শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জী
মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ
পরম পূজনীয়া দিদি,
ভালো আছেন? আপনার দুষ্টু ভাই বলছি। ব্রিগেড ময়দান আপনি এমন ফাটিয়ে দিলেন, যে আপনার এই "কালা" উন্মাদ ভাই, গাঁজা আচ্ছন্ন অবস্থায় তা শুনতে পেলো। আজ আপনাকে আমি একটু, ইতিহাস আর প্রকৃতির মৌলিক ধর্ম (very fundamental nature) শোনাবো। PHILOSOPHY-র একনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবে, আমার মতো উন্মাদরা কোন জিনিসের, উপরটা কখনো দেখে না। তারা কেবল গর্ভ-টা (CORE) দেখে। সেটা কেমন?
মানুষ আস্ফালন করে। কিন্তু সময় নয়।
সময় নীরব নিঃস্তব্ধ, অথচ কর্মে বড় সোচ্চার।
সময় মুক বধির, অথচ অথচ কর্মে বড় একনিষ্ঠ।
সময় সত্যিকারের শক্তিশালী, তাই সে পেশী শক্তির আস্ফালন করে না।
উন্মাদ অরুণ মাজী অন্তরে বড় দুর্বল। তাই আপনার উন্মাদ ভাই অরুণ মাজী, সে আস্ফালন করে।
ইতিহাস শ্রেষ্ঠ- রোমানরা কোনদিন ভাবে নি, তাদের কোনদিন পতন হবে।
ফ্যারাওরা কোনদিন ভাবে নি, তাদের কলা স্থাপত্য একদিন মাটির সাথে মিশে যাবে।
ব্রিটিশরা কোনদিন ভাবে নি, তারাও একদিন মুখ থুবড়ে পড়বে। ভাবে নি, তাই না?
ভেবেছে। রাতের নীরবতায় তারা ভেবেছে। কিন্তু ক্ষমতার গর্বে এতোটাই অন্ধ, তারা সেই ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষমতার গর্বে অন্ধ এই রাজারা, একের পর এক নিষ্ঠুর কাজ করে গেছে। কিন্তু সময় কি করেছে? নিঃশব্দে এদের গলা টিপে মেরেছে। সবারই শেষ আছে। যা উপরে উঠে, তা ধপাস করে পড়বেই।
ইতিহাসকে আরও গভীরে পর্যবেক্ষণ করুন, দেখবেন- ইতিহাস যত এগিয়েছে, অত্যাচারীদের শাসন কালের মেয়াদও ক্রমশঃ কমতে শুরু করেছে। এক একটা বংশ, আগে হাজার বছর শাসন করতো। তারপর সেটা কয়েকশো বছর হলো। তারপর সেটা কয়েক দশক হলো।
কংগ্রেস কোনদিন ভাবে নি, তাদেরআট দশকের ইতিহাস একদিন মুখ থুবড়ে পড়বে। ২০০৯ সালের আগে, প্রবল পরাক্রমী বামফ্রন্ট স্বপ্নেও ভাবে নি, তারা হারতে পারে। মমতা ব্যানার্জী আর তার তাঁবেদাররাও ভাবছে না- তাদের ক্ষমতাও, আর কিছুদিন পরেই অক্কা পাবে। কিন্তু সময়? সে কিন্তু নিঃশব্দে দাঁতে ধার দিচ্ছে। এখুনি সে গর্দানে কামড় দেবে।
মানুষ কেবল আস্ফালন করে। কিন্তু আসল কাজ করে কে? সময়।
সত্তরের দশকে, বামফ্রন্ট তাদের যোগ্যতার জোরে ক্ষমতায় আসে নি। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জীর দলবলও তাদের যোগ্যতার জোরে ক্ষমতায় আসে নি। এরপর যারা আসবে, তারাও হয়তো তাদের যোগ্যতার জোরে আসবে না। তবে আসবে কেন? উত্তর- সময় বইছে বলে। ইতিহাস চাইছে বলে। বিবর্তনের ধারা চাইছে বলে। আপনি, আমি, আর ঘাস ছিঁড়ে সলতে পাকানো জনগণ- আমরা সবাই ঘাস ছিঁড়ি, আর সলতে পাকাই। তাতেই আমরা ভাবি, আমরা বুঝি ফাটিয়ে দিচ্ছি। তারপর কি ঘটে? একদিন আমরাই দুম করে "ফটাস" হয়ে যাই।
প্রযুক্তির বুকের উপর ভর দিয়ে, সময় এখন দ্রুত বইছে। কংগ্রেস ৬ দশক শাসন করেছে, বামফ্রন্ট সাড়ে তিন দশক করেছে। লালু প্রায় আড়াই দশক করেছে। সময় যত গড়িয়েছে, রাজার হুঁকোর আগুন তত তাড়াতাড়ি নিভেছে। মোদী ভাই কতদিন শাসন করবে? দিদিভাই কতদিন করবে? উত্তর- মানুষ যতদিন ভাববে, তার চেয়ে অনেক কম।
সময়কে আর একটু খুঁড়ুন। কি দেখছেন? যে রাজা যে অস্ত্র বানিয়েছে, সেই রাজা সেই অস্ত্রেই ঘায়েল হয়েছে। ব্রিটিশরা অন্যের দেশ আক্রমণ করেছে। এখন অন্য দেশের মানুষ, ব্রিটেনে এমন ঘাঁটি গেড়েছে; ব্রিটিশরা নিজেরা এখন, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডাতে বসবাস করার জন্য ছুটছে।
কৃষক আর শ্রমিক আন্দোলনে ভর করে, বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসেছিলো। বামফ্রন্টের পতন হলো কি ভাবে? শ্রমিক আর কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। কি আশ্চর্য্য, তাই না? ও আমার প্রিয় মমতাদি, উন্মাদ অরুণ মাজীর কথা শুনতে পাচ্ছেন? উন্মাদের কথা একটু শুনুন গো শুনুন। আপনার মঙ্গল হবে। না শুনলে, শ্রীযুক্ত সময়- আড়ালে ফিকফিক করে হাসবে।
মোদী ভাই কোন অস্ত্রে ভর করে ক্ষমতায় এসেছেন? আমার প্রিয় দিদিভাই, আপনি কোন অস্ত্র বানিয়েছেন? আপনারাও ঠিক, আপনাদের তৈরী অস্ত্রেই ঘায়েল হবেন। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন চরিত্রের স্রষ্টা কে, আমারই মতো, আর এক উন্মাদ "মেরি শেলি" (MARY SHELLEY)। মেরিও, শ্রীযুক্ত সময়ের এই মৌলিক ধর্ম পর্যবেক্ষণ করে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি করেছিলেন।
একদিকে পঁচিশ লক্ষ ঘাটাল সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষ, আর অন্যদিকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ উত্তর বঙ্গের মানুষ-
তারা যখন বন্যার জলে নিমগ্ন থেকে, বাঁচার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে, আর আপনার কাছে একটু সাহায্য ভিক্ষা করছে; আপনি তখন কি করলেন?
সাহায্য করা তো দূরে থাক। সমস্ত কাগজকে আপনি, এসব নিয়ে খবর করা থেকে বিরত রেখেছেন। মানুষের যন্ত্রণাকে আপনি মানুষের কাছে পৌঁছতে দেন নি। আপনি তখন "মিলন মেলা" প্রাঙ্গনে, হাপুস হুপুস করে ইলিশ উৎসবে ইলিশ খেতে ব্যস্ত।
আজ মেডিকেল কলেজের বাচ্চাবাচ্চা মেডিক্যাল স্টুডেন্টরা যখন, হোস্টেলে একটু ঠাঁই পাওয়ার জন্য,
চৌদ্দ দিন ধরে অনশন করে মরণাপন্ন; আপনি তখন কি করছেন?
আপনি তখন, কেবল পেশী শক্তি প্রদর্শন করতে, জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে, পশ্চিম বঙ্গকে দুদিন ধরে অচল রাখছেন। আর নাটক করার জন্য, কর্ম্ম বন্ধের কারনে আপনি নাকি মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চাইছেন। শ্রীযুক্ত সময়- রাজাকে যেমন আছড়ে ফেলে, নাটকবাজদেরকেও তেমন আছড়ে ফেলে।
মরছে মানুষ কাতরে কাতরে
রাজা নীরো বাজায় বীণা।
ফেতি কুত্তা চোখে দেখে না
কিন্তু সময় নয়কো "কানা"।
দিলীপ বাবু বা সূর্য বাবু বা অধীর বাবুকে কিছু করতে হবে না। শ্রী যুক্ত সময় মহাশয়- উনি ওনার আস্তিন গুটাচ্ছেন। এখুনি গলা আপনার টিপে ধরলো বলে।
যাকগে, ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। গাঁজার ঘোর কাটলে, আবার আমি লিখবো।
প্রণাম নেবেন।
আপনার দুষ্টু ভাই অরুণ মাজী।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem