তৃষা, তুমি মরবে কেন গো? একটু না মরলে হয় না? সত্যিই যদি মরতে চাও; একটু অন্তত রয়ে সয়ে মরো। একটু সময় দাও- কয়েকটা ঘন্টা; কয়েকটা দিন। একটু সময় দাও তোমাকে, তোমার এই ভাই- অরুণ মাজীকে, তোমার চারপাশের সবাইকে প্লিজ!
তোমার যন্ত্রণা দুঃসহ; ভীষনই দুঃসহ। এমনই দুঃসহ যে- মরণ তোমার কাছে যন্ত্রণা অপেক্ষা শ্রেয়। তাই তো তুমি- মরতে চাও। আচ্ছা- এমনটা কি নয় যে- তুমি বাঁচতে গিয়ে মরতে যাচ্ছো? তুমি মরণের মাধ্যমে- যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চাও তৃষা; তুমি মরণের মাধ্যমে- যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চাও। তাহলে দেখছো- আসলে তুমি বাঁচতে চাও।
তুমি ভীষণ একটা বোকা মেয়ে; পাগলী মেয়ে। বলো তো- মরে কেউ কি কখনো বাঁচে? মরা মানে সব শেষ; সব। তুমি বাঁচতে গিয়ে যদি মরে গেলে; তাহলে তুমি কি করে বাঁচলে?
শোনো তোমার কানে কানে একটা কথা বলি- তোমার বর-টা আসলে একটা হাঁদারাম। সে তোমাকে ভীষণ-ই ভালোবাসে; কিন্তু এমনই হাঁদারাম, যে সে তা প্রকাশ করতে পারে না। আসলে ওদের ওটা বংশগত রোগ; কেমন যেন ওদের একটা রুক্ষ রুক্ষ, আনাড়ি আনাড়ি, আর দাম্ভিক দাম্ভিক ভাব। ও যদি আমার ভাই হতো; তো ওর কানটা আমি, সজোরে মুলে দিতাম। হতচ্ছাড়া ভালোবাসতেও জানে না। খামোকা তৃষার মতো সুন্দর একটা মেয়েকে কষ্ট দেয়। পাঁজি; ছুঁচো; নচ্ছার; হতচ্ছাড়া। ওর সাথে দেখা হলে- ওকে আমি দেখে নেবো।
জানো তৃষা- পল্টু আজ বলেছে যে- সে বড় হলে তার মা-কে নিয়ে পাহাড়ে ঘুড়তে যাবে; আর মা-কে এত্তো এত্তো সোনার গয়না কিনে দেবে। পল্টু-টা কি মিষ্টি- তাই না? আরে বাবা, ও তৃষারাণীর ছেলে- মিষ্টি না হয়ে কি আর উপায় আছে? আচ্ছা, তুমি যদি মরে যাও- পল্টুর সাথে তোমার তো আর পাহাড়ে চড়া হবে না। পল্টুর দেওয়া গয়নাও পরা হবে না।
পল্টুকে ছেড়ে থাকতে, তোমার খুব কষ্ট হয়- তাই না? হবেই তো। এমন একটা মিষ্টি ছেলে। তাও আবার তৃষারাণীর কোমল মন বলে কথা! কষ্ট তো হবেই। তুমি যদি মরে যাও; ওকে তুমি তো চিরদিনের মতো- ছেড়ে চলে যাবে। তখন তোমার মরে গিয়েও কষ্ট হবে, তাই না?
আচ্ছা ভাবো তো- ধরো তুমি মরে গেলে; আর তোমার দেহটা বারান্দায় শুইয়ে রাখা। পল্টু 'মা মা' বলে চীৎকার করতে করতে ঘরে ঢুকলো। তোমাকে ঘুমোতে দেখে তোমার উপর ঝাঁপ দিয়ে তোমাকে হামি খেতে চাইলো। কিন্তু একি! তার মা যে স্থির; ঠান্ডা; ফ্যাকাশে! পল্টুকে তার মা তো আর হামি দেয় না! পল্টুর বুকটা কেঁপে উঠলো; সে আর্তনাদ করে উঠলো- 'মা... মা... মা...'
জানো তৃষা, বাঁচতে গিয়ে মরা ভালো নয়। কেমন যেন একটা আনাড়ি আর বুদ্ধিহীন ব্যাপার। তোমার যন্ত্রণা আছে; কিন্তু তার মুক্তির উপায়ও আছে। যেহেতু তুমি এখন যন্ত্রণায় কাতর; তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে- তোমার হৃদয় আর মন খুব রুগ্ন। তাই এই অবস্থায়- তুমি মরণ-বাঁচনের মতো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিও না। আগে একটু হাল্কা হয়ে নাও; তারপর ভেবো।
এক কাজ করো- আমার (তোমার এই ভাই অরুণ মাজীর) সাথে এখনই ডাক্তারখানায় বা হাসপাতালে চলো। তারপর একজন সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলো। তোমার বরের সাথে, বাড়ির লোকজনের সাথে, বন্ধুদের সাথে, তোমার যার সাথে মন চায়- তাদের সাথে, তোমার ব্যথার কথা একটু খুলে বলো। তোমার নিজের বুকে, চেপে থাকা পাথরটাকে একটু সরাও। তারপর ধীরে ধীরে, সকলের সাহায্য নিয়ে তোমার সমস্যার সমাধান করো।
জানো তৃষা- যদিও জীবনে, অনেক যন্ত্রণা-ই আছে; তবুও জীবনটা বড় সুন্দর । আসলে কি জানো- এ পৃথিবীতে শুধু ভালো বা শুধু খারাপ- বলে কিছু-ই নেই। কোন কিছু না। যে প্রাপ্তি-কে তোমার আজ মনে হয় সৌভাগ্য; আগামীকাল তাকেই মনে হবে তোমার যন্ত্রণার কারন। আর যে প্রাপ্তি-কে তোমার আজ মনে হয় দুর্ভাগ্য; আগামীকাল তাকেই মনে হবে তোমার সুখের কারন। সব কিছুর মধ্যে আলো-আঁধার লুকিয়ে।
মেঘ আসে; মেঘ যায়। বিপদ আসে; বিপদ যায়। এ মহাবিশ্বের সবকিছুই চলমান; কিছুই চিরস্থায়ী নয়- না সুখ; না দুঃখ। না শান্তি; না যন্ত্রণা। সুন্দর দিনে- তুমি হয়তো দৌড়ে যাও। তা বলে- তুমি কি ঝড় বৃষ্টির দিনে একটুও হাঁটবে না? ঝড় বৃষ্টির দিনে- দৌড়তে না পারো- হাঁটতে থাকো; হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও। কিন্তু প্লিজ- এগোতে থাকো।
আজ তোমার আঁধার দিনে- তুমি হামাগুড়ি দিলে, সেই যথেষ্ট। দৌড়তে পারছো না বলে- কেঁদো না; বা মরতেও চেও না। তোমার আবার যেদিন ভালো সময় আসবে; সেদিন আবার দৌড়তে থেকো। আজ তুমি- একটু একটু করে বাঁচো; একটু একটু। চোখের জল মুছো; পল্টুকে বুকে নাও; ওকে একটু হামি দাও; তোমার বরের হাত ধরো; তাকে তুমি- তোমার ব্যথার কথা খুলে বলো। আবার তোমার সোনালী দিন আসবে। আবার তুমি সেই ফুটফুটে তৃষারাণী হয়ে সুগন্ধ দেবে।
তৃষারাণী, জীবনটা ফ্যালনা নয়। জীবনটা গোলাপ। কাঁটা আছে; কিন্তু সুগন্ধও আছে। তুমি শুধু- তোমার লজ্জা, দম্ভ আর ভয়ের ছিটকিনি গুলো আলগা করে, তোমার হৃদয়ের জানালাগুলো উন্মুক্ত করো। দেখবে অনেক আলো, বাতাস আর সুগন্ধ তোমার হৃদয়ে ঢুকে, তোমাকে অনেক অনেক আনন্দ দিচ্ছে।
মানুষের জীবন, যন্ত্রণা আর তার প্রেরণা নিয়ে পড়তে হলে আমার ফেসবুক পেজে আসুন (Arun Maji- Author Page) । কথা দিচ্ছি, আপনাদের ডিপ্রেশানে সে সব লেখা আপনাকে সাহায্য করবেই।
Article © অরুণ মাজী Arun Maji
Painting: Millais
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem