ছোট্ট এক শহরে দুই যমজ ভাই ছিলো। তাদের একজন নেশাখোর দুর্বৃত্ত, অন্যজন ধার্মিক সমাজসেবী। দুই যমজ ভাইয়ের ভিন্ন ব্যক্তিত্বে আশ্চর্য্য হয়ে, শহরের এক সাংবাদিকের বড় কৌতূহল হলো। ব্যাপারটা তিনি একটু খুঁটিয়ে দেখতে চাইলেন।
একদিন সাংবাদিকটি নেশাখোর ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন-
"তুমি যা করো, তা কেন করো? "
নেশাখোর ভাইটি উত্তর দিলো-
"আমি যখন খুব ছোট্ট ছিলাম, তখন দেখতাম- বাবা মদ খেয়ে, আমার মাকে মারতো আর খিস্তি করতো। আমিও তাই আমার বাবার মতো হয়ে গেলাম। "
সাংবাদিকটি তারপর ধার্মিক ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন-
"তুমি যা করো, তা কেন করো? "
ধার্মিক ভাইটি উত্তর দিলো-
"আমি যখন খুব ছোট্ট ছিলাম, তখন দেখতাম- বাবা মদ খেয়ে, আমার মাকে মারতো আর খিস্তি করতো। আমি তখন প্রতিজ্ঞা করলাম- কখনোই আমি, আমার বাবার মতো হবো না।"
দুই ভাই কিন্তু একই রকম যন্ত্রণা পেয়েছে। দুজনেই চোখের সামনে দেখেছে- বাবা তাদের মদ খেয়ে কেমন নৃশংস ভাবে, মায়ের উপর অত্যাচার করতো। যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে, একজন ছাই হয়ে গেলো। আর অন্যজন হীরের মতো জ্বলতে শুরু করলো।
এ গল্প অরুণ মাজী তোমাদেরকে আজ বলছে কেন?
অরুণ মাজী তোমাদেরকে বোঝাতে চাই- আঘাত আর যন্ত্রণা কিন্তু এক কথা নয় । শরীরে বা মনে তুমি যেটা পাও, সেটা আঘাত। সেই আঘাত তোমার মনের মধ্যে যে কষ্ট আনে, তা হলো যন্ত্রণা।
আঘাত এক হলেও, যন্ত্রণা কিন্তু আলাদা হয়। তুমি যখন খুশি থাকো, তোমাকে তোমার বন্ধু চাঁটি মারলে, তুমি রাগ করো না। ব্যাপারটা তুমি হেসে উড়িয়ে দাও। কিন্তু তুমি যদি ইতিমিধ্যেই অসুখী থাকো, তোমার বন্ধু তোমাকে চাঁটি মারলে, তাকে তুমি খিস্তি করো, বা দু-ঘা লাগিয়ে দাও। একই চাঁটি। কিন্তু এরূপ পৃথক ফল কেন? যমজ ভাইয়ের গল্পেও তোমরা দেখলে-, একই আঘাত, কিন্তু পৃথক ফল। এমন কেন হয়?
আঘাত আর যন্ত্রণার মাঝে ছোট্ট একটা জায়গা রয়েছে। সেই জায়গাতে রয়েছে তোমার নিজের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা। তোমার বাবার পশুত্ব দেখে, তুমিও একটা পশু হবে, বা পশুত্ব ত্যাগ করে তুমি একটা দেবতা হবে- সেটা তোমার নিজের পছন্দের ব্যাপার।
একই যন্ত্রণায় আবিষ্ট হয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পথ বেছে নেয়। পথের সেই ভিন্নতার কারনে- কেউ যন্ত্রনায় পুড়ে ছাই হয়। কেউ আবার যন্ত্রনায় পুড়ে খাঁটি সোনার মতো জ্বলতে থাকে।
জীবনে আঘাত অনিবার্য। কিন্তু যন্ত্রণা অনিবার্য নয়। যন্ত্রণার লাঘব বা প্রতিরোধ ভীষণই সম্ভব। ধরো, তুমি চাকরীহারালে। তাতে তুমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে মদ খাওয়া শুরু করবে, বা আত্মহত্যা করবে, বা কাপড়ের দোকান খুলে ব্যবসার মাধ্যমে বড় এক শিল্পপতি হতে চাইবে- সেই বেছে নেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু তোমার নিজের হাতে। তোমার সেই বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, তোমার জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতা গড়ে দেবে।
ডিপ্রেশান বা মানসিক অবসাদ ব্যাপারটা খুব জটিল। এখনও অনেক রকম গবেষনা চলছে। তবুও বলতে হয়- কিছু মানুষ আঘাত পেলে, যন্ত্রণাকে নিমন্ত্রণ করে। আঘাত হয়তো কবেই শেষ হয়ে গেছে (ইতিহাস হয়ে গেছে)। কিন্তু সেই মানুষটা অতীতের আঘাতের জন্য, এখনো নিজেকে ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে এভাবে দীর্ঘ্য সময় ধরে যন্ত্রণা দিলে মানুষের মস্তিস্ক (শুধু মস্তিস্ক নয়, শরীর এবং মন দুই-ই) দুর্বল হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থের অভাব ঘটে। মানুষ তখন মানসিক অবসাদগ্রস্ত হতে পারে।
জীবনে আঘাত আসবেই। কিন্তু সেই আঘাতে তুমি কতটা যন্ত্রণা পাবে, তার চাবি কাঠি কিন্তু তোমার হাতে। সেই আঘাতে তুমি জ্বলে ছাই হতে পারো। বা আঘাতে পুড়ে তুমি, খাঁটি সোনার মতো দ্যুতিওছড়াতে পারো।
অরুণ মাজীর ফেসবুক পেজে, ডিপ্রেশন নিয়ে ডজন ডজন লেখা রয়েছে। চাইলে সেগুলো তোমরা পড়তে পারো।
© অরুণ মাজী
Painting: JWG
খুব ভালো লিখেছেন।আপনার সঙ্গে আমি একমত ।আমার শুভেচ্ছা রইল।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
সত্যিই তাই আঘাত অন্য লোকের হাতে থাকলেও সেই আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নিজের হাতে।