নারী জাগরণ নিয়ে আমি যখন চীৎকার করছি- তখন আমার উপর অনেকে, তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।
আমি স্বীকার করি, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে, নারী দ্বারা অনেক নিষ্ঠুরতা ঘটেছে। সেই ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা, তাদের এই ক্ষোভের কারন। সেই ক্ষোভকে আমি শ্রদ্ধা করি।
দুষ্টু পুরুষ যেমন আছে, দুষ্টু নারীও তেমন আছে। কিছু পুরুষের জন্য যেমন সমস্ত পুরুষকে দায়ী করা যায় না, তেমনি কিছু দুষ্টু নারীর জন্য সমস্ত পুরুষকে দায়ী করা যায় না।
আমার কথাটা হলো-
যে মাতা দুর্বল, তার সন্তান দুর্বল
যে দেশের সন্তান দুর্বল, সেই দেশের জাতি দুর্বল।
কাজেই নারী শক্তির জাগরণ না ঘটাতে পারলে- জাতির উত্তরণ সম্ভব নয়, এই মানবতার উত্তরণ সম্ভব নয়।
হাজার হাজার বছর আগে, কৌপিন পরা আমাদের অর্দ্ধনগ্ন পূর্বপুরুষ এই সত্য বুঝতে পেরেছিলেন। খুবই দুঃখের- আমরা সেই সত্যকে স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরের কথা, আমরা বরং সেই সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।
কেন আমাদের পূর্বপুরুষ মাতৃ সাধনার প্রচলন করেছিলেন? কেন বিক্রমী অসুরদের বিরুদ্ধে তারা, নারী শক্তিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন? তারা তো কোন পুরুষ দেবতার হাতেও, সমস্ত অস্ত্র তুলে দিয়ে, তাকে অসুর নিধনে পাঠাতে পারতেন! কেন তারা তা করেন নি?
কারন- আমাদের সেই সব অর্দ্ধ নগ্ন পূর্বপুরুষ, ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন। গর্বে তোমাদের বুক ফুলে উঠবে জেনে, গ্রীকরা নারী দেবতার কল্পনা করলেও, তারা নারী শক্তিকে সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ দিতে পারেন নি। কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষরা তা পেরেছিলেন। তারা বুঝেছিলেন- মানবতার উত্তরণের একমাত্র পথ- নারী শক্তির জাগরণ। নারী শক্তিশালী হলে- পুরুষ আরও শক্তিশালী হবে, সংসার আরও শক্তিশালী হবে, জাতি আরও শক্তিশালী হবে, বিশ্ব আরও শক্তিশালী হবে। এই খানেই হিন্দু ঋষি আর সাধুদের শ্রেষ্ঠত্ব।
আমি মর্মাহত- ভারতীয়রা নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর দর্শন না জেনেই, তারা ভারতীয়ত্বকে ঘৃণা করতে শিখেছে। আমি পৃথিবীর অনেক জাতি আর উপজাতিদের সাথে- রাত কাটিয়েছি, আলোচনা করেছি, গবেষণা করেছি। তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর দর্শন জানার পরে, হিন্দু দর্শনের উপর আমার শ্রদ্ধা আরও অনেকগুন বেড়েছে।
যদি ভারতীয়ত্বকে শ্রদ্ধা করো- তাহলে নারী জাগরণ ঘটাও।
যদি হিন্দু দর্শনকে শ্রদ্ধা করো- তাহলে নারী জাগরণ ঘটাও।
যদি সিংহ হৃদয় সন্তান চাও- তাহলে নারী জাগরণ ঘটাও।
যদি স্বচ্ছল, শক্তিশালী সংসার চাও- তাহলে নারী জাগরণ ঘটাও।
যদি স্বচ্ছল, শক্তিশালী দেশ চাও- তাহলে নারী জাগরণ ঘটাও।
কোন দেশ কত উন্নত আর স্বচ্ছল তা জানতে হলে, তোমাকে অমর্ত্য সেন বা জোসেফ স্টিগলার হওয়ার দরকার নেই। সেই দেশের কোন গ্রামে গিয়ে, কেবল পুরো একটা দিন সেই গ্রামের নারীকে পর্যবেক্ষণ করো। তাহলেই বুঝবে- সেই দেশ কত উন্নত আর স্বচ্ছল! আমি নিশ্চিৎ শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেন- আমার এই দাবীকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করবেন।
© অরুণ মাজী
Painting: Raja Ravi Verma
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem