কিছু মানুষ আছে, যারা অন্যকে যন্ত্রণা দেয়। অনেক সময় বিনা কারনে, অনেক সময় সামান্য কারনে তারা অন্যকে যন্ত্রণা দেয়।
কেন জানো? কারন তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে, ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। তারা সেই যন্ত্রণায় এতোটাই পরিপূর্ণ যে, সেই যন্ত্রণা তাদের ভেতর থেকে উপচে পড়ে। তাদের থেকে তুমি যে যন্ত্রণা পাও, সেটা তাদের সেই উপচে পড়া যন্ত্রণা।
যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে, যন্ত্রণা দেয়; সাধারণত, তাদেরকেও আমরা ঘৃণা করতে চাই, যন্ত্রণা দিতে চাই। এইভাবেই পৃথিবীতে, ঘৃণা আর যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়তে থাকে। যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে, তাদেরকে যদি আমরা ভালোবাসতে পারি, তবেই সেই ঘৃণাকারী মানুষটাকে আমরা সাহায্য করতে পারি। তবেই আমরা তাকে ঘৃণার পথ থেকে, ফিরিয়ে আনতে পারি।
কিন্তু ঘৃণাকারীকে ভালোবাসা কি এতো সহজ? মোটেও না। পারবে তুমি একজন খুনীকে ভালোবাসতে? একজন ধর্ষককে ক্ষমা করতে? আমরা তা পারি না বলেই, পৃথিবীটা ক্রমশ নিষ্ঠুর আর বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। কারন- যারা খারাপের খাতায় নাম লিখিয়েছে, তারা আর ভালো পথে ফিরতে পারে না। সত্যিকারের মহান, বা ধার্মিক কে? যে- একজন বিপথগামীকে, পুণরায় সুপথে আনতে পারে।
ভাবো- আজকাল খবরের কাগজের পাতা খুললেই কেবল- খুন, রাহাজানি, যুদ্ধ আর হত্যালীলা। পঞ্চাশ বছর পর পৃথিবীটা কেমন হবে? একশো বছর পর পৃথিবীটা কেমন হবে? তুমি না হয় কোনক্রমে, জীবনটা কাটিয়ে দিলে। কিন্ত তোমার সন্তান, তার সন্তানের অবস্থা কি হবে? তারা হয়তো, বাজারে মাছ কিনতে গেলো, কিন্তু খুনীদের বিস্ফোরণে উড়ে গেলো!
ভবিষ্যতের এই অন্ধকার, অরাজকতা কি, কেবল একটা সম্ভাবনা? এটা কোন সত্য নয়? তাকাও তুমি আজকের ইরাক, আফগানিস্তান, প্যারিস, লন্ডনের দিকে। কি দেখো? মানুষ পথে বেরিয়েছে, বিস্ফোরণে উড়ে গেলো। মানুষ সভাগৃহে গান শুনতে গেছে, গুলিতে তাদের বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেলো।
আমরা সবাই আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাবি। কিন্তু আমরা কেউ কি, এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ভাবি? পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কি আমাদের ভবিষ্যৎ নয়? পৃথিবীটা উগ্রবাদী, সমাজবিরোধীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে গেলে, সেই দুষ্টু লোকগুলো- তোমাকে বা তোমার সন্তানদেরকে খুন করবে না?
রাজনৈতিক নেতারা বা ধর্মগুরুরা কেবল হিংসা আর হত্যাতে সুড়সুড়ি দেয়। এর ভবিষ্যৎ ফল কি, তা তোমরা ভাবো? কতজন তোমরা তার প্রতিবাদ করো? তুমি কোন এক ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী বলেই কি, তুমি চোখ বুজে থাকবে? হিংসা সবসময়ই হিংসা। হত্যা সবসময়ই হত্যা। তা যে কেউ করুক না কেন।
তোমাকে যারা ঘৃণা করে, তাকে ভালোবাসতে না পারো; কিন্তু তাকে ঘৃণা ফেরৎ না দিয়ে, চুপ তো থাকতে পারো। তাতেও এই পৃথিবীর অনেক লাভ। যে মানুষকে ভালাবাসা খুব কঠিন, সেই মানুষেরই ভালোবাসা বেশী প্রয়োজন। কারন- সেই নিষ্ঠুর মানুষটা, নিজের মধ্যে ভয়ঙ্কর ভাবে জ্বলছে।
অসহ্যকে সহ্য করতে শেখা, বা ঘৃণ্যকে ভালোবাসতে শেখাই হলো- জীবনে সত্যিকারের বড় হওয়া। সেই সংজ্ঞা অনুসারে, আমরা ক-জন বড় হয়েছি?
© অরুণ মাজী
Painting: Eduard Friedrich Leybold
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem