হে বাঙালী, সময় এসেছে, তোমরা আবার একটা বিধান রায় খুঁজো। Poem by Arun Maji

হে বাঙালী, সময় এসেছে, তোমরা আবার একটা বিধান রায় খুঁজো।

​তোমাদের মতো যারা বাংলাকে ভালোবাসে, তাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি মারে- বাংলা কি কখনো জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ হতে পারবে? তোমাদের হতাশা হয়, ক্রোধ হয়, ঘৃণা হয়। তোমরা তাই বলো- নাহঃ বাংলা কখনো পারবে না।

আমি কিন্তু দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি- বাংলা তা পারবে। আমার এ বিশ্বাসের বিজ্ঞান সম্মত কারন কি? ভারতবর্ষের দিকে তাকিয়ে দেখো- একমাত্র কৈলাশ শতপথী ছাড়া, ভারতবর্ষের সমস্ত নোবেল বিজয়ীই কিন্তু বাংলার সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত। ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ দুই পুরুষ- স্বামীজী আর নেতাজি বাংলার মানুষ। এই যার ইতিহাস, সেই বাংলা কেন আবার শ্রেষ্ঠ হবে না?

তবে হচ্ছে না কেন? তোমাদেরকে আমি বারবার বলি- যে বুদ্ধি দিয়ে তুমি কোন সমস্যা তৈরী করেছো, সেই একই বুদ্ধি দিয়ে তুমি সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সেই সমস্যার সমাধান করতে হলে, তোমার বুদ্ধির গুনগত মান ও সমাধানের পথ পরিবর্তন করতে হবে।

বাংলায় যে অরাজকতা চলছে, সেই অরাজকতা থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হলে, বাঙালির বুদ্ধি আর চিন্তার উন্নতি ঘটাতে হবে। বাঙালি তার বুদ্ধি আর চিন্তার উন্নতি সাধন করছে কি? এখনো পর্যন্ত না।

কেন একথা বলছি? তোমার পাড়াতে, যে দাদা লাল ঝান্ডা দেখিয়ে তোমাকে চমকে রাখতো, সে এখন ঘাসফুল মার্কা ঝান্ডা দেখিয়ে তোমাকে চমকে রাখে। সল্টলেক-রাজারহাট অঞ্চলে, যে আগে লাল ঝাণ্ডা দেখিয়ে তোলাবাজি করতো, সে এখন ঘাসফুল মার্কা ঝান্ডা দেখিয়ে তোলাবাজি করে। আগামী দুবছর পর সেই একই ব্যক্তি গেরুয়া ঝান্ডা দেখিয়ে তোমাকে চমকাবে, বা রাজারহাটে তোলাবাজি করবে। সরকার পরিবর্তন হলেও মানুষের দুর্গতি সেই একই। কেন সেই একই দুর্গতি? কারন বাংলার মানুষ তার বুদ্ধি আর চিন্তার বিকাশ ঘটায় নি।

বামফ্রন্ট পচতে সময় নিয়েছিলো ৩৪ বছর।তৃণমূল পচতে সময় নিয়েছে ৩৪ সেকেন্ড। কেন? বামফ্রন্টের নিজস্ব একটা মতাদর্শ আছে, তাদের সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ একটা পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতিতে অনেক স্তর আছে। কাজেই এতো বড় একটা সিস্টেম পচতে অনেক সময় লাগে। মমতা ব্যানার্জী ক্ষমতায় এসেছে স্রেফ বামফ্রন্টের পচনের ফলে। মমতা ব্যানার্জী "এক নায়ক"। উনি আগেই উন্মাদ ছিলেন। আর ক্ষমতায় আসার পর উনি আরও বেশি উন্মাদ হয়ে গেলেন। তাই ক্ষমতায় আসার ৩৪ সেকেন্ডের মধ্যে, মমতা সরকার পচে "গু" হয়ে গেছে।

রাজ্যে যা চলছে- তা হলো জোকারদের সার্কাস। ভাবো, দুর্গত মানুষকে ভিক্ষা দেওয়াকে এরা সাফল্য ভাবে! মমতা ব্যানার্জী অবহেলিত নারীকে ভিক্ষা দিয়ে রাজ্যের জন্য পুরস্কার এনেছেন। সেই "কন্যাশ্রী" পুরস্কারের বাস্তব অর্থ কি?
"দেখো পৃথিবী দেখো! আমাদের রাজ্যে নারীরা কত দুর্বল, ক্ষুধার্ত আর মুমূর্ষু! তাদেরকে সরকারী সাহায্য ছাড়া, আর কোনভাবে বাঁচানো যাবে না! "

মমতা ব্যানার্জী তার "কন্যাশ্রী" পুরস্কারের মাধ্যমে- সারা বিশ্বের কাছে বাংলার ভিখারী দশা প্রমাণ করেছেন। বাংলার যে ভিখারী দশা, তা মমতা ব্যানার্জীর শত্রুদেরকে বলতে হবে কেন? উনিই তো বিশ্বের দরবারে তা বুক উঁচু করে প্রমাণ করেছেন! একজন বাঙালী হিসেবে, এজন্য তোমার গর্ব হয়? ছিঃ ছিঃ বিশ্বের দরবারে নিজ জাতিকে, ভিখারী প্রতিপন্ন করার মধ্যে তোমরা গর্ব দেখো! তোমাদের তাহলে গলায় দড়ি দিয়ে এখুনি মরা উচিৎ।

বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলতে হয়- বিজেপি ক্ষমতায় এলে মানুষের দশা একটু ভালো হবে, কিন্তু তাতেও বাংলাকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো যাবে না। কেন?

১. বিজেপির যেহেতু বামফ্রন্টের মতো একটা নির্দিষ্ঠ মতাদর্শ আছে, এবং সিস্টেম আছে; তাই বিজেপি পচতে অনেক সময় লাগবে। মমতা ব্যানার্জীর মতো ৩৪ সেকেন্ডে পচে যাবে না।

২. কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় দরুন- রাজ্য বিজেপি সরকার, কেন্দ্র থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা বাংলার জন্য আদায় করতে পারবে।

৩. যে সমস্ত বকেয়া প্রকল্প আছে, সেগুলো অতিসত্বর বাস্তবায়িত হবে। বাংলা যেহেতু বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে, তাই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব, বাংলার উন্নয়নের মাধ্যমে বিজেপির সেই "সাম্প্রদায়িক" ইমেজকে মুছে ফেলতে সচেষ্ট হবে।

তবুও কিন্তু বাংলা জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাবে না। কেন?
১. বর্তমান বিজেপি নেতৃত্ব বাংলাতে ক্ষমতায় আসার জন্য বড় বেশি তাড়াহুড়ো করছে। সেজন্য এরা দাগী চোর গুন্ডা বদমাশকেও নেতৃত্বে ঢুকাতে কার্পণ্য করছে না। এইভাবে ১০০ মিটার দৌড় দৌড়ানো যায়, ম্যারাথন দৌড় নয়।

২. বিজেপি তাদের নিজস্ব "জাতীয়তবাদী" "দেশসেবা" মতাদর্শ থেকে সরে আসছে। এরাও অন্যায়ের সাথে আপস করছে।

৩. এখনো পর্যন্ত বিজেপির কোন নেতা নেই, যে বাংলাকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেই বুদ্ধি আর দূরদৃষ্টির নেতা বাংলা বিজেপিতে এখনো পর্যন্ত দেখি নি।

৪. সব চেয়ে মূল্যবান কারন হলো- বাংলার মানুষের নিজস্ব বুদ্ধি আর চিন্তার বিকাশ এখনো ঘটেনি।

আগে কি বলেছি আমি? যে বুদ্ধি দিয়ে তুমি কোন সমস্যা তৈরী করেছো, সেই একই বুদ্ধি দিয়ে তুমি সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সেই সমস্যার সমাধান করতে হলে, তোমার বুদ্ধির গুনগত মান ও সমাধানের পথ পরিবর্তন করতে হবে। রাজীনীতিক দিয়ে বাংলা শাসন করলে, তারা রাজনীতির পাঁকেই আটকে থাকবে। কাজেই বাংলাকে এখন নেতা খুঁজতে হবে- রাজনীতির জগতের বাইরে থেকে। আমি নিশ্চিৎ- বাংলা যদি রাজনীতির জগতের কাউকে আবার মুখ্যমন্ত্রী করে, তাহলে বাংলা কখনোই জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না।

ডাঃ বিধান রায় রাজীনীতির লোক ছিলেন না। তাই উনি, কেবল বাংলার উন্নতি দেখতেন, রাজনীতি দেখতেন না। তাই উনি হুগলী শিল্পাঞ্চল গড়েছিলেন। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল গড়েছিলেন। বাংলা তখন কৃষি শিল্প আর বাণিজ্য সবেতেই শ্রেষ্ঠ ছিলো। হে বাঙালী, সময় এসেছে, তোমরা আবার একটা বিধান রায় খুঁজো।

© অরুণ মাজী

হে বাঙালী, সময় এসেছে, তোমরা আবার একটা বিধান রায় খুঁজো।
Monday, December 11, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,development
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success