না। এরা রঙ মেখে কেবল, প্রেমিক-প্রেমিকা বা দম্পতি সেজে থাকে মাত্র। এইভাবে হয়তো কয়েক অঙ্কের নাটক উতরে যাওয়া যায়। কিন্তু একটা গোটা জীবন উতরে যাওয়া যায় না। এরা তাই কাঁদে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। নাটকে এরা এতোটাই আসক্ত যে, রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে এরা প্রস্থান করতে পারে না।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem