কথিত আছে-
যারা নাকি হাবা-গোবা, বেকার বাউন্ডুলে
আর আধো আধো লম্পট (পুরোপুরি নয়):
তাদেরই নাকি প্রেম-ভাগ্য, আকাশের মতো ফর্সা হয়!
তাদের জন্যই নাকি জুঁই-জুঁই, পলাশ-পলাশ
সুন্দরী-সুন্দরী, গন্ধযুক্ত মেয়েরা- হা পিত্যেশ করে
আর তাদের জন্যই নাকি, রম্ভা ঊর্বশী তিলোত্তমা
সেজে গুঁজে, প্রেমের ডালি সাজিয়ে বসে!
এ লেখা লিখছি যখন
মালবিকা আমাকে, জোরে জোরে চিমটি কেটে বলছে-
'এ সব- ডাহা মিথ্যে! এ সব মিথ্যে কল্পিত গল্প! '
তোমরাই বলো বাপু-
আমার গল্পে যদি একটু জল মেশানোই থাকে
তাতে ক্ষতিই বা কি?
এমনিতে তো, বেকার বাউন্ডুলেদের জীবন
যেন- চৌচির পৃথিবীর হুঁ হুঁ হাহাকার!
একটু আধটু কল্পিত গল্প যদি
আর্তের জীবনে, প্রাণ সঞ্চারিণী শ্রাবণের ধারা হয়ে আসে
তাতে ক্ষতিই বা কি?
মালবিকা জানে না, যে-
সত্য ভালো
কিন্তু কিছু নখদন্তহীন, নিরপরাধ মিথ্যে আছে
যা সত্যের থেকেও, আরো আরো ভালো।
'অন্ধজনে দিও আলো, আর্তজনে দিও সুখ'
সত্যের আস্ফালন কেবল তাদের জন্য
যারা স্বর্গে, সোনার পালঙ্কে বসে
ঈশ্বর, আর তার সভাসদ চিত্রগুপ্তের সাথে
তর্ক করতে চায়-
'মানুষের নাকের চুল, তার মাথার চুলের থেকে লম্বা নয় কেন'?
আমরা ছাপোষা বেকার বাউন্ডুলে মানুষ
আমাদের জ্বলন্ত বুকে, শান্তির একটু বারিধারা হলেই হলো!
তাতে যদি
কিছু নিরপরাধ, কল্পিত মিথ্যে গল্পের-
আশ্রয় নিতে হয়- তাই শ্রেয়!
যা বলছিলাম-
নারীরা কেন
চটি পরা; তালি দেওয়া, লাল লাল জামা পরা যুবকদের জন্য
এতো কাঁদে? এতো গদগদ হয়ে, কলসী দড়ি নিয়ে
প্রেমের ডোবায়, ডুবে ডুবে মরে?
প্রেম যদি হলদিরামের লাড্ডু হতো-
গাড়ি হাঁকানো বাবুরা, পান চিবোতে চিবোতে
তাদের চেলা চামুন্ডা নিয়ে
বস্তা-বস্তা, গাড়ি-গাড়ি, প্রেম কিনে নিতো!
প্রেম যদি পার্ক স্ট্রীটের দুষ্প্রাপ্য জমি হতো-
দাদারা (এবং গোঁফহীন- দাদা মার্কা দিদিরা) তাদের
সহস্র তাঁবেদার আর চাটুকারদের নিয়ে
প্রেমের জমিতে, দখলদারির ঝান্ডা পুঁতে দিতো!
প্রেম যদি ফড়িং হতো-
নগেন মাস্টার, তার চালুনি জাল নিয়ে
হলদে হলদে, ফড়িং শিকারে ব্যস্ত থাকতো!
প্রেম যদি পদ্মার ইলিশ হতো-
বাবুরা সব, হুঁকো টানতে টানতে, বাজারে গিয়ে
দশ কেজি সাইজের, পেল্লাই একটা প্রেম কিনে নিতো!
খ্যাতিমান আর ধনবানদের মুখে, ছাই-পাঁশ দিয়ে
প্রেম এদের কোনটাই নয়!
আমি গরীব আর মুখ্যু বলে
মালবিকাকে, হীরের নেকলেস কিনে দিতে পারি নি।
একদিন ছেঁড়া চটি, আর তাপ্পি দেওয়া জামা পরে
গড়িয়াহাটের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে
মালবিকাকে আমি, একটা বেলফুলের মালা কিনে দিয়েছিলাম।
মালবিকা আড়চোখে, স্মিত হাসি হেসে
আমায় বলেছিলো-
'শুধু কিনে দিলেই হবে?
এটা খোঁপায় পরিয়ে দিতে হবে না? '
রাস্তাভর্তি লোকের, 'কুদৃষ্টি' জয় করে
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে
আমি সেই বেলফুলের মালা, মালবিকার খোঁপায় পরিয়ে দিয়েছিলাম।
মালবিকা খুশী হয়েছিলো, খুব খুশী হয়েছিলো।
তারপর- সারাটা রাস্তা, মালবিকা আমার হাত
শক্ত করে ধরে
ঘেঁষে ঘেঁষে, ঠেসে ঠেসে, হেসে হেসে
আমার পাশে পাশে হেঁটেছিলো!
জীবনে আর কি-ই বা চাওয়া বলো?
মুখপোড়া বড়লোকদের তাই বলি-
'ছুঁয়ে দে বাছা, ছুঁয়ে দে
টাকা দিয়ে নয়
একরাশ হৃদয় দিয়ে ছুঁয়ে দে।'
Poem © অরুণ মাজী
Painting by Henri Guillaume Schelesinger
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem