শয়তানের উদ্দেশ্যে স্তোত্র ।। জোসে কার্দুচি
●
.
তোমার উদ্দেশ্যে, সৃষ্ট জগতের
হে বলিষ্ঠ নীতি,
বস্তু ও আত্মা
যুক্তি ও অনুভূতি
যখন পেয়ালাগুলোয়
দ্যুতি ছড়াচ্ছে দ্রাক্ষাসুধা
যেমন ছড়ায়
চোখের মণিতে আত্মা
যখন সূর্য ও পৃথিবী
পরস্পর বিনিময় করছে
মিষ্টি হাসি এবং
প্রণয়কোমল আলাপন
আর তাদের গোপন আলিঙ্গন থেকে
শিহরণ নেমে আসছে
অগণিত পাহাড় বেয়ে এবং
নবজীবনের পদভারে কেঁপে উঠছে সমতল
তোমার উদ্দেশ্যে ডানা মেলছে
আমার এই সাহসী পংক্তিমালা
তোমাকে বন্দনা করি, হে শয়তান
ভোগরাজ্যের রাজাধিরাজ।
গোলাপ জলের ঝাপটা হটাও
ও পুরোহিত, মন্ত্র-পড়া রাখো
না, পুরোহিত, শয়তান তো
পেছনে হটবে না!
থামো! মরিচাতেই
ক্ষয় হয়েছে
মিকাইলের রহস্য-খঞ্জর
এবং দেরাজের
বিশ্বস্থ হাত থেকে
খসে পড়ছে ঝুরঝুর
বজ্র হিমায়িত ও স্থির
জোভের হাতের তালুতে
ফ্যাকাসে উল্কার মত,
জগত গেছে খরচের খাতায়,
মহাকাশ থেকে ঝরে পড়ছে
সমুদয় ফেরেস্তা
নিদ্রাহীনতার মধ্যে
নিশ্চল, স্থির
ঘটনার রাজা
অবয়বের সম্রাট
শয়তান একা বেঁচে আছে।
কোন এক ভীরু, উন্মীলিত
চোখের জ্যোতির মধ্যে
সে তার ঝুলি ধরে আছে
কিংবা সেই চোখ অলসভাবে
ঘুরছে আর থামিয়ে দিচ্ছে সব,
অথবা, উজ্জল ও আর্দ্র চোখ
প্ররোচিত করে, উস্কানি দেয়।
দ্রাক্ষারক্তের মধ্যে
ঝিলিক দেয় সে
অস্থায়ী আনন্দ
বহমান হয়ে ওঠে,
যা পলায়নমুখি জীবনকে
পুনরুদ্ধার করে, দুঃথগুলোকে
ছুঁড়ে ফ্যালে সৈকতের দিকে
আর প্রণয়ে উদ্বুদ্ধ করে আমাদের
খল-পুরোহিত এবং বেজন্মা রাজাদের
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে
যখন আমার হৃৎপিণ্ড চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়
আর আমি চাই
বেদনাহত মানুষের মনে
প্রজ্জ্বলিত হোক তোমার আলো
আমার কবিতার মধ্যে
নিঃশ্বাস হয়ে ওঠো, হে শয়তান
ভাস্কর্য, চিত্রকলা
ও কবিতা
শুরুতে তোমার জন্যই বেঁচে ছিলো, আরিমান,
আদোনিস, আস্তার্তে,
সমুদ্রোত্থিত
ভেনাস যখন
আশীর্বাদ করেছিলো
লোনিয়ান দ্বীপের মুক্ত আকাশকে
তোমার জন্যই লেবাননের
বৃক্ষগুলো ঝুঁকে পড়েছিলো
পবিত্র সাইপ্রাসবাসীর
প্রেম ও পুনরুত্থানের এই দেবীর চরণে
ইদুমাইয়াদের
সুগন্ধী করপল্লবে
যেখানে সাইপ্রাসের সমুদ্র
ফেনায়িত হয়
তোমার জন্যই নাচা হয়েছিলো বুনো নাচ
সমবেত সংগীতে ফেঁপে উঠেছিলো হাওয়া
তোমার উদ্দেশ্যেই অক্ষতযোনিরা
মেলে ধরেছিলো নিষ্কলুস প্রণয়-প্রসাদ
কোন কাজে এসেছিলো
বর্বর ও উন্মত্ত খৃষ্টানদের
হাঙরের হা-খোলা
সেই সব ধর্মোৎসব,
পবিত্র মশালে
ওরা তোমার মন্দির জ্বালালো
তছনছ করে দিলো
গ্রীক মূর্তিজগত?
এক উদ্বাস্তু, তুমি,
অভিানবেশী মন
গৃহময় দেব-দেবীরে আড়ালে
অভিনন্দিত হলে আবারও
তারপর থেকেই
ঈশ্বর ও প্রেমিক দুই রূপে
তোমারই উৎসাহে কম্পিত হতে থাকলো
ওইসব রমনী-হৃদয়
উৎসাহিত করলে ডাইনিদের
অবিরাম তদন্তে মলিন
ক্লিষ্ট প্রকৃতিকে
পুনরুদ্ধারে
তুমিই জাদুরসায়নবিদদের
অভিপ্রায়
এবং মায়াবীদের
সন্দিহান চোখে
উজ্জ্বল করে তুললে স্বর্গ
অবরোধ অতিক্রম করে
তাকে পুনঃস্থাপন করলে
তন্দ্রালু মঠে মঠে।
বস্তজাগিতকতা থেকে
পালিয়ে, যেখানে বাস করো তুমি,
নিষ্প্রাণ সন্ন্যাসীরা আস্তানা গাঁড়লো
সিবান মরুভূমিতে।
তোমার উদ্দেশে হে আত্মা
তোমার ওপড়ানো চারাগাছগুলো নিয়ে
দয়ার্দ্র হচ্ছে শয়তান:
সে তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তোমার মহোত্তম বীরদের।
তোমার এবড়ো থেবড়ো কঙ্কালের ভেতর
অযথাই শরমিন্দা হচ্ছো তুমি:
এখনও শয়তান তোমার কানে কানে আবৃত্তি করছে
মারো ও ফ্লেকাসের পদাবলী
শেষকৃত্যানুষ্ঠানে
গীতসংহিতার বিলাপ;
আর সে তোমার পক্ষে বয়ে আনছে
ঐশ্বরিক আকারসমূহ,
ভয়াবহ সেই শোকার্ত জনভিড়ে
গোলাপরঞ্জিত সৌভাগ্য
লাইকোরিসের
গ্লিসেরার
কিন্তু অধিক মহিমান্বিত যুগের
আরও সব আকার
খাপ খেয়ে
পরিপূর্ণ করছে তোমার অনিদ্র কোষগুলোকে।
লিভির ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে,
শয়তান, জোরপূর্বক হাজির করছে
রোমান নেতাদের, কূটনীতিকদের,
অবিশ্রান্ত জনতাকে;
আর সে খোঁচাচ্ছে তোমাদের,
হে সন্ন্যাসীগন, ইতালির গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি দিয়ে
যার অভিজ্ঞতা লভেছিলে তোমরা
রাজধানীতে।
আর তোমরা, লেলিহান চুল্লি
ধংস করতে পারেনি যাদের,
সৌভাগ্যের কন্ঠস্বরসমূহ,
উইক্লিফ আর হেস,
তোমাদের আকস্মিক গর্জন
ছড়িয়ে দিয়েছিলে হাওয়ায়:
‘‘নবয়ুগের প্রত্যূষ সমাগত,
সময় এসে গেছে।''
আর ইতোমধ্যেই ধর্মগুরুদের শিরোস্ত্রাণ
আর সম্রাটের মুকুট কাঁপতে শুরু করেছে:
দেয়ালের ভেতর থেকে
গর্জে উঠছে বিদ্রোহ
ঐতিহ্যিক গৌরবগাথার বক্তৃতা
আলখাল্লা পরিহিত
গিরেলামো সেভোনারেলার
কণ্ঠ থেকে
মার্টিন লুথার যেমন দেহ থেকে খুলে ফেলেছিলো
ধর্মব্রতের আলখাল্লা,
তেমনি ছুঁড়ে ফেলো তোমাদের হাত-পায়ের বেড়ি,
হে মানুষের মন,
আর পরে নাও অগ্নিমুকুট,
ছুঁড়তে থাকো বজ্র ও বিদ্যুত;
বাস্তবতা দাঁড়িয়ে পড়লো;
জিতে গেছে শয়তান।
একাধারে সুন্দর ও ভয়াবহ
এক দানব অবমুক্ত হলো
সে উজ্জ্বল করে তুলছে সমুদ্রগুলোকে
দ্যুতি ছড়াচ্ছে স্থলভাগে
জ্বলজ্বলে আর পাক-খাওয়া ধুম্র
আগ্নেয়গিরির মত
জিতে নিচ্ছে পাহাড়গুলোকে
গ্রাস করছে সমতল।
পাথুরে ভূমির ওপর দিয়ে উড়ছে
তারপর গর্ত খুঁড়ছে
অচেনা খোঁড়লের ভেতর
দূর ও গভির প্রান্তরে;
অজেয়, পুনরাবির্ভাব
সৈকত ও বেলাভূমিগুলোয়
ঘূর্ণিঝড়ের মত
আওয়াজ তুলছে,
ঘূর্ণিঝড়ের মত
সশব্দ ও বেগবান নিঃশ্বাস ফেলছে:
‘‘এ হলো শয়তান, শোনো জনতা,
মহত শয়তান পার হচ্ছে।''
পার হচ্ছে সে, নানা ভূখণ্ড থেকে
বয়ে আনা আশীর্বাদ ছড়াতে ছড়াতে,
তার অনিরুদ্ধ
অগ্নিরথ থেকে
জিন্দাবাদ, হে শয়তান
হে বিদ্রোহী,
হে মানুষের দুর্দিনে
হেফাজতী শক্তি!
পবিত্র সুগন্ধী
আর প্রার্থনাদি তোমার উদ্দেশে জাগ্রত হোক!
সম্পূর্ণত পরাজিত করেছো
যাজকদের জেহোভাকে।
.
●
.
#বাঙলায়ন: #রহমানহেনরী; #Bengalized by #RahmanHenry
.
* জোসে কার্দুচি (২৭ জুলাই ১৮৩৫ - ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭) : ১৯০৬ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী ইতালীয় কবি ও শিক্ষাবিদ; সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম ইতালীয় তিনি।
.
* #GiosuèCarducciPoems
.