'সবাক' পৃথিবীর সাথে কথা বলতে বলতে
বড় ক্লান্ত, খিটখিটে আর নিষ্ঠুর হয়ে গেছি আমি।
আজ আমার গোঁফ আর দাঁড়ির রঙও যখন
বদলে গেলো;
তখন মনে হলো-
'যাক, এবার তাহলে সাথী বদলে নিই।'
সবাক পৃথিবীর সাহচর্য ছেড়ে
আজ আমি, নির্বাক পৃথিবীর সাথে কথা বলি।
নির্বাক চোখে, আকাশকে আমি জিজ্ঞেস করি-
'আকাশ বুড়ো, আকাশ বুড়ো- তোমার বয়স কতো হলো? '
ফোকলা দাঁতে হাসি হেসে, আকাশ বলে-
'জানো, তোমার চোদ্দ লক্ষ পূর্ব্ব পুরুষকে,
বছরে অন্তত একবার করে, রামধনু দেখিয়েছি আমি।'
নির্বাক ওষ্ঠে, হাসি হেসে, আমি নদীকে জিজ্ঞেস করি-
'ওহে রূপসী স্রোতস্বিনী, একটু ছুঁতে দেবে আমায়? '
নদী পায়ের কাছে এসে, চোখে মিটিমিটি হেসে
আমায় সুড়সুড়ি দিয়ে বলে-
'তুমি কালা নাকি হে বাপু? কখন থেকে বলছি-
ঝাঁপিয়ে পড়ো, ঝাঁপিয়ে পড়ো; শুনছোই না তুমি! '
যাঃ তোমাদেরকে বলা-ই হয় নি!
জানো, মালবিকার ডানদিকের গালে
ঠোঁটের নীচে, ছোট্ট একটা আঁচিল আছে?
আজ বাইশ বছর ঊনিশ দিন হলো-
মালবিকার সাথে ঘর করলাম;
অথচ তার আঁচিল, আমার নজরে আসে নি!
একচোখা বিজ্ঞানীরা বলে-
শব্দ দূষণে কেবল কান-ই, কালা হয়ে যায়।
হতচ্ছাড়া, মুখপোড়া বিজ্ঞানীরা জানে না-
শব্দ দূষণে চোখে ছানিও পড়ে।
তা না হলে, মালবিকার গালের আঁচিল
কেন দেখিনি আগে?
শব্দ দূষণে, চোখেই কি কেবল ছানি পড়ে?
বুকে ক্ষত হয় না?
হৃদয়টা ছিঁড়ে ছিঁড়ে শতচ্ছিন্ন হয়ে যায় না?
মালবিকা আর আমি, তখনই সুখে থাকি
যখন আমরা- চোখে চোখে কথা বলি
ঠোঁটে ঠোঁটে একে অপরকে শুনি
বুকে বুকে ঘনিষ্ঠ প্রেমালাপ করি।
যেই না আমাদের মুখ খোলা
অমনি আমাদের ঝগড়া আর যন্ত্রণার শুরু!
শব্দ দূষণে রক্তপাতও হয় গো
ফিনকি দিয়ে রক্তপাত হয়।
-
(সারমর্ম- যত বেশী তুমি কথা বলবে, তত কম তুমি অনুভব করবে। তুমি যদি এক কাপ কম কথা বলতে শেখো, তুমি জীবনে এক সাগর বেশী সুখ পাবে।)
©অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem