পৃথিবী তো এতো যন্ত্রণাময়। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে কেন? তবুও মানুষ আরও বেশি বাঁচতে চায় কেন? কেন? কি সেই অদৃশ্য শক্তি, যা দিয়ে মানুষ, জীবনের সহস্রকে যন্ত্রণাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে, আরও আরও বেশি বাঁচতে চায়?
তোমরা ভাবছো অরুণ মাজী এক উন্মাদ। কেবল উদ্ভট উদ্ভট অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন তার। সত্যিই কি তাই? বেঁচে থাকার কারন না জানলে, তুমি তোমার বেঁচে থাকাকে, সুন্দর করবে কি করে?
মানুষের বেঁচে থাকার পিছনে রয়েছে- পৃথিবীর সৌন্দর্য্য, জীবনের সৌন্দর্য্য, বিভিন্ন জীবের সৌন্দর্য্য। সুন্দরের আকর্ষণেই, বুকে আমরা সহস্র কষ্ট নিয়েও বাঁচতে চায়।
তুমি যদি নিজেকে কুশ্রী ভাবতে শুরু করো, তুমি একদিন তোমাকে হত্যা করবে। তুমি যদি পৃথিবীকে কুশ্রী ভাবতে শুরু করো, তুমি পৃথিবীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে, বেঁচে থাকাকে বোঝা মনে করবে।
তুমি পৃথিবীকে ভালোবাসো। কিন্তু কেন ভালোবাসো? কারন- তুমি পৃথিবীর মধ্যে অনেক কিছু সুন্দর দেখো। তুমি তোমার প্রেমিকাকে ভালোবাসো। কিন্তু কেন ভালোবাসো? তুমি তোমার প্রেমিকার মধ্যে অনেক কিছু সুন্দর দেখো।
তার- কালো চোখের ঝিলিক, টোল ফেলা গালের হাসি, গোলাপ ঠোঁটের দুষ্টুমি, উঁচু বুকের উচ্ছৃঙ্খলতা, ঢেউ খেলানো নিতম্বের উন্মাদনা- এ সব তোমাকে এক্কেবারে উন্মাদ করে দেয়। তাই লোক লজ্জা বা পিটুনি খাওয়ার ভয়কে তুচ্ছ করে, তুমি তোমার প্রেমিকার সঙ্গে- গোপনে দেখা করো। কি সেই জিনিস যা আপাত অসাধ্যকেও ভীষণই সম্ভব করে তুলে? তা হলো- তোমার প্রেমিকার কাজল কালো চোখের ঝিলিক ঝিলিক হাসি।
সৌন্দর্য্য থেকে প্রেমের জন্ম। আবার প্রেম থেকে সৌন্দর্যের জন্ম। তুমি যাকে ভালোবাসো, তোমার তাকে পৃথিবীর সুন্দরতম নারী মনে হয়। তাই না? কেন? কারন- সৌন্দর্য্য যেমন প্রেমের জন্ম দেয়, তেমনি প্রেমও সৌন্দর্য্যের জন্ম দেয়।
এখন প্রশ্ন হলো- প্রেম আগে, না সৌন্দর্য্য আগে? মুরগী আগে, না ডিম আগে? ঈশ্বর আগে, না মানুষ আগে? তোমরা ভাবতে থাকো। আমি তৎক্ষণাৎ এক ছিলিম হুঁকো টেনে নিই।
সৌন্দর্য্যের কথা এতো যত্ন করে আমি বলছি কেন? কারন- সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে, মানুষের যন্ত্রণার নিরাময়। তোমরা জানো- আমি যা লিখি, তা যন্ত্রণার নিরাময়ে মানুষকে সাহায্য করার জন্য। আমি বেঁচে আছি- তাও সেই একই সাধনায়।
মানুষ যখন জীবন আর পৃথিবীর মধ্যে সৌন্দর্য্য দেখতে পায় না, তখনই সে বেঁচে থাকার আনন্দ হারিয়ে ফেলে। তার অর্থ- তখনই মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখনই মানুষ মরতে চায়।
কাজেই সুখী আনন্দময় জীবন যাপন করতে হলে- মানুষকে জীবন আর পৃথিবীর মধ্যে সৌন্দর্য্য দেখতে হবে। পৃথিবী তো সেই একই। তবুও কেউ কেউ পৃথিবীর মধ্যে বেশি সৌন্দর্য্য দেখে। আর কেউ কেউ কম সৌন্দর্য্য দেখে। কেন?
যারা গঠনাত্মক চরিত্রের, তারা পৃথিবীর মধ্যে বেশি সৌন্দর্য্য দেখে। যারা ধ্বংসাত্মক চরিত্রের তারা পৃথিবীর মধ্যে কম সৌন্দর্য্য দেখে। কাজেই তুমি যদি সুখী আনন্দময় জীবন যাপন করতে চাও- তোমাকে গঠনাত্মক চরিত্রের হতে হবে।
গঠনাত্মক চরিত্রের উদাহরণ কি?
- কারও সমালোচনা বা নিন্দা না করা
- সব সময় উঁচু উঁচু চিন্তা করা (পৃথিবী কেন সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে? ঈশ্বর সত্যিই কি আছেন? যদি না থাকেন, তাহলে অসীম এই মহাবিশ্ব কিভাবে জন্ম নিলো? পৃথিবী এতো সুন্দর কেন? মহাকাশ এতো অসীম কেন? এই ধরণের উঁচু উঁচু চিন্তা)
- নিজেকে সব সময় গঠনাত্মক চরিত্রের মানুষ দ্বারা আবৃত রাখা
- জীবন, মানুষ আর পৃথিবীর প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন (GRATITUDE)
- রাতের পর দিন আসে, দুঃখের পর সুখ আসে- প্রকৃতির এই নিয়মকে বারবার আবৃত্তি করা
- জীবনে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা / অন্য জীবের জন্য কিছু করা / নদী অরণ্য- এদের জন্যও কিছু করা (ইঁদুর সেও উদর পূর্তি করে, তুমিও উদর পূর্তি করো। তাহলে ইঁদুরের সাথে তোমার পার্থক্য কি?)
- গঠনমূলক / চিন্তামূলক লেখা পড়াশুনা করা
এইরকম হাজার রকম গঠনাত্মক জিনিস দিয়ে তোমার জীবন গড়তে হবে। যারা নিষ্ঠুর স্বার্থপর, তাদের হয়তো সম্পদ বেশি থাকবে; কিন্তু তারা পৃথিবীর মধ্যে সৌন্দর্য্য দেখতে পাবে না। তারা যেহেতু আর এক মানুষকে শত্রু ভাবে, তাই তারা মানুষ আর পৃথিবীর মধ্যে সৌন্দর্য্য দেখতে পায় না। যেহেতু তারা সৌন্দর্য্য দেখতে পায় না, সেহেতু তারা জীবনে আনন্দ বা সুখও পায় না।
জীবনে তুমি আনন্দ চাও অথবা সম্পদ চাও? তা তোমাকেই ঠিক করতে হবে।
তাই বলি- হে ভাই, তোমরা পৃথিবীর সব কিছুর মধ্যে সুন্দর দেখতে শিখো, সব মানুষের মধ্যে সুন্দর দেখতে শিখো। দেখবে- তোমার ব্যক্তিগত জীবন, তোমার সংসার জীবন- সব কিছু তখন আনন্দময় হয়ে উঠেছে। তোমরাই বলো- যে সংসারে স্বামী আর স্ত্রী পরস্পরের খুঁত ধরতে ব্যস্ত, সেই সংসারে সুখ আছে কি?
নিজে নিজে ছোট একটা শপথ করতে পারো- অন্তত একটা বেলা, কাউকে কোন কিছুর জন্যই সমালোচনা তুমি করবে না?
© অরুণ মাজী
Painting: John William Godward
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem