ফুলের ঘায়ে যারা মূর্চ্ছা যায়, বা যাদের হৃদয় বড় ঠুনকো;
জীবন তাদেরকে ক্ষমা করে না।
তুমি যদি নিজেকে, বা অন্যকে ক্ষমা করতে না পারো;
জীবন তোমাকে ক্ষমা করবে কেন?
ভুলে গেলে চলবে না, আমরা রক্ত মাংসের মরণশীল মানুষ। আমাদের জন্ম হয়, মৃত্যুও হয়। আমাদের ঠিক হয়, ভুলও হয়। আমাদের প্রেম হয়, ঘৃণাও হয়। আমাদের বিশ্বাস হয়, বিশ্বাসভঙ্গও হয়। ভুল আমরা সবাই করি, পাপ আমরা সবাই করি।
এজন্য উন্মাদ অরুণ মাজীর উচিৎ, নিজেকেও ক্ষমা করা, অন্যকেও ক্ষমা করা। আমি যদি তা পারি, জীবনও আমাকে ক্ষমা করবে। জীবন আমাকে তখন, অনেক অনেক কম যন্ত্রণা দেবে।
সব মানুষই সুন্দর আর সুগন্ধযুক্ত হতে চায়। কখনো ভেবে দেখেছো- তাহলে কিছু মানুষ অনবরত অন্যকে যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে কেন? কেন?
কারন, তারা নিজেদের মধ্যে, এতো বেশি যন্ত্রণায় জ্বলছে, যে সেই যন্ত্রণা তাদের "মুখের ফুটো দিয়ে উপচে পড়ছে"। সেই যন্ত্রণা কাতর মানুষটি যদি, তোমাকে কোন কটু কথা বলে; তাহলে তার প্রতি তোমার রাগ হওয়া উচিৎ নয়। বরং তার প্রতি তোমার করুণা বা দয়া হাওয়া উচিৎ। কি অসহনীয় জীবন, সেই যন্ত্রণাকাতর মানুষটির!
এই গভীর অনুভব তোমার যেদিন হবে, সেদিন তুমি অন্যকে, অতি সহজেই ক্ষমা করতে পারবে। তুমি তখন- কোন ক্রোধ বা ঘৃণা, তোমার আপন বুকে গাঁথবে না। তোমার বুক অনেক হাল্কা হবে। তোমার জীবন তখন আনন্দে গাইবে-
"আহাঃ কি আনন্দ,
মালবিকার ঠাম্মার-
পান খাওয়া গালের লাল লালচুমুতে! "
শুধু তোমার জীবন নয়, তোমার কাছে পাশে আছে যারা, তাদেরকেও তুমি আনন্দের আলোতে, আলোকিত করবে। তোমার সংসার, দাম্পত্য, সামাজিক- সব জীবনই তখন খিলখিল করে হাসবে, কিলবিল করে গড়াগড়ি দেবে।
তোমার যখন ক্রোধ হয়, তখন তুমি নিজে বিষ পান করো এই আশায়, যে তোমার ক্রোধের কারনে তোমার শত্রু মারা পড়বে। বাস্তবে কিন্তু, তোমার ক্রোধের কারনে- তোমার শত্রুর বিন্দুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। তুমি ক্রোধের বিষ পান করলে, তুমি মরবে। তোমার শত্রু নয়। ক্রোধ আর হিংসার বিষ পান করলে, তোমারই জীবন শ্মশানের চিতার, মতো দাউ দাউ করে জ্বলবে।
উন্মাদ অরুণ মাজীকে লোকে গালি বা খিস্তি করলে- উন্মাদ অরুণ মাজী ক্যাবলার মতো ফিক ফিক করে হাসতে থাকে। আর এক ছিলিম গাঁজা টেনে, সুন্দর একটা কবিতা লিখে ফেলে।
আর হারামজাদা অমল, অরুণ মাজীর চেয়ে, তিন ইঞ্চি উঁচুতে বাস করে। মালবিকা যখন অমলকে বকে, অমল তখন কি বলে জানো? বলে-
মুখে মুখে বকো কেন?
ছুঁয়ে ছুঁয়ে পারো না?
এতো বকা বকো তুমি
ঘষে ঘষে পারো না?
তারপর হারামজাদা অমল, অরুণ মাজীর কাছে আক্ষেপ করে-
বকে না সে বকে না
ছুঁয়ে ছুঁয়ে বকে না।
এতো বকা বকে তবু
ঘষে ঘষে বকে না।
চৌদ্দ পুরুষের দিব্যি দিয়ে বলছি- নির্লজ্জ্য ফাজিল, বা ক্যাবলা হওয়ার চেয়ে, এতো সুখকর অনুভূতি আর কিছু হতে পারে না। উন্মাদ অরুণ মাজীর কাছে, পাগল হওয়ার চেয়ে, আর বড় কোন অমৃতলাভ হতে পারে না।
সদানন্দ আর সচ্চিদানন্দ কে জানো? যে সুখ আর দুঃখ, দুটোকেই- ভেংচি কেটে ফাজলামো করতে পারে; আবার সমান আনন্দে, তাদেরকে গ্রহণওকরতে পারে। গলা ভর্তি বিদ্যা, ব্যাঙ্ক ভর্তি টাকা, ঘর ভর্তি আপনজন- কোন কিছুই তোমার কাজে আসবে না, যদি না তুমি ক্ষমা করতে শেখো। যদি না তুমি মানুষকে ভালোবেসে, বুঝতে শেখো।
ফুল তোমাকে, সুগন্ধ দেবে। বিষ্ঠা কি তোমাকে, সুগন্ধ দিতে পারবে? সুখী মানুষ, তোমাকে সুখ দেবে। দুঃখী মানুষ, তোমাকে কখনো কি সুখ দিতে পারবে? তার নিজেরই সুখ নেই, তো সে সুখ তোমাকে দেবে কি করে? কাজেই, যে- তোমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, তার নিজের মধ্যে যন্ত্রণার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে, বা তাকে বকা ঝকা করে, তার যন্ত্রণা আর বাড়িও না। তাকে একটু ভালোবাসা দাও। একটু প্রেম দাও। তাকে একটু বোঝো। তাকে তুমি ক্ষমা করো।
ক্ষমা করলে, তুমি আর ক্রোধ নিয়ে জীবন কাটাবে না। ক্ষমা এক সুগন্ধ। তুমি অন্যকেও সুগন্ধ দিলে, আর নিজেও সুন্দর এক ফুল হয়ে ফুটতে থাকলে। ঈশ্বর কি চাই জানো? উনি চান না, আমরা ওনার জন্য লড়াই করি, বা দিন রাত হরেকৃষ্ণ গাই, বা নামাজ পাঠ করি। ঈশ্বর যদি নিজেই নিজের রক্ষা করতে না পারবেন, তো উনি ঈশ্বর কেন?
ঈশ্বর চান- আমরা প্রত্যেকে একটা করে ফুল হয়ে হাসতে থাকি। আমরা প্রত্যেকে, একে অপরকে ভালোবেসে ক্ষমা করে দিই। চেষ্টা করো- তোমরা পারবে। খুব ভালোভাবেই পারবে। তোমরা উন্মাদ অরুণ মাজীর চেয়ে, হাজারগুণ ভালো মানুষ হতে পারবে।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
আপনার লেখা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।অতুলনীয়।