মানুষ লিখছে। প্রতিনিয়ত লিখছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত লিখছে। লেখা যেন বেঁচে থাকার মৌলিক দাবি!
কেমন করে সাধু তুমি অমন কথা বলো?
পৃথিবীটা ভাসমান অনুভূতি। মানুষ জীবন্ত অনুভূতি। অনুভূতির সাথে অনুভূতির মিলনে মূলত মানুষ শিখছে। মানুষের এই শিখন প্রক্রিয়া গভীরতর অর্থে লিখন প্রক্রিয়া। গভীর থেকে গভীরতর অর্থেই অনুভূতির সাথে অনুভূতির মিলনে সম্পন্ন হয় প্রাথমিক লিখন প্রক্রিয়া। সেই অর্থে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের রাধা-কৃষ্ণ খেলা চলে ততক্ষণ পর্যন্ত সে লেখক। তাই লেখক শব্দটি মানুষের ভিন্ন পরিচয়। উপমায় বললে লাউ কিংবা কদু।
মন কিংবা অনুভূতির ধারক মানুষ অনুভূতি বা মন প্রকাশ করতে চায়। তখনই চলে আসে ভাষার আয়োজন।
এক শাপলাসুন্দরীকে সূর্যযুবক ভালোবাসে। প্রকাশ করতে চায় যুবকটি তার আবাদি আবেগের জায়গা। মেয়েটির জন্যে একটি টকটকে লাল গোলাপ সংগ্রহ করে। মেয়েটির হাতে গোলাপ রেখে শান্তি খোঁজে। মেয়েটি তখন হাতে গোলাপফুল পায় না। পায় মেয়েটির প্রতি ছেলেটির অনুভূতির প্রকাশ।
গোলাপফুলে জমাকৃত অনুভূতি সার্থকভাবে প্রকাশিত হয় নি। যুবকটি তখন বোঝে ফেলে। তখন সে খোঁজতে থাকে বিকল্প পথ। তখনই আবি®কৃত হয় মৌখিক ভাষা।মৌখিক ভাষার মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত অনুভূতির সফলতর প্রকাশ ঘটে। মৌখিক ভাষার দৃশ্যমান লিখিত রূপ সভ্যতার হাতিয়ার। তাই আজ পর্যন্ত লিখনী প্রক্রিয়া বলতে মৌখিক ভাষার লিখিত রূপকে বুঝি। আর লেখক হচ্ছেন এই লেখনী প্রক্রিয়ার শ্রমিক।
এই শ্রমিক মূলত মানসিক শ্রমিক। খাল কেটে যারা কুমির আনে। কুমিরের সাথে যাদের ওঠা-বসা। খুব বেশি সামাজিক মোড়কে তারা বিকাশমান নয়।
অর্থাৎ লেখক মাত্রই গৃহপালিত হতে পারে না। ফলে চেনা-জানা নিয়ম-কানুন, পরিবেশ-প্রতিবেশ কেমন যেন অচেনা মনে হয়। মনের আশ্রমে লালিত পৃথিবী আর বাইরের পৃথিবীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে থাকে। এক সময় লেখক পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবীর ইমাম। তাঁর ওয়াজ-নসিহত পৃথিবীর কাছে সামাজিক মনে হয় না। লেখক তখন অস্বাভাবিক মানুষ। ঐতিহ্যবাহী ভাষায় বললে ‘পাগল’-“The lunatic, the lover and the poet.
Are of imagination all compact.”
কার ওছিলায় হুজুর খিচুড়ি খাইলা খবর নিলা না?
সমাজ মূলত কাঠামো। এটি চিন্তা কাঠামোর ফল। যারা নিজের অনুভূতির কাছে যৌক্তিক তারাই চিন্তাকাঠামোর ধারক। যৌক্তিক অনুভূতি সময়ের স্রোতের মতো গতিশীল ও প্রাসঙ্গিক। আকাশকে ছাদ হিশেবে মানতে না-রাজ। ঘর তৈরিতে বিশ্বাসী।
কিন্তু যৌক্তিক অনুভূতি বেশি সংখ্যক পুরাতন কাঠামো বিশ্বাসীদের কাছে স্বীকৃতি পায় না। ফলে যৌক্তিক অনুভূতি সমাজে অযৌক্তিক বা পাগল বলে স্বীকৃত হয়।
কিন্তু দৃশ্যমান সমাজ কাঠামো কোনো না কোনো পাগলের নির্মিত। এই বিষয়টি জ্ঞানী বুদ্ধিজীবীদের কানেও পৌঁছে না, মনেও হানা দেয় না। কারণ তাতে তাদের মুখের জৌলুস ও জ্ঞানের জৌলুস দুই-ই কমে যাবে।
তবে কাঠামো নির্মাতারা সময়ের প্রতিনিধি। কাঠামো মেনে চলা আধুনিক। পশুর কাছে জাবরকাটা জীবনভর আধুনিক। মানুষের কাছে সময়প্রাসঙ্গিকতা গুরুত্বপূর্ণ। দৃশ্যমান প্রাণিদের মধ্যে মানুষ এখন পর্যন্ত উন্নত শোষক। তাই কোন কাঠামোর প্রাসঙ্গিক স্থায়িত্ব কতটুকু শোষকদের অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ শোষিত শ্রেণি বিপ্লবী হয়।
নিজের অস্তিত্বের কথা জাবরকাটা প্রাণি ভাবে না। ভাবেন যৌক্তিক অনুভূতি। লেখক। লেখকের চিন্তাফল “সমাজ” যাকে পাগল বলে। সেই পাগল।
সমাজটা যেন লালনের তিন পাগল-
১. যিনি কাঠামো দেন
২. যিনি কাঠামো গ্রহণ করেন
৩. যারা কাঠামোর বিরোধীতা করেগ্রহণ-বর্জনের খেলায় জীবনে রাত নেমে আসে। মানুষের অনুভূতি তখন নতুন স্বাদ-গন্ধে মত্ত। পেছন দিকে ফিরে তাকানোর জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। ফিরে তাকায়। ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পাগলামির জন্যে বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠেছিল। তখনই মনে হয় জীবনের নান্দনিকতা মানে পাগলামির নান্দনিকতা।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem