সোমক দাসের জন্য একটা ছোটো কবিতা
মলয় রায়চৌধুরী
সোমক দাস একটা ছোটো কবিতা চেয়েছেন ওনার পত্রিকার জন্য
লিখতে বসে জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সামনের বিলডিঙে
আলফোনসো আমগুলো পেকে গেছে অথচ কেউ পাড়ছে না
সকালে টিয়াপাখিরা সবুজ আমের ওপরে ব্যালেন্স করে যখন খায়
বুঝতে পারি আমগুলো পেকে গেছে অনেক আগে
বাজারে আলফোনসো আম এখন পাঁচশো টাকা ডজন
বাজার মানে ওদের আবাসনের পেছন দিকে নানারকম বিদেশি ফল বিক্রি হয়
চিনের টক ন্যাসপাতি সাউথ আফ্রিকার শক্ত ন্যাসপাতি নিউজিলভাণ্ডের কিউ্য়ি
আমেরিকার আপেল ইজরায়েলের কমলালেবু তুর্কির পাকাডুমুর
অথচ নিজেদের গাছের আলফোনসো পাড়ছে না কেউ
গাছে বোধহয় তিন ডজন আম হয়ে আছে মানে পনেরোশো টাকা
আবাসনের ফ্ল্যাটের সংখ্যা যদি তিনশো হয়
তাহলে পেড়ে নিয়ে ভাগাভাগি করে নিতে পারতো
সকলেই সমান সংখ্যায় গাছপাকা আলফোনসো খেতে পারতো
আসলে আমগুলো হয়ে আছে মগডালে
আর হয়তো বেশির ভাগ সদস্যের ডায়াবেটিস
সকলেই তো বুড়োবুড়ি ছেলেমেয়েরা বিদেশে
যখন বয়স কম ছিল তখন অনেক আদর করে সবাই মিলে পুঁতেছিল
রত্নাগিরি কিংবা দেওগড় থেকে এনে আলফোনসো আমের চারা
আবাসনের সদস্যদের দেখি বেদানা আপেল সবেদা চেরি কিনতে
আম কিনতে দেখি না
আবেগকে টাকায় বদলাবার আলাদা উপায় আছে ওদের
সবাই গুজরাটি জৈন পরিবারের সদস্য
হিরের কারবারি শেয়ার বাজারের ব্রোকার কারখানার মালিক
ওরা কি জানতো না একদিন বুড়িয়ে যেতে হবে
তখন গাছে ঝোলা অবস্হায় আলফোনসো আম দেখতে ভালো লাগবে
সকালে টিয়াপাখিদের আম খাওয়া দেখতে ভালো লাগবে
যেমন আমার ভালো লাগে
মনে-মনে চাই আমগুলো গাছেই থাকুক
আমাদের আবাসনে দুটো জংলিফুলের বিশার গাছ
একটাকে মেরে ফেলা হয়েছে গাছমারার ঠিকেদার ডেকে
গাড়ি রাখার জায়গা নেই বলে গাছ মেরে ফেলতে হয়েছে
আলফোনসো গাছ থাকলে টিয়াপাখিদের দেখতুম
তবে সেটাও গাছমারার ঠিকেদারকে সোপর্দ করা হতো
চাইলেই বাজারে আলফোনসো পাওয়া যায়
ক্রফোর্ড মার্কেটে টিয়াপাখি কিনতে পাওয়া যায়
গাড়ি পার্ক করার জায়গা কোথাও পাওয়া যায় না
তিরিশতলা-চল্লিশতলা বাড়িগুলোর কমপাউণ্ডে গাছের বালাই নেই
ওদের গাড়ি রাখার জন্য দু-তিন-চার-পাঁচতলায় পার্কিঙের জায়গা
গাড়িও নামে লিফটে চেপে
সবুজ টিয়াপাখির দল কোথা থেকে মুম্বাই কসমোপলিসে আসে জানি না
টিয়াপাখিগুলো কেমন করে টের পেয়েছে যে আম পেকেছে
চলো সবাই দল বেঁধে চলো
সোমক দাসের বাড়িতে এখন বোধহয় ল্যাঙড়া আম খাওয়া হয়
হিমসাগর খাওয়া হয়
উত্তম দাশের বাগানে আম হতো
উত্তম দাশ আলফোনসো আমের গাছ পোঁতেনি
উত্তম চুপচাপ মারা গেল
ডায়াবেটিস ছিল কি উত্তমের
থাকার সম্ভাবনা বেশি কেননা ও বড্ডো মিষ্টি কবিতা লিখতো
একের পর এক মিষ্টি কবিতার বই লিখে গেছে
কেদার ভাদুড়ির খোঁজে গেছে সম্ভবত
টিয়াপাখি আসতো না উত্তমের বাড়ির আম খেতে
সোমক দাসের জানলা দিয়ে টিয়াপাখিদের আলফোনসো খাওয়া দেখা হয় না
উনি কবে শেষ স্বাধীন টিয়াপাখিদের ঝাঁক দেখেছেন জানি না
উনি কবে শেষ স্বাধীন বাঙালির দল দেখেছেন জানি না
উনি কবে শেষ স্বাধীন কবিলেখকদের দেখেছেন জানি না
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem