টাক মাথায় চুল গজাতে চাও? কবিতা পড়ো। ভাবছো- অরুণ মাজী একটা পাঁড় মাতাল?
বেশ, তবে নদীর ধারে ক্যাবলা হয়ে বসে, ফ্যালফ্যাল করে নদীর দিকে চেয়ে থাকো, দেখবে- টাক মাথায় চুল গজিয়েছে। এবারও ভাবছো- অরুণ মাজী মস্ত বড় এক গাঁজাখোর?
বেশ, এবার বললাম- উপরের দুটো তথ্য আমার নয়। এগুলো একদল বিজ্ঞানীর গবেষণার ফল! তবুও এই ব্যাপারটা, তোমাদের মনে তেমন করে দাগ কাটলো না। তাই না?
এবার ধরো, কাগজে একটা আর্টিকেল বেরিয়েছে- "একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন, ১ চামচ বেড়াল বাচ্চার মুত, ১/২ চামচ মধু মেখে খেলে, তিনমাসে টাক মাথায় চুল গজায় "। এই খবর পড়ে তোমরা কি করবে? একদল মানুষ সঙ্গে সঙ্গে বেড়াল বাচ্চারর মুত আর মধু সংগ্রহে বেরোবে। আর একদল মানুষ, গুগলে সেই আর্টিকেলটা খুঁজতে থাকবে। অর্থাৎ- এই তথ্যটা তোমাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। এবং এটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য, তোমরা অনেকেই উঠে পড়ে লাগবে।
কেন এই তফাৎ? কারন- নীচের উপায়টা একটা সহজ শর্টকাট। বেশি কষ্ট না করেই ফল পাওয়া যায়। বেড়াল বাচ্চার মুত যদিও খুব সুস্বাদু নয়, তবুও সহজ পদ্ধতিতে দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য, তোমরা ঢক ঢক করে বেড়াল বাচ্চার মুত পান করবে!
কিন্তু তোমরা কি জানো? কবিতা পড়লে বা নদীর ধারে বসলে, সত্যি সত্যিই টাক মাথায় চুল গজায়? কেন?
কয়েকটা মূল কারনের মধ্যে, স্ট্রেস (STRESS) - চুল পড়ার একটা অন্যতম কারন। এছাড়াও স্ট্রেস থাকলে ইমিউন সিস্টেম নষ্ট হয়, ফলে- অনেক রোগ হয়। আর সেই সব রোগের কারনে, আমাদের চুল পড়ে। কাজেই, স্ট্রেস চুল পড়ার মুখ্য এক কারন।
যারা কবিতা পড়ে/লেখে বা নদীর ধারে যারা শান্ত হয়ে বসে থাকে; তারা তাদের চঞ্চল চিত্তকে অনেক বেশি শান্ত রাখতে পারে। ফলে জীবনে তাদের স্ট্রেস আর মানসিক উদ্বেগ অনেক কম হয়। ফলে স্ট্রেসের কারনে যাদের চুল পড়েছে, তারা যদি মেডিটেশনের মতো কোন কাজ (কবিতা পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা ইত্যাদি)করে, তবে তারা হারানো চুল ফিরে পাবে। তাদের ডায়াবিটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্ট এট্যাক ইত্যাদি রোগও অনেক কম হবে।
মুত খাওয়ার ব্যাপারটা ঢপ হলেও, সকলেই কিন্তু বেড়াল বাচ্চার মুত খেতে তৈরী। অথচ কেউই- কবিতা পড়া, বা নদীর ধারে বসার অভ্যাস করতে চায় না। কেন? কারন- সকলেই শর্টকাটে ধনী হতে চায়, সুখী হতে চায়, স্বর্গে পৌঁছতে চায়।
মানুষের চরিত্রের এই দুর্বলতার জন্যই, পৃথিবীতে কোটি কোটি ডলারের "ঢপ" ব্যবসা চলছে। কেউ "সাধু বাবা" সেজে- কারও গর্ভে সন্তান আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কেউ একদিনে সাত কেজি ওজন কমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কেউ এক সপ্তাহে টাকা দুগুন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ, কোরিয়ান তেল দিয়ে- পুরুষের পুরুষাঙ্গ, তিনদিনে তিন ইঞ্চি লম্বা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। জনগণ গদগদ হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে, সেই সব দুর্বৃত্তদের ব্যবসা বাড়াচ্ছে।
মুখে সাদা ছাই মাখলে মুখ যতটা ফর্সা হয়, কসমেটিক্স মাখলে তার চেয়ে বেশি কেউ ফর্সা হয় না। তবুও লোকে সুন্দর হওয়ার জন্য, হাজার হাজার টাকা দিয়ে কসমেটিক্স কিনছে। আমার কুড়ি বছরের ডাক্তারি জীবনে এমন কাউকে দেখিনি, যে কসমেটিক্স মেখে সুন্দর হয়েছে । কিন্তু প্রতিদিন দৌড়ে, বা জিমে গিয়ে সুন্দর হয়েছে, এমন নারী-পুরুষ আমি হাজার হাজার দেখেছি।
তবুও কোন মেয়ে, জিমের জন্য মাসে একশো টাকা খরচ করতে চায় না। কিন্তু সেই মেয়েই প্রতি বছর- দশ হাজার টাকার কসমেটিক্স,দশ হাজার টাকার শাড়ি, পঞ্চাশ হাজার টাকার গহনা কিনছে। ধরো- কোন মেয়ে স্থূলকায়া আর আনফিট, কিন্তু সে গা ভর্তি গয়না পড়েছে। তাকে কি তাতে সুন্দরী লাগে? লাগে না। কিন্তু যে মেয়ে পরিশ্রম করে স্লিম চেহারা রেখেছে, সে যদি একটা সাধারণ শাড়ি- অবহেলা করেও পরে, তবুও তাকে অনেক সুন্দরী লাগে। শুধু সৌন্দর্য্যই নয়, এই মেয়ের দেহ আর মনও অনেক সুস্থ থাকে।
সকলেই তো এই সত্য জানে। তবুও আমরা তা, কাজে লাগাই না কেন? তবুও কেন পৃথিবীতে, প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার "ঢপ" ব্যবসা হচ্ছে? তবুও কেন আমরা বেড়াল বাচ্চার মুত খাওয়ার জন্য হাতা গুটিয়ে বসে?
© অরুণ মাজী
Painting: JW Godward
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem