তোরা কে উলঙ্গ হবি বল? (Essay On Hypocrisy Of Nation) Poem by Arun Maji

তোরা কে উলঙ্গ হবি বল? (Essay On Hypocrisy Of Nation)

Rating: 5.0

পৃথিবীর অর্দ্ধেক লোক সাধু, আর বাকি অর্দ্ধেক লোক পাপী।
যারা সাধু তারাও কখনো কখনো পাপ করে,
আর যারা পাপী তারাও কখনো কখনো পুণ্য করে।
তাহলে সাধু আর পাপীতে খুব বেশি তফাৎ নেই। তাই না?
তোমরা ভাবছো- অরুণ মাজী একটা ভোঁদড়, গাঁজা টেনে আবোল তাবোল বলছে!
সত্যিই কি আমি গাঁজাখোর?

বেশ। তোমাদের সহস্র বছরের বিশ্বাসকে, তবে একটু উলঙ্গ করা যাক-
গরীব মূর্খরা খিদের জ্বালায়, কেবল এক টাকার জন্য পাপ করে। আর রামাবলী গায়ে বাবুরা, লক্ষ টাকার জন্য পাপ করে। তফাৎ কেবল এইটুকুই। বিশ্বাস হচ্ছে না?

একটা ডিনার পার্টিতে, এক ভদ্দরলোক- ভদ্রবেশী এক সুন্দরী মহিলার কানে কানে গিয়ে বললেন-
'আপনাকে আমি এক লক্ষ টাকা দেবো। আজ রাত্তিরটা, আপনি কি আমার বিছানায় শুবেন? '
ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে, ভদ্দরলোকের কানে কানে বললেন-
'ঠিক আছে, টাকাটা কিন্তু আগে দিতে হবে।'
ভদ্দরলোকটি তখন, মহিলাটির কানে কানে কানে আবার বললেন-
'আপনাকে আমি এক হাজার টাকা দেবো। আজ রাত্তিরটা, আপনি কি আমার বিছানায় শুবেন? '
ভদ্রমহিলা তো রেগে কাঁই! তিনি চীৎকার করে সকলকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন-
'জানেন আমি কে? আপনার এতো বড় সাহস হয় কি করে? '
ভদ্দরলোক তখন শান্তস্বরে বললেন-
'আপনি নিজেই তা প্রমাণ করেছেন- যে আপনি একজন ভদ্রবেশী বেশ্যা, যিনি এক লক্ষ টাকার জন্য, পর-পুরুষের সাথে, রাত কাটাতে সহাস্যে তৈরী। '

পৃথিবীতে যারা, নিজেদেরকে সাধু বলে ঢ্যাঁড়া পেটায়; তারা ঠিক উপরোক্ত ভদ্রমহিলার মতো বেশ্যা। এক হাজারের জন্য তারা পাপ করে না ঠিকই। কিন্তু এক লক্ষের জন্য তারা সানন্দে পাপ করে।

পাপ করলেই তুমি পাপী। সে তুমি এক হাজারের জন্য করো, অথবা এক লক্ষের জন্য করো। রামাবলী পরিহিত, ভদ্দরলোকদের মুখে পাপ পুণ্য, সত্য মিথ্যা, শ্লীল অশ্লীল- ইত্যাদি শব্দগুলো শুনতে শুনতে, আমার কান পচে গেছে। রামাবলী পরিহিত বা দাড়িওয়ালা মার্কা ধর্মগুরু, অথবা ধোপদুরস্ত ভদ্দরলোকেরা তাদের টিকি নাড়তে নাড়তে হুলিয়া জারি করে-
ঈশঃ এটা ন্যাংটো ছবি!
ঈশঃ এটা ন্যাংটো কবিতা!
ঈশঃ মেয়েটা কি অসভ্য! মিনি স্কার্ট পরে পথ হাঁটছে!

যে টিকিধারী বা দাড়িওয়ালা ধর্মগুরু, সানি লিওনকে অশ্লীল ইতর বলে গালি দেয়; সেই মানুষটাই রাতের বেলা, সানি লিওনকে নিজের বিছানায় পাওয়ার জন্য, কাটা ছাগলের মতো ছটফট করে।

উলঙ্গরা কি সত্যিই উলঙ্গ? অথবা পোশাক পরিহিত ভদ্দরলোক বেশি উলঙ্গ? যারা লোকসমক্ষে উলঙ্গ, তাদের মধ্যে- বিশাল এক সততা আর সাহস আছে। কিন্তু যারা কাপড়ের আড়ালে উলঙ্গ? তারা শঠ, প্রবঞ্চক, ভীরু কাপুরুষ! যা কিছু প্রকৃতিগত ভাবে সত্য, সেই সত্যতা স্বীকার করার সাহসও তাদের নেই।

তোমরা জানো, আমি শেষ কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন প্রবন্ধ আর কবিতায় চীৎকার করে বলছি-
'এ পৃথিবী নিষ্ঠুর,
জেলে বন্দী, খুনী-ডাকাতদের জন্য নয়।
এ পৃথিবী নিষ্ঠুর নোংরা,
সদাপূজ্য, শুভ্রবস্ত্রের ভদ্দরলোকেদের জন্য। '

হয়তো তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করবে-
ভদ্দরলোকেদের কাঁছা খুলতে, আমার এতো উল্লাস কেন? এতে, কি মানুষের কোন মঙ্গল হবে? আলবৎ হবে।

আগে তোমরা বলো- ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচে কারা? যারা পাপ করতে চায়, অথচ তারা এতো দুর্বল আর নপুংসক- তারা তা লোক সমক্ষে করতে পারে না। এরা কেবল পাপী নয়, এরা দুর্বল হীন নপুংসক কৃমি।

পাপ তুমি কাকে বলছো? পাপের সংজ্ঞা কি? ধর্ষণ তোমাদের কাছে 'ছোট্ট ঘটনা' অথচ মেয়েরা স্কার্ট পরলে- সেটা মেয়েদের পাপ? বলিহারি তোমাদের কান্ডজ্ঞান! তোমরা মস্তিস্কযুক্ত মানুষ, অথবা মস্তিস্কহীন কৃমি?

তোমরা বলো- ন্যাংটো ন্যাংটো পোশাক পরা, মেয়েদের ধর্ষণের কারন। অথচ যারা ধর্ষিত হয়েছে, তারা সকলেই আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা ছিলো। তবে তারা ধর্ষিত হলো কেন?

কাপুরুষরাই কেবল দ্বিচারী হয়, আর ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচ নাচে। একটা জাতি, যতদিন না পর্যন্ত ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচ বন্ধ করছে, ততদিন সেই জাতি, ভীরু দুর্বল আর অন্ধ থাকবে। সেই অন্ধত্বের কারনে, মূল সমস্যাকে তারা কখনো দেখতে পাবে না। ফলে সেই জাতি তার দুর্বলতাকে কখনো জয় করতে পারবে না।

ধর্ষণের মূল কারন কি?
১. পুরুষদের, নারীকে পণ্য মনে করার প্রবণতা
২. বিজ্ঞাপনে- নগ্ন নারীকে, পণ্য হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার
৩. 'নারী- পুরুষ অপেক্ষা নীচ আর হেয়', পুরুষদের এই মানসিকতা
৪. আইনশৃঙ্খলার চরম অভাব
৫. ক্ষমতার জোরে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া
৬. দুষ্কৃতী আর রাজনীতিকদের এক পেয়ালায় মদ খাওয়া
৭. মদ আর ড্রাগের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদি।
একথা তবে সত্য, আজকাল কিছু নারী- পার্থিব সুখের জন্য নিজেকে পণ্য বানাতে দ্বিধা করে না! গার্গী, মৈত্রেয়ী, মা সরদার দেশে ব্যাপারটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

দেশ আর রাজ্যের সরকার যেহেতু- মূর্খ, ভোঁদড়, অপরাধীদের দিয়ে তৈরী, তাই তারা উপরোক্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে না। নেতারা তাদের নপুংসকতা ঢাকতে, লোকসমক্ষে চীৎকার -
'ধর্ষণ ছোট্ট ঘটনা'
'ধর্ষণ সাজানো ঘটনা'
'মেয়েটা ন্যাংটো পোশাক পরেছিলো, তাই ধর্ষিত হয়েছে। '
'মেয়েটার ইতিহাস খারাপ ছিলো, তাই ধর্ষিত হয়েছে।' ইত্যাদি শত অজুহাত।

কিছু ভোঁদড় মার্কা জনগণ- ভোঁদড় মার্কা নেতাদের, এই সব সাফাইয়ে দিনরাত তালি বাজাচ্ছে। আর তারা, অরুণ মাজীর মতো মানুষগুলোকে খিস্তি করছে, আর হুমকি দিচ্ছে- 'কলকতায় এলে তোকে মেরে ফেলবো '

খরগোশের মতো মুখ ঢেকে অন্ধ সেজে, তুমি কি বলতে পারো- পৃথিবী বলে কিছু নেই? মানুষের এই অন্ধত্ব কেন? এর কারন মানুষের দ্বিচারিতা, আর ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচ নাচা। পাপ যদি করতেই হয়, তো তা দেখিয়ে দেখিয়ে করার সাহস রাখো। যেদিন আমাদের সেই সাহস হবে, সেদিন আমরা অনেক উঁচু রকমের মানুষ হবো।

হে বাঙালী
তোমরা আমাকে কিছু উলঙ্গ শিশু দাও,
যারা ন্যাংটো রাজা, আর তার তাঁবেদার-দেরকে বলবে,
রাজা রাজা, তোমাদের পচা দুর্গন্ধময় নংকু দেখা যাচ্ছে!

তোমরা আমাকে দশজন নির্ভীক উলঙ্গ বাঙালী দাও। পাঁচ বছরে আমি- বাঙালীকে, পৃথিবী-শ্রেষ্ঠ করবো। জনগণকে আমি অনুরোধ করবো- তারা যেন সেই দশজন উলঙ্গ বাঙালীর পিছনে দাঁড়ায়।

ভাইরে,
তোরা কে উলঙ্গ হবি বল?

© অরুণ মাজী
Painting: Andrew Atroshenko

তোরা কে উলঙ্গ হবি বল? (Essay On Hypocrisy Of Nation)
Saturday, October 21, 2017
Topic(s) of this poem: courage,hypocrisy,nation
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success