তোমার জন্য, কেবল তোমার জন্যই আসা।
লুকিয়ে লুকিয়ে আসা, পা টিপে টিপে আসা
গ্রীষ্মের দাবদাহ, বৈশাখের বৈশাখীকে
কাঁচকলা দেখিয়ে, হুঁকো টানতে টানতে আসা।
কিন্তু কেন, কেন এ আসা?
তুমি তো কখনো ডাকো নি
কখনো যে ডাকবে, তাও কখনো বলো নি।
তোমার চোখ কি তবে বলেছিলো?
কোনদিন? কোন একদিন- অজান্তে? অসাবধানে? অবহেলাভরে?
তোমার হাসি কি তবে ইঙ্গিত দিয়েছিলো?
কোন গোধূলি বেলায়- রাঙা আলোর আড়ালে?
হয়তো দিয়েছিলো। অন্তত একবার কখনো দিয়েছিলো।
অস্বীকার তুমি করতেই পারো!
কতো লোকেই তো করে- একশো বার করে, হাজারবার করে।
তুমিও তা করতে পারো। আলবৎ পারো। একশো বার পারো।
কেন, কেন তবে দুহাত তুলে, নাচতে নাচতে ছুটে আসা?
কেন তবে তোমার তাচ্ছিল্যকে, এতো তাচ্ছিল্য করে ছুটে আসা?
যুক্তি আমায় বাধা দিয়েছিলো, অভিজ্ঞতা আমায় বিদ্রুপ করেছিলো;
আহত হৃদয় আমায় চাবুক মেরেছিলো,
স্বপ্নভঙ্গ- ভাঙা স্বপ্নে, হা হা হা করে হেসেছিলো।
তবুও তো তাদেরকে শুনি নি। কখনো শুনি নি।
তবুও চলে আসা। তবুও-
উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলে আসা, শত নিষেধ তুড়ি মেরে আসা।
বুকে আশা নিয়ে আসা; স্বপ্নে রামধনু নিয়ে আসা।
একবার দুবার নয়। বারবার আসা, সহস্রবার আসা।
একাকী আসা। জোড়ায় জোড়ায় আসা।
দেহ বিনা মনের আসা। মন বিনা দেহের আসা।
মাঝে মাঝে, দেহ মন দুজনের- কোলাকুলি করে আসা।
রাতে আসা, দিনে আসা। গ্রীষ্মে আসা, বর্ষায় আসা।
মালবিকা, বলো তো-
অমল আসে কেন? এই পাগল অমল- বারবার আসে কেন?
সে আসতে না চাইলেও, সে আসে কেন? তুমি না চাইলেও সে আসে কেন?
মেঘ নেই; তবুও তার বৃষ্টির প্রত্যাশা কেন?
ভূকম্প নেই; তবুও তার সুনামির প্রত্যাশা কেন?
বসন্ত নেই; তবুও তার কোকিল সুরের প্রত্যাশা কেন?
জীবনে এতো প্রত্যাশা কেন? প্রেমে এতো প্রত্যাশা কেন?
একতরফা প্রেমে এতো প্রত্যাশা কেন?
প্রত্যাশাহীন প্রত্যাশায়, তবুও এতো প্রত্যাশা কেন?
প্রত্যাশার ব্যর্থতা জেনেও, নির্লজ্জ অমলের এতো প্রত্যাশা কেন?
ভাবছো- অমল জানে?
না গো, না। অমল তা জানে না।
জীবনে সবকিছুই কি জানতে হবে?
কিছু জিনিস- না জেনে উদ্ভ্রান্তের মতো করলে হয় না?
মানুষ অনেক কিছুই তো জানে; তবুও তার যন্ত্রণা কেন?
তার- আশাভঙ্গের যন্ত্রণা কেন? তার স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা কেন?
তার প্রেমের স্পর্শের যন্ত্রণা কেন? তার প্রেমের স্পর্শহীনতার যন্ত্রণা কেন?
আমার- তোমার কাছে, আসার যন্ত্রণা কেন?
আর তোমার কাছে, না আসার যন্ত্রণাই বা কেন?
তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা কেন?
আর তোমাকে যদি বুকে ধরি-
তবে তোমাকে বুকে ধরার যন্ত্রণা কেন?
আসলে কি জানো মালবিকা?
যন্ত্রণাতেও কখনো কখনো যন্ত্রণার সুরাহা হয়।
মানুষ কখনো কখনো যন্ত্রণা বুকে নিতে চায়।
মানুষ গোলাপ ফুল তুলতে গিয়ে,
গোলাপের কাঁটা বুকে বিঁধিয়ে দেখতে চায়-
কতটা, ঠিক কতটা ফিনকি দিয়ে বুকে রক্ত ঝরে?
কতটা ব্যথা লাগে? কতটা ব্যথার আনন্দে আনন্দ লাগে?
ব্যথাটা কি কর্কশ কঠিন? অথবা নরম নরম গরম?
তাই তো আসা মালবিকা।
দাও না তোমার তীক্ষ্ণ কাঁটাটা বুকে বিঁধে।
পরখ করে দেখি -
ব্যথাটা কর্কশ কঠিন? অথবা নরম নরম গরম?
© অরুণ মাজী Arun Maji
Painting: Emile Eisman Semenovsky
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
অসাধারণ সুন্দর কবিতা, এ যেন হৃদয়ের কথা।