বলো তো
কি লিখি তোমায়?
ইচ্ছে তো হয় অনেক লিখি তোমায়।
কিন্তু জানো? সাহস হয় না।
পাছে ভাবো
সবই মিথ্যে বলছি তোমায়।
ভাবলাম, আজ লিখেই ফেলি তবে।
কে জানে?
লিখবো লিখবো বলে
কখনো যদি
আর না লেখা হয় তোমাকে!
বয়সও তো বাড়ছে মালবিকা।
অব্যক্ত কথাগুলো
চাপা চাপা ব্যথা হয়ে
আজও আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
কিন্তু কোথায় শুরু করি বলো তো ?
এমন ভাষা কি আছে
যা দিয়ে পঞ্চাশ বছরের জমানো ব্যথা
চিঠির পাতায় বন্দী করা যায়?
এমন শব্দ কি আছে
যা দিয়ে হতভাগ্য প্রেমিক হৃদয়ের
স্পন্দন আঁকা যায়?
মনে পড়ে
আমাদের প্রথম দেখার কথা?
অবশ্য "আমাদের" বলা ঠিক হবে না।
কারন
আমায় তুমি দেখো নি সেদিন।
আমিই কেবল লুকিয়ে দেখেছি তোমাকে।
তুমি এসেছিলে
তোমার দিদির সাথে জল আনতে,
আমাদের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে।
অবশ্য আমি তখন বেশ ছোট্ট।
কতো হবো আর? ধরো ষোলো।
আর তুমি?
তুমিও প্রায় ষোলো। বা একটু বড়।
তুমি থাকতে আগে
তোমার মামার বাড়িতে।
তাই কখনো দেখিনি তোমায়।
তোমার ভাই অবশ্য
আমাদের টিমের গোলকিপার।
ব্যাটা মস্ত চালাক!
কক্ষনো কিছু বলেনি আমায়।
সেদিন থেকে
কেমন অবশ হয়ে গেলাম আমি।
রোজ বিকেলে অপেক্ষা করতাম
আবার যদি কখনো আসো তুমি!
তোমার কাকা বললেন আমায়-
জানিস অমল?
এবার মালবিকাও পড়বে তোদের স্কুলে।
আমি তো আনন্দে আত্মহারা।
ঊহঃ কি মজা! তুমিও আসবে স্কুলে।
মেঘ না চাইতেই জল!
তুমিও হরিবাবুর টিউশনে ভর্তি হলে।
ঊহঃ কি আনন্দ
যখন তুমি প্রথম টিউশন পড়তে এলে।
বুকে ব্যথা। আর চোখে চোখে কথা।
কত অব্যক্ত কথা! কি নিদারুন কাতরতা!
কখনো ভাবিনি
হতভাগ্যের ভাগ্য এমন সুপ্রসন্ন হবে।
দুর্যোগের দুঃস্বপ্নও
এমন সুন্দর মায়াবী স্বপ্ন হবে।
ভাবিনি। কখনো ভাবিনি।
ভেবেছিলে? কখনো কি ভেবেছিলে
কোন এক দুর্যোগের সন্ধ্যায়
আমাদের প্রথম স্পর্শ হবে?
পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে
দুরন্ত ঝড়, আর মুষলধারে বৃষ্টি ।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি আমি
দাঁড়িয়ে তুমি।
আমার জন্য।
ভাবতে পারি নি তুমি দাঁড়িয়ে
কেবল আমার জন্য।
আমাকে তুমি
তোমার ছাতার নীচে ডেকে নিলে।
ভয় করে নি?
কেউ যদি আমাদের একসাথে দেখে,
তোমার ভয় করে নি?
বুকের চিতাটা আমার
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।
প্রবল উত্তেজনায়
ছাতাটা শক্ত করে ধরতে গিয়ে
বুকে তোমার হাত লেগে গেলো।
আচ্ছা তখন তুমি
চোখ বুজে
স্তব্ধ হয়ে গেছিলে কেন?
জানো?
তুমি এমনিতেই বড় সুন্দর!
কিন্তু তোমার সেই বৃষ্টিস্নাত রূপ আর স্পর্শে
নিজেকে হারিয়েছিলাম সেদিন।
চকিতের সেই স্পর্শেই
কৈশোরের নদী থেকে
যৌবনের উন্মত্ত সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিলাম সেদিন।
আমরা অবশ্য
কেউই বেশি কথা বলি নি।
স্পর্শে স্পর্শে কথা চলছিলো যে।
স্পর্শেরও
কত সুন্দর ভাষা বলো?
জানো? আজও আমি
সেই দুর্যোগ পূর্ণ দিনে ফিরে যেতে চাই।
সে রাতে আর পড়তে পারি নি।
কেবলই তোমায় ভেবেছি।
সে রাতে আর ঘুমোতে পারি নি।
কেবলই তোমায় চেয়েছি।
এরপর
কতো চিঠি লিখলাম আমরা!
খাতার ভাঁজে। বইয়ের মলাটে।
স্কুলের বেঞ্চে। নদীর চরে।
প্রেম অবশ্য চুরি করে করাই ভালো।
তাই না? তুমি ক বলো?
আচ্ছা, আমরা কি পারি না
আবার সেদিনে ফিরে যেতে?
তারপর একদিন তুমি
হটাৎই উধাও হয়ে গেলে।
তুমি লিখে পাঠালে
তোমার বাবা মায়ের নিষেধ
তাই দেখা হবে না আমার সাথে।
আচ্ছা, চলে যদি যাবে
তো বলে যেতে পারলে না?
তন্ন তন্ন করে কত খুঁজলাম তোমায়।
পাই নি। তবুও তোমাকে পাই নি।
জানো?
তোমার সাথে আমার
সবকিছুই যেন হটাৎ হটাৎ।
হটাৎই এসেছিলে স্বপনে
হঠাৎই হারিয়ে গেলে জীবনে।
দেখো, ক্ষণিকের একটু স্মৃতি
তবুও কত অক্ষয় সে।
ক্ষণিকের একটু স্পর্শ
তবুও কত অমলিন নির্মল সে।
জানো?
আমি প্রেমে কখনো পড়ি নি।
তোমার স্পর্শে
প্রেমে উর্ত্তীর্ণ হয়েছি কেবল।
তুমি তো প্রেমের দেবী
তোমাকে তাই
আজও পূজা করতে ভূলি নি।
প্রেমে পড়া প্রেমের অবনমন নয় কি?
নাহঃ আমি তা হতে দিই নি।
আমার কেবল উত্থান আর উত্থান
তোমার প্রেমের স্পর্শে
আমার চির উত্থান।
কাঁদছি কেন?
বাহঃ আমার বুকে তুমি!
আনন্দে একটু কাঁদবো না?
ওহে নারী
মালবিকা যে রক্তে মিশে আমার।
তুমি কি পারো তা মুছে দিতে?
© অরুণ মাজী
Painting: Hemen Majumadr
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
অভূতপূর্ব লেখা।