যন্ত্রণার কারন কে- দুঃখ অথবা তুমি নিজে? (Essay On Human Sufferings 4) Poem by Arun Maji

যন্ত্রণার কারন কে- দুঃখ অথবা তুমি নিজে? (Essay On Human Sufferings 4)

Rating: 5.0

এক মাস্টার পড়াতে পড়াতে হটাৎ-ই ক্লাসের বাইরে বেরিয়ে গেলো। ক্লাসের বাচ্চারা দেখলো- মাস্টারের টেবিলের উপর, একটা কক্কুন, আর সেই কক্কুনটা নড়ছে। কিছুক্ষণ পর তারা দেখলো- সেই কক্কুন থেকে, একটা ছোট্ট প্রজাপতি বেড়িয়ে আসার জন্য ছটফট করছে। বাচ্চা ছেলেগুলোর খুব মায়া হলো। তারা কক্কুনটা ভেঙে, প্রজাপতিটাকে বেড়িয়ে আসতে সাহায্য করলো। প্রজাপতিটা কক্কুন থেকে বেড়িয়ে আসার পর, আর উড়তে পারলো না। তারও কিছুক্ষণ পর, প্রজাপতিটা মারা গেলো।

বাচ্চাদের মন খারাপ। মাস্টার মশায় ক্লাসে ঢুকে, কি ঘটেছে জিজ্ঞেস করলো। ছেলেরা সমস্ত ঘটনা, সবিস্তারে বললো। মাস্টার মশায় বললো- 'এই প্রজাপতির অকাল মৃত্যুর জন্য, তোমরা দায়ী। ছোট্ট প্রজাপতি কক্কুনের মধ্যে যখন ছটফট করে, তখনই সে- ভবিষ্যতে উড়ার জন্য, তার ডানা শক্ত আর সমর্থ করে। তোমরা তাকে সাহায্যের নামে, তাকে শক্ত হতে আর দিলে না। তাই সে বাইরের কঠিন পৃথিবীতে, বেশীক্ষণ বাঁচতে পারলো না। কাজেই, ওর মৃত্যুর দায় কিন্তু তোমাদের '

সুখে, সুখ হয়। কিন্তু তাতে মানুষের বৃদ্ধি হয় না। দুঃখ আর যন্ত্রণাই কেবল মানুষকে শক্ত আর সমর্থ করে। তোমরা ভেবে অবাক হবে যে- এই পৃথিবীতে যদি দুঃখ আর যন্ত্রণা না থাকতো- তাহলে এই পৃথিবী থেকে, মানুষ বা অন্যান্য জীবেরা কবেই বিদায় নিতো! ঠিক যেমন এই প্রজাপতিটা অকালে বিদায়নিয়েছিলো।

দুঃখ-যন্ত্রণা কি মানুষের শত্রু? না, কখনো নয়। দুঃখ-যন্ত্রণা মানুষের পরম মিত্র। যে শিক্ষা বা ট্রেনিং, তুমি- তোমার বাবা মা, শিক্ষক, বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাও না; সেই অপরিহার্য্য শিক্ষা, তুমি দুঃখ আর যন্ত্রণা থেকে পাও। এই শিক্ষা এমনই শিক্ষা যে- এই শিক্ষা আর কেউ তোমাকে শেখাতে পারবে না। এজন্যই দুঃখ যন্ত্রণা অপরিহার্য্য। এজন্যই দুঃখ যন্ত্রণা তোমার পরম বন্ধু।

কখনো গভীর ভাবে ভেবে দেখেছো, যে- দুঃখ নিজে কিন্তু তোমাকে যন্ত্রণা দেয় না! যন্ত্রণা দেয়- দুঃখের প্রতি তোমার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী। ব্যাপারটা বুঝলে না? ধরো- তুমি ভেবেছিলে; আজ সকালে রোদ উঠবে, আর তুমি তখন ঘুড়ি উড়াবে। কিন্তু তুমি দেখলে- সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। তোমার মন খারাপ, আর তুমি তাই নিয়ে হা-হুতাশ করছো। তোমার মনে খুব কষ্ট!

কিন্তু এমনটাও তো তুমি করতে পারতে, যে- বৃষ্টি হয়েছে বলে, তুমি তোমার ভাইদের সাথে জল-কাদায় ফুটবল খেললে। আর তারপর খেলা শেষে, তোমার মায়ের রান্না- খিঁচুড়ি আর বেগুন ভাজা খেলে। তাতে তো তোমার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো!

একই দুঃখ- বৃষ্টি। কিন্তু তোমার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী- তোমার দুঃখকে, আনন্দে রূপান্তরিত করলো। কাজেই দুঃখ যন্ত্রণা তোমার শত্রু নয়। তোমার আসল শত্রু হলো- তুমি নিজে, আর তোমার ধ্বংসাত্বক দৃষ্টিভঙ্গী। দুঃখ যন্ত্রণা কেবল, তোমাকে আরও বেশী শক্ত সমর্থ আর মহৎ করার জন্য।

© অরুণ মাজী
Painting: John Godward

যন্ত্রণার কারন কে- দুঃখ অথবা তুমি নিজে? (Essay On Human Sufferings 4)
Thursday, May 18, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,human,pain,poem,suffering
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success