কেউ-ই ছোট থাকতে চায় না
সকলেই- অনেক অনেক বড় হতে চায়।
কেউ হাত বাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে চায়
কেউ মেঘের ভেলায় ভেসে যেতে চায়।
কেউ সূর্য হয়ে ধরিত্রী আলো করতে চায়
কেউ আগ্নেয় গিরি হয়ে
নতুন নতুন, পাহাড়-পব্বত গড়তে চায়।
অথচ বড় হলেই সব শেষ।
আকাশ সমান স্বপ্ন, শুখনো একটু রুটি হয়ে যায়।
সিংহ সমান সাহস, ঘর পোড়া গরুর আর্তনাদ হয়ে যায়।
সাগর সমান হৃদয়, নৃশংস এক কসাইখানা হয়ে যায়।
তবুও মানুষ বাঁচে। হাসতে হাসতেই বাঁচে।
বুকে একরাশ কালো কালো ব্যথা নিয়ে বাঁচে।
চোখে একরাশ ভাঙা ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে।
হটাৎ-ই সে দেখে, তাদের বাগানে
সুন্দর এক, ছোট্ট কুঁড়ি ফুটেছে।
হাঁটি হাঁটি পা পা, খোকা হাঁটে দেখে যা
হাঁটি হাঁটি পা পা, খোকা হাঁটে দেখে যা।
ছোট্ট একটা কুঁড়ির হাসিতে,
মানব জীবনের সব যন্ত্রণা- ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
'দেখো দেখো, খোকার কি সুন্দর আধো আধো কথা!
খোকাকে দেখতে ঠিক তোমার মতো।'
'না, খোকাকে দেখতে ঠিক তোমার মতো।'
জীবনে কিছু বিতর্ক আছে
মানুষ চায় না- তা কখনো থেমে যাক।
খোকা, খোকা, আর খোকা!
কিই বা আছে আর মনুষ্য জীবনে?
ভাঙবে বলে কি, মানুষ কখনো গড়বে না?
কাঁদবে বলে কি, মানুষ কখনো হাসবে না?
মরবে বলে কি, মানুষ কখনো বাঁচবে না?
স্বপ্নে ভাসতে ভাসতে, একদিন তারা দেখে-
তাদের ছোট্ট পাখির, বড় বড় শক্ত শক্ত ডানা।
ছোট্ট পাখি, সেদিনই উড়ে যায়!
শূন্য বুকে, শূন্য খাঁচায়-
এখন- দুটো বুড়ো পাখি।
একজনের হাঁপানি
আর অন্যজনের গেঁটে বাত।
বিছানায় তাদের কথোপকথন-
কি গো, খোকার খবর পেলে?
কেমন আছে গো খোকা?
অন্যজনের উত্তর-
কেবল- খাঁ খাঁ নীরবতা
মোচড় দেওয়া গভীর দীর্ঘশ্বাস
বুকে চাপা চাপা পাথর
দু চোখে দু ফোঁটা জল।
প্রথম জন, দ্বিতীয় জনের চোখ মুছিয়ে দেয়
দ্বিতীয় জন প্রথম জনের।
এরই মধ্যে, প্রথম জনের হাঁপানিটা বেড়ে উঠে।
হাঁপাতে হাঁপাতে, শরীরটা তার নীল হয়ে যায়।
পৃথিবীতে অনাবশ্যক-
রঙচটা, গন্ধহীন ফুলটা-
চিরদিনের জন্য ঝরে যায়।
গেঁটে বাতওয়ালা মানুষটা, কাঁদতেও পারে না।
বুকটা কেবল পাথর হয়ে আসে
চোখটা কেবল রুক্ষ শুখনো হয়ে আসে
হাত পা গলা- সব অবশ হয়ে আসে।
সে তার, দুর্বল হাতটা দিয়ে
প্রাণপণে- নিজের গলা চেপে ধরে।
মরতে পারে না,
মরণ পিপাসু হতভাগ্য এই মানুষটা মরতেও পারে না।
কে বলে নরক নেই?
দৃষ্টিহীন, শক্তিহীন জীবনে
সন্তান সন্ততি দ্বারা পরিত্যক্ত বার্ধক্য
সে কি নরক নয়?
কে বলে নরক নেই?
বৃদ্ধের জীবনে অধিকার নেই
যৌবনে অধিকার নেই, মরণে অধিকার নেই।
তার কোথাও কিছুতে অধিকার নেই।
বুকে ব্যথা, চোখে জল নিয়ে
তার আর্তনাদ-
এতো যন্ত্রণা কেন?
হে ঈশ্বর, মানুষের এতো যন্ত্রণা কেন?
এদিকে, হাজার কিলোমিটার দূরে-
এক যুবক- তার যুবতী, গর্ভবতী স্ত্রীর-
পেটে, কান রেখে ভবিষ্যতের পদধ্বনি শোনে।
সে কি জানে?
সেও একদিন বুড়ো হবে?
সেও একদিন
এমনি করে রগড়ে রগড়ে মরবে?
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem