পাহাড়ি মেয়ে খন্ড ১৩ (Himel) Poem by Arun Maji

পাহাড়ি মেয়ে খন্ড ১৩ (Himel)

খট খট খট। দরজায় নক করলাম আমি।

দরজাটা অর্দ্ধেক খুলেই, উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে উঠলো পিকু-
'মামু এসেছে মা, মামু এসেছে। ঊহঃ কি মজা! মামু এসেছে।'

চীৎকার করতে করতে, লাফ দিয়ে আমার কোলে চড়ে বসলো পিকু।

সুটকেস মাটিতে রেখে, পিকুকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম আমি। ভেতরে বিদুদা বসেছিলো। আমাকে দেখে, এগিয়ে এলো কাছে। জড়িয়ে ধরলো আমাকে। বললো-
'বাহঃ ঠিক সময়ে এসে গেছো তুমি।'

ঠিক সময় মানে?
 
'এই মাত্র ঘুম থেকে উঠে, ব্রেকফাস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। '

পিকুকে সোফাতে বসিয়ে দিয়ে, সুটকেসটা ঘরে নিয়ে এলাম আমি। তারপর বিদুদাকে জিজ্ঞেস করলাম-
দিদি কোথায়?

রান্নাঘর থেকে সাড়া দিলো দিদি-
'আমি কিচেনে। ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি।'

কিছুক্ষণ থেমে দিদি জিজ্ঞেস করলো-
'কিরে, ট্রেনে এলি? না উড়ে? '

ট্রেনে এলাম। ট্রেন চড়তে বেশ লাগে আমার।

'কি খাবি? ব্রেড টোস্ট ওমলেট? না অন্য কিছু বানাবো তোর জন্য? '

ব্রেড টোস্ট ওমলেটই দে।

বিদুদা জিজ্ঞেস করলো আমায়-
'ট্রেনে ঘুম হয়েছিলো? '

হ্যাঁ। ব্যাপক ঘুম হয়েছে। ট্রেনের মধ্যে ঘুমানোর মজাই আলাদা। দোলনার মধ্যে দুলতে দুলতে ঘুমানোর মতো।

বিদুদা বললো-
'ঠিকই বলেছো। ট্রেনে আমারও বেশ ঘুম হয়।'

দিদির উদ্দেশে আমি বললাম-
বিশ্বাস করতে পারছি না, তোরা এরই মধ্যে দার্জিলিং চলে এসেছিস।

দিদি-
'আসবো না কেন? তুই আমার আদরের ভাই বলে কথা।'

দিদির কথার সঙ্গে বিদুদা যোগ করলো-
'আমাদের ঘটকালি তুমি করেছো, তো তোমারটা তাই আমরা করবো। বেশি কিছু করছি না।'

পিকু আবার আমার কোলে চড়ে বসলো। তারপর ওর বাবার উদ্দেশে জিজ্ঞেস করলো-
'ঘটকালি কি পাপ্পা? '

বিদুদাকে উত্তর করতে হলো না। রান্না ঘর থেকে দিদি উত্তর করলো-
'ঘটকালি হলো, A process when an agent arranges marriage between two families. তোর মামুর জন্য একটা মামী খুঁজবো আমরা।'

পিকু-
'কেন, দর্পণ মাসী মামী হবে না? '

দিদি-
'দূর পাগল। দর্পণ মাসী মামী হলে, তোর দর্পণ মাসী থাকবে কে? '

পিকু আমার চিবুকে হাত রেখে বললো-
'জানো মামু, দর্পণ মাসী খুব ভালো। আমাকে এত এত গেমস দেয়।'

দিদি-
'ঊহঃ তোর শুধু গেমস আর গেমস।  তোকে যে-ই গেমস দেবে, সেই তোর ভালো।'

পিকু-
'তা কেন? দর্পণ মাসী আমাকে আদরও করে। তুমি যখন আসতে পারো না, মাসীই তো আমাকে স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।'

দিদি-
'তাই? মাসি তোর জন্য আর কি করে? '

পিকু -
'মাসি আমাকে এত্তো এত্তো চকলেট দেয়।'

দিদি
'তাই? তোর মাসী, তাই তোকে দেয়। '

আমার চিবুক ছুঁয়ে পিকু বললো-
'দর্পণ মাসিই মামী হবে আমার, তাই না মামু? '

কোন উত্তর করতে পারলাম না আমি। দিদি পিকুকে বললো-
'বেশ, তুই এখন মামুর কোল থেকে নাম। মামু এখন স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নিক।'

পিকু আমার কোল থেকে নেমে গেলো। দিদি বললো-
'শোন ভাই, তোর ঘর উপরে। আমরা নীচেই রয়েছি।'

সুটকেস নিয়ে সিঁড়ি চড়তে শুরু করলাম আমি। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ভাবলাম- ঊহঃ আবার সেই দর্পণ!

হ্যাঁ, দর্পণ! আমার দিদির ছেলেবেলার বন্ধু। দিদির হরিহর আত্মা। দর্পণকে ছাড়া দিদির একবিন্দু চলে না। সেই ছোটবেলা থেকে।

দিদি মিলিদি, এরা বলে- দর্পণ নাকি আমার জন্য পাগল!  আমার জন্যই নাকি দর্পণ এখনো বিয়ে করে নি!  

কিন্তু কি আশ্চর্য্য! দর্পণ কিন্তু কোনদিনই প্রেম জাতীয় কোন কিছু বলে নি আমাকে। অন্তত মুখ ফুটে কখনো বলে নি। অবশ্য আমিও কোন আগ্রহ দেখায় নি।

সত্যি বলতে কি, দর্পণের প্রতি, প্রেম জাতীয় কোন কিছু কখনো জাগে নি আমার। নাহঃ কোন দিনই না।

দর্পণকে আমি- কখনো দর্পণ বলে ডাকি। আবার কখনো দর্পণদি বলে ডাকি। বড় অদ্ভুত! তাই না? দর্পণও অবশ্য এনিয়ে কখনো কোন অভিযোগ করে নি। দিদির অন্যান্য বন্ধুদেরকে দিদি বলে ডাকলেও, দর্পণের বেলায় সম্বোধনটা কেমন যেন গুলিয়ে যায় আমার।

দর্পণকে পছন্দ করি আমি। পছন্দ মানে, বেশ ভালোই পছন্দ করি আমি। কিন্তু আমি নিশ্চিৎ, সেই পছন্দ- প্রেম জাতীয় কিছু নয়।

যদিও আমার জন্মদিনে, প্রথম ফোনটা দর্পণের কাছ থেকেই আসে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে, আমার জন্মদিনের কেক, দর্পণই নিজের হাতে বানায়। আমাদের বাড়িতে একপ্রকার ধরেই নেওয়া হয়, আমার জন্মদিনের সন্ধ্যেবেলায়, দর্পণ কেক নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকবে।

দর্পণ আমার দিদির বন্ধু। আমাদের পরিবারের বন্ধু। হয়তো বা আমারও। কিন্তু তার বেশি কিছু না। কিন্তু পিকুর মুখে কথাটা শোনার পর, সবকিছু যেন গুলিয়ে গেলো। আগের থেকেও বেশি গুলিয়ে গেলো।

দর্পণকে নিয়ে এরকম গোলমেলে ভাবনা, এর আগেও ভেবেছি। কিন্তু বেশি বেশি নয়। সেই ভাবনা খুব বেশিক্ষণ টেকে নি আমার হৃদয়ে।

দর্পণকে কেন ভাববো? দর্পণ আমার কে? ওর সাথে তো প্রেমজাতীয় এমন কিছু ঘটে নি আমার। নাহঃ দর্পণকে নিয়ে আমার কোন ভাবনা ভাবা উচিৎ নয়। দর্পণের প্রেমে আমি পড়ি নি। ব্যাস। এই যথেষ্ট।

তবে হ্যাঁ। প্রতি জন্মদিনে, ও আমার হাত ধরে কেক কাটায়। তারপর আমার গালে, আলতো করে একটা চুমু দেয়।

চুমু দেয় তো কি হলো? জন্মদিনে, পরিবারের বন্ধু হিসেবে কেউ চুমু দিতেই পারে।  কিন্তু যুবতী এক মেয়ে কি, কোন এক যুবককে এমন করে চুমু দিতে পারে? কেন পারে না? বিদেশে এমন চুমু, অনেক দেখেছি আমি।

কিন্তু অমলবাবু, সিডনির সংস্কৃতি আর কলকাতার সংস্কৃতি কি এক? না, তা নয়। তো?

তাই বলে, দর্পণের সঙ্গে আমার প্রেম জাতীয় কিছু সম্পর্ক? নাহঃ তা হতেই পারে না। একদমই না। কোনকালেই না।  

© অরুণ মাজী

পাহাড়ি মেয়ে খন্ড ১৩ (Himel)
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success