অনেকেই সাবধানী আর চালাক হতে চায়। কিন্তু তাতে, জীবন কি- বেশি সুখ আর শান্তিময় হয়?
ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। সম্পদকে যদি সুখ বলে ধরো, তাহলে চালাক বা সাবধানী হয়ে, তুমি হয়তো সাময়িক ভাবে একটু বেশি সম্পদ গড়তে পারো। কিন্তু বেশি সম্পদ মানে কি বেশি সুখ?
নাহঃ বরং উল্টোটা। অঙ্ক কি বলে জানো? তোমার বাড়িতে একটা রুম থাকলে, তোমার একটা রুম ধুয়া-মুছা করার উদ্বেগ। তোমার বাড়িতে চারটে রুম থাকলে, তোমার চারটে রুম ধুয়া-মুছা করার উদ্বেগ। একটা রুমে একটা টেনশান। চারটে রুমে চারটে টেনশান। যত বেশি বোঝা, তত বেশি যন্ত্রণা।
সম্পদের আস্ফালনে, ক্ষণিকের গর্ব হয়। কিন্তু তা ভীষণই ক্ষণস্থায়ী। বলো তো, কখন- তোমার আস্ফালন করার দরকার হয়? যখন তোমার মধ্যে হীনমন্যতা বা শূণ্যতা বোধ থাকে। তোমার বন্ধুর কাছে তোমার চারতলা বাড়ির গল্প করে, তুমি ১৫ মিনিট মজা পেলে। কিন্তু বাকি তেইশ ঘন্টা ৪৫ মিনিট, তোমার মধ্যেকার শূণ্যতা, আবার তোমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে।
মানুষ নিজের মধ্যেকার শূণ্যতা ঢাকতে চায় সম্পদের আস্ফালনের মাধ্যমে। কিন্তু তুমি কি দিনরাত, মাস-বছর, একটানা আস্ফালন করে জীবন কাটাতে পারবে? কেই বা আছে, যে তোমার আস্ফালন বারবার শুনবে? তুমি বারবার আস্ফালন করলে, তোমার বন্ধুরাও তোমাকে এড়িয়ে যাবে। ক্ষণিকের সেই আস্ফালন শেষে, আবার তুমি অবসাদের বুকে ঢলে পড়বে।
তোমরা ভালোই জানো- বড় ব্র্যান্ডের গাড়ি আমি চড়ি কেন? কারন- আমি আমার স্ট্যাটাস আর সম্পদের আস্ফালন করতে চাই। আস্ফালনের মাধ্যমে, আমি আমার মধ্যেকার শূণ্যতা বোধকে ঢাকতে চাই। আমি কি এইভাবে আমার শূণ্যতা বোধকে কাটিয়ে উঠতে পারবো? নাহঃ। কখনো না।
সুখ পেতে হলে, তোমাকে নিজের মধ্যেকার এই শূণ্যতা বোধকে কাটিয়ে উঠতে হবে। এই শূণ্যতাবোধকে তুমি জয় করবে কি করে?তোমার আত্মাকে, সত্যিকারের আলো দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। তবেই তুমি তোমার নিজের মধ্যেকার শূণ্যতাকে (বা অন্ধকারকে)জয় করতে পারবে। এখন প্রশ্ন হলো, তোমার আত্মার মধ্যে তুমি আলো জ্বালবে কি করে? এই নিয়ে আলাদা একটা লেখা লিখবো আমি। ভুলে গেলে, আমাকে মনে করিয়ে দিও তোমরা। আজ তোমরা আমার এই কবিতাটা একটু ভাবো। এর মধ্যে অনেক প্রশ্ন আছে।
জনারণ্যে একাকী আমি
দৌলত মাঝে নিঃস্ব।
আপন মাঝে খুঁজি নাই সুখ
খুঁজি আমি মহাবিশ্ব।
মালবিকা "ওষ্ঠে" খুঁজি আমি প্রেম
খুঁজি না হৃদয়ে তার।
সম্পদ মাঝে খুঁজে খুঁজে সুখ
দুঃখ গভীর আমার।
মুখপোড়া অমল মূর্খ বড়
জানে না শান্তি কোথায়।
মরীচিকা মাঝে তৃপ্তি খোঁজে
মরে মায়াবীর মায়ায়।
জীবনে অনেক সাবধানী আর চালাক তো হলে। তবুও সুখ পেয়েছো কি? পাও নি। কেন পাও নি? জীবনে এতো ভাবলে, জীবনে এতো অঙ্ক কষলে, অন্যকে এতো ঠকালে, তবুও দুঃখ ঘুঁচে নি কেন?
আমি আজন্ম পেটুক। আমি এতো বড় নিষ্ঠুর আর পেটুক যে, খাওয়ার শেষে, আমার মায়ের জন্য ভাত ডাল কিছুই ফেলে রাখতাম না আমি। মা আমার দুপুরেও অনাহারে। রাতেও অনাহারে। তবুও মায়ের মুখে, সদাই অমলিন হাসি। মুহূর্তের ভুলেও, মা কখনো কোনদিন অভিযোগ করে নি, আমি এতো নিষ্ঠুর কেন? নিতান্ত অল্প টাকায় সংসার চালানোর যন্ত্রণা, অনাহারের যন্ত্রণা- তবুও মা আমার জ্যোৎস্নার মতো স্নিগ্ধ আর শান্ত। মানুষের মধ্যে এতো প্রশান্তি আমি এখনো দেখি নি।
এতো নিঃস্বতার মাঝেও, মা এতো প্রশান্ত কেন? এই নিয়ে আজও আমি রীতিমতো গবেষণা করি। মাকে দেখেই আমি শিখেছি- সুখের ঠিকানা ভালো খাওয়ারের মধ্যে নেই, ভালো আশ্রয়ের মধ্যে নেই, বড় অট্টালিকার মধ্যে নেই। সুখের ঠিকানা মানুষের হৃদয় আর আত্মার মাঝে।
মা আমার কোন লেখাপড়া জানে না। সুখের এই গূঢ় উৎস রহস্য, মা তাহলে জানলো কি করে? মা কি জন্ম থেকেই মহাঋষি? সমাজের মাপ কাঠিতে তোমরা হয়তো তা বলবে না। কিন্তু পৃথিবীটাকে উল্টে পাল্টে দেখার পর, আমি কিন্তু তাই মনে করি। যে মানুষটা সুখের গূঢ় উৎস রহস্য খুঁজে পেয়েছে, এবং নিজের নিঃস্ব অনাহার ক্লিষ্ট জীবনে তা ভয়ঙ্কর শৃঙ্খলার সাথে প্রয়োগ করতে পেরেছে, তার চেয়ে বড় মহাঋষি আর কে? মায়ের চরিত্রের এক লক্ষ ভাগের, এক ভাগও আমি যদি অর্জন করতে পারি, আমি আমার জীবনকে সার্থক মনে করবো।
কি আশ্চর্য্য তাই না? আমার মা মূর্খ হয়েও একজন মহাঋষি। আর আমি? শেয়াল পন্ডিত হয়েও, যন্ত্রণাকাতর। ঝাঁটা মারো হারামজাদা অরুণ মাজীকে, ঝাঁটা মারো।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
Eto kothar pore jhatato marte parbo naa, Tomar mukhe ami chamor bolabo.. good wishes