Breathless Poems Of Malay Roychoudhury Poem by Malay Roy Choudhury

Breathless Poems Of Malay Roychoudhury

মলয় রায়চৌধুরী
অন্তর্ঘাত সেলাই করার উদ্দেশ্য
আমার কবিতা পড়ে ভাবছিস কিছু পাবি?
ধুস, পাবি না যা চাইছিস
শুধু পাবি অন্তর্ঘাত সেলাই করার
যৎসামান্য কায়দা-কারেস্তানি
শব্দ দিয়ে ছবি দিয়ে জাস্ট সেলাই করে যাবি
অন্তর্ঘাতগুলো, তার পর ওৎ পেতে থাক
বাঘটালাফিয়ে পড়বে ওনাদের ঘাড়ে
তখন ওদের মাংস তারিয়ে তারিয়ে তুই খাবি
আমিও তোর সঙ্গে বসে চাটবোগড়ানো রক্ত

.

মাংস
লোকগুলো সাধারণ, ভিড়ের ভেতরে ঢুকে কেন
এমন খুংখার হিংস্র হয়ে পেটাতে লাগলো বুড়োটাকে
বেদম প্রহার, মুখ থেকে আতঙ্ক গোঙানি রক্তের ভলক
খালি গায়ে লাঠি দিয়ে লালচে-নীলাভ দাগ দেগে
যতক্ষণ না বুড়োটা পথের ওপরে পড়ে নিথর নিরব
আটপৌরে পথচলতি লোকেরাও ভিড়ে মিশে গিয়ে
ভয়ংকর কেন? আত্মচেতনা বিসর্জন দিয়ে
অন্যেরা যা করছে তাতে জুটে গেল? কীভাবে
দ্বৈতসত্তায় একটা বিষাক্ত ঘাপটি মেরে থাকে!

এইভাবে মগজে নোংরা বিষ গড়ে ওঠবার কী কারণ
হতে পারে? লোকগুলো সবাই তো সংসারি, ছেলে-মেয়ে
বউ বাবা রয়েছে বাড়িতে, চাকরি-বাকরি আছে
কিংবা চাষবাস জমি-জিরেত, মাঠে কাটা ধান পড়ে আছে
একটু আগেই তো স্বাভাবিক পথচারী ছিল, এখন
হিংসা সম্পর্কে বোধহীন । মাংসের প্রতিশোধ নিতে
মোষের মাংসকেও গোরুর মাংস নাম দিয়ে বুড়োটার
জীবন্ত মাংস খুবলে বিষাক্ত অপর সত্বাকে
আনন্দে আত্মহারা করে ছেড়ে দিলে হোমো স্যাপিয়েন
.
আমার স্বদেশ
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে আদিবাড়ি উত্তরপাড়া আমার দেশ নয়
জানি গঙ্গায় অপরিচিতদের চোখ খুবলানো লাশ ভেসে আসে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে পিসিমার আহিরিটোলা আমার দেশ নয়
জানি পাশেই সোনাগাছি পাড়ায় প্রতিদিন তুলে আনা কিশোরিদের বেঁধে রাখা হয়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে মামার বাড়ি পাণিহাটি আমার দেশ নয়
জানি কোন পাড়ায় দিনদুপুরে কাদের খুন করা হয়েছে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে শৈশবের কোন্নগর আমার দেশ নয়
জানি কারা কাদের দিয়ে কাকে গলা কেটে মারতে পাঠায়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে যৌবনের কলকাতা আমার দেশ নয়
জানি কারা কাদের বোমা মারে বাসে-ট্রামে আগুন লাগায়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে পশ্চিমবঙ্গ আমার দেশ নয়
এদেশের লকআপে পিটুনি খেয়ে থেঁতলে মরার অধিকার আমার আছে
এদেশের চা-বাগানে না খেতে পেয়ে দড়িদঙ্কা হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের চটকলে গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলার অধিকার আমার আছে
এদেশের দলগুণ্ডাদের পোঁতা মাটির তলায় হাড় হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের ধনীদের ফাঁদে ফেঁসে সর্বস্বান্ত হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের শাসকদের বাঁধা লিউকোপ্লাস্ট মুখে বোবা থাকার অধিকার আমার আছে
এদেশের নেতাদের ফোঁপরা বক্তৃতা আর গালমন্দ শোনার অধিকার আমার আছে
এদেশের অবরোধকারীদের আটকানো পথে হার্টফেল করার অধিকার আমার আছে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে বাংলাভাষা আমার স্বদেশ নয়
.
আমরাও ইতর
মলয় রায়চৌধুরী
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার আর আপনার বাড়ির সামনের ম্যানহোল আমি বা আপনি পরিষ্কার করি না
দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
ম্যানহোলে নেমে লোকটা মিথেনগ্যাসে মরে গেলে আমি বা আপনি তাকে তুলি না
দলিতেরা তোলে, আরও কতোকাল তুলবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা আপনার বাড়ির গুয়ের ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে গেলে আমি বা আপনি খালাশ করি না
দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা আপনার বাড়ির সামনে লাশ পড়ে থাকলে আমি বা আপনি ভ্যান রিকশায় নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমি বা আপনি ভ্যান রিকশায় লাশকে পায়ে দড়ি বেঁধে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমি বা আপনি লাশকাটা ঘর থেকে লাশকে মর্গে নিয়ে যাই না
দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
শ্মশানে বা গোরস্তানে নিয়ে গিয়ে বেওয়ারিশ লাশের গতি আমি বা আপনি করি না
দলিতেরা করে, আরও কতোকাল করবে, আপনরাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
আমার বা আপনার পাড়ার ময়লা ট্রাকে করে আমি বা আপনি ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলি না
দলিতেরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
কবিতাপাঠের শেষে শালপাতা প্লাস্টিকের কাপ কাগজের প্লেট আমি বা আপনি ঝেঁটিয়ে তুলি না
দলিতেরা ঝাড়ু লাগায়, আরও কতোকাল ঝ্যাঁটাবে, আপনারাই বলুন
এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম
গোরু-শুয়োর মরে গেলে তাদের চামড়া ছাড়াবার জন্য আমার বা আপনার ডাক পড়বে না
দলিতদের ডাক পড়বে, সেই ডাকে দলিতদের সাড়া দেয়া উচিত নয়
আমার আপনার পশুদের লাশ বছরের পর বছর বেওয়ারিশ পড়ে থাকলে আমাদের ইতরত্ব ঘুচবে
.
ডোমনি
মলয় রায়চৌধুরী
মলয়দাস বাউলের দেহতত্ব
ডোমনি, তুইই দয়াল, যখন বিদেশে যাস কেন রে আনিস কিনে সেক্সটয়?
ভাইব্রেটর, ডিলডো, বেন-ওয়া-বল, গুহ্যের মুক্তমালা?
ডোমনি, তুইই দয়াল, জানি কেন বিডিএসএম কবিতার বই এনেছিস,
জি-বিন্দু হিটাচির ম্যাজিকের ছড়ি? নিপল টিপে কাঁপাবার ক্লিপ?
ডোমনি, তুইই দয়াল, হাত-পায়ে দড়ি চোখে ঠুলি আমাকে চেয়ারে
উলঙ্গ বেঁধে রেখে দিয়েছিস, নিজের ফাঁস খুলে তলাতল রক্তের স্বাদটুকু দিলি
ডোমনি, তুইই দয়াল, শুদ্ধ প্রেমে মজল যারা কাম-রতিকে রাখলে কোথায়
চাবুক মারিস তুই, চুলের মুঠি ধরে ক্ষিরোদধারাকে চুষে বের করে নিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, চাতক স্বভাব নাহলে অমৃতের দুধ তুই দিবিনাকো
আমার খিদে নেই, মুখের ভেতরে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ খেয়ে মজে গেছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, যতো ইচ্ছে আনন্দ কর, দেহ নিয়ে খেল
আমি একটুও নড়ব না, আহ উহ করব না, যতো চাই ধাতুবীজ নিস
.
মলয়দাস ফকিরের ভোর
ডোমনি, তুইই দয়াল, রোজ ভোরবেলা ঝুঁকে তামাটে দু'বুক দুলিয়ে
আঁস্তাকুড় থেকে বেছে নিচ্ছিস মানুষ-মানুষীর হেয় পরিত্যাগ
ডোমনি, তুইই দয়াল, আদিমতমা নারীবাদী
ব্লাউজ পরতে দেখিনি কোনোদিন, তোর দু'বুকের ভাঁজে আলো
ডোমনি, তুইই দয়াল, জ্যোতি আছে, কখনো বা আচমকা
বোঁটাও ঝিলিক দ্যায়, হীরকের বিষ তাতে কিচ্ছু যায় বা আসেনাকো
তাপ্পিমারা মলয়দাস ফকিরের বাঁচা বা যাওয়া
ডোমনি, তুইই দয়াল, বাতিল কনডোম তুলে বাসি বীর্য শুঁকিস
সুগন্ধে হাসিস মিটিমিটি, হাঁ করে গলায় ঢেলে নিস ফোঁটা-ফোঁটা
ডোমনি, তুইই দয়াল, বারোয়ারি বীজঠোঁটে কবে চুমু খাবো
তুই জিভ টেনে নিবি মুখে সুষুম্না লতিয়ে উঠে ঝরবে তলাতল
ডোমনি, তুইই দয়াল, রক্তমাখা স্যানিটারি ন্যাপকিন
তুলে নিয়ে চটের বস্তায় ভরে নিস, বস্তিতে গিয়ে রক্ত মাখবি গায়েতে
ডোমনি, তুইই দয়াল, ওই বাসি রক্ত চেটে নিঃস্বভাবি হতে চাই
ডোমনি, তুইই দয়াল, শিখিয়ে দিয়েছিস শ্বাসবায়ু বন্ধ করে রেখে
ইচ্ছাধীন উড়ন্ত দেহে কুম্ভক সৃষ্টির ইন্দ্রজাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, নাভিতে কতোকাল ময়লা জমে আছে
নিয়ে চল তোর ডেরায় জিভ দিয়ে পরিষ্কার করি
ডোমনি, তুইই দয়াল, প্রতিমাসে জোয়ারে ভেসে যাস
তোর তিন নাড়িতে ত্রিবেণী সংহতি
ডোমনি, তুইই দয়াল, রস ও রতির মিশেলে জেগে ওঠ
গরলামৃত নিয়ে আমার মতন সাধকের সাথে নৃত্য কর
ডোমনি, তুইই দয়াল, ইড়াতে পূরক, পিঙ্গলায় রেচক শেখালি
নদীর একুল-ওকুলে অধর ধরে নির্মাণচক্রে ঘুমোস
ডোমনি, তুইই দয়াল, তোর লাবণামৃতে চান করে উন্মাদ হই
বিন্দু ধারণের যোগ্য কবে করে তুলবি আমাকে
ডোমনি, তুইই দয়াল, শ্মশানের কাঠকয়লায় রেঁধেছিস ভাত
করোটির থালায় ভরে খাবো দুইজনে পোড়া মাংস দিয়ে
ডোমনি, তুইই দয়াল, বলি দেয়া পাঁঠার রক্ত এনে ভরিস করোটিতে
একদিন আমারও করোটিতে চুমু দিয়ে রক্ত খেয়ে নাচবি ধামাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, রজপ্রবৃত্তির তিন দিন তিন রাত
দেহের অমাবস্যায় তুই আমাকে পূর্ণিমা দিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমার ব্যক্তিসত্তাবোধ লোপ করে কবে দিবি
আনন্দকে তিনটি দিনের লাল আলো জ্বেলে শীতোষ্ণ করবি কবে
ডোমনি, তুইই দয়াল, চেয়ে দ্যাখ আমি আস্তাঁকুড়
মানুষের ফেলে-দেয়া সবকিছু নিজের অস্তিত্বে ধরে আছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে আলেখ পুরুষ করে তোল
বলে দে কেমন করে স্খলন বন্ধ করে কবিত্বের শক্তি যোগাবো
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে সহজ পুরুষ করে তোল
বলে দে কেমন করে সারা দেহে প্রেমানন্দ আনবে বানভাসি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে অশ্লীলতম নোংরা গান শেখা
ঝরাই অশ্রাব্য অমৃতধারা এই লাৎখোর বঙ্গসমাজে
ডোমনি, তুইই দয়াল, তুইই শবরী, চণ্ডালী, শৈবালযোনি
পদ্ম আর বজ্রের সংসর্গে ক্লেশশত্রুজয়ী পুরুষ করে তোল রে আমাকে
ডোমনি, তুইই দয়াল, কবে তোর অতিনোংরা চরণ দুটি পাবো
বুকের ওপরে রেখে খেলবি দজ্জালদোষে নৈরাত্মা-হরণ

.

মলয়দাস সাঁইয়ের দোষ
ডোমনি, তুইই দয়াল, যাতেজ্বালা জুড়োবার ইচ্ছে পুরো ঘুচে যায়
জ্ঞানহীন বন্ধুবর্জিত শত্রুঘেরা থাকি তার ব্যবস্হা করে দিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, মোমাছির চাকে মোড়া তোর অঙ্গ, অনিত্যানন্দময়ী
নিয়ে চল মহাবিলাসের গর্তে, করে তোল যতোটা পারিস অদীক্ষিত
ডোমনি, তুইই দয়াল, অশুভের নাচগানে সাধক করে তোল রে আমাকে
কী-কী করলে মহাপাপ হবে তার রাস্তা বলে দে, গোত্রবর্জিত করে তোল
ডোমনি, তুইই মহান, অপ্রেমপন্হায় শ্রীগুহ্যসমাজতন্ত্র ভাঙচুর কর
মগজের আশিক মাশুকাদের স্মৃতিহীন করে মেরে ফ্যাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, শরীরের ব্যকরণ মুছে দে রে মস্তিষ্ক থেকে
নিয়ে চল ভুল পথে দেখা যাক মর্ষমজা কীরকম দোষদুষ্ট খেলি
.
মলয়দাস ক্ষ্যাপার মূল
ডোমনি, তুইই দয়াল
আমার চেতনায় শিকড় ছিঁড়ে দিয়েছিস
ধর্ম-বর্ণে কোনো শিকড় নেই
জাতীয়তায় কোনো শিকড় নেই
বাড়ি-পাড়া-রাজ্যে কোনো শিকড় নেই
শ্রেনিতে কোনো শিকড় নেই
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাভিকেন্দ্রে ঢুকি
.
মলয়দাস আউলের ইহ
ডোমনি, তুইই দয়াল
আমাকে দেহসর্বস্ব আত্মহারা করে দিলি
শাক্ত বৈষ্ণব থেকে মুক্ত করে দিলি
পাপপূণ্য একাকার করে দিলি
যোনিলিঙ্গ একাকার করে দিলি
স্বর্গনরক একাকার করে দিলি
ইহলোক ছাড়া আর কিছু নেই বলে দিলি
আয় আজ দুজনে মিলে কুনকে ভরে অন্ধকার খাই
.
মলয়দাস ভিখারির কুৎসা
ডোমনি, তুইই দয়াল
কুৎসাকে তুড়ি মেরে ওড়াতে শেখালি
শত্রুরা আমার আগে মরে যাবে বলে মন্ত্র দিলি
কলঙ্ক কিছুই করতে পারবে না বলে আমাকে গোরেতে পুঁতে দিলি
অশুভশক্তি কিছু করতে পারবে না বলে ছাতা মেলে দিলি
আয় আজ দুজনে মিলে গোরের ভেতরে শুয়ে কঙ্কাল হই
.
মলয়দাস নাচিয়ের নৃত্য
ডোমনি, তুইই দয়াল
তোর ঘামে স্নান সেরে নিই
তোর শ্বাসে শ্বাস ফেলে খেলি
আমি তোর খমকের ধুন
আমি তোর একতারার তার
আমি তোর মাটিছোঁয়া জটা
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার চাঁদ পেড়ে আনি
.
মলয়দাস পচার বীজ
ডোমনি, তুইই দয়াল
তুই আমার শবের ছাই ঝড়েতে ওড়াবি
তুই আমার মুখে দিবি কারণবারি রক্ত
আমরা করব সহবাস ঋতুবীজহীন
আমি তোকে তুই আমাকে পরস্পর খাবো
গিঁট না খুলে তুই সবই দেখিয়ে দিস ওরে
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার পাঁঠারক্ত চাটি

'
মলয়দাস সাঁইয়ের ঝুমুর
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে জড়িয়ে ধর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, ছাইয়ের গাদায় চল জড়াজড়ি করি, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, জাগিয়ে দে কুণ্ডলিনিচাকা, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, চুমু খা কাঁচা-মাংস খাওয়া ঠোঁটে, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, দেখা রে দাঁড়কাক দেহ, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, নোংরা নখে বুক চের, বাকিটুকি কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, বুকে তোর দুধের বদলে রক্ত খেয়ে বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আয়, অমাবস্যায় নিজেদের মুড়ে বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, চুলের জটা দিয়ে বাঁধ আমায়, বাকিটুকি কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে তোর দোতারা কর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, দিব্যনিম করে দে আমায়, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল,আমাকে অনাদর কর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমার শিকড় তুই উপড়ে দে, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, বরফে আগুন ধরা, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, জীবনভর জড়িয়ে থাকিস, সারাজীবন কাঁদি
'
মলয়দাস কঙ্কালের গতি
ডোমনি, তুইই দয়াল, দ্যাখ তোর মর্গে মরে পড়ে আছি
ইঁদুরেরা কান নাক চোখ লিঙ্গ অণ্ড খুবলে খেয়ে গেছে
অপেক্ষা করছিস তুই কখন ইঁদুরেরা দেহের মাংস খেয়ে
আমাকে কঙ্কাল করে যাবে
তুই সে কঙ্কালকে নিয়ে গিয়ে পুঁতে দিবি নদীর বালিতে
ডোমনি, তুইই দয়াল
ব্যাপারীকে ডেকে আমার কঙ্কাল বেচে দিবি
.



রূপসী বাংলার প্রতিদিন
(জীবনানন্দের 'আটবছর আগের একদিন' কবিতার প্যাশটিস)
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে, আর তার বউ ও শিশুকে
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন ভাঁড়ারে আর একদানা চাল নেই
বধূ-শিশু খুন করে মরতে বাধ্য হলো ।

বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল
প্রেম ছিল, ছিলনাকো কিছুই খাবার - জ্যোৎস্নায় - তবু সে দেখিল
ক্ষুধার প্রেতিনী? ঘুম তো আসে না রাতভর
কেননা ক্ষুধার্ত পেটে হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ।

এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
বিষ-গ্যাঁজলা মাখা ঠোঁটে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে তিনজন খালি পেটে ঘুমায় এবার
কোনোদিন এই পরিবার জাগিবে না আর
খালি পেটে গাঢ় বেদনার
অবিরাম অবিরাম ক্ষুধা
তিনজনে সহিবে না আর -
এই কথা বলেছিল তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে - বুভুক্ষু আঁধারে
যেন তার মেটেল দুয়ারে
মোটরসাইকেলবাহী ধর্ষকেরা এসে

তবুও তো নেতা জাগে
লুম্পেনেরা এসে ভোট মাগে
আরেকটি নির্বাচনের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ হুমকি দিয়ে

টের পাই যুথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে র‌্যাশনের ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;
নেতা তার আরামের সঙ্ঘারামে নেশা করে বুকনি ঝাড়তে ভালোবাসে ।

শ্রম ঘাম রক্ত চুষে আড্ডায় ফিরে যায় নেতা
অবরোধ-করা মোড়ে অ্যামবুলেন্সে কান্না দেখিয়াছি ।

কাঠফাটা খরা নয় - যেন কোনো চালের ভাঁড়ার
অধিকার করে আছে ইহাদের ভাব
দলীয় গুণ্ডাদের হাতে
বধূটি প্রাণপণ লড়িয়াছে
চাঁদ ডুবে গেলে পর নিরন্ন আঁধারে তুমি বউটিকে নিয়ে
ফলিডল খেয়েছিলে, শিশুটির গলা টিপে মেরে
যে-জীবন ফড়িঙের দোয়েলের
তা তোমার শৈশব থেকে ছিল জানা ।

পেটের ক্ষুধার ডাক
করেনি কি প্রতিবাদ? ডেঙ্গুর মশা এসে রুক্ষ চামড়ায় বসে
রক্ত না পেয়ে দেয়নি কি গালাগাল?
জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে
বলেনি কি: 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে?
চমৎকার!
হাড়গিলেদের ঘরে ইঁদুরও আসে না? '
জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল ক্ষুব্ধ সমাচার?

জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ক ধানের ঘ্রাণ
কতোকাল পাওনিকো তুমি
মর্গে আজ হৃদয় জুড়োলো
মর্গে - শীতাতপে, তিনজন
ফলিডলে গ্যাঁজলা-ওঠা ঠোঁটে!

শোনো এ তিন মৃতের গল্প - ফিবছর ধান
কেটে নিয়ে চলে গেছে গাজোয়ারি করে
বি পি এল কার্ডের সাধ
মেটেনি বউকে পাঠিয়েও
দরবারি নাশকতা নিচে টেনে বধূ
মধু - আর মননের মধু
যাপনকে করতে পারেনি ক্ষুধাহীন
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
সইতে হয়েছে প্রতিদিন;
তাই
লাশকাটা ঘরে
তিনজন শুয়ে আছে টেবিলের পরে ।

তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে
চোখ পালটায়ে কয়, 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে?
চমৎকার!
হাঘরের মেটে ঘরে ইঁদুরও আসে না।'

হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার?
স্বাধীনতার সত্তর বছর পর!
সকলে তোমার মতো সুযোগ সন্ধানী আজ - বুড়ি চাঁদটাকে ওরা
আদিগঙ্গার পাঁকে করে দিলে পার;
যারা আসে তারাই শূন্য করে চলে যায় টাকার ভাঁড়ার ।

Wednesday, February 12, 2020
Topic(s) of this poem: suffering
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success