Samir, My Elder Brother - A Poem In Bengali Poem by Malay Roy Choudhury

Samir, My Elder Brother - A Poem In Bengali

স্মৃতি: দাদা সমীর রায়চৌধুরী
কাল, বাইশে জুন, ২০১৬, সকাল আটটা পনেরোয় দাদা মারা গেছেন
দাদা সমীর রায়চৌধুরী
সেন্স অফ লস, কাকে বলে? অনুভব করতে পারছি
শরীরের ভেতরে যে হাওয়াহীন বাতাস ঘুরপাক খেয়ে উঠছে
তার অনুবাদ অসম্ভব
ওই বিস্মরণের হাওয়ায় প্রথমে মা
তারপর বাবা
মা আর বাবা চলে যাচ্ছেন তার ইশারা ওনারা বেশ আগে থেকেই
দিয়ে রেখেছিলেন
সেন্স অফ লস-এ ভুগিনি তো
লখনউয়ের পথে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লজ্জা করেনি-
দাদার বেলায় অকস্মাৎ বলেই কি, বিনা নোটিসে
সকাল ছয়টায় সলিলাকে টেলিফোন
হাসপাতালে যাবার দু'দিন আগে
বলতে চাইছিলে কি, দিতে চাইছিলে ইশারা, তৈরি থাকার?
খেই
বলতে চাইছিলে কি, হ্যাঁ, তোদের প্রস্তাবে আমি রাজি
ওপরতলাটা তোরা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারিস
এখন? সলিলা সিঁড়ি চড়তে পারে না, এক কিলো নিয়ে হাঁটতে পারে না-
রিকশয় চাপার জন্য পা তুলতে পারে না
স্যুটকেস বইবে কে? ছয়তলার ফ্ল্যাট থেকে রাস্তায়, তারপর বিমানবন্দরে!
আরেক বিমানবন্দরে!
মেয়ের কাছে নাইজেরিয়া যাওয়া হল না
ছেলের কাছে রিয়াধে যাওয়া হল না
আঙুলে আথ্রাইটিসের বিরুদ্ধে কবিতা বিরুদ্ধতার জন্যই
এক-একটা অঙ্গ দিয়ে দিয়েছি এক-একজন ডাক্তারকে, ডাক পড়লে যাই-
ছোটোবেলায় বাড়ি থেকে পালাবার সময় যেমন এক পোশাকে পালাতুম
এখন আর তা সম্ভব হয় না কেন?
ত্রিদিবের প্রেমিকা শুধু একটা গামছা নিয়ে পাটনায় ওর খোঁজে এসেছিল
গিন্সবার্গও এসেছিল কাঁধের ব্যাগে খাতা টুথব্রাশ আর গামছা নিয়ে
গোলা রোডের গ্র্যানিট পাথরের টায়ারে কাঠি মেরে গড়িয়ে জিতে গেল দাদা
চল চল মড়া যাচ্ছে, ‘রাম নাম সত্য হ্যায়' বলতে-বলতে পয়সা লুটবো
ওওওওওও
মৃত্যুই তাহলে সত্য
মড়ার কুড়োনো তামা পয়সায় সেদ্ধ আলুতে তেঁতুলের জল পেদোনুন
কাঠি দিয়ে গিঁথে খাওয়া, জিভের চটাক, অমন সবাই পারে না
নীল মাছি মেরে সুতোয় বেঁধে গোপাল হালুইকরের জিলিপির ওপর ফ্যালে দাদা
জিলিপির রস ছেড়ে ভিমরুল নীল মাছির মোহে আটক
স্বাধীন উড়ন্ত ভিমরুল নিয়ে ইমলিতলার গলিতে-গলিতে দৌড়োয় দাদা
জাঁতিকলে মরা ইঁদুরের ল্যাজ ধরে আকাশে চিলের ঝাঁকে ছুঁড়ে দাদার চিৎকার:
চিল কা বাচ্চা চিলোড়িয়া
লন্ঠন ঘিরে বড়োজেঠিমার গল্প-বলার আসর, দাদা জেঠিমাকে মা বলে ডাকে
বাবাকে "বাবু" বলে, শিউনন্নি আর ডাবর বাবু বলে ডাকে, তাই
মা-কে ডাকে "কাইয়া", বড়দি-ছোড়দির দেখাদেখি
বড়োজেঠিমা: "তারপর সেই রাজপুত্তুর, বুজলি কিনা, আলো-থামের
মতন উঁচু পাখিটার ঠ্যাঙ জড়িয়ে উড়তে-উড়তে চলল
সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে নেবে দ্যাখে কি ওম-মা
একটা বি-শা-আ-আ-আ-ল কুমিরের পিঠে নেবেছে
কুমিরের পিঠের ওপরেই ঘন জঙ্গল...অ্যাই বুড়ো, ঘুমোসনি...
"চিল কা বাচ্চা চিলোড়িয়া"
জ্যাঠা বললে, হ্যাঁ, সাইকেল শিখতে পারিস, ফিরে পোস্কার করে দিবি
কেবল জ্যাঠাই শাসন করত দাদাকে
হাত পাতো, শরকাঠি কয়েকবার মারতেই ভেঙে দু-টুকরো
কাল, বাইশে জুন, ২০১৬ সকাল আটটা পনেরোয় দাদা মারা গেছেন
দাদা মানে বাসুদেব
দাদার জন্ম মায়ের মামার বাড়ি পাণিহাটিতে
মায়ের বাপের বাড়ির গেটে শ্বেতপাথরে লেখা: ‘নিলামবাটী'
দিদিমা নাম রেখেছিলেন বাসুদেব, পাণিহাটিতে সবাই বাসু বলে ডাকতো
আমরা ছোটোলোক বলে মামার বাড়ি থেকে কেউ পাটনায় আসে না
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ
জেঠার পিটুনি এড়াতে এই ছাদ থেকে হুলাসবাবুর ছাদে লাফ দ্যায় দাদা
চারটে সিঁড়ি আছে হুলাসবাবুদের বাড়িতে: পূব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ
হুলাসবাবু বলেন চোখ বুজে রামচরিতমানসের পাতা খোল
লোহার রামশলাকা একটা দোহায় রাখতে, বলে উঠেন
আররে মিনুয়া তু তো অবকিবারি অওওয়ল নম্বর সে পাস হো জায়গা
বস্তিতে থাকলে যা হয়, ইমলিতলার বস্তিতে, এ-ক-লে-ক-টি-সি-জ-ম
গাঁজা-বনের কানাগলির গর্তে চারপা-বাঁধা শুয়োরে গনগনে লোহা
চল চল শুয়োরের মাংস আর তাড়ি, এলাচ নিয়ে নে রান্নাঘর থেকে
মা-কে বলিসনি, ফিটকিরি দিয়ে দাঁত মেজে নিস
মা ডাকেন, উনোনটা ধ্বসে গেল রে, তাড়াতাড়ি কয়লা ভেঙে দিয়ে যা
সেন্স অফ লস কাকে বলে, ‘লস'-এর বাংলা কী?
পুরোনো ভারি নোড়া দিয়ে কয়লা ভাঙে দাদা
দাদা মাছ মাংস তরকারি রাঁধতে শিখে গেছে
ঝাল খেতে পারে না, নিশ্চই মিনুটাকে রাঁধতে বলেছিলে, লঙ্কা পড়েনি
কিছু "হয়ে উঠতে" চায়নি কেন দাদা
বন্ধুদের মতন: যাঁরা মূর্তিমান প্রফেশন, মানুষটাই যেন পেশা
এক্সপায়ারি ডেট লেখা রাশি লগ্ন গণ
সিস্টেম-সাহিত্যের ব্যাস্টিল ভেঙে ফেলে
কাল, বাইশে জুন ২০১৬, সকাল আটটা পনেরোয় দাদা মারা গেছেন
দাদা মানে মিনু
হিন্দি-ইংরেজিতে অচেনা তরুণদের অনুদিত প্রাণ
প্রতিটি জীবনের গুরুত্ব আছে: অল লাইভস ম্যাটার-
অল লাইভস ম্যাটার
জ্ঞান হল প্রতিশোধের অস্ত্র তার শানের আওয়াজ যাক বহুদূরে
ফুটবল খেলতে গিয়ে গোলপোস্ট হয় দাদার জুতো দিয়ে
জুতো পরে ফিরতে ভুলে যায় দাদা, নতুন জুতো এখন কেনা হবে না
সেই পুজোর সময়ে যখন সবায়ের জন্য কেনা হবে
খালি পায়ে ইশকুল যাও
গ্রিক দেবতা থিসিয়াস
সর্পিল গোলকধাঁধার কালো গহ্বরে মিনোটরকে কোতল করে
দাদার উল্লাস: জ্ঞান যথেষ্ট নয়, চাই বিচক্ষণতা
আক্কেলদাঁত হয় কেন!
"প্রত্যেক শব্দের মধ্যে কিছু শব্দ পাশ ফিরে থাকে
প্রত্যেক শব্দের মধ্যে কিছু অক্ষর থেকে যায় স্বল্প উচ্চারণে
কিছু উপসর্গ প্রত্যেক ধাতুর সম্পর্কে থেকে যায় অর্থবিহীন
বুঝ আর অবুঝের মধ্যে বোঝাপড়া রাখে কার্যসাধিকা
নীলুদের সংসারে ছোটমাসি মুখ বুজে কাজ করে যায়- -
জটিলতার কাছে সোপর্দ রয়েছে
গতির অরৈখিক নকশা
অংশ-প্রীতি-ঘুম
যেভাবে বিশৃঙ্খলা ছন্দের মুখোশ ।"
শৈশবে দাদা ট্যারা ছিল বলে গোল চশমা পরতো, ডাঁটি স্প্রিঙের
ডাক্তার দুকখন রামকে দেবার মতন রেস্ত নেই বাবার
দুকখন রামের কমপাউণ্ডার অন্য এক ট্যারার প্রেসক্রিপশান আনে
দাদার চশমা হয়, কিন্তু সারা জীবনের মতো চোখ খারাপ হয়ে যায়
বাঁচোখ খারাপ, দাদার উক্তি: অমন হয়
আইনস্টাইন কি জানতো হিরোশিমার মানুষরা কীভাবে ছাই হবে!
অন্যের জীবনও তো একই দুঃখের ভাঁড়ার
ঠাকুমার সে কি আনন্দ বংশধর পেয়ে, সবচেয়ে প্রিয় নাতি
নিজে হাতে কালিগাইয়ের দুধ দুয়ে কাঁচা দুধ খাওয়ান
বারোঘর-চারসিঁড়ির সাবর্ণ ভিলা থেকে
নাতি কলকাতার কালেজে পড়তে যাচ্ছে
বংশের প্রথম যাচ্ছে কালেজে পড়তে
প্রথম দিন হাফশার্ট-হাফপ্যান্ট, পাটনাইয়া ইউনিফর্ম
সহপাঠীদের টিটকিরিতে দাদা পালটায় ধুতি-হাফশার্টৈ
উত্তরপাড়া থেকে কয়লা ইনজিনের প্যাসেঞ্জার ট্রেনে
চিলেকোঠায় লন্ঠনের আলোয় আদ্যিকালের বর্শা ঢাল তরোয়াল চামর খাঁড়া
কীই বা হবে ওগুলো রেখে!
উঠোনে কেন যে রাখা ছিল আদ্যিকালের ক্ষয়ে-যাওয়া হাড়িকাঠ
একশো বছর পরেও রয়ে গেছে তেলসিঁদুরের ছোপ
পুজোর হলঘরে রংচটা পালকির ধ্বংসাবশেষ
এক কোনে পঞ্চমুণ্ডের আসন, কোন পূর্বপুরুষকে তন্ত্রে পেয়েছিল
সাতপুরুষের ভুতেরা মাঝরাতে জেগে ওঠে, আরবি-ভাষায় বলে
"খুল যা সিম সিম" কেননা চিচিং-ফাঁক বললে খুলবে না পাথরের দরোজা
আলিবাবার সোনা-হীরের ভাঁড়ার
কাল, বাইশে জুন ২০১৬, সকাল আটটা পনেরোয় দাদা মারা গেছেন
দাদা মানে ইমলিতলার মিনুয়া
দাদা বলে ওঠে, "আমার মাঝে-মাঝে খুব ভয় হয় । সারা গা-গতর জুড়ে
ভয়ঙ্কর গভীর একটা কাঁপুনি এঁকেবেঁকে তোলপাড় করে ঘুরে বেড়াতে
শুরু করে । হঠাৎ আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় । আমি কোনো
কুলকিনারা পাই না।"
জজসাহেবের ঘোড়ার গাড়ি যাবে, পেছনে আর্দালির দাঁড়াবার জায়গায় বসে
স্কুলে যায় দাদা
পড়ার টেবিল বাবার দোকান থেকে আনা প্যাকিং বাক্সের ওপরে মায়ের শাড়ি
লন্ঠন, যে যার নিজের পড়ার লন্ঠনের ভুষো নিজে পোস্কার করো
ছাদে তিনচাকার সাইকেলে দাদা টের পায়নি পিঠে আমি নই, বোনেরা নয়
একটা বাঁদর ছাদে-দেয়া বড়ি খেতে এসে ফ্রি রাইড নিচ্ছে
এই নাব, নাব বলছি, কে রে, মার দেবো অমন করে গলা জড়ালে
দাদা, তোমার পিঠে লালমুখো বাঁদর, ডলি চেঁচিয়ে ওঠে
ডলির মা, মেজোজেঠিমা যক্ষ্মায় দালানের অন্ধকার ঘরে মারা গেলেন
সেন্স অফ লস হয়নি তো
মারা গেলেন মেজজেঠা, মারা গেলেন বড়োজেঠা, মারা গেল মেজদা
মারা গেলেন জেঠিমা, মারা গেলেন বড়দি, মারা গেলেন ছোড়দি
মারা গেলেন নকাকিমা, মারা গেলেন নকাকা, মারা গেলেন নতুনকাকা
মারা গেলেন ছোটোকাকা বিশেখুড়ো, মারা গেলেন ঠাকুমা
ছোটোকাকিমার কতো নগ্নিকা ফোটে ট্রাঙ্কে ছেড়ে গিয়েছিলেন বিশেখুড়ো
যৌনতায় টইটুম্বুর ছোটোকাকিমা ভেনাস আফ্রোদিতি মিনার্ভা উর্বশী রতি
ছোটোকাকিমার যৌনতায় কোন সত্য ছিল? যা ওনার মৃত্যুতে ছিল না!
ওপচানো যৌনতা অথচ ছেলেপুলে হল না-
সেন্টু দেখে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দে, বাবা দেখতে পেলে আবার গৃহযুদ্ধ-
মারা গেলেন ছোটোকাকিমা
সেন্স অফ লস হয়নি কেন
কেনই বা ফিরে-ফিরে আসে চাইবাসা? কিন্নর-কিন্নরীরা?
বরফে গড়া লুসিফারের তিনমাথা
ওনারা দাদার ভাত মহুয়া হাড়িয়া খেয়েছেন থেকেছেন, ভুলে গেছেন-
পৃথিবীর গলদ, পারভারশানও শিল্প!
মেঘেরা তলায় নেমে এলে আকাশ কি ওপরে চলে যায়?
দাদা বলে ওঠে: "বুঝের প্রসেসে ঊর্ধ্বসীমাকে বলা হয় চার্নিং বা মন্হন
আর নিম্নসীমা হল গুলিয়ে যাওয়া...আবার মন্হনে যদি
একাকারবোধ না থাকে আর দুদিকে ওই বিরোধমূলক
দ্বেষপন্হী থাকে তাহলে ফলাফলে গরল আর অমৃত দুটোই
উঠবে আর যদি একাকার থাকে তাহলে জন্ম নেবে শুক
ও সঞ্জয়েরা...যারা একাকারে পক্ষবান...পক্ষীতুল্য…
উড়ালমনস্ক…"
কেউ চেঁচিয়ে উঠেছিল: "ইয়ে আজাদি ঝুঠা হ্যায়"
তারপর জিগ্যেস করেছিল " কমরেড তুমি নবযুগ আনবে না? "
নবযুগ? হ্যাঁ, বাড়ি-গাড়ি-নার্সিং হোম-জমিজিরেত-সিনডিকেট!
মাটির তলায় লাশ, লাশেরা হাড়, হাড়ের বোন মিল
সরকারে গেলে বামপন্হী আর কেন বামপন্হী থাকে না রে?
শিউনন্নি তো দাদাকে শৈশবেই বলেছিল:
"তুলসী দেখি সুবেষু ভুলহিঁ মূঢ় ন চতুর নর
সুন্দর কেকিহি পেখু বচন সুধাসম অসন অহি"
সত্যি তো, শিউনন্নিও জানে, ময়ূর পেখম নাচিয়ে গান গায়
কিন্তু সাপের মাংস খেতে ময়ূরেরা ভালোবাসে
আমার ছায়া আলোর কারণে নয়, আমি আছি তাই আমার ছায়া পড়ে
আমি লোকটা কি চৌকাঠ? তাহলে তুমি কে?
রাইজোমই এলাকাকে করে দেবে পরিসরহীন
কে কতোটা বুঝেছে? রাইজোম, যুক্তিবিপন্নতা, যুক্তির দ্বৈরাজ্য?
হেটেরোটোপিয়া, লিমিনালিটি, সংকরায়ন, রুবরিক, কমপ্লেক্সিটি?
কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে?
ম্যাকলেপুত্রের দল, র‌্যাডক্লিফপুত্রের দল, স্ট্যালিনপুত্রের দল,
সকলেই জমাট বাঁধে চিরস্হায়ী বন্দোবস্তের অপরিমেয় মাল-ভোগে
ঠিকই, নপুংসকতাই ক্ষমতার উৎস, হিটলারের একটা বিচি ছিল না-
সেন্স অফ লস কাকে বলে?
পালিয়ে বেড়ানো নকশাল করুণানিধানকে মাছের দোকান খুলে দ্যায় দাদা
রঙিন মাছ, অ্যাঞ্জেল সাঁতরায় গোপন নকশালের স্বপ্নে
চরস আফিম গাঁজা মিশিয়ে পাইপে ফোঁকার দিন আর নেই
এখন কেবল বই বই বই বই বই বই বই বই বই বই
অভিজ্ঞতা ছেঁকে তুলে আনা, মাঝি-মাল্লা-জেলেদের রোজকার ঘামে পাওয়া
জাহাজে তুলে আনা রক্তমুখ হাঙর
শব্দদের ভেঙে ফেললে জ্ঞান বেরোয় না ক্রিয়া বেরোয়
প্রশ্ন করো প্রশ্ন করো প্রশ্ন করো প্রশ্ন করো
দুটো ফুসফুসই আক্রান্ত হল কেন?
পাঁচদিনেই মাল্টি অর্গান ফেলিয়র হল কেন?
দুদিনের বেশি ভেন্টিলেটর দিতে হল কেন?
শেষ মুহূর্তে ডায়ালিসিস করতে হল কেন?
দাদা বলেছিল: "আমি অন্তর্বর্তীকাল"
ইমলিতলার বস্তিতে বুদ্ধদেব বসু! সুধীন্দ্রনাথ দত্ত! অমিয় চক্রবর্তী!
জীবনানন্দ দাশ! প্রেমেন্দ্র মিত্র! বিষ্ণু দে! সমর সেন!
এসেছিলেন দাদার সঙ্গে, বই হয়ে-
না, দাদার বন্ধু বদ্রি পাটিকমার, পকেট থেকে চিরুনি বের করে
পার্ককরা গাড়ির আয়নায় মুখ দ্যাখে, শৈশবের পানিবসন্তের ছিরিছাঁদ
যার পকেট মেরে এখন নিজের মুখকে আদর করছে
তার যে লোকসানের বিরক্তি তাতে সেন্স অফ লস কেমনতর
কী কুক্ষণ কী গোপন হাহাকার, দাদা কেন কিন্নরীর দিদির প্রেমে...
কিন্নর: আমাকে ভুল বুঝবেন না কিন্তু, আমি সামাজিক কথাবার্তার বিশেষ ধার ধারি নে । মুখে মনে এক বলি।
আমি বলতে চাই, আমার বন্ধু আপনাকে…
কিন্নরীর দিদি: কি জানো ভাই, এক বিবাহিতা মহিলার নামগান যদি তাঁর অতিবড়ো ভক্তেও করে, ব্যাপারটা
সত্যি হলে নিছক ইয়ার্কির খাতিরেও বলা যায় না । আমি ওকে ভালোবাসি ।...আমার নাটক করার
ইচ্ছে নেই, নতুবা গল্পে যেমন হয়, আমি ছেলেমেয়ে স্বামী বিসর্জন দিয়ে আপনার বন্ধুরহাত ধরে
বলতাম, চলো, গো, এবার নতুন রকম জীবনে ঢুকি । এমন ঘটনা কি আর হয় না? আকছার হচ্ছে, , তবে এসবইহচ্ছে মোহ থেকে - - ভালোবাসা থেকে নয় । আমি আমার স্বামী জ্যোতিকে অসম্ভবতাঁর
ছেলেমেয়েকেও ভালোবাসি । তিনিও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না ।
কিন্নর: বন্ধুর কথা-
কিন্নরীর দিদি: হ্যাঁ, এও তিনি জানেন । তাঁকে আমিই বলেছি । তিনি আপনার বন্ধুকেও ভালোবাসেন খুব ।
তিনি কারিগরি কাজের মোটা মানুষ, ভেবেছেন, ভেবেছেন হয়তো স্ত্রীর মধ্যে যে সূক্ষ্মআবেগ-অনুভূতিগুলোরয়েছে, সেগুলোর সাহচর্য দিতে যদি কেউ এগিয়ে আসে, কেউ যদি স্ত্রীর, .মানসিক সহায় হয়, তাতে আপত্তির কী আছে? এর ফলেই না উ্ভয়ত স্বাস্হ্য বজায়... থাকবে । তবে তাঁর কোনো আপত্তি নেই
আমাদের এই আলাপচারিতায়, সহযোগে । তিনিও, এখানে এলে, আমাদের মধ্যে বসে থাকেন ।
কিন্নর: ভারি অদ্ভুত তো? আশ্চর্য!
কিন্নরীর দিদি: অদ্ভুত কিছুই নয় কিন্নর, এ হলো সাদামাটা বাঁচার বিধিব্যবস্হা ।
দাদার সেই সেন্স অফ লসের আঁচ পাইনি কখনও
কিন্নর আর কিন্নরের সঙ্গীরা যখন দাদার গ্রেপ্তারির কারণ হলো, তখনও
দাদার গ্রেপতারির সংবাদে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন ঠাকুমা
পিসতুতো ভাই সেন্টুদার উক্তি: কুপথে যদি চলিস সবকিছু মনে হবে মায়া
জীবন অনিত্য, বুদ্ধদেব-টাইপ ফিল করবি নিজেকে, লাইফং শরনম গচ্ছামি
প্রেম কোনো স্হিতি নয়, অনুভূতি নয়, বিলিবন্দেজ নয়; বরং তা
আদানপ্রদান, অসম, বন্ধুর, অমসৃণ । ইতিহাসে, অশরীরীতে, পরিপূর্ণ,
একজন আরেকজনকে দৃষ্টিক্ষীণতায় দেখার প্রয়াস, যার ভেতরে ঘাপটি
মেরে থাকে আকুল আকাঙ্খার
নবাঞ্চল
অভেদের সন্ধান
পারস্পরিক সংযোগ তখনই সম্ভব যখন আত্মপরিচয়ের অসম্বদ্ধতাকে
মেনে নিতে হয় ।
দাদা বলে ওঠে: "কী দিয়ে আমাদের আমিগুলো তৈরি হয় খোলসা করে
বলা মুশকিল । বোধহয় এই আমি বেশ কিছু ঘটনার দাস।
আমাদের স্ব-ইচ্ছার বাইরে তবু সেই আমাদের আমিটুকুর
কর্তা । বিশ্বায়নের আমি দিনকে দিন ঘটনার নিয়ন্ত্রণে
চলে যাচ্ছে ।"
বিশ্বায়নের লাথি খেয়ে ইউনাইটেড কিংডমের ধ্বসে পড়া দেখা হল না দাদার-
কিন্তু ছোটো ছেলেটাই এসে সবদিক সামলে নিলে
আফ্রিকা থেকে তড়িঘড়ি এসে
একদিন দাদার ওপর রাগ করে বউকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল-
টেলিফোনে দাদার অনুশোচনা
না, নেটে ফোটো পাঠায়, ফোন করে না, কলকাতায় এসেও আসে না
সমাজবাস্তবতা কাকে বলে? সমাজ কাকে বলে? বাস্তবতা কাকে বলে?
বারান্দার রোদটা দাদার
বাগানের বৃষ্টিটুকু দাদার
অজস্র বেগুন, অথচ শিবকালী ভটচাজ ওনার বইতে খেতে বারণ করেছেন
এই খাওয়া চলবে না, সেই খাওয়া চলবে না, জেঠিমার পাঁজিতে আটক দাদা
ইমলিতলাকে লোকে অপছন্দ করে কেন!
ঘৃণাই কি ভারসাম্য?
বইয়ের সংগ্রহ থেকে চুরি হয়ে যায় মাকি দ্য সাদে, হ্যাভলক এলিস, ম্যালকম এক্স,
ডস্টয়েভস্কি, আতোয়াঁ আর্তো, মার্সেল প্রুস্ত রচনাবলী, যাক-গে-যাক-
সেন্স অফ লস কাকে বলে?
অলিমপাস পাহাড় থেকে আগুন চুরি করে এনেছিল দাদা
অনন্তকালের জন্য যন্ত্রণাভোগ, জ্ঞানের ওজনের যন্ত্রণা, অভিজ্ঞতার যন্ত্রণা
শব্দ-বাক্য-ব্যকরণ ভেঙে বেরিয়ে পড়ার যন্ত্রণা
আনপঢ় অতিথিদের সহ্য করার যন্ত্রণা
স্মৃতির হুলিয়া ও প্রতুলের ওমলেট অবধি
সজনেগাছে শুঁয়াপোকার ঝাঁক দেখার যন্ত্রণা
ওওওওওওওও
শুঁয়াপোকারা গাছটাকে আগলে রেখেছে পাহারা দিচ্ছে
প্রথিতযশা বলতে শুঁয়াপোকাদের বোঝায়
বাগানে বর্ষার জল জমে ফুলের গাছেদের অসহায় পচে যাবার
মূর্খ কাকাতুয়া পার্টিকর্মীদের বরদাস্ত করার যন্ত্রণা
ওপরতলায় বইয়ের পাহাড়ে উই ধরে গেছে, কিচ্ছু করার নেই
"তুই এখান থেকে চলে গিয়ে বেঁচে গেছিস"
যে যেখানে আছো সেখানেই থাকো - - মোমবাতি জ্বেলে নিয়ে আসছি
এক মিনিট বিয়াল্লিশ সেকেন্ড ওসামা বিন লাদেনের ক্যাম্পে
দাদা বলে ওঠে: " এখন আর আমার নিজেরই অন্ধকারের দেশে
চলে যেতে তত দ্বিধা নেই...সেখানে বাঁধন আছে…
শক্তি আছে...রাঙাদিদু মা বাবা ছোড়দি সবাই তো
সেখানেই...অন্ধকার এখন প্রিয়জনের সংসার...।"
না ম্যায় মোমন ভিচ মাসিতা
না ম্যায় ভিচ কুফর দিয়া রীঁতা
না ম্যায় পালন ভিচ পাকিতাঁ
না ম্যায় অন্দর বেদকিতাবাঁ
না ম্যায় রহন্দা ফাঙ শরাবাঁ
না ম্যায় রহন্দা মস্ত খরাবা
না ম্যায় জানা ম্যায় কওন
যে সৃজনশীল সে নিজের অসম্ভাব্যতা সৃষ্টি করার ওপর জোর দ্যায়
পৃথিবীতে "কোনওকিছু" আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে
এই "কোনওকিছু" প্রত্যাভিজ্ঞার বিষয় নয়
তা এক বুনিয়াদি সংঘর্ষ
দাদা বলেছিল: "আমার মস্তিষ্ক আমার বিষয়বস্তু"
ঠিকই বলেছো, ব্যকরণ তো ভাষার সমাজ,
সে-সমাজকে মানবার প্রয়োজন নেই
ঠিকই বলেছো, ছোটোগল্পের সংজ্ঞা কোন হারামজাদার বানানো?
ঠিকই বলেছো, উপন্যাসের সংজ্ঞা কোন হাড়কাঙালের তৈরি?
ঠিকই বলেছো, নিজের ভেতরে তীর্থ করা, ঘুরে বেড়ানো সবচে ভালো
নয় নম্বর গহ্বরে বন্ধুদের বরফমূর্তি দেখে দাদার অবাক লাগে না
হ্যাঁ, ওই তোতিনমাথা লুসিফার
"হি হ্যাড থ্রি ফেসেস: ওয়ান ইন ফ্রন্ট ব্লাডরেড;
অ্যাণ্ড দেন অ্যানাদার টু দ্যাট, জাস্ট অ্যাবাভ
দি মিডপয়েন্ট অফ ইচ শোলডার, জয়েনড দি ফার্স্ট;
অ্যান্ড অ্যাট দি ক্রাউন, অল থ্রি ওয়্যার রি অ্যাটাচড;
দি রাইট লুকড সামহোয়াট ইয়েলো, সামহোয়াট হোয়াইট;
হু কাম ফ্রম হোয়্যার দি নাইল, ডিসেনডিং, ফ্লোজ"
আচ্ছা, দাদা কেন নিজের টাকায় "একা এবং কয়েকজন"
ছাপিয়ে দিয়েছিল?
প্রথম মাইনে পাবার আনন্দে!
দাদা বরফের লুসিফারদের একজনকে লিখেছিল:
"আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পের চেয়ে মানুষকে বেশি ভালো বাসি
আমি শিল্পকে পৃথক মনে করতে পারি না
শিল্পের চেয়ে মানুষকে পৃথক করতে পারি না"
দাদা লিখেছিল, জানি না কোন লুসিফারের কথা মনে রেখে
"চুম্বকের ঠিক মাঝখানে আছে আকর্ষণ আর প্রত্যাখ্যান
এক এক সময়ে তারা পোশাক বদল করে
একজন যখন রাতের পোশাকে সাজে অনভদিক তখন স্বপ্নভাঙার ঘোরে"
গুয়ের নর্দমা থেকে টেনিস বল তুলে খেলতো ইমলিতলা পাড়ায়
বাবা তাই ফুটবল কিনে দিলেন
ইমলিতলায় ফুটবল দলের মালিক দাদা
পিচবোর্ডে ব্রুকবণ্ডের রাঙতা মুড়ে শিল্ড তৈরি করে লাল রিবন সাঁটা
উঠোনের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকে ঠুকরে রক্তাক্ত করে
চড়ুইপাখিরা
দাদা লিখেছিল, "জটিলতার কাছে সোপর্দ রয়েছে
গতির অরৈখিক নকশা"
বাট হোয়াট এগজ্যাক্টলি ইজ ‘সত্য শিব সুন্দর'?
টাকমাথা লুসিফার হয়? হয় বৈকি! বলেছিল দাদা,
দে বুক স্টোর থেকে যে বইটা বেরিয়েছে, তার পাতা ওলটা
তিনি তো রোরো নদী দ্যাখেননি, লুপুংগুটু ঝরণায় যাননি
হেসাডির অরণ্যে? নাহ! কখনও হাড়িয়া খাননি ।
লুসিফারদের ইমেজ ধোপদোরস্ত কবিদের মতন হয়
গম্ভীর, ইমেজ ভেঙে ফেলার প্রয়াস নেই, সেই একই
থোড়-বড়ি-খাড়া
একই বাড়িতে একই পাড়ায় একই রাস্তায় একই শহরে থেকে যায়
কাল, বাইশে জুন, ২০১৬, সকাল আটটা পনেরোয় দাদা মারা গেলেন
দাদা দুটো শতককে দুহাতে টেনে নিজের দিকে এনে মিশিয়ে দিয়েছিলেন
দাদা সমীর রায়চৌধুরী ২৩ জুন ২০১৬

Sunday, February 2, 2020
Topic(s) of this poem: memorial
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success