Jean Arthur Rimbaud - Twenty Poems Translated In Bengali Poem by Malay Roy Choudhury

Jean Arthur Rimbaud - Twenty Poems Translated In Bengali

জাঁ আর্তুর র‌্যাঁবো-র কুড়িটি কবিতা
অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী

প্রথম সন্ধ্যা
মেয়েটি যদিও সাদামাটা পোশাকে ছিল,
আর বিশাল অসাবধান গাছেরা
তাদের পাতা দিয়ে ছুঁয়েছিল কাচ,
আড়ি পেতে, কাছ থেকে, বেশ কাছ থেকে ।
আমার আরাম-চেয়ারে বসে,
অর্ধেকনগ্ন, দুই হাতজোড় করে,
মাটিতে, ছোট্ট পা, কতো সুন্দর,
কতো সুন্দর, আনন্দে হচ্ছিল শিহরিত।
আমি দেখছিলুম, মৌমাছিমোম রঙ
সূর্যালোকের এক ভবঘুরে রশ্মি
ওর হাসিতে নাড়াচ্ছিল পাখা, আর ওর
বুকের ওপরে -গোলাপের ওপরে এক মাছি।
আমি চুমু খেলুম ওর কৃশতনু কনুইতে ।
মেয়েটি হঠাৎই খিলখিলে মিষ্টি হাসি দিলো
একই সুরে স্বরভঙ্গী স্পষ্ট কাঁপিয়ে,
স্ফটিকের এক চমৎকার হাসি ।
ওর পালাবার ছোট্ট পাদুটি
চলে গেলো দ্রুত: ‘তুমি থামবে! '
প্রথম সাহসী কাজের অনুমতি দিয়ে,
শাস্তি দেবার ভান করছিল ওর হাসি!
-আমার দুই ঠোঁটের মাঝে শিহরিত,
বেচারি, আমি আলতো চুমু খেলুম চোখের পাতায় ।
-ও নিজের নিস্তেজ মাথা পেছনে করে নিলো।
‘ওহ! ওটা আরও খারাপ, বলতে হয়! '
‘স্যার, আপনাকে আমার দুটো কথা বলার আছে…'
-আমি বাকিটুকু ওর বুকে চেপে ধরলুম
একটা চুমুতে যা ওকে হাসাতে লাগলো
রাজি হবার এক হাসি…
-মেয়েটি যদিও সাদামাটা পোশাকে ছিল,
আর বিশাল অসাবধান গাছেরা
তাদের পাতা দিয়ে ছুয়েছিল কাচ
আড়ি পেতে, কাছ থেকে, বেশ কাছ থেকে ।
১৮৭০
.
সংবেদন
গ্রীষ্মের নীল দিনগুলোয়, আমি ঘুরে বেড়াবো চারিদিকে,
ভুট্টার খোসা দিয়ে খোঁচা খাবো, মাড়াবো শিশির:
এক স্বপ্নদর্শী, তাকিয়ে থাকবো, পায়ের তলায় খেলা করবে হিম।
সন্ধ্যার বাতাসকে অনুমতি দেবো আমার মাথার নবায়ন করতে ।
আমি বলবো -কোনো কথা নয়: আমি ভাববো -কিচ্ছুটি নয়:
কিন্তু এক অনন্ত ভালোবাসা পূর্ণ হবে আমার আত্মায়,
আর আমি চলে যাবো বহুদূর, এক ঘরছাড়া লোক,
প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে -তেমন আনন্দে, যেন আমি এক প্রেমিকা পেয়েছি ।
মার্চ, ১৮৭০


.
রোমান্স
১.
তুমি ঐকান্তিক ছিলে না, যখন তোমার বয়স ছিল সতেরো ।
-এক সুন্দর সন্ধ্যায়, বিয়ার আর লেমোনেডে ক্লান্ত,
ঝকঝকে আভা নিয়ে হট্টোগোলেভরা রেস্তঁরাগুলো!
-প্রশস্ত রাস্তায় লেবুগাছের সবুজের ভেতর দিয়ে তুমি হেঁটে যাও।
সুন্দর জুনের সন্ধ্যায় লেবুগাছের সুন্দর সুগন্ধ!
বাতাস এতো মিষ্টি তুমি কখনওবা দুচোখ বন্ধ করে নাও:
হাওয়া শব্দে ভরপুর -কাছেই শহর -
বিয়ারের গন্ধ ভেসে আসে, আর আঙুরলতার সুবাস...

-তারপর তুমি একটা ছোটো টুকরো তৈরি করে নাও
রাতের এক শাখা দিয়ে গড়া বিষণ্ণ নীলিমার,
এক সর্বনাশা নক্ষত্র দিয়ে ভেদ করা, তা গলে যায়, তারপর
নরম স্পন্দন, ক্ষুদে আর নিখুঁত ধবধবে…
জুন মাসের রাত! আর সতেরো বছর! -তুমি তখন প্রায়-মাতাল।
উদ্ভিদরসের শ্যামপেন আর চেহারাগুলোকে অস্পষ্ট করে দ্যায়…
তুমি ঘুরে বেড়াও: তুমি ঠোঁটে এক চুমু অনুভব করো
তা সেখানেই কাঁপতে থাকে, কোনো ক্ষুদে কীটের মতন…


তোমার উন্মাদ হৃদয় ক্রুসোর মতন রোমান্স করতে যায়,
-যেখানে কুপির ফিকে আলোয় তোমার দৃষ্টি অনুসরণ করে
মিষ্টি চাউনি বিলিয়ে মিষ্টি এক তরুণী চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে
তার মাড়দেয়া শার্ট পরা বাবার অন্ধকারের মোড়কে…
আর মেয়েটি তোমাকে হাবাগবা মনে করছে বলে
যেতে যেতে, হাঁটু-অব্দি জুতো পায়ে, ও হোঁচোট খায়
কাঁধ নাচিয়ে মেয়েটি সতর্কভাবে চলে যায়…
আর তোমার ঠোঁটে মারা যায় দ্রুতলয় গান…
তুমি প্রেমে পড়েছো । আগস্ট মাস পর্যন্ত চালিয়েছো ।
তুমি প্রেমে পড়েছো । -তোমার সনেটগুলো মেয়েটির মুখে হাসি ফোটায় ।
আর তোমার বন্ধুরা চলে গেছে: তোমার মনে অবস্হা ভালো নয় ।
-তারপর আদরিণী, এক সন্ধ্যায়, প্রসন্ন হয়ে লেখে!
সেই সন্ধ্যায়...তুমি রেস্তরাঁর ঔজ্বল্যে ফিরে যাও,
তুমি বিয়ার কিংবা লেমোনেডের অর্ডার দাও…
তুমি হৈকান্তিক ছিলে না, যখন তোমার বয়স ছিল সতেরো
আর প্রশস্ত পথে লেবুর গাছগুলো সবুজ ।
২৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৭০
.

১৮৭০
‘৭০-এর ফরাসিরা, বোনাপার্টিস্টরা, রিপাবলিকানরা,
‘৯২-র তোমাদের পূর্বপুরুষদের মনে করো…
পল দ্য কাসানে (লে পায়)
তোমরা বিরানব্বুই আর তিরানব্বুইয়ের মৃতরা,
যারা, মুক্তির মআন চুমুতে ফ্যাকাশে হয়ে যাও,
পিষ্ট, শান্ত, তোমাদের কাঠের জুতোর তলায়
মানুষের ভ্রূযুগল আর আত্মায় যে জোয়াল ভারিভাবে চেপে বসে:
পুরুষেরা উল্লসিত, যন্ত্রণায় মহিয়ান,
তোমরা যাদের হৃদয় ভালোবাসায় উত্তাল, দুঃখদুর্দশায়,
হে সৈন্যদল যাদের জন্যমৃত্যু, উদাত্ত প্রেমিক, বীজ পুঁতেছে
সমস্ত পুরোনো হলরেখায়, যাতে তারা পুনর্জন্ম লাভ করে:
তোমরা যাদের রক্ত ধুয়ে দিয়েছে প্রতিটি কলুষিত জাঁকজমক,
ভামিতে মৃত, ফ্লিউর্সে মৃত, ইতালিতে মৃত,
হে লক্ষলক্ষ অমায়িক ও নিরানন্দ চোখের যিশুখ্রিস্ট:
আমরা তোমাদের রিপাবলিকের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়তে দিয়েছি,
আমরা, রাজার শাসনে ভয়ে জড়োসড়ো যেন পিটুনি খাচ্ছি ।
-ওরা তোমাদের গল্প বলছে যাতে আমরা তোমাদের মনে রাখি!
দোনে আত মাজাস, ৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৭০
.

সিজারদের ক্ষিপ্ততা
(নেপোলিয়ান-৩, সেদানের পর)
ফ্যাকাশে লোকটা ফুলের দৃশ্যের ভেতর দিয়ে হেঁটে যায়,
কালো পোশাকে, দাঁতের মাঝে চুরুট:
ফ্যাকাশে লোকটা তুইলেরিজের ফুলের কথা ভাবে
আর অনেকসময়ে ওর মাছের মতন চোখ হয়ে ওঠে প্রখর..
চব্বিশ বছরের ব্যভিচারে সম্রাট মদে চুর!
উনি নিজেকে বললেন: "আমি মুক্তিচেতনাকে মিটিয়ে দেবো
যেন তা এক মোমবাতি, আর বেশ সূক্ষ্মভাবে! "
মুক্তিচেতনা জেগে ওঠে! উনি নিজেকে অবসন্ন মনে করেন!
উনি কারাগারে । -ওহ! কোন সে নাম যা কাঁপতে থাকে
ওনার মৌন ঠোঁটে? কোন অবিরাম অনুতাপ উনি অনুভব করেন?
কেউ কখনও জানতে পারবে না । সম্রাটের চোখে অন্ধকার ।
উনি ‘সহচরকে' ডেকে পাঠান, হয়তো, চশমা পরে…
দেখতে পান সরু ধোঁয়ার রেখা উঠে যাচ্ছে,
যেমন সেই সন্ত-মেঘ সন্ধ্যায়, চুরুট থেকে ।
.

সারব্রুকেনের বিখ্যাত বিজয়
মাঝখানে, সম্রাট, নীল-হলুদ, সমারোহাঙ্কে,
টগবগিয়ে ঘোড়া ছোটান, বন্দুকছড়ের মতন সোজা, তাঁর ফিকে হেইহোসহ,
খুবই আনন্দে -কেননা সবকিছুই তাঁর মনে হয় আশাব্যঞ্জক,
গ্রিক দেবতা জিউসের মতন হিংস্র, আর একজন পিতার মতন ভদ্র:
সাহসিক পদাতিক সৈন্যরা ঘুমিয়ে নিচ্ছে, বৃথাই
সোনালি ড্রাম আর রক্তবর্ণ তোপের তলায়,
সবিনয়ে উঠে দাঁড়ায় । একজনপরে নেয় তার উর্দি,
আর, সেনাধ্যক্ষের দিকে তাকায়, বিশাল নামের দরুন হতবাক!
ডানদিকে, আরেকজন, রাইফেলের কুঁদোয় হেলান দিয়ে,
অনুভব করে তার ঘাড়ের পেছনে চুল ওপরে উঠছে,
চেঁচিয়ে ওঠে: ‘সম্রাট দীর্ঘজীবি হোন! ! '-তার পাশের জনের মুখ বন্ধ…
একটা শিরস্ত্রাণ উঠে দাঁড়ায়, কালো সূর্যের মতন…-তার মাঝে
শেষজন, লাল আর নীল পোশাকে এক হাবাগবা, উপুড় হয়ে শুয়ে
উঠে পড়ো, আর, -নিজের পোঁদ দেখিয়ে -জিগ্যেস করে: "কিসের ওপরে? "

.

শীতের এক স্বপ্ন
মেয়েটিকে
শীতের সময়ে আমরা ছোটো এক গোলাপী ঘোড়ার গাড়িতে বেড়াতে বেরোবো
তার গদি হবে নীল রঙের
বেশ ভালো থাকবো আমরা । পাগল চুমুর নীড় অপেক্ষায় আছে
প্রতিটি কোনায় ।
তুমি তোমার চোখ বন্ধ করে নেদে, যাতে দেখতে না হয়, কাচের মধ্যে দিয়ে,
সন্ধ্যার বিকৃতমুখ ছায়া,
ওই সমস্ত খেঁকি দানবেরা, পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে একদল
কালো নেকড়ে আর কালো দানবেরা ।
তখন তুমি অনুভব করবে তোমার গালে বেজায় সুড়সুড়ি…
একটা ছোট্ট চুমু, কোনো পাগল মাকড়সার মতন,
তোমার ঘাড়ে চলছে…
আর মাথা নিচু করে তুমি বলবে: "ধরো ওটাকে! "
- - আর প্রাণীটাকে খোঁজার জন্য আমরা নিজেদের সময় নেবো
- - যে অনেকদূর চলে যায়
রেলের কামরায় বসে লেখা, ৭ অক্টোবর, ১৮৭০
.
পাপ
যখন কামান-গোলার রক্তবর্ণ লালা
অসীম নীলাকাশে সারা দিন শিস বাজায়:
যখন সেনাবাহিনী, লাল কিংবা সবুজ, ঝাঁপায়,
রাজার ওপরে যে টিটকিরি মারে, দলবেঁধে, পাত্রের ভেতরে:
যতক্ষণ ভয়ানক মূর্খতা গিঁথে আর পিষে মারে,
আর হাজার মানুষের ধোঁয়াধার স্তুপ তৈরি করে:
-বেচারা মৃতেরা! গ্রীষ্মে, ছত্রভঙ্গের মাঝে,
তোমার আনন্দে, পবিত্র প্রকৃতি, যে ওদের সৃষ্টি করেছে! ...
-একজন ঈশ্বর আছেন, যিনি বেদির ঢাকা দেখে হাসেন
নকশাকাটা, ধুপধুনো, আর সোনার সুন্দর পানপাত্র:
যিনি ঘুমপাড়ানি গানের আশায় প্রার্থনা শুনে ঝিমোন,
আর জাগেন যখন মায়েরা, দুঃখদুর্দশায় জড়ো হয়ে,
তাদের পুরোনো কালো কাপড়ে মাথা ঢাকা দিয়ে ফোঁপান, দীর্ঘশ্বাস ফ্যালেন
আর রুমালে বাঁধা পয়সা তাঁর উদ্দেশ্যে মিটিয়ে দ্যান ।
.
আমার বোহেমিয়া: একটি কল্পনা
আমি পালিয়ে গিয়েছিলুম, শতচ্ছিন্ন পকেটে দুই মুঠো রেখে:
এমনকি আমার ঝোলাকোটও হয়ে উঠেছিল আদর্শ:
কবিতার দেবী, আমি আকাশের তলায়! আমি তোমার:
ওহ! কতো অলৌকিক প্রেমের স্বপ্ন আমি দেখেছিলুম!
আমার একটাই প্যান্ট আর তাতে বড়ো এক ছ্যাঁদা ।
-স্বপ্নদর্শী টম থামব, সেখানের পথে বীজ পুঁতছিল
ছন্দের । আমার সরাইখানা পেল্লাই ভাল্লুকের স্মারক ।
-আকাশে আমার নক্ষত্রেরা দোল খাচ্ছিল এদিক-ওদিক ।
আমি ওদের শুনতে পাচ্ছিলুম, পথ জবরদখল করে বসেছিল,
সেপ্টেম্বরের গোধূলীবেলায়, সেখানে আমি শিশিরের ছোঁয়া পেলুম
আমার কপালে ফোঁটা পড়ল, কড়া কাঁচা মদের মতন ।
সেখানে, অদ্ভুত অন্ধকারে ছন্দ তৈরি করে,
আমি অবচিত হলুম, সুরবাহারের তারের মতন, আমার ছেঁড়া জুতোর
স্হিতিস্হাপক ফিতে, একটা পা হৃদয়ে বসানো ।
.

সবুজ সরাইখানায়
আটদিন যাবত, আমি জুতো ছিঁড়ে ফেললুম
রাস্তার পাথরগুলোয় । পৌঁছোলুম শার্লেরয় শহরে ।
-সবুজ সরাইখানায়: রুটির অর্ডার দিলুম
মাখনমাখা, কিছু-ঠাণ্ডা শুয়োর মাংসের সঙ্গে ।
খুসিতে, টেবিলের তলায় ছড়িয়ে দিলুম পা দুটো,
সবুজ মেয়েটা: মুছে যাওয়া প্রিন্ট দেখে মনে হলো
দেয়ালে । -আর বেশ মনোরম,
যখন বড়ো-বড়ো মাই আর জীবন্ত চোখের মেয়েটা,
-ওই যে, একটা চুমুতে ও ভয় পাবে না! -
হাসিমুখে, আমাকে এনে দিলো রুটির স্লাইস আর মাখন,
রঙিন থালায় কিছু-ঠাণ্ডা শুয়োরের মাংস নিয়ে,
শুয়োরের মাংস, শাদা আর গোলাপী, রসুনকোয়ার সুগন্ধ মাখা,
আর আমি বড়ো একটা বিয়ার-জাগ কানায় কানায় ভরলুম, তার ফেনা
বিকেলের রোদের আলোয় সোনা হয়ে উঠলো ।
.
সেয়ানা মেয়েটি
বাদামি খাবার ঘরে, বাতাসে সুগন্ধ
মোম আর ফলের সুবাসে ভরপুর, আরামে
আমি একটা থালা নিয়ে কে জানে কোন বেলজিয়
খাবার, আর আমার বিশাল চেয়ারে বিস্ময়ে বসলুম ।
খেতে খেতে ঘড়ির আওয়াজ শুনতে লাগলুম -নিস্তব্ধ, আনন্দিত ।
এক ঝাপটায় খুলে গেলো রান্নাঘরের দরোজা,
-আর সেবিকা মেয়েটি এলো, কে জানে কেন,
শালে অর্ধেক ঢাকা, চুল চাতুরিতে বাঁধা ।
আর নিজের কড়ে আঙুল কাঁপিয়ে ঠেকালো
নিজের গালে, গোলাপি আর শাদা মখমলে পিচফল,
আর খুকির মতন ঠোঁট আলতো ফাঁক করে,
আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য দেবার উদ্দেশে থালাগুলো সাজালো:
-তারপর, এমনিই -একটা চুমু পাবার জন্য, আমি নিশ্চিত -
ফিসফিস করে বলল: ‘ছুঁয়ে দ্যাখো: ঠাণ্ডা লেগে গেছে, আমার গালে…'
শার্লেরয়, অক্টোবর, ১৮৭০
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
উপত্যকায় ঘুমন্ত
সবুজ এক গহ্বরে যেখানে নদী গান গায়
পাগলের মতো ধরছে ঘাসে ফেলা শাদা টুকরো-টাকরা।
যেখানে গর্বিত পাহাড়ে সূর্যের আলো চক্র তৈরি করে:
এটা একটা ছোটো উপত্যকা, কাচের গেলাসে আলোর মতো ফেনায় ।
একজন রংরুট, মুখ-খোলা, মাথায় কিছু পরে নেই
আর উন্মুক্ত ঘাড় স্নান করছে শীতল নীল আলোয়,
ঘুমোচ্ছে: হাত-পা ছড়িয়ে, আকাশের তলায়, ঘাসের ওপরে,
ঝিরঝিরে বৃষ্টি ওর সবুজ বিছানাকে ফ্যাকাশে করে তুলেছে।
হলুদ পতাকায় ওর পা, ও ঘুমোচ্ছে । হাসছে
যেমনভাবে কোনো অসুস্হ শিশু হাসে, ঝিমোচ্ছে ।
প্রকৃতি, ওকে উষ্ণতা দিয়ে নাড়াও: ও শীতল হয়ে আছে ।
সুগন্ধ ওর নাককে আর কাঁপিয়ে তুলছে না:
ও ঘুমোচ্ছে রোদে, বুকে এক হাত রেখে,
নিথর । ওর দেহের ডান দিকে রয়েছে দুটো রক্তাক্ত ফোটো ।
.

সাত বছরের কবি
আর মা, কাজের বই বন্ধ করে
চলে গেলেন, গর্বিত, তৃপ্ত, চেয়ে দেখলেন না,
নীল চোখে, ঘন ভ্রুর তলায়,
তাঁর ছেলের আত্মা আক্রান্ত হয়েছে বিতৃষ্ণায় ।
সারা দিন ছেলেটা আনুগত্যের ঘাম ঝরিয়েছে: খুবই
বুদ্ধিমান: কিন্তু বদভ্যাস, বিশেষ কিছু প্রলক্ষণ
মনে হয় তিক্ত খলতা কাজ করে চলেছে!
স্যাঁতসেতে কাগজ লাগানো দালানের ছায়ায়,
যেতে যেতে ছেলেটা জিভ বের করলো, দুই মুঠো
কুঁচকিতে, বোজা চোখের পাতার তলায় দেখার চশমা ।
দরোজা সন্ধ্যার দিকে মুখ করে খোলা: আলোয়
তুমি ওকে দেখতে পাবে, ওপর দিকে, আলসেতে গোঙাচ্ছে
আলোর শূন্যতায় ছাদ থেকে ঝুলে । গ্রীষ্মকালে,
বিশেষকরে, পরাজিত, হতজ্ঞান, একগুঁয়ে,
ছেলেটা নিজেকে পায়খানার শীতলতায় বন্ধ করে নেয়:
সেখানে ও শান্তিতে চিন্তা করতে পারে, নাকের ফুটোকে বলি দিয়ে ।
যখন ছোট্টো বাগান থেকে দিনের গন্ধ বেরিয়ে যায়
আলোয় ভরা, বাড়ির পেছনে, শীতকালে,
পাঁচিলের তলার দিকে পড়ে, মাটি চাপা
নিজের অবাক চোখ দুটো কচলে, দৃষ্টিপ্রতিভার জন্য,
ছেলেটা শোনে ছড়িয়ে-পড়া লতাগাছের হিল্লোল ।
হায়! ওর সঙ্গী বলতে বাচ্চার দল যাদের
মাথায় ঢাকা নেই আর বেঁটে, চোখ দুটো ভেতরে ঢুকে গেছে,
কাদায় হলুদ আর কালো হয়ে যাওয়া রোগাটে আঙুল লুকোয়
গু-পেচ্ছাপ মাখা পুরোনো তেলচিটে কাপড়ের তলায়,
যারা সরল মনের মিষ্টতা নিয়ে কথা বলে!
আর ছেলেটির মা যদিআতঙ্কিত হন, ছেলেকে অবাক করে
তার জঘন্য সমবেদনায়: ছেলেটির গভীর
কোমলতা তাঁর বিস্ময়বিমূঢ়তাকে পরাস্ত করে ।
সবই ঠিক আছে । মা নীল দৃষ্টিতে তাকাবেন, -অসত্য!
সাত বছর বয়সে ছেলেটি জীবনের উপন্যাস তৈরি করছিল
বিশাল মরুভূমিতে, যেখানে ধর্ষিত স্বাধীনতা উদ্ভাসিত হয়,
অরণ্যানী, প্রচুর সূর্যালোক, নদীদের তীর, নিষ্পাদপ প্রান্তর! -ছেলেটি
সাপ্তাহিক পত্রিকা উলটাতো যার পাতায় দেখতো, লজ্জানত,
ইতালীয় তরুণীদের হাসিমুখ, আর স্পেনের নারীদের ।
যখন পাশের বাড়ির কর্মীর মেয়েটা এলো,
আট বছর বয়সের -ভারতীয় নকশার পোশাক, বাদামি-চোখ,
এক ক্ষুদে মূর্খ, আর পেছন থেকে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল,
বিনুনি নাচিয়ে মেয়েটি, এক কোনে,
আর ও মেয়েটির নিচে, ও মেয়েটির পাছা কামড়ে দিলো,
যেহেতু মেয়েটা কখনও জাঙিয়া পরতো না:
-আর, মেয়েটির ঘুষি আর লাথি খেয়ে থেঁতো,
নিজের ঘরে নিয়ে গেলো মেয়েটির পোঁদের স্বাদ ।
ডিসেম্বরের বিবর্ণ রবিবারগুলোকে ও ভয় পেতো,
যখন, চুল পেছন দিকে আঁচড়ানো, মেহগনি টেবিলে,
ছেলেটি বাঁধাকপি-সবুজ মার্জিনের বাইবেল পড়তো:
রাতের বেলায় একান্ত জায়গায় স্বপ্নেরা ওকে নির্যাতন করতো।
ছেলেটি ঈশ্বরকে ভালোবাসতো না: বরং সেই সমস্ত লোক যারা সন্ধ্যায়,
ফিরতো, কালো, আলখাল্লায়, বাইরের শহরতলিতে
যেখানে নগরঘোষক, তিনবার ঢোল বাজিয়ে,
ফরমান শোনাতো আর ভিড়ের লোকেরাহাসাতো আর গুজগুজ করতো।
-ও স্বপ্ন দেখতো বৃক্ষহীন কামার্ত তৃণভূমির, যেখানে
স্ফীত ভাস্বরতা, বিশুদ্ধ সুগন্ধ, সোনালি যৌবনারম্ভ
শান্ত বাতাবরণকে স্পন্দিত করতো, আর তারপর উড়ে যেতো!
আর সবার ওপরে ছেলেটি নিরানন্দ ব্যাপারের স্বাদ নিতে কেমন ভালোবাসতো,
যখন, ওর ফাঁকা ঘরে ছিটকিনি বন্ধ করে,
উঁচুতে, আর নীল, আর স্যাঁতসেতে ঝাঁঝের মোড়কে,
ও ওর উপন্যাস পড়তো, যতো পারে সময় নষ্ট করতো,
জলে ডোবা জঙ্গলে ভরা, আকাশ গৈরিকরঙে ভারি,
নক্ষত্রে ভরা বনানীতে মেলে উঠছে মাংসের ফুল,
মাথাঘোরা, মৃগিরোগ, পরাজয়, মমত্ববোধ!
-যখন রাস্তার আওয়াজ তলায় হইচই করছে
মামুলি চাদরের টুকরোর ওপরে একলা শুয়ে,
উদ্দাম পূর্বাভাসেভাসিয়ে দিতোজাহাজের পাল!
.
উকুনের অন্বেষকরা
যখন বালকের ভ্রু, লাল রঙে নির্যাতিত,
অর্ধেক-দেখা স্বপ্নের শাদা ভিড়কে মিনতি করে,
দুটি চমৎকার বোন ওর বিছানার কাছে আসে
সরু-আঙুল, নখগুলো বোধহয় রুপোর ।
বালকটিকে ওরা জানালার সামনে বসায়,
একেবারে খোলা যেখানে নীল বাতাস জড়ানো ফুলদের স্নান করায়,
আর শিশিরে ভেজা বালকটির চুলে,
আঙুল দিয়ে বিলি কাটে, ভয়ার্ত, ইন্দ্রজালিক ।
বালকটি শুনতে পায় তাদের সাবধানে দম নেবার দীর্ঘশ্বাস
যা বইতে থাকে গোলাপি উদ্ভিদের মধু,
আর মাঝে মাঝে স্হগিত এক ফিসফিসানিতে,
ঠোঁটে চলে আসা লালা কিংবা চুমুর আকাঙ্খায় ।
ও শুনতে পায় তাদের কালো চোখের পাতা সুগন্ধে স্পন্দিত
নৈঃশব্দে । আর ওদের আঙুলগুলো, বৈদ্যুতিক আর মিষ্টি
বালকটির ধূসর আলস্যে, ছোট্ট উকুনদের মৃত্যু
ওদের রাজকীয় সেবার দরুণ পটপট করে ।
এখন জাড্যের মদ বালকটিতে জেগে ওঠে, দীর্ঘশ্বাস
একজন বালকের বাদ্যযন্ত্র যা বিভ্রম এনে দিতে পারে:
ধীর আদরে প্রোৎসাহিত, বালকটি তখন অনুভব করে
কাঁদবার এক অবিরাম উথাল আর শেষতম অভিলাষ ।
.

স্বরবর্ণ
A কালো, E শাদা, I লাল,U সবুজ, O নীল: স্বরবর্ণ
কোনো দিন আমি তোমার জন্মাবার কান্না নিয়ে কথা বলবো,
A, মাছিদের উজ্বল কালো মখমল জ্যাকেট
যারা নিষ্ঠুর দুর্গন্ধের চারিধারে ভন ভন করে,
ছায়ার গভীর খাত: E, কুয়াশার, তাঁবুগুলোর অকপটতা,
গর্বিত হিমবাহের, শ্বেত রাজাদের বর্শা, সুগন্ধলতার শিহরণ:
I, ময়ূরপঙ্খীবর্ণ, রক্তাক্ত লালা, নিঃসঙ্গের হাসি
যার ঠোঁটে ক্রোধ কিংবা অনুশোচনায় মাতাল:
U, তরঙ্গ, ভাইরিডিয়ান সমুদ্রের দিব্য কম্পন,
চারণভূমির শান্তি, গবাদিপশুতে ভরা, হলরেখার শান্তি
কিমিতির চওড়া পড়ুয়া ভ্রুজোড়া দিয়ে বিরচিত:
O, চরম তূর্যনিনাদ, অদ্ভুত কর্কশ আওয়াজে ভরপুর,
জগত আর দেবদূতে রেখিত নৈঃশব্দ:
O, সমাপ্তি, মেয়েটির চোখের বেগুনি রশ্মি!
.
দাঁড়কাক
প্রভু, ক্ষেতগুলো যখন শীতল,
যখন, শোচনীয় চালাঘরগুলোতে,
অবতারের দীর্ঘ ভক্তিগীতি থেমে গেছে…
পকৃতিতে, নিপাতিত, বুড়ো,
খোলা আকাশ থেকে পড়ে
সুন্দর দাঁড়কাকগুলোকে উড়ে যেতে দাও ।
তোমার কঠোর ডাকে অদ্ভুত সেনানি,
শীতল বাতাস তোমার বাসাকে আক্রমণ করে!
তুমি, হলদেটে নদীকিনারা ধরে,
পুরোনো ক্রুসকাঠেভরা রাস্তার ওপর দিয়ে, নামো,
পথের ধারের আর গলিগুলোর খানাখন্দে,
নিজেদের ছত্রভঙ্গ করো, তারপর এক সঙ্গে জড়ো হও!
হাজারে হাজারে, ফ্রান্সের মাঠগুলোর ওপরে,
যেখানে গতবছরের মৃতেরা ঘুমোয়,
পাক খায়, তারপর, হিমেল বাতাসে,
প্রতিটি পর্যটক, এক নজরে
মনে রাখে! কর্তব্যের ডাকে সাড়া দাও,
হে আমাদের কালো শোকাতুর সৌন্দর্য!
কিন্তু, স্বর্গের সন্তরা, ওক গাছের মগডালে,
ফিকে হয়ে আসা চমৎকার দিনের হারানো মাস্তুল,
মে মাসের ক্ষুদে গায়কপাখিদের ছেড়ে যায়
যারা শবদেহে বন্দি তাদের জন্য,
যার গভীরতা থেকে কেউ পালাতে পারে না,
যারা হারিয়ে দেয়, ভবিষ্যৎহীন, দেখে নাও ।
.

স্মৃতি

স্বচ্ছ জল: শিশুর নোনা অশ্রুর মতন মর্মপীড়ক,
নারীদেহের শ্বেতরঙ আক্রমণ করছে সূর্যকে:
রেশম, দলবেঁধে আর পবিত্র নলিন, ফরাসি নিশান
দেয়ালের পেছনে একটি তরুণী ভয়হীন আত্মরক্ষা করলো:
দেবদূতদের নাচ: -না..সোনার স্রোত মসৃণ এগিয়ে দিলো
তার অন্ধকার বাহু, ক্লান্ত, সবার ওপরে ঠাণ্ডা, আর সবুজ ।
মেয়েটি, বিষণ্ণ, স্বর্গীয় নীল তার চাঁদোয়া,
তলব করলো, পরদার মতন, গম্বুজ আর পাহাযের ছায়াকে ।

আহ ভিজে মাটি কেমন ধরে রাখে অনাবিদ বুদবুদগুলো!
সাজানো বিছানায় ছেয়ে থাকে ফিকে গভীর সোনার জল:
ছোট্টো খুকিদের সবুজ আর ম্লান পোশাকগুলো
আসলে উইলো-গাছ যেখান থেকে উঠে গেল নিয়ন্ত্রণহীন পাখিরা ।
সোনার চেয়ে বিশুদ্ধ, এক হলুদ চোখের পাতা আর উষ্ণ,
জলাজঙ্গলের গাঁদাফুল -তোমার বিবাহিত বিশ্বাস, হে নববধূ! -
কাঁটায় কাঁটায় দুপুরে, তার নিষ্প্রভ আয়না থেকে, ঈর্ষান্বিত
প্রিয় গোলাপরঙা গগনমণ্ডল: আকাশে ধূসর তাপ ।

কাছের মাঠে ঋজু দাঁড়িয়ে আছেন শ্রীমতি,
যেখানে শ্রমের সূত্রে তুহিনপাত হয়েছে: ওনার হাতে
ছোটো ছাতা: গবাদির জন্য চারা কাটছেন: বেশ গর্বিত:
ফুলেল সবুজে বসে বাচ্চারা বই পড়ছে:
একটা মোটা মরোক্কো বই! হায়, সেই পুরুষ, সে, হাজার
শ্বেত দেবদূতের মতন বিদায় নিচ্ছে রাস্তায়,
পাহাড়ের পেছনে অদৃশ্য হয়ে যায়! শ্রিমতি, বেশ শীতল,
আর কালো, দৌড়োয়! পুরুষটার উধাও অনুসরণ করে!

বিশুদ্ধ ঘাসের তরুণ বাহুর আলিঙ্গনের জন্য মন খারাপ!
এপ্রিল চাঁদনির সোনা পবিত্র বিছানার হৃদয়ে!
নদীতীরের নৌকো-চত্বরের আনন্দ, ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া,
আগস্ট মাসের সন্ধ্যায় যা পচনকে অঙ্কুরিত করছে!
মেয়েটি এখন কেমন করে ফোঁপাচ্ছে পাঁচিলের পেছনে!
পপলারগাছের নিঃশ্বাস ওপরের একমাত্র হাওয়া ।
তারপর অপ্রতিবিম্বিত পৃষ্ঠতল, উৎসহীন, ধূসর:
একজন বুড়ো, মাল তুলছে, পরিশ্রম করছে তার স্হির যাত্রিবাহী নৌকোয় ।

বিষাদ-জলের চোখ এই খেলনা, আমি পৌঁছোতে পারি না,
হে স্হির নৌকো! হে বাহু অনেক ছোটো! একটি নয়
কিংবা অন্য ফুলটি: হলুদরঙা নয় যেটা আমায় অনুরোধ করছে:
নীলও নয়, জের মধ্যে যে বন্ধু, সে ছাইরঙা ।
আহ! ডানার উইলো পরাগ বিরক্ত করছে!
ঘাটের গোলাপগুলো কবেই খেয়ে ফেলা হয়েছে!
আমার নৌকো, শক্ত করে বাঁধা । আর তার গভীর নোঙোর পোঁতা আছে
জলের এই সীমাহীন চোখে -কোন কাদায়?
.
অশ্রুজল
গ্রামের মেয়েদের, গরুমোষের, পাখিদের থেকে অনেক দূরে
আমি মদ খেলুম, কাশফুলের কাছে হাঁটু গেড়ে
কচি হ্যাজেল-বাদামের গাছে ঘেরা,
দুপুরের সবুজ উষ্ণ কুহেলিকায় ।
কী পান করতে পারতুম আমি তরুণ ওয়াজ নদী থেকে,
কন্ঠস্বরহীন এলম-গাছ, ফুলহীন তৃণভূমি,
বন্ধ আকাশ থেকে? কিংবা আঙুরলতার বাগানে লাউয়ের খোলে চুমুক দিতুম?
সোনার কিছু মদ পান করলে অল্প ঘাম দেখা দেয় ।
তেমন করে আমি গরিব সরাইখানা আঁকতে পারতুম ।
তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশকে বদলে দিলো ঝড় ।
অন্ধকার ভূদৃশ্য, খুঁটি,হৃদ, গাছের সারি
রাতের নীলাভের তলায়, রেলস্টেশনগুলো ।
বনানীর জল হারিয়ে গিয়েছিল কুমারী বালিতে ।
বাতাস, স্বর্গ থেকে নেমে, পুকুরগুলোতে তুষার জমিয়ে দিয়েছিল…
কিন্তু, সোনা বা ঝিনুকের ধীবরদের মতন, এ-কথা ভাবা যে
আমি পান করার জন্য কোনো কষ্টস্বীকার করিনি!
১৮৭২-এর শেষ দিকের কবিতা
.
সর্বোচ্চ মিনারের গান
অলস যৌবন
সমস্তকিছু দিয়ে দাবিয়ে রাখা
সুবেদিতাকে কাজে লাগিয়ে
আমি আমার সময় নষ্ট করেছি ।
আহ! সেই মুহূর্তকে আসতে দাও
যখন হৃদয়েরা মিশে গিয়েভালোবাসে ।
আমি নিজেকে বলেলুম: অপেক্ষা করো
আর কেউ যেন দেখতে না পায়:
আসল আহ্লাদের
প্রতিশ্রুতি ছাড়াই ।
এই লুকোনোকে
বিলম্বিত কোরো না ।
এতোকাল আমি সহিষ্ণু ছিলুম
আমি এমনকি ভুলে গেছি
আতঙ্ক আর দুঃখদুর্দশা
আবার এক অসুস্হ তৃষ্ণা
স্বর্গের দিকে উঠে গেছে
কালো করে তিলেছে আমার শিরাগুলো ।
তাই চারণভূমি
অবহেলার ফলে স্বাধীন,
ভরে উঠেছে ফুলে, ঝোপঝাড় আর সুগন্ধে
বাড়বাড়ন্ত
শ'খানেক নোংরা মাছির
কাছাকাছি গুঞ্জনে ।
আহ! হাজার বৈধব্য
এক দরিদ্র আত্মার
তা কেবল বয়ে নিয়ে যায়
আমাদের সামনে দিয়ে মা মেরিকে!
তাহলে কি কেউ প্রার্থনা করবে
কুমারী মেরিকে আজকের দিনে?
অলস যৌবন
সবকিছু দিয়ে দাবিয়ে রাখা
সুবেদিতাকে কাজে লাগিয়ে
আমি আমার সময় নষ্ট করেছি ।
আহ! সেই মুহূর্তকে আসতে দাও
যখন হৃদয়েরা মিশে গিয়ে ভালোবাসে ।
‘ধৈর্য উৎসব' থেকে
.

অনন্তকাল
দেখতে পাচ্ছি খুঁজে পাওয়া গেছে ।
কী? -অনন্তকাল ।
তা হলো সূর্ষ, স্বাধীন
সমুদ্রের সঙ্গে বয়ে যাবার জন্য ।
আত্মার প্রতি নজর রাখা হয়েছে
ফিসফিসানিদের আত্মস্বীকার করতে দাও
ফাঁকা রাতের
দিনের বাড়াবাড়ির ।
নশ্বর স্বস্তি থেকে
সাধারণ তাগিদ থেকে
এখানে তুমি বিপথগামী হও
যেমন চাও তামনভাবে ওড়ার জন্য ।
যেহেতু শুধু তোমার কাছ থেকেই
মলমলের স্ফূলিঙ্গ
নিঃশ্বাস ফ্যালে
কখনও ‘সমাপ্তি' ঘোষণা হয় না ।
আশা করার কিছুই নেই,
এখানে সানুনয় প্রার্থনা নেই ।
বিজ্ঞান আর ধৈর্য্য
অত্যাচার অত্যন্ত বাস্তব ।
দেখতে পাচ্ছি খুঁজে পাওয়া গেছে ।
কী? -অনন্তকাল ।
তা হলো সূর্য, স্বাধীন
সমুদ্রের সঙ্গে বয়ে যাবার জন্য ।
‘ধৈর্য উৎসব' থেকে
.
হে ঋতুসকল, হে দুর্গ
হে ঋতুসকল, হে দুর্গ,
কোথায় আছে খুঁতহীন আত্মা?
হে ঋতুসকল, হে দুর্গ,
আমি যে ইন্দ্রজালের পেছনে ছুটেছি,
আনন্দের, যাকে কেউ এড়াতে পারে না ।
ও তা বেঁচে থাকুক, প্রতিবার
ফরাসি মোরগ ছন্দ বাঁধে ।
আমি আর কিছু চাই না,
ব্যাপারটা আমার পুরো জীবনকে কাবু করেছে ।
সেই চমৎকারিত্ব! নিয়ে নিয়েছে হৃদয় আর আত্মাকে
ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে আমার প্রয়াস ।
আমি যা বলি তাতে অর্থ কোথায়?
ফলে পুরো ব্যাপারটা লোপাট হয়ে যায়!
হে ঋতসকল, হে দুর্গ!
আহ! আমি আর কিছু চাই না,
ব্যাপারটা আমার পুরো জীবনকে কাবু করেছে ।
সেই চমৎকারিত্ব নিয়ে নিয়েছে হৃদয় আর আত্মাকে
ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে আমার প্রয়াস ।
হে ঋতুসকল, হে দুর্গ!
তার উড়ালের সময়, হায়!
তা হবে আমার যাবার সময় ।
হে ঋতুসকল, হে দুর্গ!
‘ধৈর্য উৎসব' থেকে

Saturday, February 8, 2020
Topic(s) of this poem: surreal
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success