আমি চাই- মানুষ তার মায়ের পেট থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করুক। Poem by Arun Maji

আমি চাই- মানুষ তার মায়ের পেট থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করুক।

Rating: 5.0

বলো তো, মানুষ কি কখনো টের পেয়েছে- রাজনীতি কখন তার জীবনে, অপরিহার্য্য এক অঙ্গ হয়ে গেছে ?

ক্ষুধা, তৃষ্ণার মতো জৈবিক ব্যাপারের সঙ্গে, রাজনীতির কোন তফাৎ নেই। কারন- ক্ষুধা তৃষ্ণা যেমন করে মানুষের প্রত্যেক মুহূর্তকে নিয়ন্ত্রণ করে, রাজনীতিও ঠিক তেমনি ভাবে মানুষের প্রত্যেক মুহূর্তকে নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই রাজনীতিকে তুমি পছন্দ করো, বা না করো; রাজনীতির ধারালো দাঁত থেকে তোমার মুক্তি নেই।

রাজনীতির ধারালো দাঁতে বিষ থাকবে, অথবা চন্দনের সুগন্ধ থাকবে; তা কিন্তু নির্ভর করবে- সেই দেশের জনগণের উপর। ক্ষুধা তৃষ্ণার নিবৃত্তির জন্য, তুমি যেমন জীবনভর পরিশ্রম করো; রাজনীতির থাবাকে আয়ত্তে আনার জন্যও, তোমাকে একই রকম পরিশ্রম করতে হবে।

এ কথার অর্থ হলো- দেশের প্রত্যেক মানুষকেই, রাজনীতিতে শিক্ষিত হতে হবে। আধুনিক বিশ্বে, যে দেশের মানুষ যত বেশী রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত, সেই দেশ আর তার নাগরিক তত বেশী সুখী আর উন্নত।

কয়েক হাজার বছর আগে, প্লেটো বলে গেছিলেন- ভালো মানুষ যদি রাজনীতি থেকে দূরে থাকে, তাহলে সেই ভালো মানুষরা- তাদের অপেক্ষা নিকৃষ্ট, হীন লোকের দ্বারা শাসিত হবে। উদাহরণ চাও? ভারত, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান। এই সব দেশের প্রায় প্রত্যেক স্তরে, অযোগ্য আর নিকৃষ্ট নেতা। যে শিক্ষা শব্দের 'শ' বোঝে না, সেই নেতা হয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রী। যে স্বাস্থ্য শব্দের 'স' বোঝে না, সে হয়ে যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী।

আমাকে প্রায় প্রত্যেক মুহূর্তে শুনতে হয়- 'অমুক মন্ত্রী অযোগ্য ইঁদুরবাচ্চা', 'তমুক মন্ত্রী চোর ছ্যাঁচ্চোর বাটপার'। যারা এসব কথা বলে অনবরত নালিশ করতে চায়, তাদেরকে আমার প্রশ্ন-
১. অমুক মন্ত্রী যদি ইঁদুরবাচ্চা হয়, তবে তার নেতৃত্ব মেনে নাও কেন? বিদ্রোহ করতে পারো না? তুমি নিজে যদি সিংহের বাচ্চা, তাহলে ইঁদুর বাচ্চাকে তোমার এতো ভয় কেন? যেহেতু তুমি তার প্রতিবাদ করো না, তার অর্থ হলো- তুমি নিজে, ইঁদুরবাচ্চা অপেক্ষাও নিকৃষ্ট; তুমি একটা নেংটি ইঁদুর বাচ্চা!

২. তমুক মন্ত্রী যদি চোর ছ্যাঁচ্চোর বাটপার হয়, তবে তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করো না কেন? তুমি যেহেতু রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করো না, তার অর্থ হলো- তুমিও একই রকম চোর ছ্যাঁচ্চোর বাটপার। রবি ঠাকুরের কথা মনে পড়ে? 'অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে; তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে।' যে চুরি দেখেও নীরব, সে চোরের মতোই একই অপরাধী। কাজেই নিরীহ ভদ্দরলোক সাজলে পাপ তোমার ধুয়ে যাবে না।

তোমরা জানো, আমি বারবার বলি- এ পৃথিবী এতো বেশি হিংস্র আর নোংরা, তা মূর্খ ছিঁচকে তস্করদের জন্য নয়। এ পৃথিবী এতো বেশি হিংস্র আর নোংরা- তা ছদ্ম ভদ্রবেশী মিচকে শয়তানদের জন্য। এই মুখোশধারী ভদ্দরলোকেরাই- দরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষকে হিংসায় প্ররোচিত করে, রাজনৈতিক বা ধর্ম ভিত্তিক যুদ্ধ বাধায়। এরা দেশের তহবিল তছরুপ করে। এরা দেশকে নিজের স্বার্থের জন্য, বিদেশী শয়তানদের হাতে বেচে দেয়। এই ধরণের ভদ্দরলোকেরাই এই পৃথিবীর মস্তবড় জঞ্জাল।

তোমাদের এই বোধ আর চেতনা যেদিন জাগ্রত হবে, সেদিন এই মুখোশধারী শয়তানরা- তোমাদেরকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। তাই তোমরা- তোমাদের শিক্ষার জন্য আন্দোলন করো, চেতনার জন্য আন্দোলন করো। এজন্যই তোমাদেরকে আরও বেশি বেশি রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত হতে হবে। তোমরা জানো, রাজ্যে কোন ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী ক্ষমতাতে এসেই, তারা চাই- শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে। কেন? কারন এরা চাই, মানুষ দুর্বল আর অচেতন থাকুক। সাধারণ মানুষ যতদিন দুর্বল, দরিদ্র্য আর চেতনাহীন থাকবে, ততদিন এরা- সাধারণ মানুষকে, গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে, বংশ পরম্পরায় রাজত্ব করতে পারবে।

চোখ খুলে দেখো- গান্ধী পরিবার, মুলায়ম যাদব পরিবার, লালু যাদব পরিবার, মমতা ব্যানার্জী পরিবার, বিজু পট্টনায়ক পরিবার, করুণানিধি পরিবার ইত্যাদি- সবাই সাধারণ মানুষকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে। এরা সবাই যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাহলে এদের বংশের লোকেরাই তবে ক্ষমতায় কেন? শ্রদ্ধেয় প্রণব মুখার্জী কি রাহুল গান্ধীর চেয়ে কম যোগ্য? কেন উনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর কংগ্রেসের সেবা করেও, কংগ্রেস দলের নেতা হতে পারেন নি? মুখে এদের গণতন্ত্র, কিন্তু কাজে চলছে রাজতন্ত্র আর পরিবারতন্ত্র। মানুষ বুদ্ধু বলেই, মানুষ এই ভণ্ডামির প্রতিবাদ করে না।

হে আমার তরুণ ভাই-বোনেরা, তোমরা যদি ভালো এক দেশ গড়তে চাও- তাহলে রাজনীতিতে নিজেকে শিক্ষিত করো। নিজেকে- দেশের অর্থনীতি, আইন, শাসন ব্যবস্থা, গণতন্ত্র, সংবিধান ইত্যাদিতে শিক্ষিত করো। সেই শিক্ষা তোমাদের চেতনা আনবে, সেই চেতনা বিপ্লব আনবে, আর সেই বিপ্লব- তোমার, আর তোমার দেশের মানুষের মুক্তি আনবে। রাজনীতি অস্পৃশ্য নয়, রাজনীতি তোমার জীবনের এক অপরিহার্য্য অঙ্গ।

মনে রেখো- দেশ আর মানুষের জন্য রাজনীতি। রাজনীতির জন্য কিন্তু, দেশ আর মানুষ নয়। তার অর্থ কি? তার অর্থ- রাজনীতির শেষ কথা হলো- দেশ, আর দেশের মানুষের উন্নতির জন্য, বিভিন্ন নীতির আপোষহীন প্রতিযোগিতা। যখন কোন রাজনৈতিক দল, তাদের নেতার চুরি-ডাকাতি ঢাকতে, সাধারণ মানুষকে পথে নেমে আন্দোলনের আহ্বান করে, তখনই বোঝা যায়- সেই দল বা নেতৃত্ব কোনদিন মানুষের জন্য নয়। সেই দল- রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে এক ডাকাতদল। সেই দলকে দেখে, যারা- মানুষের উন্নতির স্বপ্ন দেখবে, তারা মূর্খ আর মাতাল ছাড়া কিছুই নয়। সেই দল আর তার নেতৃত্ব এখনই, অবশ্য পরিত্যাজ্য।

সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক শিক্ষা-ই পারে, আধুনিক বিশ্বকে আরও সুন্দর করে গড়তে। আমি চাই- মানুষ তার মায়ের পেট থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করুক। নইলে সেই মানুষ, পদে পদে অত্যাচারিত আর উৎপীড়িত হবে। তাই আজকের কুমারী, গৃহবধূ, ঠাকুরমা- তাদেরকেই বেশি রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত হতে হবে।

© অরুণ মাজী

আমি চাই- মানুষ তার মায়ের পেট থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করুক।
Tuesday, June 6, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,political
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success