নগেন মাস্টার টিকি নেড়ে নেড়ে আমাকে বলে- "উন্মাদ, তুই মেয়েদের থেকে দূরে থাকিস। একবার হড়কে গেলে, আর রক্ষে নেই! "
'প্রেম' আর 'সাবধান' কথা দুটো, অনেকটা 'সোনার পাথরবাটি'-র মতো শোনায়! সোনার যেমন পাথরবাটি হয় না, তেমনি প্রেমে কখনো সাবধান হওয়া যায় না। "প্রেমে মজিলে মন, কিবা মুচি কিবা ডোম! " কেন?
প্রেম কি? কেউ কি তা জানে ? কেউ না। ভবিষ্যতেও কি মানুষ তা জানবে ? না। কক্ষনো না। কেন?
অভিকর্ষ বল কি? তুমি বলবে- অভিকর্ষ বল এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যার দ্বারা এক বস্তু, অন্য বস্তুকে আকর্ষণ করে। তুমি অভিকর্ষ বলকে দেখতে পাও না, কিন্তু তাকে কেবল অনুভব করতে পারো। তুমি প্রেমকে চোখে দেখতে পাও না, কিন্তু তাকে কেবল অনুভব করতে পারো। যেহেতু সব মানুষের অনুভূতি সমান নয়, তাই প্রেমকে বোঝার ক্ষমতাও সব মানুষের সমান নয়। তাই প্রেম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কেবল ভাসা ভাসা।
অনুভূতি নির্ভর করে- তোমার ইন্দ্রিয়, তোমার মন, তোমার হৃদয়, তোমার জীবনের অভিজ্ঞতা- ইত্যাদির সম্মিলিত ক্ষমতার উপর। প্রেম করতে গিয়ে আগে যে ল্যাং খেয়েছে, সে সুন্দর একজন মানুষকে দেখলেও ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকবে। প্রেম সম্পর্কে তার ভীষণই তিক্ত মনোভাব। কেন? তার পূর্ব তিক্ত অভিজ্ঞতা, প্রেম সম্পর্কে তার অনুভূতি বদলে দিয়েছে।
অভিকর্ষ শক্তি যেমন মহাবিশ্বের সব কিছুকে একত্রে ধরে রাখে, প্রেমশক্তি তেমনি জীব জগৎকে একত্রে ধরে রাখে। প্রেম, জীব আর জড় জগৎকেও একত্রে ধরে রেখেছে। নদীর ভালোবাসা ছাড়া, মানুষ বাঁচবে কি? নাহঃ তাই আমি বলি, জড় জগতের সঙ্গেও জীবের প্রেমের সম্পর্ক।
অভিকর্ষ বল যেমন অসীম শক্তিধর, প্রেমশক্তিও ঠিক তেমনি অসীম শক্তিধর। এই অসীম শক্তিকে, সসীম ক্ষমতার মানুষ কিভাবে পুরোপুরি বুঝবে? এই কারনেই অনেক ধর্ম এবং দর্শন বিশ্বাস করে- প্রেমই হলো ঈশ্বরের স্বরূপ। প্রেমই ঈশ্বর, আবার ঈশ্বরই প্রেম। হিন্দু দর্শনও এই তত্ত্বে বিশ্বাসী।
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? প্রেম হলো অসীম এক শক্তি। সাত সমুদ্রের সম্মিলিত সুনামির চেয়েও বেশী ক্ষমতাশালী। হয়তো বা মহাবিশ্বের BIG BANG-এর চেয়েও বেশী শক্তিশালী। তাই যদি সত্য হয়, তাহলে তোমার আমার মতো ছাপোষা মানুষ, প্রেম শক্তিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?
প্রেমে কেউ পড়ে না সখী
প্রেম হয়ে যায়।
রাধার পিছল চোখে কানু
হড়কে হড়কে যায়।
হড়কে যাওয়া এমনিতে কিন্তু ভালো নয়। হড়কে গেলে ঠ্যাং ভাঙে। পাঁজর ভাঙে। হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটে। তবে তুমি যদি কখনো, প্রেমের পিচ্ছিল পথে হড়কে যাও; তাহলে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা কখনো করো না। কেন? কোন লাভ নেই। তাতে যন্ত্রণা বরং বাড়বে। হড়কে গেলে বরং, আরও বেশী গড়াগড়ি দাও। কে জানে! গড়িয়ে গড়িয়ে কোনদিন তুমি হয়তো প্রেমের অমৃত সাগরে পৌঁছে যাবে।
তোমার যদি মরণ হয়, তাতেই বা ক্ষতি কি? প্রেমের আলিঙ্গনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণও কলঙ্কের কালি মাখতে চায়। শ্রীমতি রাধারানীও অনাহারে আত্ম বিসর্জন দিতে চায়! তাই তুমি আমি যদি প্রেমের আলিঙ্গনে মরি, জীবনে বর্তে যাবো।
প্রেম সাগরে নাইতে এসে
একটা ডুব কেন?
কলঙ্ক যদি মাখবে সখী
ঘোমটা ঢেকে কেন?
© অরুণ মাজী
Painting; John Godward
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem