কে বেশী ন্যাংটো- মানুষ অথবা বনমানুষ? (প্রবন্ধ) Poem by Arun Maji

কে বেশী ন্যাংটো- মানুষ অথবা বনমানুষ? (প্রবন্ধ)

Rating: 5.0

আধুনিক হয়ে গেছি বলেই কি আমরা সভ্য হয়ে গেছি? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। পশুর চেয়ে কি মানুষ বেশী সভ্য? আমার কিন্তু, তা-ও মনে হয় না। কেন?

পশু আরেক জীবকে হত্যা করে, কেবল মাত্র ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্য। কিন্তু মানুষ- কেবল ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্যই হত্যা করে না; মানুষ- নিছক লোভ আর আনন্দের জন্য- আরেক জীব, এমনকি মানুষকেও হত্যা করে। বন মানুষ বা আদিম মানুষও, কেবল ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্যই- হত্যা বা হিংসা করতো। ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ গড়ার অভিপ্রায় তাদের ছিলো না। কিন্তু আজকের মানুষ- দুর্বল, দরিদ্র্যকে বঞ্চিত করে- ভবিষ্যতের জন্য শস্য জমা করে, প্রাসাদ গড়ে।

আমি তোমাদেরকে প্রায়ই বলি- ন্যাংটো মানুষ যে, কাপড় পরিহিত মানুষের চেয়ে বেশী অসভ্য, আমি তাও বিশ্বাস করি না। মানুষ তার আত্ম গরিমা জাহির করার জন্য বলে, যে সে- ন্যাংটো লোকের চেয়ে বেশী সভ্য। বাস্তব পর্যালোচনা কিন্তু, মানুষের এই দাবীকে সমর্থন করে না। আমি পাপুয়া নিউ গিনি-র উপজাতি নিয়ে, কয়েকবছর আগে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। অনেক ন্যংটো উপজাতির মধ্যে, বহুগামীতা আছে, কিন্তু ধর্ষণ নেই।

চরিত্রের আবরণ-ই হলো আসল কথা। মানুষ- বাইরের আবরণ দিয়ে নিজেকে যতই ঢাকুক, তার চরিত্র যদি নিরাভরণ থাকে, তাহলে- তার কোন মূল্য নেই। বরং তাতে মানুষের ভণ্ডামি বেড়ে যায়। কাজেই আমার ধারণা- মানুষ যত বেশী কাপড় পরতে শিখছে, চরিত্রগত ভাবে- সে তত বেশী নগ্ন হয়ে যাচ্ছে। কারন এতে, মানুষের ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচ নাচার প্রবণতা বেশী বাড়ছে।

উদাহরণ চাও? সভ্য মানুষ অভিযোগ করে- মেয়েরা যেহেতু ন্যাংটো ন্যাংটো পোশাক পরে, আর তাই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে! সত্যিই কি তাই? তোমরা আমাকে বলো- ন্যাংটো মেয়েরা ধর্ষিত হয় অথবা কাপড় ঢাকা মেয়েরা ধর্ষিত হয়? ন্যাংটো উপজাতির মধ্যে বহুগামীতা ঘটে, কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না। কেন?

আসলে ধর্ষণও একটা 'সবল বনাম দুর্বলের খেলা'! যারা সবল, তারা তাদের বীরত্ব (পৌরুষত্ব) জাহির করার জন্য ধর্ষণ করে। উদাহরণ- তোমরা কাগজে পড়েছো- 'কোন এক ফিল্ম প্রোডিউসার নবাগত কোন অভিনেত্রীকে ধর্ষণ করেছে'। এমন কেন হয়? এখানে ফিল্ম প্রোডিউসার সবল, আর নবাগত অভিনেত্রী দুর্বল। কিন্তু সেই অভিনেত্রীই যখন, নাম ডাক করে সবল হয়ে উঠে; সেই ফিল্ম প্রোডিউসার আর তাকে ধর্ষণ করতে পারে না।

তাবলে, সব- সবল মানুষই কি ধর্ষণ করে? না। কাজেই চরিত্রের নগ্নতা, আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যারা সবল এবং চরিত্রগত ভাবে নগ্ন, তারাই কেবল ধর্ষণ করে। কাজেই ধর্ষণ রুখার দুটো পথ হলো-
এক- নারী জাতিকে সবল করা। দৈহিক এবং আর্থিক ভাবে।
দুই- মানুষের চরিত্রের নগ্নতাকে ঢাকা। তার জন্য মূল্যবোধ তৈরী করা, আর কঠিন নিয়ম কানুন তৈরী করা।

যখন- নারী সবল হয়, আর পুরুষ দুর্বল হয়- তখন নারীও পুরুষকে ধর্ষণ করে। এ ধরণের ঘটনা কম ঘটলেও, তা কিন্তু ঘটে। কয়েকবছর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকাতে, কয়েকটি মেয়ে যৌথ উদ্যোগে, একটি পুরুষকে, তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে। এখানেও সেই 'সবল বনাম দুর্বলের খেলা'। মেয়েগুলো অনেক, আর পুরুষটা একা!

আজকের শিক্ষা আর বিবর্তনের উদ্দেশ্য, কেবল 'শয়তানি শেখা' হয়ে গেছে। তাই আমরা দেখতে পাই- যে মূর্খ আর গরীব, সে তার ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্য, এক পিস রুটি চুরি করে জেল খাটে। অথচ- শিক্ষিত 'সভ্য' ভদ্দরলোক কোটি কোটি টাকা চুরি করে, দিব্যি মহানায়ক সেজে ঘুরে বেড়ায়।

এখানে আমার দ্বিতীয় ছ্যাঁকা! কি সেটা? পৃথিবীটা আজ নোংরা আর কদর্য- মূর্খ আর অশিক্ষিত লোকদের জন্য নয়, বা ছোট খাটো চোর ছ্যাঁচর জচ্চোরদের জন্য নয়। পৃথিবীটা আজ নোংরা আর কদর্য- ঘোমটা ঢাকা, কেতা দুরস্ত, 'সভ্য' ভদ্দরলোকদের জন্য। কারন এরাই- কোটি কোটি মানুষকে অনাহারের দিকে ঠেলে দেয়, নিজেদের স্বার্থের জন্য- এক দেশকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়; এক ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।

তাই তোমাদেরকে আমার অনুরোধ- মানুষকে 'পশু' বলে গালি দিও না। মানুষকে 'সভ্য ভদ্দরলোক' বলে গালি দাও।

কে বেশী ন্যাংটো- মানুষ অথবা বনমানুষ? (প্রবন্ধ)
Saturday, May 13, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,culture,evolution,human,poem,poverty,war
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success