ধর্মনিরপেক্ষতা এক মস্ত বড় ভাঁওতা কেন? Poem by Arun Maji

ধর্মনিরপেক্ষতা এক মস্ত বড় ভাঁওতা কেন?

Rating: 5.0

ধর্মনিরপেক্ষতা একটা মস্ত বড় ভাঁওতা! কেন? মানুষ অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারে, কিন্তু নিরপেক্ষ হতে পারে না। আমি অন্য একজনের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি, কিন্তু আমার নিজের মা-কে আমি বেশী ভালোবাসবোই। আমি অন্য এক দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি, কিন্তু আমি আমার নিজের দেশকে বেশী ভালোবাসবোই।

যে বলে সে 'নিরপেক্ষ'- সে মিথ্যে বলছে; অথবা সে নিজের মা-কে ঘৃণা করে। আর যে নিজের মা-কে ঘৃণা করে, সে অন্যের মা-কে ঘৃণা করবেই, করবে। যে নিজের মা-কে ঘৃণা করে, সে যদি অন্যের মা-কে ভালোবাসে, সেটা সময়ের প্রয়োজনে ভালোবাসার নাটক। তা কোনদিন ভালোবাসা নয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই, আবার সে তখন অন্য কোন ব্যাভিচারের খোঁজ শুরু করবে। অন্য মায়ের প্রতি তার ভালোবাসাও হবে- 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি'।

মানুষ সবসময় যন্ত্রণার উপশম খোঁজে। যে দেশের পার্থিব সুখ-সম্পদ, যত কম; সে দেশ তত বেশী অপার্থিব বস্তুর মধ্যে তার যন্ত্রণার উপশম খোঁজে। আর সেই কারনেই- গরীব দেশের লোক বেশী ঈশ্বর ঘেঁষা, গরীব দেশের লোক বেশী কবিতা লেখে, গরীব দেশের লোক বেশী বেশী কাল্পনিক তত্ত্বের জন্ম দেয়।

এইজন্যই- দারিদ্র্য আর অনাহারের পটভূমিতে মার্ক্সিজম, সোশ্যালিজম, কমিউনিজম ইত্যাদির জন্ম। এইসব তত্ত্ব গুলো ঠিক বা ভুল তা আমি আজ বিচার করবো না। আজ আমি শুধু একটা কথা-ই বলবো- তত্ত্বের খাতিরে, এইসব তত্ত্ব (হয়তো) মহান হলেও, বাস্তবে প্রয়োগের নিরিখে- তার গ্রহণযোগ্যতা সীমিত।

মানুষ যত বেশী পার্থিব সুখে স্বচ্ছ্বল হবে, কমিউনিজমের প্রতি মানুষের ঝোঁক তত বেশী কমবে। আর সেই জন্যই- কমিউনিজম পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। উদাহরণ- সোভিয়েত রাশিয়া, রোমানিয়া ইত্যাদি।

কমিউনিজমকে যদি বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে ইচ্ছে করে দারিদ্র্যকে জিইয়ে রাখতে হয়। মানুষ দরিদ্র হলেই, তবে কমিউনিজমকে শ্রদ্ধা করবে। আর কমিউনিজমকে বাঁচাতে, যদি- দারিদ্র্যকে তুমি জিইয়ে রাখো, তাহলে মানুষের কি ভালো করলে তুমি? তুমি না তোমার কমিউনিজমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, যে তুমি মানুষের ভালো করবে?

কাজেই কমিউনিজমের মৃত্যু, কমিউনিজমের ব্যর্থতা নয়। বরং তা কমিউনিজমের এক চরম সার্থকতা। কমিউনিজমের ব্যর্থতা তখনই- যখন নেতারা কমিউনিজমকে বাঁচাতে গিয়ে, মানুষের দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর যন্ত্রণাকে জিইয়ে রাখে। জ্যোতি বসু পৃথিবীর সব চেয়ে ব্যর্থ কমিউনিস্ট। তবে তার সেই 'শ্রেষ্ঠ ব্যর্থ কমিউনিস্ট'-এর সিংহাসন আজ টলমল। কারন মমতা ব্যানার্জী পণ করেছেন- উনি সেই 'শ্রেষ্ঠ ব্যর্থ কমিউনিস্ট' হবেন। সেজন্য উনি জনগণকে মাছ ধরা শেখান না, উনি জনগণের পাতে, বছরে একদিন করে মাছ দিয়ে আসেন। জনগণ বাকী ৩৬৪ দিন অনাহারে না থাকলে, মমতা ব্যানার্জীর (জ্যোতি বাবু, বুদ্ধ বাবুর থেকে হাইজ্যাক করা) কমিউনিজম টিকবে না। মমতা ব্যানার্জী যতদিন বেশী ক্ষমতায় থাকবেন, কমিউনিস্ট হিসেবে, উনি তত বেশী ব্যর্থ হবেন। উনি জনগনকে সাইকেল, টাকা ইত্যাদি দেওয়ার মাধ্যমে- সেই ব্যর্থতার মধ্যে সাফল্যের ধ্বজা উড়ানোর চেষ্টা করছেন।

তবুও কমিউনিস্টদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। কেন? কারন- ভারতে 'কমিউনিস্ট' আর 'বি জে পি'- কেবলমাত্র এই দুটো দলের নিজস্ব কোন আদর্শ বা চরিত্র আছে। প্রথমটার কমিউনিজম, আর দ্বিতীয়টার জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ভারতের বাকী দলগুলো- বেশ্যা। এদের কোন নিজস্ব চরিত্র নেই। এরা আজ একজনের সঙ্গে রাত কাটায়, তো কাল অন্যজনের সঙ্গে। সুভাষ বসু কংগ্রেসকে জাতীয়তাবাদী করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গান্ধী আর নেহেরু কংগ্রেসকে নপুংসক করে দিলেন।

আমি সেজন্যই- আঁতেল লেখক বা দার্শনিক- যারা ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়, তাদেরকে ঘৃণা করি না, কিন্তু তাদের বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিহীন চেতনার জন্য, করুণায়- চোখের জল ফেলি। কি সাংঘাতিক মূর্খ আর অন্ধ এরা!

কেউ কেউ আবার আরও বেশী পন্ডিত। আমার কিছু লেখার উপর তাদের মন্তব্য- 'মানুষ ধর্ম নিয়ে মাতামাতি না করলেই হলো! ধর্ম যত অধর্ম আর নষ্টের মূল! ' এদের ঘটে, মাথা আছে! কারন তত্ত্বগত ভাবে- ধারণাটা মহান! কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ একদমই সম্ভব নয়। কেন?

ধর্ম মানুষের জিনের মধ্যে ঢুকে গেছে। একে তুমি কোনদিন মানুষের চেতনার মধ্য থেকে, আর উৎপাটন করতে পারবে না। মানুষের অস্তিত্ব যেদিন মুছে যাবে, কেবল সেদিনই- মানুষের ধর্ম বোধের মৃত্যু হবে। তার আগে নয়। 'ধার্মিক' আর 'নাস্তিক'- এর, আমার নিজস্ব একটা সংজ্ঞা আছে। সেটা কি? আমি বলি- সব নাস্তিকই কখনো কখনো ধার্মিক; তারা বিপদে পড়লে, কখনো কখনো হাঁটু গেড়ে ঈশ্বর প্রার্থনা করে। আবার সব ধার্মিকই কখনো কখনো নাস্তিক। তারা তাদের সুখের দিনে, ঈশ্বরকে ভুলে যায়। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? আমরা সব মানুষই একটু হিঁজড়া টাইপের!

ধর্ম ভালো হোক আর খারাপ হোক, আমরা যতদিন বাঁচবো, ততদিন- আমাদের সবাইকেই এই ধর্ম রাণীর উঁচু তুলতুলে বুকে, ঘুমুতে হবে। কাজেই ধর্মকে তুমি কোনদিন অস্বীকার করতে পারবে না। এজন্যই বলি- ঐসব পন্ডিতরাও, আমার মতো গন্ডমূর্খ।

আমি বিশ্বাস করি- ভারতীয় সংবিধান থেকে SECULAR শব্দটা মুছে দিয়ে লেখা দরকার- 'people of India should 'respect' and 'protect' each other's belief and religion. কারন SECULAR শব্দটা একটা মস্ত বড় প্রতারণা।

ধর্মনিরপেক্ষতা এক মস্ত বড় ভাঁওতা কেন?
Saturday, March 18, 2017
Topic(s) of this poem: bangabandhu,bangla,bangladesh,constitution,god,human,humanity,religion,security
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success