কত জন মানুষের জীবনে তুমি গঠনাত্মক পরিবর্তন এনেছো,
তার মাপেই তোমার বিশালত্বের পরিচয়।
মিডিয়াতে তোমার ছবি প্রতিদিন দশবার করে ছাপলে,
বা টিভিতে প্রতিদিন দুবার করে ইন্টারভিউ দিলেই,
তুমি বড় মানুষ হয়ে যাও না।
মানুষের জীবন দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা জর্জরিত। কারও চোখের জল তুমি মুছিয়েছো? কারও দুঃখের দিনে তুমি সাহস দিয়েছো? কাউকে তুমি সাবলম্বী হতে সাহায্য করেছো? কাউকে তুমি শিক্ষিত হতে সাহায্য করেছো? তোমার পাড়াকে তুমি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে সাহায্য করেছো? তুমি যদি, তা করে থাকো, তুমি সত্যিকারের বড় মানুষ। মিডিয়াতে তোমার ছবি ছাপা না হলেও- মানুষের হৃদয়ে, আর ঈশ্বরের হৃদয়ে, তুমি বড় মানুষ।
সব মানুষই সাধারণ। কিন্তু প্রেরণার ঝড় গায়ে লাগলে, সেই মানুষই অসাধারণ এক মানুষ হয়ে উঠে। কাজেই কাউকে সাহস দেওয়া, বা প্রেরণা দেওয়া- এক মহান কর্ম্ম। এই সাধারণ অথচ অসামান্য কর্ম্ম করতে হলে- তোমাকে ধনী হওয়ার দরকার নেই, কাউকে তোমার ট্যাঁক থেকে কড়ি দেওয়ারও দরকার নেই। নিঃস্ব হয়েও তুমি অসামান্য এক কর্ম্ম করতে পারো। সাধারণ মানুষ হয়েও, তুমি মহান এক কর্ম্ম করতে পারো।
মানুষকে প্রেরণা দিতে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা কিন্তু ভীষণ বেশি। খুবই দুর্ভাগ্যের- আজকের খবরের কাগজ, গঠনাত্মক কিছু ছাপতে ভুলে যাচ্ছে। এ রাজ্যে, চরম অরাজকতা থাকলেও- এমন কিছু শিশু আছে, যে- আজও অন্ধকে রাস্তা পেরোতে সাহায্য করছে। এমন এক শিক্ষক আছে, যে- পকেট থেকে টাকা দিয়ে, দরিদ্র্য ছাত্রদের জন্য বই আর পোশাক কিনে দিচ্ছে।
দেশনেতাদের এতো চুরি ডাকাতি রাহাজানির মধ্যেও, আমাদের দেশ যে এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায় নি, সে কিন্তু এইসব নাম গোত্রহীন আকারে ছোটখাটো মানুষদের জন্য। এরাই কিন্তু আমাদের প্রকৃত হীরো।
কিন্তু এদেরকে আমরা হীরোর মর্যাদা দিই কি? দিই না। কেন দিই না? কারন- কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, সেই সামান্য জ্ঞান আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা বড় ছোটর হিসেবে করি- মিডিয়া কাকে নিয়ে মাতামাতি করছে, তাই দেখে!
মিডিয়া কাকে নিয়ে মাতামাতি করছে? বেশিরভাগ সময়ে যা মানুষের জীবনে হয় অর্থহীন, নতুবা- ধ্বংসকারী। আজকের বাংলা খবর দেখো- কলকাতার এক বিখ্যাত কাগজ খবর ছেপেছে- শাহরুখ খানের মেয়ে কার সাথে, সিনেমা দেখতে গেছে! এই হলো সংবাদপত্র আর সাংবাদিকের কর্তব্যজ্ঞান বা দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয়! বিখ্যাত সংবাদপত্রের বিখ্যাত সম্পাদকের যদি কোন কান্ডজ্ঞান না থাকে, তাহলে অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের কান্ডজ্ঞান থাকবে কি করে? শাহরুখ খানের মেয়ের, সিনেমা দেখা বা না দেখা- দেশের মানুষের কোন কল্যানে লাগবে? শাহরুখ খানের মেয়েও তো একজন মানুষ। সে কি সিনেমা দেখতে যেতে পারে না? একটা বাচ্চা মেয়ের ব্যক্তিগত জীবনে, বিখ্যাত এক কাগজের যৌন দৃষ্টি কেন? ছিঃ ছিঃ লজ্জা হয়!
এসব কেলেঙ্কারীর খবর লিখে, বা গুজব লিখে ব্যবসা করার জন্য- চরিত্রহীন ট্যাবলয়েড আছে। বিখ্যাত কাগজ কেন, তাদেরকে সেই রকম এক নরকে নামাচ্ছে? তারা কি ভুলে গেছে- জাতি আর দেশ গঠনে তাদের কর্তব্যের কথা?
ওহে সম্পাদকগণ, আর কত চরিত্রহীনতার নর্দমায় স্নান করবেন আপনারা? আপনাদের লজ্জা কি কিছু মাত্র আছে? অথচ, আপনাদের পূর্ব পুরুষ তাদের দায়িত্ব, কত নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন! আপনারা তাদের সুযোগ্য উত্তরপুরুষ, অথবা তাদের চেয়ারে বসা এক কলঙ্ক?
ভাইয়েরা, কাগজ যদি বিকিয়ে যায়- তো কি আর করবে? তোমাদের কাছে অনুরোধ, সোশ্যাল মিডিয়া এখন তোমাদের হাতে। কাজেই তোমরা এই কর্তব্য পালন করো। যেসব সাধারণ লোক, মানুষের জীবনে গঠনাত্মক প্রভাব ফেলছে, তাদের কথা তোমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে তুলে ধরো। তোমরা একে অপরকে উৎসাহ দাও। তোমরা কাউকে সমালোচনা করো না। তোমরা কাউকে গালি করো না।
আমরা সবাই জীবনে যন্ত্রণাকাতর। কাজেই আমরা একে যদি, অন্যের বুকে হাত বুলিয়ে না দিই, তবে আমাদেরকে যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করবে কে? দেখছো তো আজকাল বড় বড় মানুষদের চরিত্রহীনতার গল্প। কাজেই- তোমাদের সমস্যা, তোমাদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে। উচ্ছন্নে যাক সেই সব চরিত্রহীন নির্লজ্জ্য 'বড় মানুষ'!
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem