PAIN হলো যে আঘাতটা তুমি পাও। আর SUFFERING হলো- সেই আঘাতের জন্য তুমি যে দৈহিক আর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগো।
কেউ ফুলের ঘায়ে মূর্চ্ছা যায়। কেউ আবার বুলেটের আঘাতে বিদ্ধ, বুকের থেকে রক্তের ফোঁটা মুখে নিয়ে বলে- 'বাহঃ খুব TASTY তো! একটা কাপ দে ভাই, চুমুক দিয়ে খাই। '
বিশ্বাস হয় না? ১৯৯৯ সাল। আমি তখন কার্গিল যুদ্ধে। রাতে, এক কম্যান্ডার আমায় ফোন করে বললো, 'অরুণ, ছটু সিং তার জামা খুলে দেখে, তাতে রক্ত লেগে আছে। এখানে ভালো করে আলো জ্বালানো যাবে না। ওকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি। '
ছটু সিং রাত দুটোর সময় এলো, দেখলাম- ছটু সিংয়ের বাহু, বুলেটের আঘাতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে। অথচ ছটু সিং তা টেরই পায় নি।
একদিন বিজয় সিং এসে হাজির। তার বাহুতে বুলেট ঢুকেছে। আমি তাকে হাসপাতাল পাঠাতে চাই। বিজয় সিংয়ের গোঁ- সে যাবে না। জঙ্গলের মধ্যে, আমাকেই বুলেটটা বের করতে হবে। আমার কাছে লোক্যাল এনেস্থেসিয়া ছাড়া কিছুই নেই।
ক্ষতের ভেতরে ঢুকে দেখি- বুলেটটা হাড়ের খাঁজে এমনি করে আটকেছে যে, তাকে বের করা যাচ্ছে না। আমাকে পেশী কেটে বের করতে হলো। বুলেটটা যখন বের করলাম, বিজয় সিং বিজয়ী হাসি হেসে আমায় বললো- 'ডাক্তার, ইসকো মুঝে দিজিয়ে। হাম ইসকো তাবিজ বানাকে প্যানহেঙ্গে।'
এতো তো আঘাতের তীব্রতা! তবুও ছটু সিং বা বিজয় সিং কাঁদে নি কেন? যন্ত্রণাকে কি জয় করা সম্ভব? কিভাবে?
আমি তোমাদেরকে সবসময় বীর হতে বলি। কেন? কারন- যারা সাহসী, তারাই কেবল যন্ত্রণা জয় করতে পারে। যন্ত্রণাকে এড়িয়ে যেতে নেই। যন্ত্রণাকে নিয়ে, বিজয় সিংয়ের মতো ছেলেখেলা করতে হয়। যন্ত্রণার লেজে হুঁকো বেঁধে, ঘুড়ি উড়িয়ে, তামাশা দেখতে হয়। যন্ত্রণা তখন, তোমার কাছে 'বাপ বাপ' বলে আত্মসমর্পণ করবে।
তোমার বুদ্ধি আছে, খ্যাতি আছে, সন্মান আছে, সবই আছে। কিন্তু তুমি সামান্য যন্ত্রণাতেই কাতর হও। তাহলে তুমি কি সুখী হবে? তুমি কি তাহলে, জীবনে হাসতে পারবে? তোমার অনেক টাকা, অনেক সন্মান। কিন্তু তুমি হাসতে জানো না। তুমি কি তাহলে পরাজিত নও? বোকা নও? ভোঁদড় নও?
তাহলে বিদ্যা বুদ্ধি খ্যাতি সম্পত্তি থেকে কি লাভ? জীবনে, প্রাণ খুলে যদি একটু হাসতেই না পারলে; জীবনে তবে কলুর বলদ হয়ে, ঘানি টানো কেন?
প্রশ্বাস নেওয়ার নাম জীবন নয়। হাত পা নেড়ে অঙ্গভঙ্গী করার নাম জীবন নয়। জীবন হলো- একটু হাসতে পারা। চোখের জলের মধ্যেও, হা হা করে হাসা। বুকে, বুলেটের ক্ষত নিয়েও খিলখিল করে হাসা। মালবিকার দাঁতের ক্ষতে, কাসুন্দি মেখে খেতে খেতে, ক্যাবলার মতো হাসা।
জীবনে যে হাসতে জানে- সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান, সেই প্রকৃত ধনী। প্রতিভা বুদ্ধি সম্পদ সবই বেকার, যদি না বুকে সাহস থাকে তোমার।
জীবনে যদি বিজয়ী হতে চাও- কেবল একটা জিনিসের সাধনা করো। তা হলো বীরত্ব। দেশকে যদি, এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও, দেশের মানুষকে বীর হতে সাহায্য করো।
কেন আমি বারবার 'বীর হও, বীর হও তোমরা' বলে রাতদিন চীৎকার করি? ঠিক এজন্যই।
আমি গাঢ় যন্ত্রণা দেখেছি। আমি কালো কালো যন্ত্রণা, নিজে ভুগেছি। আমি নীল নীল বেদনার চিকিৎসা করেছি। তাই আমার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা আজ এতো সবুজ। আমি যন্ত্রণার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলি-
দে শালা, দে
কত বিষ আছে তোর বুকে
কত আগুন আছে তোর চোখে।
বিষ কণ্ঠে নীলকণ্ঠ আমি
আমি ভয় পাই না তোকে।
এই মুহূর্তে চেয়ারে বসে আছো? তাহলে সোজা হয়ে বীরের মতো বসো।
এই মুহূর্তে হাঁটছো? তাহলে সোজা হয়ে বীরের মতো হাঁটো।
এই মুহূর্তে প্রেয়সীকে চুমু খাচ্ছো? তাহলে বিক্রমী সিংহের মতো তাকে চুমু খাও।
প্রতিটা মুহূর্ত বীরের মতো আচরণ করো। দেখবে- বীর তুমি হবেই।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
চমৎকার নির্মাণ