ঈশ্বর সাধনা অথবা ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ? (On God And Godliness) Poem by Arun Maji

ঈশ্বর সাধনা অথবা ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ? (On God And Godliness)

Rating: 5.0

সব মানুষই কোন না কোনদিন- বুকে কান্না চেপে হাসে, হৃদয়ে তীব্র আর্তনাদ নিয়ে ভালোবাসে।

এর অর্থ কি? এর অর্থ হলো- সব মানুষের মধ্যেই মহত্ব লুকিয়ে আছে। সব মানুষের মধ্যেই সাহস লুকিয়ে আছে। সব মানুষের মধ্যেই ভালোবাসার ইচ্ছে লুকিয়ে আছে। ​তবে কেন আমরা দেখি, মানুষ- একে অপরকে ঘৃণা ​করছে​? হিংসা ​ করছে​? হত্যা ​​ করছে ​? ​জন্মকালে সব মানুষই নিষ্পাপ শিশু হয়ে জন্ম নেয়। সেই নিষ্পাপ শিশুই পরে, নিষ্ঠুর পাপী হয় কি করে? ​

গোলাপ বাগানে দিন কাটালে, তোমার গা থেকে গোলাপের সুগন্ধ বেরোবে। পচা নর্দমায় দিন কাটালে​, ​ তোমার গা থেকে নর্দমার পচা দুর্গন্ধ বেরোবে। এর অর্থ কি? তুমি যদি পজিটিভ চিন্তা ভাবনার লোকের সাথে দিন কাটাও, তুমিও পজিটিভ চিন্তা করতে শিখবে। তুমি যদি নেগেটিভ চিন্তা ভাবনার লোকের সাথে দিন কাটাও, তুমিও নেগেটিভ চিন্তা ​ করতে শিখবে।

​তোমার বন্ধু বা প্রতিবেশীকে, তুমি যদি কেবল সমালোচনা আর হিংসে দিয়ে ঢেকে রাখো- সে কি কাউকে ভালোবাসতে চাইবে? চাইবে না। তোমাকে, সকলেই যদি কেবল সমালোচনা করে, তাহলে তোমার মধ্যে অন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা তৈরী হবে না? ঘৃণা সমালোচনা আর হিংসের বাতাবরণে, তুমি নিষ্ঠুর হয়ে উঠবেই।

ব্যাপারটা গভীর ভাবে ভাবো- অদৃশ্য ভগবানকে তোমরা ভক্তি করো, পূজা করো, শ্রদ্ধা করো। কিন্তু সেই ঈশ্বরকে তোমরা কখনো, তোমার কোন কাজ করতে, স্বচক্ষে দেখো নি। তবুও সেই ঈশ্বরকে তুমি কত ভক্তি করো! কিন্তু তোমার বন্ধু বা প্রতিবেশী, একদিন না একদিন, তোমাকে কোন ভাবে হলেও সাহায্য করেছে। তবে সেই বন্ধু বা প্রতিবেশীর প্রতি তোমার এতো ঈর্ষা বা ঘৃণা কেন?

অদৃশ্য ঈশ্বরকে ভক্তি করা, বা তার সাধনা করা- খুবই মহৎ গুণ। কিন্তু তোমার চারপাশে এই যে দৃশ্যমান ঈশ্বর সন্তান ছড়িয়ে রয়েছে, তাদেরকে এতো অবহেলা কেন? কালীঘাট মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে, নোংরা গায়ের শিশুগুলোকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে। কিন্তু মায়ের গলায় তুমি, হাজার টাকার ফুল চড়ালে। কি ভাবছো- করুণাময়ী মা কালী, তাতে তুষ্ট হবেন? একজন মায়ের কাছে, তার সন্তান কত প্রিয়! নোংরা গায়ের শিশু, তার পরম আদরের সন্তান। তাকে তুমি ঘৃণা করলে, আর মা কালী তাতে তুষ্ট হবেন? এ তোমাদের মাতৃ সাধনা অথবা ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ?

​তোমরা "পাথর প্রতিমা" পূজা করতে পারো, তাকে অনাবশ্যকভাবে হীরের গয়না দিয়ে ঢেকে রাখতে পারো; অথচ রক্ত মাংসের ঈশ্বর সন্তানকে তোমরা ক্ষুধার্ত রাখো। রক্ত মাংসের ঈশ্বর সন্তানকে তোমরা হিংসে করো, ঘৃণা করো, হত্যা করো। ​এ তোমাদের কেমন ঈশ্বর সাধনা?

​তবুও ধনী-দরিদ্র্য, পন্ডিত মূর্খ সবাই এই ন্যাংটো নাচ নেচে যাচ্ছে। কেউই কখনো নিজেকে প্রশ্ন করছে না- ঈশ্বর যদি থাকেন; তবে তিনি কে? তার রূপ কি?

"ওম যা দেবী সর্ব্বভূতেষু" মন্ত্র আওড়ালেই, আমি ঈশ্বর দর্শন করে ফেলবো? ঈশ্বর কি আমার মতো নিকৃষ্ট জন্তু নাকি? ঈশ্বর আন্ডারপ্যান্ট খুলে, আমাকে তার "নংকু" দেখিয়ে দেবেন না? আমি ভোঁদড় বলে, ঈশ্বরও কি ভোঁদড় নাকি?

শাস্ত্র পাঠ করে বা ঘন ঘন নামাজ পাঠ করে যারা ঈশ্বর তুষ্ট করতে চায়, আমি তাদের দলের কেউ নই। আমি বিশ্বাস করি না, কোন প্রকার শাস্ত্র পাঠ করলে, বা মন্ত্র উচ্চারণ করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। আমি বিশ্বাস করি না-শাস্ত্র পাঠ করলে, বা মন্ত্র উচ্চারণ করলে- সেই ব্যক্তির নিজের কোন মঙ্গল সাধন হয়। বরং, শাস্ত্রে অনেক দর্শন আলোচনা আছে; সেই দর্শন নিয়ে মস্তিষ্কে সুড়সুড়ি দিলে তোমার মঙ্গল সাধন হবে। একান্তে, নীরবে, মেডিটেশন করলে তোমার মঙ্গল সাধন হবে। কারন- দর্শন ভাবলে, তুমি চিন্তা করতে শিখবে। মেডিটেশন করলে, তুমি মানসিক শৃঙ্খলা আনতে পারবে।

কিন্তু "ঢ্যাং কুড়াকুড়ঢ্যাং কুড়াকুড়" বাজনার তালে, কোমর দুলিয়ে আরতি করলে, নাচের অভ্যাস ছাড়া ঈশ্বর সাধনার কিছু হবে না। যদি নাচের অভ্যাস করতে চাও, তাহলে কোমর দুলিয়ে আরতি করতেই পারো। কিন্তু তাকে ঈশ্বর সাধনা বলো না। ঈশ্বর তোমার দিকে আড়চোখে চেয়ে, ফিক করে দুষ্টু হাসি হেসে দেবেন।

যারা বৈষ্ণব বা সুফী তারা উন্মাদের মতো বিভোর হয়ে নেচে যান। এতে কিন্তু কিছু মঙ্গল সাধন হয়। প্রথমত- এতে শরীর চর্চা হয়। দ্বিতীয়ত- এরা যে "ট্রান্স"-এর মধ্যে চলে যান- তাতে একপ্রকার মেডিটেশন হয়।

ঈশ্বর নিজে, তার সৃষ্টিকে গভীর ভাবে ভালোবাসেন আর যত্ন করেন। ঈশ্বর চান- তার সন্তান মানুষ; তারাও যেন তার সৃষ্টির যত্ন করে। তাকে ভালোবাসে। কাজেই ঈশ্বরকে যদি তুষ্ট করতে চাও, তাহলে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে যত্ন করো, ভালোবাসো। নদী ভালোবাসো। পাহাড় ভালোবাসো। বৃক্ষের যত্ন করো। পশু পাখি মানুষের সেবা করো।

বন্ধুকে হিংসে করবে, প্রতিবেশীকে খিস্তি করবে, অন্য ধর্মের লোকদেরকে হত্যা করবে; আর ভাবছো- তাতে তোমার ঈশ্বর খুশি হবেন? ঈশ্বর কি তোমার মতো ভোঁদড় নাকি?

ঈশ্বর সাধনা করতে চাও? পৃথিবীকে একটু বেশি ভালোবাসো। মানুষকে একটু বেশি ভালোবাসো। মুখে কুলুপ আঁটো। সমালোচনা বন্ধ করো। অনাবশ্যক অহেতুক সমালোচনা করেই, আমরা পৃথিবীকে- প্রতিদিন একটু একটু করে আরও বেশি নিষ্ঠুর করে ফেলছি।

ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষরা ভাবে, তারা বুঝি খুব ঈশ্বর প্রিয়! তার নমুনা কি? সব সময় তারা অন্যের সমালোচনা করে যাচ্ছে। আর মানুষ দেখলেই- সেই মানুষটা ভালো অথবা মন্দ; তার বিচার করে যাচ্ছে! ফল?ভারতীয় উপমহাদেশে, খুন ধর্ষণ দাঙ্গা হত্যা ইত্যাদি লেগেই আছে।

আর অস্ট্রেলিয়ার লোকরা নাকি খারাপ! কারন- তারা ন্যাংটো হয়ে পথ হাঁটে, আর সমুদ্র তীরে রোদ পোয়াতে থাকে। ইশঃ কি জঘন্য! কি জঘন্য! অথচ অস্ট্রেলিয়াতে খুন ধর্ষণ দাঙ্গা হত্যা ইত্যাদি হাজার গুণ কম! ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ তাহলে নাচে কারা?ভারতীয় উপমহাদেশ? অথবা অস্ট্রেলিয়া? ধার্মিক তাহলে কারা?ভারতীয় উপমহাদেশ? অথবা অস্ট্রেলিয়া? ন্যাংটো হয়ে পথ হাঁটা কি, মানুষ খুনের চেয়ে জঘন্য কাজ? তোমরা নিজেদেরকে ধার্মিক বলবে, অথচ দেশে প্রতিদিন শত শত খুন ধর্ষণ দাঙ্গা হত্যা ইত্যাদি ঘটবে; তা হয় কি করে? ধর্মের রঙিন চাদরের আড়ালে, আর কতদিন আমরা বেশ্যাগিরি করবো?

ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ বন্ধ করো হে ভাই, ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ বন্ধ করো।

© অরুণ মাজী
Painting: Jia Lu

ঈশ্বর সাধনা অথবা ঘোমটার নীচে ন্যাংটো নাচ? (On God And Godliness)
Wednesday, February 14, 2018
Topic(s) of this poem: god,human,religion,sin
COMMENTS OF THE POEM
??? ??????? ????? 14 February 2018

অনেক গভীর ভাবনা।

0 0 Reply
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success